
জোনাকি
নিরঞ্জন মণ্ডল
যখন সবে হচ্ছে সাকার এই জগতের মায়া
চোখের তারায় আঁকছি আকাশ মাটির অমল কায়া
ভাবনা জুড়ে দিচ্ছে নাড়া জোয়ার নদীর ঢেউ
দেখতে পেলেম নিপাট একা নেইকো পাশে কেউ।
বাবা মায়ের সরব ছবি নিটোল হওয়ার আগে
'নেইকো তারা'-এই কথাটাই চেতন জুড়ে জাগে ;
এই জগতের দুঃখ খুশির সকল বাঁধন ছিঁড়ে
হারিয়ে গেল কোন ইসারায় নিরুদ্দেশের ভিড়ে!
শরীর জোড়া যন্ত্রনাতেও পাই না কাজে ছুটি,
ঘুম জড়ানো দু'চোখ তবু কোন সকালে উঠি
দিনের হাজার কাজের মাঝেই ঘুমিয়ে পড়ি যেই
লুটিয়ে জাগি ভুঁয়ের 'পরে,হারাই বাঁচার খেই!
ভাবনা জুড়ে বাবা মায়ের পরশ খোঁজার ফাঁকে
ককিয়ে উঠি চুপ-যাতনায় নতুন সে এক বাঁকে
বাঁচতে চেয়ে, চোখের জলেই রাতটা আসে নেমে
বেঁচে থাকার স্বপ্ন ছিঁড়ে ভাবনারা যায় থেমে।
শরীর জোড়া ঘুম কেড়ে নেয় ভুখা পেটের জ্বালা
শিথান পাশে আলতো জাগে গরম ভাতের থালা
বুক জুড়ানো গন্ধতে তার হাতটা বাড়াই যেই
ঘুম ছুটে যায় পিচ-আঁধারে,কোত্থাও কেউ নেই!
চোখ-নাগালে জোনাক কিছু মিটমিটিয়ে জ্বলে
মার আঁচলের গন্ধ ছড়ায় হাওয়ার চলাচলে।
পিঠের 'পরে বুকের 'পরে বাবার পরশ পাই,
নাগাল পেতে যেই চেয়েছি আর সে ছোঁয়া নাই!
পথের পাশের হট্টমেলায় কাজ এড়িয়ে যাই
ভিড়ের সকল ফাঁক ফোকরেই ত্রস্ত চোখে চাই
মিলতে পারে বাবা মায়ের এক ঝলকের দেখা,
ইচ্ছে শুধোই--আমায় ফেলে এই জগতে একা
কোথায় কেনো হারিয়ে গেলে--দোষটা আমার কি?
শুনতে কি পাও এই জগতের বলছে সবাই ছিঃ!
পথের ধুলোয় চোখের থেকে কেবল ঝরে জল
ইচ্ছে আমার মাড়িয়ে সবার অবাধ চলাচল।
কেবল দেখি দাঁড়িয়ে দূরে ভিখিরি এক মা
একলা পথে এড়িয়ে যেতে উঠছে না তার পা।
বুক চেরা এক করুন ডাকে জড়ায় বুকে সে
নরম স্বরে বললে--খোকা সোহাগ লুটে নে।
পাথর পারা এই জগতে আমার পাশেই থাক
শুকনো মুখের আদল মুছে মা-মা বলেই ডাক।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন