Featured Post

প্রচ্ছদ সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। ৮৬তম সংখ্যা ।। বৈশাখ ১৪৩২ এপ্রিল ২০২৫

ছবি
সম্পাদকীয়  সূচিপত্র

জ‍্যোতির্ময় মুখার্জি কবিতা


সেই মোষটা


ঘটনাটা আমার ছেলেবেলার

না, ঠিক ছেলেবেলার নয়। ছেলেবেলাটাকে একটু টেনে টুনে বাড়িয়ে নিলে যা হয় আর কী,
ওই যখন হাঁটার চেয়ে দৌড়ানোটাই পথ চলা মনে হতো

ঠিকঠাক সিঁড়িভাঙা অঙ্ক কষতে না পারলেও, দু'তিনটে সিঁড়ি টপকে টপকে উঠে গেছি
উপরে, আবার নিচে। অবশ্য সিঁড়ির চেয়ে তখন সুরুৎ ছিল বেশি প্রিয়

গাছের ডালে পা'দুটোকে আটকে দিয়ে দোল দোল বা ফেলে রাখা বালি, কুটুড়িতে মাথা
বাজি রেখে ডিগ। ধুলো আর কাদা মেখে ভুত হতে যখন সায় দিতো শরীর ও মন

স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথেই হোক বা টায়ার পিটিয়ে ছুট্। দৌড়টাই ছিল যেন সে
বেলার খেলাঘোর

ঠিক সেইসময়ই মৃত্যুর মতো হাজির হয়েছিল একটা মোষ। আমি এখন তার কথাই বলবো। মোষটা
ছিল স্বপনদাদের। স্বপন ঘোষ

আমাদের বাড়ির কাছেই বাড়ি স্বপনদাদের। তখন আমি পুরনো বাড়িতে, মানে আদি বাড়িতে।
মোষটা ছিল মাদী। বাচ্চা টাচ্চা ছিল কী? হয়তো ছিল

আমি আর মৌ'দি বসে আছি স্বপনদার বাড়ির দরজায়। এই মৌ'দি আমার দিদি মৌ নয়। এখন
এ্যামেরিকায় থাকে। গৌতমদার বৌ (বউ)

হঠাৎ ডানপাশ থেকে উঠে এলো মৃত্যুদূত। খুব দ্রুত। ভয়ংকর। দূরত্বটাও ছিল
সামান্য। তবু কীভাবে বেঁচে গেছিলাম জানি না। স্বপনদা আর মানসদাদের বাড়ির মাঝ
বরাবর ছোট্ট গলিটা দিয়ে দে ছুট্। তেঁতুলতলা পেরিয়েও থামিনি আমরা

বাগানের বকুলতলায় দাঁড়িয়ে আছি আমি। আপনমনে, কী করছিলাম ঠিক মনে নেই। হঠাৎ,
মা..ন...ত...উউউউউ….পালা পালা। সুধাজ‍্যেঠুর গলা, মানে স্বপনদার বাবা। পিছু
ফিরে দেখি, মাঠ ছিঁড়ে ছুটে আসছে কালো। লাফিয়ে উঠলাম, নেমে থাকা ডালটায়। তারপর
দ্রুত উপরে, আরো আরো উপরে। মাঝে দিতে হয়েছিল অবশ্য একটা ছোট্ট দৌড়। বকুল
গাছটার ছড়ানো শিকড়ে হোঁচট'ও খেয়েছিলাম। কিন্তু পড়িনি। মোষটা গাছটার চারপাশে
ঘুরে ঘুরে ফোঁস ফোঁস করতে লাগলো। হয়তো হেরে যাওয়া অভিমানে

কিন্তু, আমাকে ও মারতে চায় কেন? আমি তো কিছু করিনি। আমি তো তখন এতো ছোট যে,
ওকে মারার প্রশ্নই ওঠে না। ওর বাচ্চাকেও তো মারিনি কখনো বা খেলিনি ওর সাথে

তাহলে কেন? পশুপাখিদের সাথে সম্পর্ক আমার চিরদিনই ভালো। শুধু ভালো নয়, বেশ
ভালো। এই গুণটা আমার মায়ের কাছ থেকে পাওয়া। আর গাছের প্রতি টান, বাবার কাছ
থেকে। অবশ্য, গাছ লাগিয়ে লাগিয়ে ঘরকে বন বানাতে মা'ও সিদ্ধহস্ত

সেইদিন মৃত‍্যুকে দেখেছিলাম সামনে থেকে। তারপর বেশ কয়েকবার মৃত্যুর মুখোমুখি
হয়েছি, তা সে ক্লাবে কারেন্টের সক্ খাওয়াই হোক বা দীঘায় ডুবে যাওয়া। কিন্তু
মৃত্যুর মুখোমুখি। সেটাই প্রথমবার

স্বপনদা মোষগুলোকে নিয়ে বাড়ি ফিরছিল। হয়তো সাঁঝ। আমি খেয়াল করিনি। আপনমনে
যাচ্ছিলাম পিসির বাড়ি, টনা পিসির বাড়ি

মদনজ‍্যেঠুর (কামাখ্যা) বাড়ির দেওয়াল আর দালানের দেওয়ালটার মাঝে পেয়ে গেল সে
আমাকে। দালানের দেওয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে আমি। সামনে দুটো বিরাট শিং নিয়ে একটা কালো
মাথা। সেদিনই প্রথম চোখ রেখেছিলাম ওর চোখে। ফেটে বেরিয়ে আসছে চোখদুটো। রাগে!
প্রতিশোধে? লাল

জীবন কি এভাবেই মৃত্যুকে চকমা দেয়? জানি না। কিন্তু আমি ওকে চকমা দিয়ে ছুটে
গেলাম পিসির বাড়ির পিছনে লাগানো অলা কাকাদের গাছগুলোর ফাঁক দিয়ে

কতক্ষণ ছুটেছিলাম মনে নেই। কিন্তু প্রতি রাতে সে ছুটিয়ে নিয়ে বেড়ায় আমাকে।
পিছনে ফিরে দেখি, কেউ নেই

মিস্ করি ওকে। অন্তত কেউ তো ছিল, যে আমাকে ছোটাতে পারতো। পিছু না ফিরে


========================================


জ‍্যোতির্ময় মুখার্জি

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় লেখা

প্রবন্ধ ।। লুপ্ত ও লুপ্তপ্রায় গ্রামীণ জীবিকা ।। শ্রীজিৎ জানা

লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি : মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা ২০২৫

প্রচ্ছদ।। ৮৩তম সংখ্যা ।। মাঘ ১৪৩১ জানুয়ারি ২০২৫ ।। প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮১তম সংখ্যা ।। অগ্রহায়ণ ১৪৩১ নভেম্বর ২০২৪

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮৪তম সংখ্যা ।। ফাল্গুন ১৪৩১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮২তম সংখ্যা ।। পৌষ ১৪৩১ ডিসেম্বর ২০২৪

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৭৯তম সংখ্যা ।। আশ্বিন ১৪৩১ সেপ্টেম্বর ২০২৪

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮০তম সংখ্যা ।। কার্তিক ১৪৩১ অক্টোবর ২০২৪

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। নবপ্রভাত ৮৫ ।। চৈত্র ১৪৩১ মার্চ ২০২৫

সাহিত্যের মাটিতে এক বীজ : "ত্রয়ী কাব্য" -- সুনন্দ মন্ডল