"এক হাজার টাকা"
"প্রিয় জিসান,
কেমন আছিস জানিনা, তবে সৃষ্টিকর্তার কাছে সবসময় প্রার্থনা করি তুই যেন ভালো
থাকিস। মনে কষ্ট রাখিস না বাবা তোর একটা ইচ্ছে পূরণ করতে পারলাম না। কি করবো
বল, এই ছোট্ট একটা দোকানের আয় দিয়ে সংসার আর পড়াশোনার খরচ চালিয়ে তোদের সখগুলো
পূরণ করতে আমি হিমশিম খেয়ে যেতাম। তবে চেষ্টা করেছি খুব। তোর মনে পড়ে, তোকে
বলেছিলাম এসএসসি পাশ করলে একটা মোবাইল কিনে দেবো। আর ফোনটা যেদিন কিনেছিলাম
তার কয়েকদিন আগে থেকে আমি খুব ভোরে বের হয়ে যেতাম। কেন জানিস? হেটে হেটে
দোকানে যেতাম। ভাড়াগুলো জমিয়ে রাখতাম তোকে সুন্দর একটি মোবাইল কিনে দেওয়ার
জন্য। তারপরেও যখন তুই সামান্য এক হাজার টাকার জন্য বাড়ি থেকে বের হয়ে
গিয়েছিলি তখন খুব কষ্ট পেয়েছিলাম। তোর মা আর আমি খুব কেঁদেছিলাম। মনে হয়েছিলো
আমার মতো হতভাগ্য বাবা পৃথিবীতে আর দ্বিতীয়টি নেই। তুই আমাকে ক্ষমা করে দিস
বাবা!
ইতি
তোর হতভাগ্য পিতা "
চিঠিটি পড়তে পড়তে দু'চোখের কোণ দিয়ে জলধারা প্রবাহিত হতে লাগলো জিসানের।
মনে পড়ে গেলো সে দিনটির কথা-
সেদিন ছিল কলেজে জিসানের প্রথম দিন। বাবা তাকে নতুন শার্ট, প্যান্ট, ব্যাগ,
জুতা আর একটা নতুন ঘড়ি কিনে দিয়েছিলেন। আরো দিয়েছিলেন জিসানের দীর্ঘদিনের
স্বপ্ন একটা দামী মোবাইল ফোন। যদিও মোবাইলটা কিনে দিতে বাবা অনেক দেরী
করেছিলেন। এর কয়েকমাস আগে থেকে বাবা খুব ভোরে বেড়িয়ে যেতেন। জিসান ভাবতো বাবা
বুঝি মোবাইল কিনে দেওয়ার ভয়ে পালিয়ে বেড়ায়। তাই রাগ করে কয়েকদিন খাওয়া দাওয়াও
করেনি সে।
সর্বশেষ জিসান দাবী করেছিলো কলেজের প্রথম দিন তাকে যেন এক হাজার টাকা দেওয়া
হয়। ওইদিন বন্ধুদেন সাথে খাওয়া আর ঘুরতে যাওয়ার প্লান ছিলো। তাই টাকা দরকার।
কিন্তু সেদিন যখন ভোরবেলা বাবা টাকা না দিয়ে বেড়িয়ে গেলেন তখন জিসানের কাছে
মনে হলো এই নতুন জামা, জুতা, মোবাইল সবই বৃথা।
রাগে দুঃখে সে একেবারে বাড়ি থেকেই বেড়িয়ে গেলো।
আজ দীর্ঘ পাঁচ বছর পর সে বাড়ি এসেছে। বাবাকে বলতে এসেছে "দেখো সেদিন সামান্য
এক হাজার টাকা দিতে পারোনি। আর আজ আমি কতটাকা রোজগার করে এসেছি।"
কিন্তু যখন মা চিঠিটা হাতে দিলো তখন জিসানের পুরো পৃথিবীটাকে অন্ধকার মনে হলো।
চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করেছিলো- " তুমি আমার হতভাগ্য পিতা নও। আমি তোমার
হতভাগ্য সন্তান বাবা।"
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন