পয়লা বোশেখ
শিবপ্রসাদ পুরকায়স্থ
নতুন বছর শুনলে মনের মধ্যে কতকথা মনে পড়ে। আনন্দ বিষাদে ভরে যায় । চোখের মধ্যে ভাসে সারা মাঠময় ধোঁয়া আর ধোঁয়া। ভোর ভোর উঠে , যার যার চাষের জমিতে খড়ের নুড়ো জ্বালিয়ে আসে। বাস্তুভিটায় একই খড়ের নুড়ো জ্বালানো হয়।
প্রতীকী আগুন জ্বালানোর অর্থ তাৎপর্য পূর্ণ। ক্ষেতের মাটি পুড়িয়ে আরো উর্বর করা। বাস্তুতে আগুন দিয়ে শুদ্ধিকরণ করা। যা কিছু অশুভ দূর করা। চলে আসছে। অতকিছু সবাই না জানলেও বছরের প্রথম দিন গ্রামের সবাই জমিতে নুড়ো জ্বালাবেই । সেই গ্রামের মানুষটি যদি সহরে গিয়ে বসবাস করে। সংস্কার ভোলেনা। একটুকরো কাগজ পুড়িয়ে সেই রীতি রক্ষা করে।
কাঁচা হলুদ বাড়িতে না থাকলে, সংগ্রহ করা । নীমের পাতা কাউকে দিয়ে পাড়িয়ে নেওয়া, এগুলো প্রাথমিক কাজ। হলুদ-নীম একসঙ্গে শীলে বেটে সরষের তেল মিসিয়ে গায়ে না মাখলে কীসের পয়লা বোশেখ। ভালো করে গায়ে শুকিয়ে, তবেই স্নান করা। কেউ সাবান দিয়ে তুলে দেয়। অনেক যতটা সম্ভব হাত দিয়ে ঘষে নেয়। ফলে হলদেটে আভা বেশ কয়েকদিন শরীরের সঙ্গে লেপটে থাকে। নতুন বিয়ে হলে যেমনটা হয়। আমার শেষেরটা বেশ ভালো লাগে।
গরমের সময় গায়ে খোসপেজড়া হওয়ার সম্ভবনা কম থাকে। বাড়ির পোষ্যদের একই ভাবে স্নান করিয়ে দিতে দেখেছি। গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে।
পয়লা বোশেখ আর পাঁচটা দিনের মতো দেখা হয়না।বছরের প্রথম দিন। আজ দিনটিতে যেমন খাওয়া-দাওয়া করবে। সারা বছর সেই ভাবে চলবে, প্রচলিত ধারণা।প্রথম একটি দিন আনন্দে কাটানো আসল উদ্দেশ্য।বাংলার প্রতিটি বাড়িতে একটু আলাদা ভাবে দিনটা কাটায়।
বৈকালে চড়কের মেলা। কোথাও না কোথাও হবে। মেলা উপলক্ষ্যে চৈতে গাজনের রেশ, বৈশাখের মধ্যে বিরতি নেই।
তেলেভাজার মধ্যে ফুলুরি গরম গরম বেশ মুখোরোচক। বেগুন সরু সরু লম্বালম্বি করে কাটে। ব্যাসন গুলে তাতে ডুবিয়ে ঝাঁকাতেলে ভাজা। এখন আর দেখা মেলেনা। এখন ফুলুরি গুলগুলিকে বলতে শুনি। বরং বেগুনি বললে অত্যুক্তি হয় না। প্রবীণেরা সঠিক বলতে পারবে।
তখন কতো কম পয়সায়, কতো আনন্দ করতাম। ভাবলে অবাক না হয়ে পারিনা। এখন পয়সার তুলনায় আনন্দ তলানিতে পড়ে থাকে। সে আনন্দ আর মেলায় গেলে খুঁজে পাইনা।
আগের তুলনায় অনেক অনেক আনন্দ পাওয়ার মাধ্যম উদ্ভাবিত হয়েছে । তবুও এইসময়ের ছেলেমেয়েরা ফেসবুকে মুখ গুঁজে। তারা কী এতকিছুর মধ্যেও খুশী নয়?
আমাদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে অতীত -বর্তমান মানিয়ে নিয়েছি। এটাই বুঝেছি, কিছুটা আর্থিক টানাপোড়েনের মধ্যে যটুকু সুখ মেলে নিকড়ে নেওয়া যায়। অঢেল পাওয়ার মধ্যে আর সুখ থাকেনা। মন এলোমেলো হয়ে যায়। পয়লা বোশেখে মধ্যে যদি সারা বছর কেমন চলবে তার রূপরেখা দেখতে চাই, তাহলে অনেক বেশি মিতব্যায়ী হতে হবে। সেইটুকু আনন্দ সারা বছর পাওয়ার আশা করতে পারি।
****************
নাম- শিবপ্রসাদ পুরকায়স্থ
গ্রাম- লক্ষ্মীকান্তপুর, ডাক- বিজয়গঞ্জবাজার
জেলা - দক্ষিণ ২৪পরগনা, পশ্চিমবঙ্গ, (ভারত)
পিন-743345, ফোন-9635995722
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন