Featured Post
ছোটগল্প ।। আলোকবর্তিকা ।। আরতি মিত্র
- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
ছো ট গ ল্প
আলোকবর্তিকা
আরতি মিত্র
রাস্তার ধারে পড়ে থাকা বড়ো বড়ো পাইপ লাইনের মধ্যে নবু (নবীন), সমু (সমীর), দিলু (দিলীপ) ওদের ঘরবাড়ি।
ওখানেই ওরা রাতে থাকে। সকাল হলেই কাগজ কুড়োতে চলে যায়। সবার কাঁধে থাকে একটা করে বস্তা। যা পায় দুপুরে সব বাছাই করে একটা দোকানের মালিকের কাছে জমা দিয়ে যেটুকু টাকা পায় মাসির কাছে দেয়।
ছোট থেকেই বুঝেছে ওদের মাসীই সব। ওই দিয়ে যা পাওয়া যায়, তাই কিনে মাসী ওদের দুটো রান্না করে দিলে ওরা খায়। ওরা জানে না ওদের মা-বাবার খবর। জ্ঞান হতেই দেখে এটাই ওদের বাসা, যেখানে কুড়ানো জিনিস জমা দেয় সেখানেই মাসী কাজ করে, তারও কেউ নেই ।
ওদের মুখ দেখে কেমন যেন মায়া হতেই মাসী ওদের জন্য এটুকু ব্যবস্থা করে। তিনজনেরই হারিয়ে গেছে শৈশব! খেলাধূলা, স্কুলে যাওয়ার প্রশ্নই উঠে না। স্কুলের সামনে দিয়ে হেঁটে যাবার সময় মন কেমন করে; কখনও ইচ্ছে করে বস্তা ছেড়ে বইয়ের ব্যাগ পিঠে নিতে। সঙ্গে সঙ্গেই নিজেদের মধ্যে কথা বলে, "আমাদের তো টাকা নেই, কী করে এসব হবে? ওসব বড়োলোকেদের জন্য। তাছাড়া মা, বাবা কেউ নেই।"
একথা ভাবতে ভাবতে কখন যেন নিজেদের অজান্তেই দু’চোখ জলে ভরে যায় হঠাৎ খিলখিল করে হেসে উঠে দিলু বলে, "আমরা তো কাগজ কুড়োনি বল! কী পাগলের মতো ভাবছিলাম তাই না? এসব স্বপ্ন ঘুমের মধ্যে দেখে ঘুমের মধ্যেই মিলিয়ে যায় তাই না রে?"
সকলেই হি হি করে হাসতে লাগে। সবসময়ই যে হাসিখুশীতে সময় কাটে এমন নয়, যখন নিজেদের মধ্যে ঝগড়া হয়, তখন মাসীকে এসে থামাতে হয়, রক্তারক্তি কাণ্ড ঠেকানোর আর কেই বা আছে।
রাতে আর খাবার জোটে না। রাস্তার কল থেকে পেট ভরে জল খেয়ে পাইপ লাইনের মধ্যে শুয়ে পড়ে। কোনো কোনো দিন মাসী লুকিয়ে কিছু খাবার দিয়ে যায়, সেদিন খুব আনন্দ হয় ওদের --
ঘুমোতে ঘুমোতে বলে, হ্যাঁ রে নবু, মাসী তো আমাদের কেউ না, তাহলে আমাদের জন্য এত করে কেন বলত?
“কেন জানিস না? মাসীরও কেউ নেই আর আমাদেরও কেউ নেই, সেই জন্য, বুঝলি তো?”
হঠাৎ দিলুর দিকে তাকিয়ে সমু বলে ওঠে, ‘হ্যাঁ রে দিলু, তুই ওরকম করছিস কেন রে?’
– আমার খুব কষ্ট হচ্ছে!
– দেখি, দেখি, ওমা তোর গাটা এত গরম কেন রে?
– গা গরম মানে দিলুর জ্বর হয়েছে রে সমু। এখন আমরা কি করব রে নবু? অনেক রাত তো! সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে। মাসীও জেগে নেই। কী করব, দিলুর তো কত কষ্ট হচ্ছে! সমু, তুই একটু দিলুকে দেখ, আমি মাসির কাছে গিয়ে দেখি যদি জেগে থাকে তবে জেনে আসি কী করতে হবে।
নবু তো রাস্তা দিয়ে হেঁটে যেতে লাগল। ভয়ও করছিল কিন্তু কি করবে দিলুর এত কষ্ট -- মাসির ঘরের বাইরে একটু একটু আলো দেখা যাচ্ছিল, নবু মনে সাহস করে আস্তে আস্তে ডাকলো, "মাসী, ও মাসী, একটু বাইরে আসবে?"
মাসী তো অবাক হয়ে গেল! "এত রাতে কে ডাকছে?"
বাইরে এসে দেখে নবু। "হ্যাঁ রে নবু, কী হয়েছে?"
"মাসী, দিলুর গাটা খুব গরম, ওর খুবই কষ্ট হচ্ছে। কী করব বুঝতে না পেরে তোমার কাছে এসেছি।"
"চল চল, আমি যাচ্ছি।"
মাসী একপ্রকার ছুটতে ছুটতে দিলুদের পাইপ লাইনের মধ্যে হামাগুড়ি দিয়ে ঢুকল। দিলুর কপালে হাত দিয়ে মাসী তো অস্থির হয়ে উঠল। কী করবে বুঝতে পারল না। মনে মনে বলল, "ওষুধ না খেলে ছেলেটাকে যে বাঁচানো যাবে না। মালিকের তো কোন মায়া দয়া নেই, টাকা ছাড়া কিছুই জানে না। বলে কি কিছু লাভ হবে? না বলেও তো কোন উপায় নেই! যাই, হাতেপায়ে ধরে যদি একটা কিছু করতে পারি।"
হামাগুড়ি দিয়ে বেরিয়ে এসে ছুটতে ছুটতে গিয়ে মালিকের পায়ে কেঁদে লুটিয়ে পড়লো। মালিক ধড়মড় করে উঠে রেগে গিয়ে বলল, "এত রাতে আমার ঘুম ভাঙালি কেন, সরমা? কাঁদবার কি হয়েছে, বলবি তো?"
"বাবু বাবু, দিলুর খুব জ্বর!"
"তা আমি কী করব?
“রাতে ঘুমোতেও দিবি না নাকি ?"
" বাবু, একটা ডাক্তার না দেখালে ছেলেটা বাঁচবে না!"
"ওদের আবার ডাক্তার, হাসালি রে, ওরা মরলেই কী আর বাঁচলেই কী! যা, যা, এখান থেকে যা তো! রাস্তার কুকুরের আবার চিকিৎসা! হা হা হা হা"
"দিলু কিন্তু তোমারই ছেলে, ভুলে যেও না। ওর মা যখন মরে গেল, তখন ও তো তিন মাসের, আমাকে দিয়ে বললে, যা পারিস কর। আর তারপর থেকে আমিই দেখছি।"
" চুপ কর, চুপ কর, কী করতে চাস, কর।"
" টাকা বের করো"
"নে, ওখানে আছে, ১০০ টাকা নিয়ে যা।"
টাকা নিয়ে সরমা এক মুহূর্ত দেরী না করে ওদের কাছাকাছি গাঙ্গুলী ডাক্তারের বাড়ির দরজায় গিয়ে কড়া নাড়তে লাগল,
"কে, কে" বলতে বলতে রামুদা ছুটে এসে সরমাকে দেখে বুঝতে পারলো ডাক্তারবাবুকে ডাকতে এসেছে।
সরমা মালিকের অসুখ বিসুখের সময় প্রায়ই এই ডাক্তারবাবুকে নিয়ে যায়। এই ভেবে রামু সরমাকে ভেতরে নিয়ে গেল। রামু ডাক্তারবাবুকে ঘুম থেকে তুলে সরমার কথা বলতেই ব্যস্ত হয়ে এসেই বললেন, "কি হয়েছে, যাদব ( মালিক) আবার অসুস্থ হলো নাকি রে?"
"না ডাক্তারবাবু, পাইপ লাইনের একটা বাচ্চার খুব জ্বর গো, তুমি না চিকিৎসা করলে বাঁচবে না।"
"কি বললি, ঐ ভিখারি বাচ্চা, ওর জন্য তুই আমার ঘুম ভাঙিয়ে ডাকতে এসেছিস? দূর হয়ে যা, আমার চোখের সামনে থেকে।"
"ডাক্তারবাবু, দয়া করো। তোমার পায়ে ধরছি, একবার চলো, তোমরা তো মানুষকে বাঁচাও, তবে এমন কেন করছ, ওর বাবা, মা কেউ নেই গো, দুবেলা খেতেও পায় না, তোমরা না দেখলে কে দেখবে ?"
"তুই যাবি না ধাক্কা দিয়ে বের করে দেবো? রামু ওকে বের করে দে।"
সরমা কাঁদতে, কাঁদতে দিলুর কাছে ছুটে গিয়ে দেখলো, দিলুকে জড়িয়ে ধরে নবু, সমু চিৎকার করে কাঁদছে।
হ্যাঁ রে, নবু কি হয়েছে ?"
"ও মাসী , দেখো না, দিলু কোন কথা বলছে না গো, ওর গাটা খুব ঠাণ্ডা!"
সরমা দিলুর গায়ে হাত দিয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলল।
নবু, সমু কান্না বন্ধ করে মাসীকে ঠেলা দিতে লাগল।
হঠাৎ জ্ঞান ফিরে পেয়েই সরমা ওদের বলল, "যা, যা তোরা মালিকের দোকানের বাইরে গিয়ে বসে থাক। আমি দেখছি, কি করা যায়।"
নবু, সমু জানতেই পারলো না যে চিকিৎসার অভাবে দিলুকে বেঘোরে প্রাণ দিতে হল।
ওদের বাইরে পাঠিয়ে সরমা আশেপাশের কিছু লোকজনকে ডেকে নিয়ে এল। সবাই বলল, দিলুর সৎকারের একটা ব্যবস্থা তো করতে হবে, কিন্ত ডাক্তারের সার্টিফিকেট দরকার। ছেলেগুলোকে সবাই ভালোবাসত। হেলথ সেন্টারের ডাক্তারবাবুকে সব কথা খুলে বলতে উনি ডেথ সার্টিফিকেট দিলেন।
মালিক খবর পেয়েই ছুটে এল। সব জেনেশুনে কেমন অন্যরকম হয়ে গেল। খরচ যা লাগলো, সবই করবে বলল।
শেষবারের মতো দেখার জন্য নবু, সমুকে ডাকতেই ওরা দিলুকে দুজনে মিলে ধরে চিৎকার করে কাঁদতে লাগলো, ওদের বুকফাটা আর্তনাদে কেউ আর চোখের জল ধরে রাখতে পারলো না।
জ্ঞান হতেই তিনজন একসঙ্গে থাকত। আজ একজনকে হারিয়ে ওরা পাগলের মতো করতে লাগল।
মালিক এসে কোনরকমে বুঝিয়ে ওনার বাড়ি নিয়ে গেল। গায়ে, মাথায় হাত বুলিয়ে শান্ত করার চেষ্টা করল।
ওদিকের সব ব্যবস্থা করে দিয়ে মাসী এসে ছেলেদের নিজের কাছে নিয়ে গেল। সে রাতটা এভাবেই কাটল।
তারপর থেকেই মালিক কেমন যেন পাল্টে গেলো, ওদের জন্য বস্তিতে একটা ঘর ভাড়া করে দিলো, মাসীও ওদের দেখাশোনা করতে লাগলো।
ওরা এখন আর কাগজ কুড়োতে যায় না। মালিক ওদের স্কুলে ভর্তি করে দিয়েছে। প্রতি পরীক্ষায় দুজনেই খুব ভালো রেজাল্টও করছে। এতে মনে মনে মালিকের গর্ব বোধ হচ্ছে। তবুও মনের কোণে একটা দুঃখের ভার থেকেই যাচ্ছে। যদি দিলুর ঠিকমতো চিকিৎসা হত, ছেলেটা বেঁচে যেত! সমাজে অনাথ শিশুদের যদি উপযুক্ত পরিবেশ দেওয়া যেত…
কিন্ত সেই আলোকবর্তিকা দেখাবে কে?
মুদ্রিত সংখ্যার প্রচ্ছদ |
মুদ্রিত সংখ্যা সংগ্রহ বিষয়ক জরুরি কথা
নবপ্রভাত ব্লগজিনের ৬৮তম সংখ্যা (কার্তিক ১৪৩০ অক্টোবর ২০২৩) প্রকাশিত হল। কথামতো এই সংখ্যাটি বই (মুদ্রিত পত্রিকা) আকারে একটি প্রকাশনী থেকেও প্রকাশিত হল। ফন্ট একটু ছোট রেখে সাড়ে আট ফর্মার পত্রিকা হয়েছে। মুল্য ১৭৫ টাকা। তবে আমরা একটা কোড দিচ্ছি ( কোড: NABAPRAVAT30 )। এটা অর্ডার ফাইনাল করার সময় ব্যবহার করলে ১৪৯ টাকায় বইটি পাওয়া যাবে। অর্ডার করলে বাড়িতে বসেই পেয়ে যাবেন। (একটি সংখ্যার জন্য ডেলিভারি চার্জ নেবে ৫০ টাকা। একাধিক নিলে ডেলিভারি চার্জ অনেকটাই কমবে। এটা প্রকাশনা সংস্থার নিজস্ব নিয়ম।) কোড ব্যবহার করলে ১৯৯ টাকায় (ডেলিভারি চার্জসহ) বইটি পেয়ে যাবেন। আগ্রহীরা সংগ্রহ করতে পারেন।
যাঁরা অনলাইন অর্ডারে স্বচ্ছন্দ নন, অথবা, অনলাইনকে বিশ্বাস না করে আমাদের থেকে পত্রিকা সংগ্রহ করতে চান তাঁরা শুধু মুদ্রিত মূল্য ১৭৫ টাকা আমাদের পাঠাতে পারেন। আমরা দায়িত্ব নিয়ে আপনার ঠিকানায় বইটি পাঠিয়ে দেব। হাতে হাতে নেওয়া সম্ভব হলে ১৫০ টাকা পাঠালেই হবে। আমরা আনিয়ে দেব।
আমাদের গুগুল পে / ফোন পে
নম্বর ৯৪৩৩৩৯৩৫৫৬। প্রয়োজনবোধে এই নম্বরে স্বচ্ছন্দে call বা whatsapp করতে পারেন।
মুদ্রিত সংখ্যা অর্ডার করার লিঙ্ক:
https://notionpress.com/read/nabapravat-utsab-2023
==================
- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন