Featured Post

"নবপ্রভাত" ৩০তম বর্ষপূর্তি স্মারক সম্মাননার জন্য প্রকাশিত গ্রন্থ ও পত্রপত্রিকা আহ্বান

ছবি
  "নবপ্রভাত" সাহিত্যপত্রের ৩০তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে আমরা নির্বাচিত কয়েকজন কবি-সাহিত্যিক ও পত্রিকা সম্পাদককে স্মারক সম্মাননা জানাতে চাই। শ্রদ্ধেয় কবি-সাহিত্যিক-নাট্যকারদের (এমনকি প্রকাশকদের) প্রতি আবেদন, আপনাদের প্রকাশিত গ্রন্থ আমাদের পাঠান। সঙ্গে দিন লেখক পরিচিতি। একক গ্রন্থ, যৌথ গ্রন্থ, সম্পাদিত সংকলন সবই পাঠাতে পারেন। বইয়ের সঙ্গে দিন লেখকের/সম্পাদকের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি।  ২০১৯ থেকে ২০২৪-এর মধ্যে প্রকাশিত গ্রন্থ পাঠানো যাবে। মাননীয় সম্পাদকগণ তাঁদের প্রকাশিত পত্রপত্রিকা পাঠান। সঙ্গে জানান পত্রিকার লড়াই সংগ্রামের ইতিহাস। ২০২৩-২০২৪-এর মধ্যে প্রকাশিত পত্রপত্রিকা পাঠানো যাবে। শুধুমাত্র প্রাপ্ত গ্রন্থগুলির মধ্য থেকে আমরা কয়েকজন কবি / ছড়াকার / কথাকার / প্রাবন্ধিক/ নাট্যকার এবং সম্পাদককে সম্মাননা জ্ঞাপন করে ধন্য হব কলকাতার কোনো একটি হলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে (অক্টোবর/নভেম্বর ২০২৪)।  আমন্ত্রণ পাবেন সকলেই। প্রাপ্ত সমস্ত গ্রন্থ ও পত্রপত্রিকার পরিচিতি এবং বাছাই কিছু গ্রন্থ ও পত্রিকার আলোচনা ছাপা হবে নবপ্রভাতের স্মারক সংখ্যায়। আপনাদের সহযোগিতা একান্ত কাম্য। ঠিকানাঃ নিরাশাহরণ নস্কর, সম্পাদকঃ নব

প্রবন্ধ ।। মধুকবির 'বীরাঙ্গনা কাব্য' : নবজাগরণের এক দীপবর্তিকা ।। অভিষেক ঘোষ

 



প্র ন্ধ


মধুকবির 'বীরাঙ্গনা কাব্য' :

 নবজাগরণের এক দীপবর্তিকা

অভিষেক ঘোষ

 

"ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে পাশ্চাত্য শিক্ষা ও সংস্কৃতির সংস্পর্শে বাঙ্গালা সাহিত্যে নূতন সম্ভাবনা ও চাঞ্চল্য দেখা দিয়াছিল। ইহার ফলে গদ্যসাহিত্যের বিকাশ ও পরিপুষ্টি হইয়াছিল এবং কাব্যের ক্ষেত্রে নূতন জীবনবোধ জাগিয়া উঠিয়াছিল। সমাজ সচেতনতা এই আধুনিক বাঙ্গালা সাহিত্যের প্রধান লক্ষণ। এই সচেতনতা শুধু পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন ও সংবাদপত্র প্রকাশের ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ রহিল না; ইহা ধর্ম ও সমাজ সংস্কারের উদ্দেশ্যে রচিত নাটক, প্রহসন ও উপন্যাস রচনার ক্ষেত্রেও বিস্তার লাভ করিল। আর এই ব্যক্তিসচেতনতার প্রথম সুষ্ঠু প্রকাশ মধুসূদন দত্তের কাব্যে।" - গবেষক ও প্রাবন্ধিক ডক্টর সুশীলকুমার গুপ্ত তাঁর 'ঊনবিংশ শতাব্দীতে বাঙ্গালার নবজাগরণ' গ্রন্থে আমাদের আলোচ্য বিষয়ে প্রবেশের উপযুক্ত মুখবন্ধ লিখে গিয়েছেন। মাইকেল মধুসূদন দত্ত রচিত, পত্রকাব্য 'বীরাঙ্গনা কাব্য' (প্রকাশ: ১৮৬১ খ্রিষ্টাব্দ) আজ থেকে ১৬২ বছর আগে প্রকাশিত হয়েছিল নবজাগরণের এক উল্লেখযোগ্য দীপবর্তিকা হয়ে। কেমন ছিল সেই সময়? আজ সেই অতীত বাংলার কথা ভাবতে বসলে অবাক লাগে।

 

আমরা কম-বেশি জানি, বেলগাছিয়া রঙ্গমঞ্চে রামনারায়ণ তর্করত্ন মহাশয়ের  'রত্নাবলী' নাটকের অভিনয় দেখতে গিয়ে মাইকেল আশাহত হয়েছিলেন। তিনিই আবার ওই নাটকের ইংরেজি অনুবাদও করেছিলেন। সংস্কৃতানুগ তৎকালীন বাংলা নাটকের জড়তা ও দৈন্যদশা প্রত্যক্ষ করে তিনি লিখেছিলেন, -                     

"অলীক কুনাট্য রঙ্গে,

মজে লোক রাঢ়ে বঙ্গে,

নিরখিয়া প্রাণে নাহি সয়।

সুধারস অনাদরে,

বিষবারি পান করে,

তাহে হয় তনু মনঃ ক্ষয়।"

('প্রস্তাবনা' কবিতা : মাইকেল মধুসূদন দত্ত)

- সেদিনকার সেই ঘটনাই কিন্তু মাইকেলকে চালিত করল অভিনব ও স্বনির্ভর বাংলা নাট্যসাহিত্য নির্মাণের পথে। 'শর্মিষ্ঠা', 'পদ্মাবতী', 'কৃষ্ণকুমারী' সৃষ্টির মাধ্যমে চলেছিল তাঁর প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের মধ্যে কাঙ্ক্ষিত ভারসাম্যের অন্বেষণ। এরই পথ ধরে 'মেঘনাদবধ কাব্য' বা 'বীরাঙ্গনা কাব্য' রচনা, এবং ততদিনে অমিত্রাক্ষর ছন্দের উচ্চৈঃশ্রবা তাঁর হাতে পুরোপুরি বশ্যতা স্বীকার করেছে। নাট্যকার হিসেবে মধুসূদন ছিলেন সমাজ ও সমকালের প্রতি দায়বদ্ধ। কাব্য রচনায় ক্রমে সাহিত্যের প্রতিও দায়বদ্ধ হলেন তিনি, হয়ে উঠলেন যুগোত্তীর্ণ, মহাকবি।

আজ ভেবে দেখতে বসলে বোঝা যায়, সে সময় একের পর এক অনেক কিছু ঘটছে। একদিকে সংস্কৃত অনুসারী, প্রাচীন ঐতিহ্য ও দেশজ জনরুচির ক্ষীণ স্রোতটি পরিণত হয়েছে মজা নদীতে; অন্যদিকে পাশ্চাত্যের ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য, নারীস্বাতন্ত্র্য, যুক্তিবাদী ভাবাদর্শের বলিষ্ঠ করাঘাত তরঙ্গ সৃষ্টি করে চলেছে ইংরেজি শিক্ষায় শিক্ষিত নব্য যুবমানসে। পাঁচালী-কীর্তন, কবিগান, টপ্পা, খেউড়, আখড়াই, হাফ-আখড়াই ইত্যাদি তখন ক্রমশ প্রাসঙ্গিকতা হারাচ্ছে, মজবুত হচ্ছে বাংলা গদ্যসাহিত্যের ভিত্তি - সাময়িকপত্রে গদ্যের নানা আঙ্গিক তখন প্রাসঙ্গিকতা লাভ করছে। উত্থান ঘটছে প্যারীচাঁদ মিত্র বা কালীপ্রসন্ন সিংহের। সুতরাং প্রতিভা ও মৌলিকতার অভাবে কাব্যসাহিত্যের ধারা তখন কিছুটা হলেও তীক্ষ্ণতা হারিয়েছে, সেই সময়েই কোথাও ভাবকল্পনার মহত্ব, আবার কোথাও রসব্যঞ্জনার অভিনবত্ব নিয়ে আবির্ভাব ঘটছে মাইকেলের। মধুসূদন শব্দ-সচেতন কবি, তাঁর সৃষ্টি কেবল বিস্ময়মথিত শ্রদ্ধাই উদ্রেক করে না, সেই সঙ্গে গাম্ভীর্য ও সৌন্দর্যের অপূর্ব মিলনে হৃদয়ে স্নিগ্ধোজ্জ্বল আবেশও রেখে যায়।

রোমের প্রসিদ্ধ কবি ওভিদের পত্রাবলির আদর্শে মধুসূদন 'বীরাঙ্গনা কাব্য' রচনা করেন। ওভিদের 'The Heroides' (The Heroines) কাব্যে মোট ২১টি পত্র রয়েছে এবং কাব্যের উপাদান তিনি সংগ্রহ করেছেন গ্রিক পুরাণ তথা গ্রিক ও রোমান সাহিত্য থেকে। সেখানে ভারতীয় পুরাণ ও সাহিত্য বিশেষতঃ রামায়ণ, মহাভারত এবং কালিদাসের কাব্য থেকে মধুসূদন তাঁর রসদ সংগ্রহ করেছেন। রাজনারায়ণ বসুকে লেখা পত্র থেকে জানা যায়, সর্বমোট একুশটি পত্র লেখার অভিপ্রায় ছিল তাঁর, কিন্তু পূর্ণাঙ্গরূপে রচনা করতে পেরেছিলেন এগারোটি পত্র। বীরাঙ্গনা কাব্যের প্রথম সর্গ দুষ্মন্তের প্রতি শকুন্তলা, দ্বিতীয় সর্গ সোমের প্রতি তারা, তৃতীয় সর্গ দ্বারকানাথের প্রতি রুক্মিণী, চতুর্থ সর্গ দশরথের প্রতি কেকয়ী, পঞ্চম সর্গ লক্ষ্মণের প্রতি সূর্পণখা, ষষ্ঠ সর্গ অর্জুনের প্রতি দ্রৌপদী, সপ্তম সর্গ দুর্যোধনের প্রতি ভানুমতী, অষ্টম সর্গ জয়দ্রথের প্রতি দুঃশলা, নবম সর্গ শান্তনুর প্রতি জাহ্নবী, দশম সর্গ পুরুরবার প্রতি উর্ব্বশী এবং একাদশ সর্গ নীলধ্বজের প্রতি জনা। অনেকেই বলেন, বীরাঙ্গনা কাব্যের মূল সুর প্রেমের সুর! কাব্যে পত্রগুলি মূলত দুই প্রকৃতির - পতির প্রতি পত্নীর পত্র (অনুযোগ পত্র, প্রত্যাখ্যান পত্র, স্মরণার্থ পত্র সম্বলিত) এবং প্রণয়ীর প্রতি প্রণয়িনীর পত্র (সধবা তারা, বিধবা শূর্পণখা, কুমারী রুক্মিণী এবং দেবভোগ্যা ঊর্বশীর পত্র এই শ্রেণির)।

প্রথম ও ষষ্ঠ পত্রে যথাক্রমে শকুন্তলা ও দ্রৌপদী প্রোষিতভর্তৃকা, তাঁদের দু'জনেরই স্বামী প্রবাসী; উভয়েই স্বামীর অদর্শনে উৎকণ্ঠিতা। তবুও শকুন্তলা সরলা আশ্রমকন্যা, তিনি কোমল স্বভাবের যুবতী, বহির্জগৎ সম্পর্কে অজ্ঞ। রাজা দুষ্মন্তকে দায়ী না করে, তাই তিনি নিজের মন্দভাগ্যকেই দোষারোপ করেছেন। শকুন্তলার আক্ষেপ - "শুখাইলে ফুল, কবে কে আদরে তারে?" 

আরো লিখেছেন, -

"হারাই সতত জ্ঞান; চেতন পাইয়া

মিলি যবে আঁখি, দেখি তোমায় সম্মুখে ! 

অমনি পসারি বাহু ধাই ধরিবারে 

পদযুগ; না পাইয়া কাঁদি হাহারবে !"

অপরদিকে দ্রৌপদী শকুন্তলার মতো সম্বৃতবাক নন, তিনি বরং যথেষ্ট বাকপটু। পঞ্চস্বামীর মধ্যে অর্জুনকেই তিনি ভালো বেসেছেন। সেই অর্জুন ইন্দ্রলোকে, অস্ত্র শিক্ষায় নিবিষ্ট। স্বর্গের অপ্সরীদের প্রতি এক্ষেত্রে সন্দিগ্ধ হওয়া স্বাভাবিক। দ্রৌপদীর এই পত্র নানা কটাক্ষে, স্মৃতিচারণের ঘূর্ণিপাকেও মূল বক্তব্যে কিন্তু শকুন্তলার পত্রের কাছাকাছি, ভাবে ও ভাষায় কেবল স্বতন্ত্র। দ্রৌপদী জানেন ভাগ্য প্রতিকূল, তবু তিনি স্বীকার করতে কুন্ঠিতা নন যে পঞ্চস্বামীর মধ্যে অর্জুনকেই তিনি সত্যিকারের ভালোবাসেন -

"যা ইচ্ছা করুন ধর্ম্ম, পাপ করি যদি,

ভালোবাসি নৃমণিরে, - যা ইচ্ছা, নৃমণি!

হেন সুখ ভুঞ্জি, দুঃখ কে ডরে ভুঞ্জিতে?"

দুষ্মন্তের প্রতি শকুন্তলার পত্রে স্ত্রী হিসেবে শকুন্তলার অধিকার আছে, কিন্তু তা প্রতিষ্ঠিত নয়; তাই এই পত্র নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াই। কিন্তু সোমের প্রতি তারায় কোনো অভিযোগ নেই, স্বামী বৃহস্পতির প্রতিও কোনো অভিযোগের সুযোগ পান নি তারা; অথচ তিনি অপর পুরুষের প্রতি অনুরক্তা হয়েছেন, সোমকে কামনা করেছেন, হয়েছেন মোহাবিষ্টা। দ্বারকানাথের প্রতি রুক্মিণী - কুমারী নারীর লেখা একমাত্র পত্র। এ হল কখনও চোখে না দেখে প্রেম, বর্ণনামাত্র শুনে কেবল। এ কাহিনি, অর্থাৎ রুক্মিণীহরণ ভাগবতের দশম স্কন্দের। তৃতীয় পত্রে রুক্মিণী মনে মনে বাগদত্তা, দ্বিতীয় পত্রে সংসারী নারী সংসার ভাঙতে চাইছে সমাজ-বহির্ভূত প্রেমে; সেখানে তৃতীয় পত্রে সংসার গড়তে চাইছে কুমারী মেয়েটি, কিন্তু নিজের পছন্দে। রুক্মিণী লজ্জাশীলা, অন্তর্মুখী। 'তোমা বিনা নাহি গতি অভাগীর আর এ সংসারে' - অর্থাৎ একজন রাজকুমারী হয়েও, নেহাৎ নিরুপায় হয়েই তাঁকে শিক্ষা, সংযম ও আত্মমর্যাদা সরিয়ে রেখে এভাবে পত্র লিখতে হচ্ছে পরিত্রাতা শ্রীকৃষ্ণের কাছে। সাধে কি আর রাজা রামমোহন রায় লিখেছেন, "স্ত্রীলোকদিগের বুদ্ধির পরীক্ষা কোন্ কালে লইয়াছেন যে তাহাদিগকে অল্পবুদ্ধি কহেন?"

যতদূর জানা যায় ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণে কিন্তু সোমের প্রতি তারার তরফ থেকে কোনো অবৈধ সম্পর্কে আগ্রহী হওয়ার উল্লেখ নেই! দেব পুরোহিত বৃহস্পতির পত্নী তারা এবং শিষ্য সোমের মধ্যে সম্পর্কের এই অভিনব মাত্রা সংযোজন ১৯ শতকের সমাজ-সংস্কার আন্দোলনের প্রেক্ষিতে, মধুকবির নিজস্ব। অর্থাৎ মূল কাহিনিতে যেখানে সোম তারাকে বলপূর্বক অপহরণ করে নিয়ে গিয়ে আটকে রাখে ও পরিণতিতে তারা অন্তঃসত্ত্বা হয়ে ফিরে আসে - 'দত্তকুলোদ্ভব' কবি সেখানেই তারা-র চরিত্রে সঞ্চার করতে চেয়েছেন ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য। তারার দ্বিধা-দ্বন্দ্ব, আত্মিক সংকট যে নাটকীয় মুহূর্তগুলি তৈরি করেছে, তা অবিলম্বে উপনীত হয়েছে গীতিকবিতার উপকন্ঠে - "কি আর কহিব ?

জীবন মরণ মম আজি তব হাতে!" নিজেকে স্বধর্মচ্যুত মনে হলেও তারা নিজেই চিঠিতে লিখছেন, -

"গুরুপত্নী বলি যবে প্ৰণমিতে পদে,

সুধানিধি, মুদি আঁখি, ভাবিতাম মনে,

মানিনী যুবতী আমি, তুমি প্রাণপতি,

মান-ভঙ্গ-আশে নত দাসীর চরণে !

আশীৰ্ব্বাদ-ছলে মনে নমিতাম আমি !" প্রেমে গুরুপত্নী এখানে শিষ্যের কাছে নতজানু! আবার "কুলের পিঞ্জর ভাঙ্গি, কুল-বিহঙ্গিনী উড়িল পবন-পথে, ধর আসি তারে, তারানাথ"! - প্রেমাস্পদের কাছে এমন দাবী করতেও তিনি কুন্ঠিতা নন।নারীত্বের প্রতি পূর্ণ মর্যাদাদানে, ঋষিকন্যা-ঋষিপত্নী জনার অবৈধ ও বৈপ্লবিক প্রণয় সম্ভাষণ 'সোমের প্রতি তারা' পত্রটিকে সে-যুগের বিচারে অনন্যতা দান করে। মুক্তপ্রেমের জয়গান এই পত্র, সাহিত্যে আবার এই আবেগমথিত সমাজনিন্দিত প্রেমই নন্দিত। তারার পত্রে ‘জীবন মরণ মম আজি তব হাতে' - এমন পঙক্তি বৈষ্ণব পদের কথা মনে করায়। আবার 'তারানাথ তুমি,

জুড়াও তারার জ্বালা।' - এমন উক্তি বাক্ বৈদগ্ধে, কল্পনা নৈপুণ্যে পত্রটিকে স্মরণীয় করে তুলেছে।

'দশরথের প্রতি কেকয়ী (কৈকয়ী)' পত্রটির উৎস বাল্মীকি-রামায়ণ। আপন প্রতিজ্ঞা বিস্মৃত হয়ে কৌশল্যানন্দন রামচন্দ্রকেই যুবরাজ পদ প্রদানের ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন স্বয়ং দশরথ, দাসী মন্থরার মুখে এই সংবাদ জানতে পেরে কেকয়ী স্বামী দশরথের উদ্দেশ্য এই পত্রটি লিখেছিলেন। দশরথের নৃপতিসত্তা বনাম রাজমহিষী রূপে কেকয়ীর অস্তিত্ব - দাম্পত্যরঙ্গে অনুযোগ অভিযোগে রূপান্তরিত হওয়াটাই স্বাভাবিক। তির্যক প্রতিবাদী ভঙ্গিতে সেখানে কেকয়ী চাইছেন, প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের সংবাদটি ন্যায়পরায়ণ রাজা নিজমুখেই স্বীকার করুন। ‘জন্মিল কি পুত্র আর?’ - এহেন প্রশ্নবানে দশরথের অন্তর্দাহ ঘটিয়ে মনের জ্বালা মেটাতে বদ্ধপরিকর কেকয়ী। পঞ্চম স্তবক থেকে কেকয়ীর সপত্নী বিদ্বেষ, অবদমিত বঞ্চনার নিগুঢ় অন্তর্বেদনা ক্রমশ ব্যক্তিত্বহীন ও কামাচারী এক দুশ্চরিত্র রাজার প্রতি, প্রখর আত্মসম্মানবোধ-সম্পন্না স্ত্রীর রক্তচক্ষুরূপে প্রকট হয়ে উঠেছে। ১৯ শতকের নারী নিছক পুরুষের ভোগ্যা নন, সে-কথাই যেন এই পত্রের ছত্রে ছত্রে প্রকাশ পেয়েছে। এভাবেই নাটকীয় একোক্তির মাধ্যমে কেকয়ী চরিত্রটির মানসিক কিছু টানাপোড়েনও তুলে ধরেছেন মহাকবি। স্বামীর উদ্দেশ্যে শেষ পর্যায়ে ‘পরম অধর্ম্মাচারী রঘু কুলপতি' লিখতে তিনি কিছুটা সময় নিয়েছেন; কাব্যগ্রন্থের অন্যান্য রহস্যপ্রিয়া পত্রপ্রেরিকার মতো তিনিও প্রকৃত সত্য জেনেও না জানার ভান করে গিয়েছেন বহুক্ষণ, সুযোগ নিয়েছেন দ্ব্যর্থকতার। আদিকবির গতানুগতিক পৌরাণিক চরিত্রটিকে এভাবেই যুগোপযোগী করে তুলেছেন মধুসূদন।

পঞ্চম পত্রে পঞ্চবটী অরণ্যে নির্বাসিত বনবাসী রামানুজ লক্ষ্মণকে দেখে 'মেঘের আড়ালে যেন পূর্ণশশী' বলে মনে হয়েছিল সূর্পণখার, তখনও সে লক্ষ্মণের পরিচয় জানত না। রোমান কবি ওভিদ (Ovid) -এর লেখা 'Heroides' কাব্যের সপ্তম পত্রের সঙ্গে এই পত্রটির বিষয়গত সাদৃশ্য আছে... ওভিদের রচনায় রাজা 'Sychaeus'-এর বিধবা পত্নী রাণী 'Dido' ভিনদেশী বিপন্ন রাজকুমার ‘Aeneas’-এর প্রেমে পড়ে এমনই প্রেমাকুল অভিব্যক্তিতে তাঁর প্রেমপত্রটি লিখেছিলেন, মধুকবির কাব্যে সেই রোমান্টিকতারই প্রতিফলন ঘটেছে। আরো মিল আছে অবশ্য। সূর্পণখা কিন্তু বিধবা, দানব রাজপুত্র বিদ্যুজ্জিহ্বাকে তিনি বিবাহ করেন। বিদ্যুজ্জিহ্বা পরবর্তীতে রাবণের হাতে নিহত হন। রাবণ তাঁর ভুলের প্রায়শ্চিত্ত স্বরূপ বিধবা ভগিনীর যথাসম্ভব মানসিক সুখ-শান্তির জন্য দণ্ডকারণ্যে নির্বিঘ্নে ভ্রমণের ব্যবস্থা করেন, সেসময়েই তার সামনে আবির্ভূত হয় বনচারী ভিনদেশী রাজকুমার লক্ষ্মণ, ঠিক ‘Aeneas’-এর মতো। একমুখী বর্ণনাধর্মী হওয়ায় এই পত্রে নাটকীয়তা তুলনামূলকভাবে কম, তবে পরিবর্তে নারী-হৃদয়ের সহজ-সরল স্বীকারোক্তি পাঠকমনে আলোড়ন তুলতে সক্ষম হয় -

"কোন্ যুবতীর নব যৌবনের মধু 

বাঞ্ছা তব? অনিমেষে রূপ তার ধরি,

(কামরূপা আমি, নাথ) সেবিব তোমারে!"

দুর্যোধনের প্রতি ভানুমতীর পত্রে ভানুমতী স্বপ্নে দেখেছে কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে পাণ্ডব কর্তৃক ভীষ্ম, দ্রোণ, কর্ণ, দুর্যোধন প্রমুখের করুণ মৃত্যুর  দৃশ্য। সে ভীত হয়ে এই অন্যায় যুদ্ধ বন্ধ করে স্বামীকে ন্যায়ের পথে ফিরে আসতে অনুরোধ করেছে। সুতরাং সাক্ষাৎ ধ্বংসের করাল তাণ্ডব থেকে রক্ষা পেতে, পাণ্ডবদের পাঁচটি গ্রাম দিয়ে সন্ধি করতে অনুরোধ করেছে সে - 

"এস তুমি, প্রাণনাথ, রণ পরিহরি! 

পঞ্চখানি গ্রাম মাত্র মাগে পঞ্চরথী। 

কি অভাব তব, কহ? তোষ পঞ্চ জনে; 

তোষ অন্ধ বাপ মায়ে; তোষ অভাগীরে..." হ্যাঁ, এক্ষেত্রে ক্ষত্রকূলবধূর গৌরব লাঘব হয়েছে বটে, কিন্তু সেই সংস্কার নয়; চিরাচরিত সংস্কার সরিয়ে রেখে ভানুমতী ন্যায় ও কিঞ্চিত আত্মসুখের প্রতিই দৃষ্টিপাত করেছেন। মিথ্যা কলহ নয়, স্বামীকে সত্যের পথে ফেরাতে চেয়েছে সে। তাই বলা যায়, পত্রটিতে ভানুমতীর দৃঢ়তা ও যুক্তিবাদী মন, তার ন্যায়বোধ, এবং স্বামীর প্রতি হিতাকাঙ্ক্ষাই প্রকাশ পেয়েছে।

দ্রৌপদীর অপমান, গান্ধারীর স্বেচ্ছায় আমৃত্যু অন্ধত্ব বরণ, মাদ্রীর মৃত্যু, সত্যবতীর দুর্ভাগ্য, কুন্তীর হাহাকার প্রভৃতি অসংখ্য নারীর কান্না যেন তলিয়ে গেছে পুরুষ চরিত্রগুলির তর্জন-গর্জনে। নারীহৃদয় অনুঘটক হয়েছে যুদ্ধের আবহ তৈরি করতে! মহাভারতে ধৃতরাষ্ট্র ও গান্ধারীর একমাত্র কন্যা, জয়দ্রথের পত্নী দুঃশলাও ভাগ্যদোষে সেই নির্মম পরিণতির শিকার। নিজ ভ্রাতা জ্যেষ্ঠ দুর্যোধন-দুঃশাসনের কুকীর্তি ও পাপের কথা স্মরণ করিয়ে স্বামীকে গোপনে ছদ্মবেশে বেরিয়ে আসার অনুরোধ করেছে দুঃশলা তার পত্রে, লিখেছে -

"... অবিলম্বে যাব

এ পাপ নগর ত্যাজি সিন্ধুরাজালয়ে!" - বস্তুত সে স্বামীকে সৎপথে চালিত করতে চেয়েছে অন্যায় যুদ্ধের প্রকৃত স্বরূপ উন্মোচন করে, তারই জন্য যুক্তি সাজিয়েছে সুকৌশলে।

শান্তনুর প্রতি জাহ্নবীর পত্রে জাহ্নবীর মধ্যে স্বামী ও সন্তান উভয়ের প্রতিই কর্তব্যবোধের দৃঢ়তা ও স্পৃহা লক্ষণীয়। স্বামীকে প্রতিশ্রুতিভঙ্গের কথা স্মরণ করিয়ে তিনি স্পষ্টই বলেছেন, -

"পত্মীভাবে আর তুমি ভেবো না আমারে।" - কিন্তু পুত্র দেবব্রতকে (পরবর্তীতে পিতামহ ভীষ্ম) তিনি উপযুক্ত উত্তরাধিকারীরূপে প্রস্তুত করে তুলেছেন, সর্ব বিদ্যায় পারদর্শী করে তুলেছেন; তাই স্বামীকে তিনি পুরাতন স্মৃতি ভুলে পুত্রকে সিংহাসনের যোগ্য উত্তরাধিকারী রূপে গ্রহণ করতে পরামর্শ দেন। বলেন, -

"ভুল ভূতপূৰ্ব্ব কথা, ভুলে লোক যথা 

স্বপ্ন-নিদ্রা-অবসানে!" কারণ এ চির-বিচ্ছেদে এই একমাত্র ঔষধ।

কালিদাসের ‘বিক্রমোবর্শী’ নাটক থেকে রসদ সংগ্রহ করে মধুসূদন লিখেছেন, দশম পত্র - 'পুরুরবার প্রতি ঊর্ব্বশী'। সুন্দরীশ্রেষ্ঠা ও অনন্তযৌবনা অপ্সরা পত্রের প্রথমেই বলছেন, - "স্বর্গচ্যুত আজি, রাজা, তব হেতু আমি!" - কুন্ঠাহীনা ঊর্বশী মনে করেছেন, "কি কাজ শরমে?" স্বর্গের নর্তকী হয়েও পুরুরবার প্রতি তার এরূপ আকর্ষণের কারণ, দৈত্য কেশীর কবল থেকে উদ্ধার-কালে চন্দ্রবংশীয় রাজা পুরুরবার রূপ-গুণ ও শৌর্য-বীর্য দর্শন। দেখুন অভিশপ্ত হয়েও তার স্পষ্ট স্বীকারোক্তির দৃঢ়তা -

"বিকাইব কায়মন: উভয়, নৃমণি, 

আসি তুমি কেন দোঁহে প্রেমের বাজারে!" - ইন্দ্রের সভায় ভরত ঋষির অভিশাপ কামজর্জর ঊর্বশীর কাছে 'কৃপা' বলেই মনে হয়েছে। সেই প্রেমেরই সাহসে ভর করে সে উত্তরের প্রতীক্ষায় থাকবে, জানিয়েছে।

দশরথ-পত্নী কেকয়ী ও নীলধ্বজের পত্নী জনা তাঁদের স্বামীদের আচরণে ক্রুদ্ধ হয়ে, অভিমানে দুটি অনুযোগপত্র রচনা করেন - সেই দু'টিও ভাবে ভাষায় আলাদা হয়েও কোথাও গিয়ে অন্তরে এক। অর্জুন ও কৃষ্ণের প্রতি কঠিন বাক্যবাণ ও তির্যকভাবে ব্যক্তিগত প্রসঙ্গ টেনে এনে প্রবল আক্রমণ - জনাকে স্বাতন্ত্র্য দান করে, বুঝিয়ে দেয় সে কতটা বেপরোয়া। স্বামীর প্রতি ক্ষুব্ধ হয়েছেন, ক্রুদ্ধ হয়েছেন জনা, নানাভাবে স্বামীকে সচেতন করতে চেষ্টা করেছেন। কারণ পুত্রহন্তা কৃষ্ণার্জুনকে তাঁর স্বামী নীলধ্বজ সাদরে রাজপুরীতে আশ্রয় দিয়েছেন, পুজো করেছেন নরনারায়ণ-জ্ঞানে। লক্ষ করার বিষয় এত কিছুর পরেও জনার পতিপ্রেম, স্বামীর প্রতি শ্রদ্ধা ভক্তি ম্লান হয়নি। ক্ষত্রিয় রমণী হিসেবে তাঁর আত্মমর্যাদায় আঘাত লাগলেও স্বামীকে তিনি অবমাননা করেন নি। এই পত্রিকা বীরাঙ্গনা কাব্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ পত্রিকা বলে অনেকেই মনে করেন, কারণ মাতৃহৃদয়ের শোক জনাকে আশ্চর্য গরিমা দান করে- "... কেমনে তুমি, হায়, মিত্রভাবে

পরশ সে কর, যাহা প্রবীরের লোহে

লোহিত? ক্ষত্রিয়ধর্ম্ম এই কি, নৃমণি?

কোথা ধনু, কোথা তুণ, কোথা চর্ম্ম, অসি?"

ক্রোধে জনা মহাভারত-রচয়িতা ব্যাস বা পিতামহ ভীষ্মকেও আক্রমণ করতে ছাড়েন না -  "ধীবরী জননী, পিতা ব্রাহ্মণ! করিলা

কামকেলি লয়ে কোলে ভ্রাতৃবধূদ্বয়ে

ধর্ম্মমতি! কি দেখিয়া, বুঝাও দাসীরে,

গ্রাহ্য কর তাঁর কথা, কুলাচার্য্য তিনি

কু-কুলের?"

-  পত্রটি শেষ হয় কোণঠাসা মাতৃহৃদয়ের নিদারুণ হাহাকারে, যা অনির্বচনীয় --

"যাচি চির বিদায় ও পদে!

ফিরি যবে রাজপুরে প্রবেশিবে আসি,

নরেশ্বর, 'কোথা জনা?' বলি ডাক যদি

উত্তরিবে প্রতিধ্বনি 'কোথা জনা?' বলি!"

সমালোচক অমরেন্দ্র গনাই তাঁর 'কবি শ্রীমধুসূদনের বীরাঙ্গনা কাব্য' শীর্ষক গ্রন্থে মন্তব্য করেছেন, "বীরাঙ্গনার বক্তব্য নাটকীয় সংলাপ নয়, পত্রিকা (Letter) যদিও সেই পত্রিকা এমনই বিশিষ্ট রীতিতে রচিত হইয়াছে, যাহার মধ্যে নাটকীয়তা অবশ্যই আছে। বস্তুতঃ মধুসূদনের অবলম্বিত রীতি এত অভিনব যে তাহাকে 'dramatic monologue' বলিলে তাঁহার নব-সৃজনী-প্রতিভাকেই অস্বীকার করা হয়। ইহার স্বাতন্ত্র্যই ইহার চূড়ান্ত বৈশিষ্ট্য - এই অভিনবতাই প্রতিভার নির্ভুল স্বাক্ষর।" সত্যিই তো বীরাঙ্গনা কাব্যে আমরা দেখি, গল্পরসের অব্যাহত ধারা ও নাটকীয়তার আশ্চর্য মেলবন্ধন, যা 'গীতি-আকুলতা'র ভাবসমুদ্রের উপর ডুবো-পাহাড় শৃঙ্গের মতোই মাথা উঁচু করে রয়েছে। বীরাঙ্গনার 'কাব্যদেহে ঐ ত্রিধারা একাত্ম'।প্রকৃত প্রস্তাবে মধুকবির 'মেঘনাদবধ কাব্য' গ্রন্থে প্রমীলা চরিত্রটির মাধ্যমেই বাংলা আধুনিক কাব্যে 'বীরাঙ্গনা'র পদধ্বনি প্রথম শ্রুত হয়। সেখানে প্রমীলা বলছেন, -

"দানব-নন্দিনী আমি, রক্ষঃ-কুল-বধূ; রাবণ শ্বশুর মম, মেঘনাদ স্বামী, - আমি কি ডরাই, সখি, ভিখারী রাঘবে?" নারী এভাবেই গৃহকোণ থেকে, সাধারণের চিরাচরিত গণ্ডি থেকে মুক্তি পেল সাহিত্যে। তারপরে এল ‘বীরাঙ্গনা কাব্য’। এই কাব্যে স্বাধীনচিত্ততা, প্রেম ও প্রাণের প্রবলতা, সংসারের সর্ববাধা উত্তরণের সাহস প্রভৃতি লক্ষণগুলো কবি সঞ্চারিত করলেন তাঁর নির্বাচিত নারী চরিত্রগুলির মধ্যে। জনা ছাড়া দ্রৌপদী, দুঃশলা ও ভানুমতী - এই চরিত্রগুলি ক্ষত্রিয় নৃপতির স্ত্রী হওয়া সত্ত্বেও যুদ্ধবিরোধী আচরণ করেছে। এই লক্ষণ বীর্যবতী রমণীর নয় বলে মনে হওয়াই স্বাভাবিক; সুতরাং রাণী দুর্গাবতী বা, ঝাঁসির রাণী লক্ষ্মীবাইয়ের মতো বীর নারী চরিত্র অঙ্কন করবার লক্ষ মধুসূদনের ছিল না। লঘু বিচারে এই কাব্যের নারীরা সাহসের সঙ্গে নিজ নিজ অন্তর্জীবনের কথা অবলীলাক্রমে প্রকাশ করেছেন, বীরত্বের সঙ্গে আত্মঘোষণার জন্য 'বীরাঙ্গনা' নাম পরিকল্পনা - এমন মনে হতে পারে। আবার 'প্রেরণাদাত্রী নারী' - অর্থেও তারা বীরাঙ্গনা! তারা বীর ও অঙ্গনা, তারা শ্রেষ্ঠ নারী হিসেবে বিবেচ্য; বীর্য ও সৌন্দর্যের মিলিত পরিচয় নিহিত সেখানে। সতী, সাধ্বী শব্দগুলি বহু ব্যবহারে হয়ে পড়েছে মলিন এবং একমাত্রিক। মধুসূদন তাই এক্ষেত্রে 'অঙ্গনা' শব্দটিকে বেছে নিয়েছেন বিকল্পরূপে। সৌন্দর্য, প্রেম ও বীর্যে বীরাঙ্গনা কাব্যের প্রতিটি নারী চরিত্রই অনন্যসাধারণ হয়ে উঠেছে, সুতরাং কাব্যটির নামকরণও সার্থক হয়ে উঠেছে। প্রসঙ্গত কবি বইটি উৎসর্গ করেছেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মহাশয়কে, যা যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ। এবার রবীন্দ্রনাথের ভাষায় সমাপ্তি টানা যায় - "নারীকে আপন ভাগ্য জয় করিবার / কেন নাহি দিবে অধিকার / হে বিধাতা?...

কেন না ছুটাব তেজে সন্ধানের রথ / দুর্ধর্ষ অশ্বেরে বাঁধি দৃঢ় বল্‌গাপাশে।" (কবিতা : 'সবলা', কাব্যগ্রন্থ: 'মহুয়া', রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর)।

-------০০০-------

তথ্যসূত্র : ১/ 'ঊনবিংশ শতাব্দীতে বাঙ্গালার নবজাগরণ' : ডক্টর সুশীলকুমার গুপ্ত। ২/ 'কবি শ্রীমধুসূদনের বীরাঙ্গনা কাব্য' (বীরাঙ্গনা'র প্রকাশরীতি, গঠন কৌশল, ভাষা ও ভঙ্গী): অমরেন্দ্র গনাই। ৩/ 'বীরাঙ্গনা কাব্য' : মাইকেল মধুসূদন দত্ত। ৪8/ 'মহুয়া' কাব্য : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

 

মুদ্রিত সংখ্যার প্রচ্ছদ


মুদ্রিত সংখ্যা সংগ্রহ বিষয়ক জরুরি কথা

নবপ্রভাত ব্লগজিনের ৬৮তম সংখ্যা (কার্তিক ১৪৩০ অক্টোবর ২০২৩) প্রকাশিত হল। কথামতো এই সংখ্যাটি বই (মুদ্রিত পত্রিকা) আকারে একটি প্রকাশনী থেকেও প্রকাশিত হল। ফন্ট একটু ছোট রেখে সাড়ে আট ফর্মার পত্রিকা হয়েছে। মুল্য ১৭৫ টাকা। তবে আমরা একটা কোড দিচ্ছি ( কোড: NABAPRAVAT30 )। এটা অর্ডার ফাইনাল করার সময় ব্যবহার করলে ১৪৯ টাকায় বইটি পাওয়া যাবে। অর্ডার করলে বাড়িতে বসেই পেয়ে যাবেন।  (একটি সংখ্যার জন্য ডেলিভারি চার্জ নেবে ৫০ টাকা। একাধিক নিলে ডেলিভারি চার্জ অনেকটাই কমবে। এটা প্রকাশনা সংস্থার নিজস্ব নিয়ম।)  কোড ব্যবহার করলে ১৯৯ টাকায় (ডেলিভারি চার্জসহ) বইটি পেয়ে যাবেন।  আগ্রহীরা সংগ্রহ করতে পারেন। 

যাঁরা অনলাইন অর্ডারে স্বচ্ছন্দ নন, অথবা, অনলাইনকে বিশ্বাস না করে আমাদের থেকে পত্রিকা সংগ্রহ করতে চান তাঁরা শুধু মুদ্রিত মূল্য ১৭৫ টাকা আমাদের পাঠাতে পারেন। আমরা দায়িত্ব নিয়ে আপনার ঠিকানায় বইটি পাঠিয়ে দেব। হাতে হাতে নেওয়া সম্ভব হলে ১৫০ টাকা পাঠালেই হবে। আমরা আনিয়ে দেব।

 আমাদের গুগুল পে / ফোন পে নম্বর ৯৪৩৩৩৯৩৫৫৬।  প্রয়োজনবোধে এই নম্বরে স্বচ্ছন্দে call বা whatsapp করতে পারেন।

মুদ্রিত সংখ্যা অর্ডার করার লিঙ্ক:  

https://notionpress.com/read/nabapravat-utsab-2023

 

 

==================

 

এই মুদ্রিত সংখ্যাটি প্রকাশনা সংস্থা থেকে eBOOK আকারে সামান্য মুল্যে সংগ্রহ করতে চাইলে, নিম্নলিখিত লিঙ্কে ক্লিক করে অর্ডার করতে পারেন



 

 

মন্তব্যসমূহ

নবপ্রভাত সম্মাননা ২০২৪

নবপ্রভাত সম্মাননা ২০২৪

জনপ্রিয় লেখা

মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা 2024 সংখ্যার জন্য লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি

প্রবন্ধ ।। লুপ্ত ও লুপ্তপ্রায় গ্রামীণ জীবিকা ।। শ্রীজিৎ জানা

সাহিত্যের মাটিতে এক বীজ : "ত্রয়ী কাব্য" -- সুনন্দ মন্ডল

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৬৭তম সংখ্যা ।। আশ্বিন ১৪৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩

কবিতা ।। বসন্তের কোকিল তুমি ।। বিচিত্র কুমার

কোচবিহারের রাস উৎসব ও রাসমেলা: এক ঐতিহ্যবাহী অধ্যায় ।। পার্থ সারথি চক্রবর্তী

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৭৪তম সংখ্যা ।। বৈশাখ ১৪৩১ এপ্রিল ২০২৪

অনুভবে, অনুধ্যানে অনালোকিত কবি গিরীন্দ্রমোহিনী দাসী ।। সুপ্রিয় গঙ্গোপাধ্যায়

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৬৬তম সংখ্যা ।। ভাদ্র ১৪৩০ আগস্ট ২০২৩