কবিতা ।। বসন্তের কোকিল তুমি ।। বিচিত্র কুমার - নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

Breaking

নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

NABAPRAVAT : A Monthly Bengali Literary Blogzine.

Thursday, April 15, 2021

কবিতা ।। বসন্তের কোকিল তুমি ।। বিচিত্র কুমার



বসন্তের কোকিল তুমি

 বিচিত্র কুমার

 
                   (০১)

তোমার দু-আঁখির গহীন অরণ্যে
একটা স্বপ্নের বহমান নদী রয়েছে,
তারই রেশ ধরে আমি হেঁটে চলি
অজানা বসন্তের পথে নীর উদ্দেশ্যে।

সে চলার কোন শেষ সীমা নেই
তাই আমার বিষণ্ণ একতারা সন্ন্যাস খুঁজে ফিরে ,
কবে তুমি বুঝবে অনুশ্রী মনের পর্দা খুলে
একুশ বসন্ত তোমার রঙ ছিটিয়ে যাচ্ছে অচিনপুরে।

এদিকে আমার দেহের প্রতিটি শিরা ধমনীতে প্রবাহিত হচ্ছে
তোমার ভালোবাসার একটু উষ্ণতা পাবার জন্যে,
শুধু অনুভবে তাণ্ডব উচ্ছাসিত হচ্ছে---

যেদিকে তাকাই ---
ফুলে ফুলে ভ্রমর গুনগুনিয়ে উড়ে উড়ে পরে
বসন্তের কোকিল গান গায় নব বসন্তে,
তোমার দুই চোখে আমার একই ছায়া রয়ে যায়
উতলা ভালোবাসার সীমান্তে।
 

              (০২)
 
    এক রক্তাক্ত বসন্তের স্মৃতি


কোন এক উতলা বসন্তের সকালে পুষ্পবনে
ফুটেছিল একটি টকটকে লাল গোলাপ,
তার সাথে হয়েছিলো দেখা প্রথম ফাগুনে
হয়েছিল দুজনার এ জীবনের আলাপ। 

তারপর প্রতিটি শীতের ভোরে অনেক রোদের পরশ মেখে 
ছুঁয়ে যেতে আমার বুকের বাঁ পাস শিশির রেখা,
তখন প্রতিটি ভোর হয়ে যেত ভীষণ রকম মিষ্টি 
আর ছিলো শুধু বসন্তের ঘ্রাণ মাখা।

প্রতিটি সকালে একঝাঁক মায়াবী পাখি অনুভবের সব চুম্বন 
চিকিমিকি রোদ্রে নিয়ে চলে যেত তোমার কাছে নীরবতায়,
তোমার চুলের স্নিগ্ধ ঘ্রাণে পাগল দিবানিশি 
ভাসমান মেঘের মতোই উড়ে আসত আমার জানালায়।

প্রকৃতির নিয়মের মতো একদিন তাকেও
তুলে বিক্রি করা হলো কোন মালির দোকানে,
আমার অজান্তে গোপনে গোপনে-
অবশেষে,আমি টের পেলাম একটা দুঃস্বপনে।

রাহু গ্রাসে অন্ধ প্রেম আচ্ছন্ন হয় ঘন কুয়াশায়
স্বার্থহীনভাবে ভালোবেসেও হৃদয় আজ মরুভূমি
কথা ছিল যাবে নাকো আমায় ছেড়ে তুমি
জানি না,কোথায় আজ বন্ধু তুমি?

কখনো কখনো মনের বাসর সাজায়ে কেন
এ জীবন ধুধু মরিচিকা হয়,
কিসের অভাব আছে এই দুনিয়ায়
সত্যিকারের প্রেম কেন রাত্রি গভীরে কাদায়।

                         (০৩)
 
                 বসন্তের উৎসবে

মন ছুঁয়ে যায় বারবার আনন্দ কলরবে
গাছের ডালে কোকিল ডাকে মাঝেমাঝে রবে,
সারাক্ষণ অন্তরে বাজে অজানা একটা মিষ্টি সুর
আবির মাখা রঙিলা সেই বসন্তের উৎসবে।

লাল নীল হলুদ ফ্রেমে পরীরা গান করে
যৌবন দৈত্যদের বেভুল অসতর্ক প্রেমে,
বুলবুলিরা পাখাঝাপটায় নিত্য আর গানে
চৈত্রের কাটফাটা রৌদ্র কিম্বা প্রচণ্ড বৃষ্টিতে
                        রঙ্গমঞ্চ থাকে না যে থেমে।

ফুল দেয় নতুন জগৎ টাকা উড়ায় কোটিপতি 
মৌমাছিরা গান ধরে তালি দেয় হাসিহাসি,
উড়ে আসে পাখি উড়ে যায় প্রজাপতি 
বসন্তের উৎসবে শত রাশিরাশি। 

                  (০৪)
 
  আগামী একটা বসন্তের জন্যে

তোমার চলে যাওয়াতে বেদনার ফুল ফোটে
ধমনীর ভিতরে শিরায় শিরায় হৃদয় চিত্রপটে,
রঙ ধনুর রঙ মুছে যায় নীল আকাশে
রঙিন স্মৃতিগুলো হারিয়ে যায় স্বপ্নের মাঠে।

শুধু থেকে যায় তোমার পদচিহ্ন নকশীকাঁথাতে
সুগন্ধী ফুলের সুবাস রয়ে যায় সাগর উপসাগরে
সুখ পাখিরা উড়ে যায় কথা দিয়ে
হাওয়ায় হাওয়ায় ভেসে অচিনপুরে।

আর আমি ঠিক যেন হাল ভাঙ্গা পাল ছেঁড়া নাবিকের মতন
কোটিকোটি বছর আগামী বসন্তের প্রতীক্ষায় বসে আছি,
হারিয়ে ফেলেছি আসল গন্তব্য আমি---

দুচোখের দৃষ্টি ঝপসা হয়ে গেছে
মাথায় এলোমেলো চুল,
বন উপবন ভিজিয়ে অশ্রু সিক্ত 
কোথায় তুমি আগামী বসন্তের ফুল?

আমি প্রতীক্ষায় আছি শুকনো পাতার মর্মরধ্বনিতে 
কিম্বা ঝরাফুলের মতো শুধু তোমার জন্যে,
কাটিয়ে দেব সময় উজ্জ্বল নক্ষত্রের পতনে 
প্রতীক্ষা আর প্রতীক্ষা আগামীর একটা বসন্তের জন্যে।
------------ 
 


বিচিত্র কুমার
বগুড়া জেলার দুপচাঁচিয়া উপজেলাধীন খিহালী পশ্চিম পাড়া গ্রাম।

1 comment: