Featured Post
মুক্তগদ্য ।। আনন্দ মিশন ।। সীমা ব্যানার্জি রায়
- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
আনন্দ মিশন
সীমা ব্যানার্জি রায়
কে যেন পড়ছে বসে আনন্দমিশন
প্রেম ছাড়া শূন্য এ মহাজীবন...
প্রেম! সে তো ধরাছোঁয়ার বাইরে
এই আছে, এই নেই, দেখি ঘরে ঘরে...
কি কান্ড ! কি কান্ড! দক্ষিণপূর্ব আমেরিকায় পৃথিবীর চতুর্থ বৃহত্তম মিশিশিপি নদীর কাছে আসতেই মন উড়ে গেছে। সেই গঙ্গা আমার মা, পদ্মা আমার মা-র কাছে। আচ্ছা! পৃ্থিবীর সবচেয়ে বড় নদী -'নাইল' কে কেন আমরা বড়মা বলি না? দেশের বাইরে তাই- সৎ মা! তাই? হয়...ত তাই। ঠাকুরমা-র ঝুলি থেকেই সৎ মা-কে তো অন্য চোখে দেখি, কেন দেখি... সৎ তো সৎ-ই হয়...অসৎ নয়, তবে?
ঠিক তেমনি পয়লা বৈশাখ। একলা বৈশাখ মোটেই নয়। সব দেশেই বাঙালিদের কি আনন্দ আকাশে বাতাসে এই পয়মন্ত বৈশাখে... তাই না?
কিন্তু আমার আনন্দ..হম্! আমার আনন্দ আছে পুরনো স্মৃ্তির তক্তপোশে। তক্তপোশ? কবিগুরুর এই অদ্ভুত দেশে আবার তক্তপোশ কোথায়? আছে গো আছে...আমার বিছানার পায়ের কাছে একটা সুন্দর আঁকিবুকি আঁকা কাঠের বাক্স রাখা আছে, পোশাকি নাম তার 'চেস্ট' হলেও ...আমি নাম দিয়েছি তার "ট্রেজার আইল্যান্ড" । সব স্মৃ্তি সেখানে রাখা আছে।
কালবৈশাখির ঝড়? ...ও মাঃ হচ্ছে তো...তবে অন্য নামে, বাহারি নাম তার "থান্ডারস্ট্রর্ম"। বারে বারে ওয়ার্নিং সিগন্যাল.. "বি কেয়ারফুল!...এনি প্রবলেম? কল ৮০০-৪৩৭-৫০০০..." এর মানেই তো পয়লা বৈশাখের বাঁশি। ~আহা! কি সুন্দর মিল । সবই তো হচ্ছে তবে অন্য রূপে, অন্য সুরে, অন্য দেশে।
এই প্রিয় সকালে একটা নতুন বাঙালি শাড়ি তো পরবই। নতুন দিন সব কিছু নতুনের দিকে হলেই ভাল! ছোটবেলা থেকে তাইতো শুনে আসছি...
ছুটির দিন হলে সকাল সকাল ঘুম ভাঙ্গলে মনটা যদি চায়, না হয় একটু কাছাকাছি মন্দিরে ঘুরে আসব। প্রার্থনা একটা সেরে ফেলাই ভাল, হাজারহোক বাঙালির 'নতুন দিন' বলে কথা। "বিশ্বাসে মিলায় বস্তু, তর্কে বহুদূর।"...
আগে থেকে প্ল্যান করে বাড়িতে একটা পটল্যাক পার্টি -ও করতে পারা যায়। ওরে বাবা!...বেড়ালের গলায় ঘণ্টি বাঁধবে কে? সোজাসুজি বললে দাঁড়ায়... কার বাড়িতে হবে এই গেটটুগেদার পার্টি মানে "একলা বৈশাখের" পার্টি।
এই যাঃ "একলা বৈশাখ" মানে হল পয়লা বৈশাখ। এরকমই একটা গেটটুগেদার পার্টিতেই যেন শুনেছিলাম-এই জন্যেই তো আমি আমার কানদুটোকে খুব ভালবাসি। না বলতেই সব কথা কানে ঢুকিয়ে নেয়। নিঁখুত স্টাফ রিপোর্টারের কাজ করে। শেষে একজন-কে বলতে শুনি...একলা নয়, কারণ বৈশাখ তো অনেকগুলো দিন নিয়ে হয় আর কত কিছুও হয় যেমন ঝড়, বৃষ্টি, কালবৈশাখি, নাচ-গান, খাওয়া-দাওয়া, বেড়ানো...তাই আমরা বলি পয়লা বৈশাখ। এই দিনেই তো আমরা সবাই একসাথে থাকি। আমার কান খালি তার কোটরে টকাটক ভরে ফেলেছিল সব কথা। অতিরিক্ত হলে খালি করে দিয়ে নতুন যা পায় তাই ভরে ফেলে..
এই দিনে কোন একটা রেস্টোরান্টে না হয় খেয়ে নেব আবোলতাবোল কিছু কথা বলে। বারণ ছাড়াই সর্বনাশা চোখ ঘুরে বেড়াক না বাঙালির খোঁজে এদিক ওদিক, ক্ষতি কি! উঁহু! আমেরিকান, মেক্সিকান, লেবানীজ, চাইনীজ, ইটালিয়ান, থাই...সব বাদ এই দিনে...
তাহলে বাঙালি খাবার? তা না হয় নাই বা পেলাম... ভারতীয় খাবার-ই সই। একেবারে পিওর ভারতীয় খাবার। মাছের মুখ দেখা তো অষ্টাদশী-চাঁদের মত। অবশ্য এখন সবই পাওয়া হাতের মুঠোর মধ্যে। কিছু বাঙালি মিলে না হয় একটা রেস্টোরান্টকে ভাড়াও নিয়ে ফেলব। সময়ের আগে নয়ত পরে হাজির হয়ে যাব ঠিক। সবার আগে লাইন-এ দাঁড়িয়ে মুখ বুজে খেয়ে নেব। খেয়ে না হয় একটু এদিক ওদিক দেখে নিজেদের যে ছোট্ট টেবল-এ দল থাকবে। তারা মিলে কিছু নিন্দেও সেরে ফেলব। তা কি হয়? বাঙালি এক যায়গায় হব আর নিন্দে করব না? না, না এটা ঠিক নয়। তাহলে বাঙালির বাঙালীত্ব কোথায়? আরে বাবা, নিন্দে শুনলেও তো কিছু অজানা আর অচেনাকে চেনা যায়... নাকি? এটা তো খাঁটি কথা। নিন্দে আর পি এন পি সি ছাড়া কি-ই-বা গল্প থাকতে পারে? নিজেদের গল্প কেন কষ্ট করে ছুঁচে পড়াই। পরের হাপুস হুপুস গল্পেই মন মাতাই। ঠিক সেই চাতক পাখীর গল্পের মত। 'চাতক পাখী কেবল মেঘের জল খায়। গঙ্গা, যমুনা গোদাবরী জলে জলময়। সাত সমুদ্র ভরপুর। তবু সে জল খাবে না। মেঘের জল পড়বে তবে খাবে।' চারিদিকে ভোগের কত উপকরণ, আমোদনের ফুল-ফল, তবু আমাদের পিপাসা মেটে না। আমরা 'ফটিক-জল ফটিক-জল' করে বেড়াই দিনরাত্রি।
তবে এটাও ঠিক বাঙালিদের মধ্যে ঠাকুরের কথার মতন "একডেলে গাছও আছে, আবার পাঁচডেলে গাছও আছে।" কাজেই হলেও বা।
সাত সমুদ্র তেরো নদীর পাড়...
এখানে দলে দলে বাঙালিরা আ...র...
ওমা! কথায় তো আছে আমার আর কি দোষ। আমি তো আর নই নন্দ ঘোষ!
যেখানে বাঙালি
সেখানেই কালীবাড়ি
যেখানে বাঙালি
সেখানেই দলাদলি!
তা থাক, দলাদলি-ই থাক আর আঁতলামি থাক। বেঁচে আছে তো বাঙালি। বেঁচে থাক বিবেকানন্দ, রবীন্দ্রনাথ, বিদ্যাসাগর, জীবনানন্দ-এর বাঙালি...
ফুলের কাছে না গেলে যেমন ফুলের গন্ধ পাওয়া যায় না, ঠিক তেমনি বাঙালির সাথে না মিশলে কি আর বাঙালি-কে চেনা যায়? একেবারেই চেনা যায় না। কবি শ্রী রামকৃষ্ণ বলেছেনঃ " সবাই যদি মনে করে আমার ঘড়ি ঠিক যাচ্ছে। কিন্তু কারু ঘড়ি ঠিক যাচ্ছে না। শুধু সূর্যই ঠিক যাচ্ছে।" একদম খাঁটি কথা নয় কি?
যারা আবার ধোপদুরস্ত আমেরিকান বাঙালি তারা বলেও ফেলবেন হয়ত.... "আদিখ্যেতা...যত্ত সব ন্যা...আ...কামি। থাকব মেম সাহেবের দেশে আর আদব কায়দা করব নিজেদের দেশের। এইজন্যেই তো বাচ্চাগুলো হিমশিম খেয়ে যাচ্ছে"...কারা খাচ্ছে মাম--ড্যাড না বেবিরা?... এই সেরেছে! আবার আঁতলামি আমার?
একবার লিপ ইয়ারের জন্য ২০১২ শনিবারের ছুটির দিন পড়েছিল পয়লা বৈশাখ। ভাবা যায় না।..একেবারে ভাবা যায় না। উইক ডেজে পড়লে সব ম্যাশাকার হয়ে যেত। কাজেই ভালই কাটবে বোঝা যাচ্ছে। ২০২০-২০২১ বছর তো আমরা ঘরে বন্দী। তাও নিয়ম কিছু মানবই।
ব্যাস...হয়ে গেল অভিবাসে বাঙালিদের 'একলা বৈশাখ থুরি পয়লা বৈশাখ'। বছরের নতুন দিন। দেশে বিদেশে সবাই এভাবে মিলে মিশে থাকি ...বেশ ভালোই আছি! আমরা নিজের খবর তো নিজেরা রাখতে পারি না। অন্যের খবরের জন্যে এখানে -ওখানে ঘোরাঘুরি করি। অন্যের ঘরের চার দেওয়ালের ঠিকানার খোঁজে যাই এ-দোরে ও-দোরে। ফেসবুক আমাদের সবার কাছে নেইবারহুড। একটা আঙ্গুলের টরে-টক্কায় জেনে যাচ্ছি ঘরে বসে বিশ্ব-বাঙালির খবর। চারিদিকে রঙের খেলায় মিলেমিশে দুধে আর ভাতে ভালো থাকুক সব বাঙালি, এই প্রার্থনা করি এই পয়লা বৈশাখে।
****************
- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন