নিবন্ধ ।। দোল উৎসব ও গৌর পূর্ণিমা ।। সুদর্শন মণ্ডল - নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

Breaking

নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

NABAPRAVAT : A Monthly Bengali Literary Blogzine.

Thursday, April 15, 2021

নিবন্ধ ।। দোল উৎসব ও গৌর পূর্ণিমা ।। সুদর্শন মণ্ডল


 

দোল উৎসব ও গৌর পূর্ণিমা

সুদর্শন মণ্ডল

 

  দোলযাত্রার কথা কানে আসলেই বাঙালি মন বাউল হয়ে একতারার সুরে নাচতে থাকে। বাংলা তথা সনাতন হিন্দু বৈষ্ণবদের  উৎসব হল এই দোলযাত্রা। ফাল্গুনী পূর্ণিমা তিথিতে কেবল মাত্র বাঙালিরাই যে রঙের উৎসবে মেতে ওঠে তাই নয়, সারা ভারতবাসি এই উৎসবে সামিল হয়।

আমরা সকলেই জানি দোল -পূর্ণিমার দিন বৃন্দাবনের ঘরে ঘরে চলে রঙের উৎসব। নগরের সব বাড়ি গুলো আবিরের রঙে রাঙ্গা হয়ে ওঠে ।সেদিন আপামর মানুষের মনে আলাদা একটা আনুভুতির ঝড় বয়ে যায়। জীবনকে তাঁরা দেখতে চায় নতুন ভাবে।  রঙিন আবিরে বৃন্দাবনবাসি ভালোবাসার স্রোতে ভেসে যেতে চায়। আপন করে পেতে চায় সকল নগরবাসিকে। তাঁরা তো এমনটা করতে চাইবেই। এ যে শ্রী কৃষ্ণের স্মৃতি জরান স্থান। তাই শ্রীকৃষ্ণ আর রাধিকা সাজে অন্যান্য গোপিনীদের সঙ্গে এমন দিনে রঙের খেলাই মেতে ওঠে নগরবাসি ।

দোল-পূর্ণিমাকে যে গৌর-পূর্ণিমা নামেও অভিহিত করা হয় তা আমাদের সকলেরই জানা । এই পূর্ণিমা তিথিতে জগন্নাথ মিশ্র ও শচী দেবীর ঘরে, নদের নিমাই চৈতন্য মহাপ্রভুর জন্ম হয় বলে, নবদ্বীপবাসি দোল পূর্ণিমার এমন নাম দিলেন। গৌর পূর্ণিমার দিনে নবদ্বীপে লাখ লাখ লোকের সমাগম আজও চোখে পরার মতো । এমন দিনে কেউ চৈতন্য মহাপ্রভুর প্রসাদ থেকে বঞ্ছিত হন না । বঞ্ছিত হবার কথাও নয় । যেখানে স্বয়ং ভাগবানের চরণ সোভা পায় সেখানে কি প্রসাদের অভাব হয়! আসলে স্থানীয় ভক্তরাই হাসতে হাসতে প্রসাদের আয়োজন করে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এ আয়োজন কেবল মাত্র যে দোলযাত্রার দিন করা হয় , তা কিন্তু নয় । পনেরো দিন ধরে গৌড়িয় মঠের রান্ন ঘরে চলে তিন বেলার প্রসাদ তৈরির আয়োজন ।

চৈতন্য চরিতামৃত গ্রন্থের বর্ণনা ও পণ্ডিতদের মতে ১৪৮৬ সালের ১৮ই ফেব্রুয়ারী দোল পূর্ণিমার সন্ধ্যায় চন্দ্র গ্রহণের সময় নদিয়ার নবদ্বীপে জন্মনেন গৌর চাঁদ চৈতন্য মহাপ্রভু। এই স্মৃতিকে স্মরণ রাখার জন্য নবদ্বীপবাসি বৈষ্ণব সাজে দোল পূর্ণিমাকে পালন করেন । বদলে যায় উৎসব পালনের ধরন।  দোল পূর্ণিমা রূপ নেয় গৌর পূর্ণিমায় । শ্রী চৈতনের জন্মের প্রায় সারে পাঁচশ বছর পরেও চৈতন্য ধামে আজও দোল পূর্ণিমার দিন মহাপ্রভুর আবিরভাব উৎসব পালন করা হয়। মহাপ্রভুর মন্দির সাজানো হয় পঞ্চামৃত দিয়ে । দোলপূর্ণিমার দিন সোনালি বসন্তের সন্ধ্যায় আকাশে চাঁদ উঠলে মন্দিরে শুরু হয় মহাঅভিষেক । শ্রী চৈতন্য বিগ্রহের প্রতীক হিসাবে জাগন্নাথ মিশ্রের ঘরে পূজিত 'রাজরাজেস্বর' শিলাকে ১০৮ ঘড়া জলে স্নান করানোর হয়। তারপর শুরু হয় অন্যান্য উপচার।সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গে বদলে যায় কীর্তন থেকে আরতি । এর পর রাত যত বারে মন্দিরের হরি কীর্তন তত ঘন হয়ে আসে।

নবদ্বীপ বাসির চৈতন্য মহাপ্রভুকে নিয়ে এসব কিছু  করার পেছনে কারণ আছে। আসলে গৌড়ীয় বৈষ্ণবগণ চৈতন্য মহাপ্রভুকে শ্রী কৃষ্ণের অবতার বলে মনে করে । শুধু নবদ্বীপ বাসিই নয়, ওড়িশার সূর্য বংশীয় সম্রাট গজপতি মহারাজ প্রতাপরুদ্রদেব চৈতন্য মহাপ্রভুকে কৃষ্ণের অবতার মনে করতেন । তাই গৌরাঙ্গ ধাম কৃষ্ণ মিলনে মুখর হয়ে ওঠে । দোল পূর্ণিমার দিনে আকাশ বাতাস ভরে যায় আবিরের গন্ধে। শুরু হয় ভক্তি রসে ভরা মহা মিলন উৎসব।  

-----------------------------  




সুদর্শন মণ্ডল 

মদনপুর, নদিয়া 

ফোন :8293195177

 

 

 

 

No comments:

Post a Comment