Featured Post
ছোটগল্প ।। স্বাধীনতা দিবস ।। সুচরিতা চক্রবর্তী
- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
ছো ট গ ল্প
স্বাধীনতা দিবস
সুচরিতা চক্রবর্তী
সিনেমার অর্ধ জীবন্ত পোস্টার দেখতে দেখতে ফুটপাথ ধরে হাঁটছিলো লাবনী। নায়ক-নায়িকার কত অভিব্যক্তিমণ্ডিত মুখের সারি। এরা কত ভালো আছে। এদের সব আছে। পয়সা খ্যাতি মানসম্মান সব। আহা এমন তো হতেই পারতাম। এমন নায়িকাসুলভ জীবনযাপন খ্যাতি অর্থ সব তো হতেই পারত। কী নেই আমার? চটকদার চেহারা সাবলীল কথাবার্তা আর সবচেয়ে বড় কথা ধৈর্য। এটাই তো জীবনকে গড়তে সাহায্য করে অনেকটা। নিজের মনেই শাড়ির আঁচলের খুঁট দাঁতে কামড়াতে কামড়াতে একটা অভিমানের চোখ নিয়ে দেখছিল এদিক ওদিক। দৃশ্য থেকে দৃশ্যান্তর হচ্ছিলো ফুটপাথের বাদ বাকি বাস্তব। কী যে ছাইপাঁশ ভাবে লাবনী! আজ স্বাধীনতা দিবস। সকালে উদযাপিত স্বাধীনতার পতাকা উড়ছে পতপত করে, লজেন্সের ছেঁড়া কাগজগুলো ছড়িয়ে। কয়েকটা ইটের বেদী করে কারা যেন পতাকা তুলেছিল এখানে। মালাটা এখনো টাটকা আছে। কোনো রাজনৈতিক নেতা হয়তো ফুটপাতের বাচ্চাগুলোকে নিয়ে পতাকা তুলেছে। রাজনৈতিক নেতা নাও হতে পারে। অন্য কেউ হয়তো। দুমিনিট দাঁড়ালো লাবনী । মুহুর্তে মনে পরে গেলো ছবি দিদিমণিরর কথা। স্বাধীনতা দিবসে ছবি দিদিমণি দায়িত্ব নিয়ে দেশাত্মবোধক গানের রিহার্সাল করাতো। এই লম্বা বিনুনি সাদাসিধা তাঁতের শাড়ি। কী গাম্ভীর্য অথচ কী সহজ ছিলো মানুষটা। শুনেছিলাম বারবার গর্ভ নষ্ট হয়ে যাওয়ায় ছবি দিদিমণির হাসবেন্ড আবার বিয়ে করেছিলেন। বালকি চেহারা ছবি দিদিমণি ক্লাশ রুমে এলেই যেন একটা মায়ামমতা ছড়িয়ে পড়ত ক্লাশ জুড়ে। বাংলা ক্লাশে রবীন্দ্রনাথের গল্প কবিতা থাকলে উনি দু’লাইন গেয়ে দিতেন কোনো কোনো গানের দু’কলি। ওঁর টানেই ওঁর পড়া করে আসত সবাই। সেই ছোটবেলার অনুপ্রেরণা। আমি বড়ো হয়ে ছবি দিদিমণি হবো। ক্লাশ নাইনে পড়াকালীন স্কুলে আরো তিন জন নতুন দিদিমণি এলেন। তাদের একজনের নাম ছবি রায় মানে দুজন ছবি দিদিমণি হলেন। দু’একদিনের মধ্যের শুনলাম, আমাদের বাংলার ছবি দিদিমণি বড়ো ছবিদি আর নতুন জন ছোট ছবিদি। এমন করেই ডাকতে শুরু করলো ছাত্রীরা। লম্বা বিনুনির ফ্যাসিনেশন শেষ পর্যন্ত হয়নি অবশ্য। এখন প্রেরণা-অনুপ্রেরণার উৎস খুঁজেই পায় না লাবনী। মানুষগুলো কেমন দুই রকম। বিশ্বাস বস্তুটাই যেন উড়ে গেছে। অনিক তার প্রমাণ দিয়েছে। বাবা বারণ করেছে বলে লাবনীর দিকে আর ফিরে তাকায়নি অনিক। এখন জীবনে ভালো মতো সেটেল করেছে। বাবার কথা মতো ভালো আছে। ভালোই হয়েছে যেখানে সম্মান নেই সেখানে সম্মতি না থাকাই উচিৎ। আজ পনেরোই আগস্টের বিকেল স্বাধীনতার বাতাবরণ। লাবনীর ছুটি ছিলো না। হসপিটালের স্টাফ ক্লার্ক। নটা থেকে পাঁচটা ডিউটি। চেঞ্জও হয় টাইম সিডিউল।
রাস্তা পার হবার জন্য অপেক্ষা করছে লাবনী। অপেক্ষা করছে ঠিক না, আলোটা বেশ কয়েকবার সবুজ হয়ে রাস্তা পার হতে বলেছে লাবনীকে কিন্তু কে শোনে কার কথা।
আচমকা গা ঘেষে দাঁড়ালো এক ঝাঁ চকচকে গাড়ি। কাচ নামিয়ে কেউ "ম্যাডাম--"
এক সুদর্শন যুবক নেমে "কেমন আছেন ম্যডাম?"
সারা দিনের ক্লান্তি নিয়ে অপ্রস্তুত হয়ে, "চিনলাম না ঠিক"।
"রোহিত।" "রোহিত বোস।"
"তাও ঠিক..... মনে পড়ছে না।"
ততক্ষণ সিগনালে সবুজ আলো জ্বলে উঠেছে। অজস্র হর্নে সব গুলিয়ে যাচ্ছে লাবনীর।
"কে রোহিত বোস? বাড়ি কোথায়?"
"একমিনিট" -- বলেই ছেলেটি গাড়িটাকে একেবারে ফুটপাত ঘেঁষে পার্ক করে এলো।
লাবনী বুঝতেই পারছে না কে এই রোহিত বোস। নিশ্চয়ই লাবনীকে খুব ভালো করে চেনে, নইলে খামকা গাড়ি দাঁড় করিয়ে কথা বলতে আসবে কেন! আর দেখতে শুনতে বেশ ভালো কিন্তু কীভাবে লাবনীকে চেনে এসব ভাবতে ভাবতে ছেলেটি ফুটপাতের ওপর উঠে এল।
"আপনি সিল রোডের খুশি কাকীমার মেঝ ভাইয়ের মেয়ে তো? "
"হ্যাঁ, কিন্তু আপনি? "
"খুশি কাকীমার হাসবেন্ড মানে অজয় কাকু আমার বাবার কলিগ ছিলেন।"
"ও আচ্ছা কিন্তু এখানে আমি এলাম কোথা থেকে? আমি তো পিসি মানে আপনার খুশি কাকীমার বাড়ি বহুবার গেছি। আপনাকে দেখেছি বলে মনে পড়ছে না তো! "
"গাড়িটা ওভাবে দাঁড় করানো ঠিক হবে না আপনি আসুন কাছাকাছি কোনো কফি শপে বসে কথা বলা যাক।"
"আরে না না আপনাকে চিনতেই পারছি না আর আপনার সাথে কফি শপে চলে যাবো? আর আমি সেই অনেক সকালে বেরিয়েছি বাড়ি যাবার তাড়া আছে। প্লিজ কিছু মনে করবেন না। "
এই বলে লাবনী ফুটপাতের দিকে পা বাড়ালো।
"প্লিজ, ম্যাডাম আমাকে দেখে কি কোনো লুচ্চা লাফাংগা মনে হচ্ছে? আসলে গাড়িটা আছে বলে নইলে এখানে দাঁড়িয়েই কথা বলতাম। কথাগুলো বলতেই হবে আপনাকে। আজ যখন দেখা পেয়েছি একান্ত অনুরোধ একঘন্টা সময় দিন প্লিজ।"
ছেলেটিকে দেখে এতটুকু অভদ্র মনে হচ্ছে না লাবনীর কিন্তু চেনা নেই জানা নেই একেবারে গাড়িতে ওঠা যায়? অথচ কী এমন কথা যে আমাকে বলতেই হবে!
ব্যাগ থেকে ফোন বার করে মাকে জানালো ফিরতে একটু দেরী হবে যেন চিন্তা না করে।
সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে বললো "আচ্ছা, চলুন। আমি কিন্তু বেশি সময় দিতে পারব না।"
দুজনে গাড়ির দিকেএগোলো। রোহিত নামের ছেলেটি বাঁদিকের দরজা খুলে লাবনীকে গাড়িতে বসতে বলে নিজে ঘুরে এসে গাড়িতে উঠলো।
"আপনারা কি যাদবপুরের ওই বাড়িতেই আছেন?"
"ও আপনি তাও জানেন আমি কোথায় থাকি? কিন্তু কী আশ্চর্য আমি কিছুই জানি না" এই বলেই জানলা দিয়ে বাইরে তাকালো। আজ শহর জুড়ে পতাকা উড়ছে কেউ কেউ পতাকার মতো ব্যান্ড পরেছে হাতে, গাড়ির সামনে, অটো বাইকের সামনে পতাকা লাগিয়েছে। আচ্ছা এরা কী সত্যিই দেশকে ভালোবাসে? এমন কিছুই ভাবছে লাবনী।
স্টিয়ারিং ধরা রোহিতের বাঁ হাতের দিকে আড় চোখে তাকিয়ে দেখলো বেশ বড় একটা সোনার আংটি আর একটু চোখ ফিরিয়ে রোহিতের দিকে তাকাতে চাইলো কিন্তু পারলো না।
"হ্যাঁ, বলুন কী যেন বলবেন! আমি কিন্তু বেশিক্ষণ থাকতে পারবো না। মা চিন্তা করবেন। "
"ওই তো এসে গেছি বসেই কথা হবে।"
ছেলেটিকে দেখে যথেষ্ট ভদ্র মনে হচ্ছে কিন্তু আমাকে কি বলতে চায় কী এমন কথা যা আমাকে না বললেই নয়! খুব অবাক হচ্ছে লাবনী।
বেসমেন্টে গাড়ি রেখে ওরা এসে বসলো ফুডপার্কে। চার দিক বেশ সরগরম অবস্থা। ছুটির দিন, বাচ্চাদের নিয়ে সব মজা করছে, খাওয়াদাওয়া, কেনাকাটা চলছে পুরোদমে। আজ ফুডপার্ক সাদা সবুজ কমলা বেলুনে সেজে উঠেছে। সব মিলিয়ে একটা সুন্দর পরিবেশ।
রাহুল দুটো চেয়ার দেখে একটা টেবিলে গিয়ে বসলো। কী খাবেন জিজ্ঞেস করতেই লাবনী একটু রেগেই গেল, "আপনি কিছু বলবেন বলে এনে খাওয়াদাওয়া… এতো কিছু পারবো না প্লিজ। তাছাড়া আমি অনেক সকালে বেরিয়েছি। আজ ডিউটির চাপও ছিলো আমার ভালো লাগছে না। কী বলবেন বলুন তাড়াতাড়ি।"
সামনে এসে ওয়েটার দাঁড়িয়েছে সহাস্য বদনে। রহিত দুটো কফি অর্ডার দিলো।
রহিত শুরু করলো "আমি কোনো ভনিতা না করেই বলছি আপনার খুশি পিসি মানুষটা অসম্ভব লোভী ও স্বার্থপর "।
হঠাৎ পিসির প্রসঙ্গে লাবনী হকচকিয়ে গেলো। "কেন আমার পিসি কী এমন করলো যাতে একজন বয়স্কা মহিলাকে এমন ব্লেইম করছেন? "
"তাহলে খুলেই বলি" শুরু করলো রোহিত।
"বিষয়ের বিন্দুবিসর্গ আপনি জানেন না, অথচ সবটাই আপনাকে নিয়ে। আমার বাবা অজয়কাকুর মানে আপনার পিসেমশায়ের খুব ভালো বন্ধু। কোনো অনুষ্ঠানে আপনাকে দেখে আমার বাবার নিজের একমাত্র পুত্রবধূ করার ইচ্ছে প্রকাশ করেছিলেন। আমাকে আপনার ছবিও দেখিয়েছিলেন। আমিও আপত্তি করিনি। খুশিপিসি বাধ সাধলেন। নিজের ভাইয়ের মেয়ের স্বচ্ছল পরিবারে বিয়ে হোক এটা উনি চাননি। তার চেয়ে নিজের বান্ধবীর মেয়ে ভালো থাক এটাই ওনার কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিলো। আমার সাথে অনামিকা মানে আপনার পিসির বান্ধবীর মেয়ের বিয়ে হয়েছে এই বছর তিনেক কিন্তু বিশ্বাস করুন আমি একদিনের জন্য শান্তি পাইনি।"
লাবনী বিরক্তবোধ করে বললো "কি আশ্চর্য! এ আর কী এমন গুরুত্বপূর্ণ কথা যে আমাকে বলতেই হবে! আমি তো আপনাকে চিনি না। আপনি শান্তি পেলেন কি না পেলেন সেটা জেনে আমিই বা কী করবো? বিয়ে তো আপনার আমার ইচ্ছে মতো হবে না। যার সাথে যার হবার তার সাথেই হবে। পৃথিবী উলটে গেলেও হবে।"
লাবনী চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো অসম্ভব অপমানে কান থেকে আগুন বেরোচ্ছে।
"প্লিজ ম্যাডাম কিছু মনে করবেন না। আপনি কি জানেন এই বিয়ের জন্য অনামিকার বাবা আপনার পিসি পিসেমশাইকে সিঙ্গাপুর ট্রিপ করিয়েছে? আপনার পিসি কি জানতেন না যে অনামিকা মানসিক ব্যাধির শিকার? আমাদের পরিবারের কি কোনো দোষ ছিলো? তাহলে জেনে শুনে --
আমি যতদুর জানি আপনি অবিবাহিতা। আমার বাবার ইচ্ছেটা কি আর একবার ভেবে দেখা যায় না?"
লাবনীর নিজেকে কীভাবে সামলাবে ঠাওর করতে পারছে না। আজ রাহুল বোস সুখী হতে পারেনি বলেই তো এমন প্রস্তাব! আজ এর বিপরীত হলে? এ কোন অপমান! এ কোন নির্যাতন! ছুট্টে গিয়ে মায়ের বুকে মুখ রেখে কাঁদতে ইচ্ছে করছে।
একবার রাহুল বোসের দিকে তাকিয়ে দেখলো, তাঁর মুখও বিমর্ষ। তারপর হনহন করে এগিয়ে গেল বাসস্ট্যান্ডের দিকে।
মুদ্রিত সংখ্যার প্রচ্ছদ |
মুদ্রিত সংখ্যা সংগ্রহ বিষয়ক জরুরি কথা
নবপ্রভাত ব্লগজিনের ৬৮তম সংখ্যা (কার্তিক ১৪৩০ অক্টোবর ২০২৩) প্রকাশিত হল। কথামতো এই সংখ্যাটি বই (মুদ্রিত পত্রিকা) আকারে একটি প্রকাশনী থেকেও প্রকাশিত হল। ফন্ট একটু ছোট রেখে সাড়ে আট ফর্মার পত্রিকা হয়েছে। মুল্য ১৭৫ টাকা। তবে আমরা একটা কোড দিচ্ছি ( কোড: NABAPRAVAT30 )। এটা অর্ডার ফাইনাল করার সময় ব্যবহার করলে ১৪৯ টাকায় বইটি পাওয়া যাবে। অর্ডার করলে বাড়িতে বসেই পেয়ে যাবেন। (একটি সংখ্যার জন্য ডেলিভারি চার্জ নেবে ৫০ টাকা। একাধিক নিলে ডেলিভারি চার্জ অনেকটাই কমবে। এটা প্রকাশনা সংস্থার নিজস্ব নিয়ম।) কোড ব্যবহার করলে ১৯৯ টাকায় (ডেলিভারি চার্জসহ) বইটি পেয়ে যাবেন। আগ্রহীরা সংগ্রহ করতে পারেন।
যাঁরা অনলাইন অর্ডারে স্বচ্ছন্দ নন, অথবা, অনলাইনকে বিশ্বাস না করে আমাদের থেকে পত্রিকা সংগ্রহ করতে চান তাঁরা শুধু মুদ্রিত মূল্য ১৭৫ টাকা আমাদের পাঠাতে পারেন। আমরা দায়িত্ব নিয়ে আপনার ঠিকানায় বইটি পাঠিয়ে দেব। হাতে হাতে নেওয়া সম্ভব হলে ১৫০ টাকা পাঠালেই হবে। আমরা আনিয়ে দেব।
আমাদের গুগুল পে / ফোন পে
নম্বর ৯৪৩৩৩৯৩৫৫৬। প্রয়োজনবোধে এই নম্বরে স্বচ্ছন্দে call বা whatsapp করতে পারেন।
মুদ্রিত সংখ্যা অর্ডার করার লিঙ্ক:
https://notionpress.com/read/nabapravat-utsab-2023
==================
- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন