Featured Post
ছোটগল্প ।। আত্মসম্মানবোধ – সর্বজনীন নয় ।। সুচন্দ্রা মিত্র চৌধুরী
- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
ছো ট গ ল্প
আত্মসম্মানবোধ – সর্বজনীন নয়
সুচন্দ্রা মিত্র চৌধুরী
অংশু আর বিশু দুই ভাই। বাবা নদীর ধারে একটি চটকলে লেবার। পার্মানেন্ট। কিন্তু বিগত বছরগুলোতে এতো বার করে চটকল বন্ধ হয়েছে, যে সেই সময় সংসার চালাতে গিয়ে যা ধারদেনা হয়েছে, সে সব এখনো পুরো শোধ করতে পারেনি বলাই। আরতি কথায় কথায় খোটা দিলেও এরমধ্যেই কোনো রকম চালিয়ে নেয়। তবে এখানো পর্যন্ত একটাই নিশ্চিন্ত হবার মতো বিষয় এই যে নতুন মালিক কারখানা হাতে নেওয়ার পর এখনো পর্যন্ত কারখানা বন্ধ হয়নি এবং লেবারদের দেনাপাওনাও ঠিক ঠাকই দেয়। এই তো এবার পুজোর আগেই বোনাস দিয়ে দিল। বোনাস পেয়ে সে কি আনন্দ বলাইয়ের। মনে মনে ঠিক করলো পুজো তো আর দেরী নেই এই সপ্তাহের ছুটির দিন কলবাজারে গিয়ে আরতির জন্য একটা ভালো ছাপার শাড়ি আর ছেলে দুটোর জন্য জামা-প্যান্ট কিনে আনতে হবে। ওদের সঙ্গে নিয়েই যাবে বলাই ঠিক করল।
সপ্তাহের ছুটির দিনে বলাই সকালে চা খেয়ে বাজারে চলে গেল। যাওয়ার সময় আরতিকে বলে গেল ফিরে ছেলেদের সঙ্গে একসাথে বসে জলখাবার খাবে। আরো বলল, আজ ক'খানা লুচি ভেজো। অনেকদিন ছেলেগুলো খায়নি।
আরতি মনে মনে ভাবলো, নিজেও যেন খেয়েছে! সেই কারখানার বিশ্বকর্মা পুজোর দিন লুচি খাওয়া হয়েছে কারখানায়। তাও তো পাছে ছেলেরা আরো চেয়ে বসে তাই নিজের পাত থেকে ওদের পাতে তুলে দিয়েছে। আরতির একটা দীর্ঘশ্বাস পড়ে। মনে ভাবে, ওদের কি এ অবস্থার কোনো দিন উন্নতি হবে না? ঠাকুর কি কোনো দিন একটু মুখ তুলে চাইবেন না?
ছেলে দুটো যদি ঠিক ঠাক মানুষ হতে পারে, তাহলে ওর বাবার পাশে দাঁড়াতে পারবে। এছাড়া তো আর কোন উপায় দেখি না। ততদিন আবার ঠাকুর আমাকে বাঁচিয়ে রাখলে হয়!
বলাই বাজার থেকে ফিরে জলখাবার খেয়ে একটু বেরিয়েছে পাড়ার মোড়ের চায়ের দোকানে বসে চা খায়, খবরের কাগজ পড়ে আর গল্প গুজব করে পাড়ার কয়েকজন মিলে।
ছেলে দুটো খেয়ে বেরিয়ে গেছে খেলতে। এই সময় আরতি স্নান করে, ঠাকুর পুজো দিয়ে রান্না সেড়ে নিল।
আজ প্রায় আড়াই মাস পর ছেলেদের পাতে একটু মাংস দিতে পারবো!
বলাই ফিরে এসে বলে, বুঝলে চায়ের দোকানের কেষ্টা বলছিল, ছেলেদের ইস্কুল থেকে সাইকেল দেবে।
আরতি – ওমা তাই নাকি? তাহলে তো ভালোই হয় তুমি একটা নিয়ে কারখানায় যাবে আর ওরা দু'ভাই একটাতে যাবে। তোমার এতদুর হেঁটে যাওয়া-আসার ঝক্কি তো কম নয়। তাছাড়া একটু সময় বাঁচবে।
বলাই – বুঝলে কি না, ঝটপট খেয়ে নিয়ে, একটু তাড়াতাড়ি বেরিয়ে পড়বো। ছুটির দিন বাজারে খুব ভিড় হবে।
তা তোমার ছেলেরা এখনো ফেরেনি? এতো বাইরে বাইরে খেলে বেড়ালে পড়বে কখন?
আরতি – ও তুমি চিন্তা কোরো না। ঠিক পড়াশোনা করে। তুমি বরং চান করে এসো। কলঘরে খুব শ্যাওলা হয়েছে। কাল চান করার সময় ঘষে দেব’খন। সাবধানে যেও।
বলাই স্নান করতে গেলে দুই ছেলে বাড়িতে ফিরলো। ওদের হাতে দুটো প্যাকেট।
আরতি – কি রে তোদের হাতে কিসের প্যাকেট?
অংশু – জামা-প্যান্টের।
আরতি – মানে? কোথায় পেলি?
বিশু – (খুব আস্তে আস্তে) ঐ নীলুদের বাড়িতে –
আরতি – কি নীলুদের বাড়িতে?
অংশু – সবাইকে জামা-কাপড় দিচ্ছিল, তাই আমাদের ও দিল। পুজোর জন্য।
আরতি ধপ করে বসে পড়লো মাথায় হাত দিয়ে। তারপর নিজের মনে বলতে থাকল, আমি কাদের জন্ম দিলাম, কাদের এতদিন ধরে তিলে তিলে বড়ো করছি নিজেদের কথা চিন্তা না করে! হা ভগবান! এ কি দিন দেখালে! মানুষটা দিকবিদিক জ্ঞান শূন্য হয়ে, মুখে রক্ত তুলে খেটে যাচ্ছে ওদের জন্য আর ওরা কিনা ভিকিরির মতো অন্য বাড়ি থেকে জামা নিয়ে এলো!
নিজেকে আর সামলাতে পারল না আরতি। দুই ছেলের গালে গিয়ে সজোরে দুই থাপ্পড় দিয়ে বললেন, এখনি গিয়ে জামা ফেরত দিয়ে আসবি। তা না হলে আজ খাবার পাবি না, এই বলে রাখলাম।
এরমধ্যে কখন বলাই কলঘর থেকে বেরিয়ে এসেছে, আরতি লক্ষ্য করেনি।
বলাইকে বলল, চলো তুমি খেয়ে নাও।
বলাই বলল, তা কি করে হবে, ছেলেরা আসুক।
এরপর আর কোনো কথা হয় না। ছেলেরা ফিরলে ওরা মহানন্দে মাংসের ঝোল দিয়ে ভাত খেয়ে একটু বিশ্রাম করে পুজোর জামা-কাপড় কিনে আনলো। আজ প্রায় বছর পাঁচেক পর বলাইয়ের জন্য একটা জামা-প্যান্ট আর আরতির জন্য একটা তাঁতের শাড়ি কিনেছে।
তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে খাওয়ার-দাওয়া সেরে ঘুমিয়ে পড়লো। সকালে বলাইয়ের কারখানায় যাওয়া আছে।।
ক'দিন বেশ কেটে গেল। চারিদিকে পূজার সাজো সাজো রব। বলাই বললো, অষ্টমীর দিন সন্ধ্যায় তোমাদের নিয়ে ঠাকুর দেখতে যাবো।
অষ্টমীর দিন সবাই তৈরী হয়ে নিল। অংশুটা কেন এখনো দেরী করছে!
অংশু এলো, সবাই অবাক হয়ে গেল। এ জামা-প্যান্ট কোথায় পেলি, বাবাতো কিনে দেয়নি। তোর আর বিশুর তো একই রকম। গলা চড়িয়ে আরতি এবার বললো, কোথায় পেলি বল?
অংশু ঘাড় গোজ করে, দাঁতে দাঁত চেপে দাঁড়িয়ে থাকে।
এ দেখে আরতির আরো রাগ হয়, তারপর অংশুর গালে সজোরে একটা থাপ্পড় মারে!
অংশু সেই একই ভঙ্গিতে চিৎকার করে বলে, বেশ করেছি নিয়েছি, আরো নেবো। লজ্জা করে না মা-বাবা হয়েছো খেতে দিতে পারো না, জামা দিতে পারো না!
আরতি ধপাস করে মাটিতে বসে পড়লো। দেখলো বলাইয়ের মুখটা কেমন রক্ত শূন্য হয়ে গেছে। ফ্যালফ্যাল করে ছেলেদের দিকে চেয়ে আছে যেন চিনতে পারছে না।
আরতি ঠাকুরের সামনে গিয়ে সজোরে মাথা ঠুকতে থাকে আর হাউহাউ করে কাঁদতে কাঁদতে বলে, ঠাকুর আমাকে নিয়ে নাও, ছেলেদের আমি মানুষ করতে পারিনি! আমি পারিনি! আমি পারিনি!
মুদ্রিত সংখ্যার প্রচ্ছদ |
মুদ্রিত সংখ্যা সংগ্রহ বিষয়ক জরুরি কথা
নবপ্রভাত ব্লগজিনের ৬৮তম সংখ্যা (কার্তিক ১৪৩০ অক্টোবর ২০২৩) প্রকাশিত হল। কথামতো এই সংখ্যাটি বই (মুদ্রিত পত্রিকা) আকারে একটি প্রকাশনী থেকেও প্রকাশিত হল। ফন্ট একটু ছোট রেখে সাড়ে আট ফর্মার পত্রিকা হয়েছে। মুল্য ১৭৫ টাকা। তবে আমরা একটা কোড দিচ্ছি ( কোড: NABAPRAVAT30 )। এটা অর্ডার ফাইনাল করার সময় ব্যবহার করলে ১৪৯ টাকায় বইটি পাওয়া যাবে। অর্ডার করলে বাড়িতে বসেই পেয়ে যাবেন। (একটি সংখ্যার জন্য ডেলিভারি চার্জ নেবে ৫০ টাকা। একাধিক নিলে ডেলিভারি চার্জ অনেকটাই কমবে। এটা প্রকাশনা সংস্থার নিজস্ব নিয়ম।) কোড ব্যবহার করলে ১৯৯ টাকায় (ডেলিভারি চার্জসহ) বইটি পেয়ে যাবেন। আগ্রহীরা সংগ্রহ করতে পারেন।
যাঁরা অনলাইন অর্ডারে স্বচ্ছন্দ নন, অথবা, অনলাইনকে বিশ্বাস না করে আমাদের থেকে পত্রিকা সংগ্রহ করতে চান তাঁরা শুধু মুদ্রিত মূল্য ১৭৫ টাকা আমাদের পাঠাতে পারেন। আমরা দায়িত্ব নিয়ে আপনার ঠিকানায় বইটি পাঠিয়ে দেব। হাতে হাতে নেওয়া সম্ভব হলে ১৫০ টাকা পাঠালেই হবে। আমরা আনিয়ে দেব।
আমাদের গুগুল পে / ফোন পে
নম্বর ৯৪৩৩৩৯৩৫৫৬। প্রয়োজনবোধে এই নম্বরে স্বচ্ছন্দে call বা whatsapp করতে পারেন।
মুদ্রিত সংখ্যা অর্ডার করার লিঙ্ক:
https://notionpress.com/read/nabapravat-utsab-2023
==================
- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন