Featured Post
প্রবন্ধ ।। গাঙ্গেয় জনপদ - পাণ্ডব বংশের দুর্গাকথা ।। দীপঙ্কর নস্কর
- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
প্র
ব
ন্ধ
গাঙ্গেয় জনপদ - পাণ্ডব বংশের দুর্গাকথা
দীপঙ্কর নস্কর
শারদোৎসব বঙ্গ জীবনের অঙ্গ। রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের আমল থেকে বাঙালি তার যাবতীয় আনন্দ-উল্লাস-আরাধনাকে এক সূত্রে গেঁথেছে এই দুর্গাপুজোর মাধ্যমে। বনেদি থেকে বারোয়ারি সর্বত্রই কোন এক শক্তি, যা আমাদের বোধন থেকে বিসর্জন পর্যন্ত প্রাত্যহিকতার গ্লানিময়তা থেকে দূরে রাখে। তবে, আজকের যুগে শহুরে মানুষজনের অনেকেই ইচ্ছা। প্রকাশ করেন, কলকাতার প্যান্ডেলের ভিড় ছেড়ে দূরে চলে যাবার। প্রশ্ন করেন এমন কোথায় যাওয়া যায়, যেখানে একটু নিরিবিলিতে পুজোর গন্ধ নেওয়া যেতে পারে?
বনেদি বাড়ির দুর্গাপুজোর আনন্দ উল্লাস জৌলুস এবং সাবেকিয়ানা যদি দেখতেই হয় তাহলে আসতে হবে প্রাচীন জনপদ জয়নগর-মজিলপুর অঞ্চলে।
গাঙ্গেয় নিম্ন-দক্ষিণবঙ্গে ঐতিহ্যমণ্ডিত স্থান জয়নগরের পার্শ্ববর্তী মজিলপুর জনপদ। যশোহর রাজ প্রতাপাদিত্যের মুনশি চন্দ্রকেতু দত্ত ও যজ্ঞ-পুরোহিত শ্রীকৃষ্ণ উদ্গাতা ও পুরোহিত রঘুনন্দন পোতা এঁদের আগমন হেতু আদিগঙ্গার মজা গর্ভে পত্তন হয়েছিল এ নতুন নগরীর। চন্দ্রকেতু দত্তের বংশধররাই পরবর্তীকালে এখানকার দোর্দণ্ডপ্রতাপ দত্ত জমিদার হয়ে ওঠেন। তাঁদের তৈরি অট্টালিকা, দালানকোঠা, কাছারিবাড়ি, মন্দির, নানা উৎসব, পালাপার্বণ ইত্যাদিকে কেন্দ্র করে উৎসবমুখর সম্মিলিত এক মঞ্জিল বা অট্টালিকার রূপ পরিগ্রহ করে এই স্থান। যার থেকে অঞ্চলটির নাম হয় মঞ্জিলপুর। পরবর্তীকালে উচ্চারণ সারল্যে হয়ে যায় মজিলপুর।
মজিলপুর গ্রামের আদি বা প্রকৃত নাম 'মঞ্জুলপুর। চলতি ভাষায় বিকৃতিতে ঐ নাম ‘মজিলপুর’ এ পরিবর্তিত হয়। অষ্টাদশ ও ঊনবিংশ শতাব্দীতে রচিত বহু প্রাচীন পুঁথিতে এবং ঐ গ্রামের প্রাচীন মন্দিরের গায়ে উৎকীর্ণ লিপিতে ‘মঞ্জুলপুর’ কথাটি আছে।
মজিলপুরের প্রায় তিন'শ বছরের পুরানো বনেদি বংশ ভট্টাচার্য পরিবার। এই বংশের একেবারে গোড়ার ইতিহাস জানানোর মতো লোক বর্তমানে সেভাবে নেই। তথাপি বর্তমান প্রবীণ গবেষক এবং পরিবারের সু-সন্তান প্রতীপ ভট্টাচার্য মহাশয়ের কাছ থেকে মৌখিক তথ্যে উঠে আসে পাণ্ডব বাড়ির ইতিবৃত্ত। তিনি বলেন – “পাণ্ডব বলতে আমরা জানি মহাভারতের পাণ্ডুবংশ বা পঞ্চপাণ্ডবকে কিন্তু এই পাণ্ডব কারা! মজিলপুরের প্রাচীন ভট্টাচার্য পাড়ার বিপ্লবী কানাইলাল ভট্টাচার্যের পূর্ব পুরুষ দর্পনারায়ণ ভট্টাচার্য সেকালের একজন বিদগ্ধ পণ্ডিত। সংস্কৃত তথা নানা শাস্ত্রে তাঁর বুৎপত্তির জন্য তিনি ‘তর্কালঙ্কার' উপাধিতে ভূষিত হন। একবার বেনারসে ভারতবর্ষের পণ্ডিতগণের মহাসভায় শাস্ত্র বিষয়েএক যুদ্ধে তিনি সবাইকে পরাভূত করে প্রথম স্থান অধিকার করেন বা জয়ী হন। দেশে ফেরার পর মজিলপুরের তৎকালীন দোর্দণ্ডপ্রতাপ দত্ত জমিদার তাঁকে ডেকে পাঠান। জমিদার গৃহে আপ্যায়নের পর জমিদারবাবু তাঁকে বললেন, 'আপনার পাণ্ডিত্যে ও জয়লাভে আমি গর্বিত, আপনি আমার গৃহ দেবতার সেবার ভার ও জমিদার গ্রহের সকল পূজার্চ্চনার ভার গ্রহণ করুন।' দর্পনারায়ণ সবিনয়ে সেই প্রস্তাব প্রত্যাখান করে বলেন, - ‘আমাদের কাজ অধ্যাপনা করা, পৌরহিত্য করা নয়।’
এই উত্তরে জমিদারবাবু রুষ্ট হয়ে তাঁকে জমিদারি এলাকা হতে বা প্রদত্ত ভূমি হতে উচ্ছেদ করেন। তাঁরাও নির্দ্বিধায় গৃহ ত্যাগ করে অন্য এলাকায় জঙ্গল কেটে বসতি স্থাপন করেন। জমিদারি মুলুকে প্রচারিত হয় - ভট্টাচার্য পরিবারকে বনবাসে পাঠানো হয়েছে, অতএব উহারা পাণ্ডব। সেই হতে ভট্টাচার্য পরিবার ‘পাণ্ডব পরিবাব’ নামে পরিচয় পায়। তাঁদের বসতি স্থল-পাণ্ডব পাড়ায় পরিগণিত হয়েছে।
এই পরিবারের অন্যতম ব্যক্তিত্ব তথা জেলার স্বাধীনতা সংগ্রামী বিপ্লবী কানাইলাল ভট্টাচার্য। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে প্রাণ দিয়েছেন শত শত মহাপ্রাণ মানুষ। কিন্তু বিপ্লবী আন্দোলনের স্বার্থে নিজের নাম সুকৌশলে গোপন রেখে প্রাণ বিসর্জন দেওয়ার নজির বিরল। স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে এই বিরল নজির সৃষ্টি করেছিলেন বিপ্লবী কানাইলাল ভট্টাচার্য। কানাইলালের জন্ম দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার জয়নগর-মজিলপুর গ্রামে। ছোটবেলায় আয়ারল্যান্ডের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস, বাঘাযতীনের বুড়িবালামের যুদ্ধ, মাস্টারদা সূর্য সেনের জালালাবাদ যুদ্ধের কাহিনী তাঁকে স্বাধীনতা সংগ্রামে উদ্বুদ্ধ করে। ক্রমে তিনি বিপ্লবী সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েন এবং সাতকড়ি বন্দ্যোপাধ্যায় ও সুনীল চট্টোপাধ্যায়ের অত্যন্ত প্রিয়পাত্র ও আস্থাভাজন হয়ে ওঠেন। নীরবে, নিভৃতে কঠিনকঠোর সংগ্রামের ব্রতে উৎসর্গীকৃতপ্রাণ কানাইলালকে যুগান্তর দলের নেতারা রিভালভার চালানোর শিক্ষা দিতে থাকেন। অল্পদিনের মধ্যেই কানাইলাল রিভালভার চালানোয় দক্ষ হয়ে ওঠেন।
সুনীল চ্যাটার্জীর পরিকল্পনা ও নির্দেশমত কানাইলাল একদম অজ পাড়াগাঁয়ের ছেলের বেশে ১৯৩১-এর ২৭ জুলাই অর্থাৎ দীনেশ গুপ্তকে ফাঁসির আদেশ দেওয়ার ২০ দিন পর আলিপুরের জজকোর্টের এজলাসে ঢুকে গুলি করে গার্লিক সাহেবকে হত্যা করে নিজে পটাশিয়াম সায়নাটড খেয়ে মৃত্যুবরণ করেন। ব্রিটিশ পুলিশরা তখন অপরিচিত মৃত যুবকের পরিচয় জানার আশায় পকেট খুঁজে একটা ছোট কাগজের টুকরো পায় এবং দেখে তাতে লেখা 'ধ্বংস হও – দীনেশ গুপ্তর ফাঁসির দণ্ড লও – বিমল দাশগুপ্ত।”
সেই সময় পেডি হত্যাকারী মেদিনীপুরের বিপ্লবী বিমল দাশগুপ্ত ফেরার ছিলেন। ব্রিটিশ পুলিশ তাঁকে হন্যে হয়ে খুঁজে বেড়াচ্ছিল। যাতে কানাইলালের মৃতদেহ দেখে পুলিশের ধারনা হয় এটাই বিমল দাশগুপ্ত এবং পুলিশ যাতে আর বিমল দাশগুপ্তকে না খোঁজে এমন পরিকল্পনা নিয়েই কানাইলাল পকেটে ওই চিরকুট রেখেছিলেন। তাই কানাইলালের মৃত্যুর পর বহুদিন পর্যন্ত পুলিশ জানতে পারেনি কে বা কারা এই হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ি। এমনই ছিল দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিপ্লবী সংগঠন 'সাধন সংঘ' তথা যুগান্তর দলের কর্মীদের বিপ্লবী মানসিকতা।এছাড়া এই বাড়ির অন্যতম সুসন্তান ছিলেন চন্দ্রকুমার ভট্টাচার্য মহাশয়। পরাধীন ভারতে গাঙ্গেয় জনপদে শিক্ষা আন্দোলনের প্রথম সারির অন্যতম পুরোধা ছিলেন। নারা শিক্ষার ক্ষেত্রে তাঁর অবদান স্মরণীয়।
এবার আসা যাক এই পরিবারের বনেদি পূজার কথায়। ভট্টাচার্য বাড়ির পূজা প্রায় ২৫৭ বছরের প্রাচীন। তৎকালীন পাণ্ডব পরিবার যথেষ্ট। স্বচ্ছল ও সাবলম্বী ছিল, যার ফলে একাধারে পূজার জাঁকজমক আর অপরদিকে দত্ত জমিদার বাবুদের সাথে একটা রেষারেষি পর্যায়ে পৌঁছায়। দত্ত বাড়িতে পুজোর সময় ব্রাহ্মণগণকে আপ্যায়ন করে একটি নৈবেদ্য, ধুতি ও প্রণামি দেওয়া হত। অন্যদিকে পাণ্ডববাড়িতে জাতি, ধর্ম নির্বিশেষে তিনদিন ব্যাপী অতিথি আপ্যায়ন (মধ্যাহ্ন ভোজের। ব্যবস্থা) করা হত। জন্মাষ্টমীর রোহিনী নক্ষত্র ধরে এই বাড়ির কাঠামো পূজা হয়। বহু পূর্বে পাঁঠা বলি হলেও বর্তমানে আখ, কুমড়ো বলি হয়। প্রাচীন পুরোহিত পণ্ডিতচন্দ্র কুমার ভট্টাচার্য ও পরবর্তীকালে অমরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য বংশপরম্পরায় মায়ের আরাধনায় নিয়োজিত। দুর্গামায়ের দুই প্রকার ভোগ হয় – আমিষ ও নিরামিষ। হোমকুণ্ড সপ্তমী হতে নবমী পর্যন্ত প্রজ্বলিত থাকে। পূর্বে বাড়ির সদস্যরা পূজা করতেন। বর্তমানে অমিত চক্রবর্তী মহাশয় পূজা-পাঠ করেন। বৃহৎনান্দিকেশ্বর পুরাণ মতে মায়ের আরাধনা হত।
এই বাড়ির পুজোয় বিশেষ বৈশিষ্ট্য অষ্টমী তিথিতে কুমারী পূজা ও সধবা ব্রত পালন, আরও একটি ধারা বজায় আছে তা হল মহাপুজো উপলক্ষ্যে স্থানীয় দেব-দেবীগণের মন্দিরে নৈবেদ্য প্রেরণ - ঢাকি বাজনা বাজাবে, বাসরঘরি মাথায় নৈবেদ্য বহন করবে আর বাড়ির একজন সঙ্গে থাকবে। এইরূপে স্থানীয় শ্যামসুন্দর, শীতলা, রক্ষাকালী, ব্রহ্মচারী বাড়ির কালী ও জয়চণ্ডী মন্দিরে পুজোর ডালা পৌঁছায়। পাণ্ডব বাড়ির পুজো বজায় আছে তবে সেই কৃষ্ণ নেই, অর্জুনও নেই।
স্থানীয় গবেষক প্রয়াত শৈলেন দাস মহাশয় পাণ্ডব বাড়ির পুজো সম্পর্কে বলেন- “গাঙ্গেয় নবদ্বীপ হিসাবে পরিচিত জয়নগর-মজিলপুর অঞ্চল। এই অঞ্চল ছিল শিক্ষা সংস্কৃতির পীঠস্থান। এখানে ছিল টোল, চতুষ্পাঠীর ভারতখ্যাত সংস্কৃত শাস্ত্রে পণ্ডিত ব্যক্তিবর্গ। তেমনি একজন বিখ্যাত শাস্ত্রজ্ঞ পণ্ডিত ছিলেন দর্পনারায়ণ তর্কলঙ্কার। তাঁর হাত ধরে প্রায় ২৫৪ বছর আগে পাণ্ডব বাড়ির পুজো শুরু হয়েছিল।” এই বংশের প্রবীণ সদস্য প্রতীপ ভট্টাচার্য বলেন, এই বাড়ির পুজোতে মহিষ বলি প্রথা ছিল, এখন হয় না। তবে আখ ও কুমড়ো বলি দেওয়া হয়। পাণ্ডব বাড়িতে অসুরমর্দিনী দুর্গা মা পূজিতা হন। সাবেকি দিনে মায়ের পরিবার সম্পূর্ণ মাটির সাজে সজ্জিত হতেন। বর্তমানে, আধুনিক সাজসজ্জার আমদানি ঘটেছে। মজিলপুরের গোবিন্দ অধিকারী সম্প্রতি ঠাকুর তৈরি করছেন। এই বাড়িতে পূর্বে বাসন্তী পূজা হলেও বর্তমানে ঘট পূজায় সমাপ্তি হয়। পুজো মণ্ডপে সর্বক্ষণ শাস্ত্রীয় সঙ্গীত ও আধুনিক বাংলা গান শোনা যায়।
যদিও নিম্নবঙ্গ পত্রিকার প্রখ্যাত সম্পাদক এবং গবেষক প্রভাত ভট্টাচার্য মহাশয় তার 'জয়নগর-মজিলপুর দুর্গাপূজার সমিক্ষা' প্রবন্ধে লিখেছেন – “মজিলপুর পাণ্ডব পাড়ায় পাণ্ডব বাটির দুর্গাপুজো শুরু করেন প্রয়াত কেদারনাথ ভট্টাচার্য মহাশয়। অদ্যাবধি সেইপূজা বন্ধ হয়নি- বললেন শ্রীভোলানাথ ভট্টাচার্য (৬২)। বর্তমান পুরুষ থেকে তিনি ষষ্ঠ পুরুষ। আনুমানিক ১৫০ বৎসরেরও বেশি পুরানো পূজা বলে মনে হয়।"
এই বাড়িতে পুজোর সময় ধুনো পোড়ানোর রীতি রয়েছে এবং মহাষ্টমীর দিন সন্ধিপুজোয় ১০৮টি পদ্ম নিবেদন করে ১০৮টি প্রদীপ জ্বালানো হয়। দশমীর দিন সকালে চিঁড়েভোগ হয় এবং সন্ধ্যায় দেবীবরণের পর সিন্দুরখেলা ও তারপর বিসর্জনের পথে রওনা। বিসর্জন থেকে ফিরে এসে পরিবারের সদস্যরা সকলে মিলে ঠাকুরদালানে শাস্তির জল নেন এবং কুলদেবতার ঘরে গিয়ে তাকে প্রণাম করেন। দুর্গা পূজার কয়দিন রাধাকৃষ্ণ ও গোপাল জিউ দুর্গামণ্ডপে পূজিত হন। পূর্বে এই কুলদেবতার বাস ছিল নবদ্বীপের জনৈক জমিদার বাড়িতে। সেখানে দেড় মন দুধের পায়েস নিত্য ভোগ নিবেদন হত। পরবর্তী সময় কথকের বাবা ও কাকা ঐ স্থান থেকে দৈব সপ্নাদেশ অনুসারে শালগ্রাম নারায়ণ শিলা ও গোপাল জিউ আনয়ন করে পাণ্ডব বাটিতে। সেই থেকে নিত্য পূজিত হন।
প্রবীণ গবেষক প্রতীপ ভট্টাচার্য বলেন, বিসর্জনের দিন বিশেষ বরণ ডালা সাজিয়ে দেবীমাকে অঞ্জলি দেওয়া হয়। যে শান্তির জল ব্যবহার হয় সেটি আসলে মা দুর্গার দেবীঘটের ডাবের জল। এছাড়া ষষ্ঠী থেকে দশমী পর্যন্ত প্রতিদিন পূজায় যে অর্ঘ্য গুলি দেওয়া হয় সেগুলি পরিবারের চাহিদা অনুযায়ী সংখ্যা নিরূপিত হয়। অর্থাৎ এই অর্ঘ্য গুলি পরিবারের সদস্যরা সমগ্র বছর ধরে নিজেদের কাছে রাখেন যেকোনো শুভ কাজে যাওয়ার আগে এটি মাথায় স্পর্শ করে গেলে সমস্ত মনস্কামনা পূর্ণ হয় এমনিধারা বিশ্বাস, রীতিনীতি ভট্টাচার্য বাড়িতে দীর্ঘদিন ধরে লালিত হয়ে আসছে। অর্ঘ্যের মধ্যে প্রধান সামগ্রী থাকে লাল আলতা পাতা, দূর্বা এবং ১০৮ টি গোটা চাল – এগুলি একত্রিত পুটুলি আকারে তৈরি করে মায়ের কাছে নিবেদন করা হয়। বিসর্জনের পর সেই অর্ঘ্য গুলি পরিবারের সদস্যদের হাতে তুলে দেওয়ার রীতি চলে আসছে।
পারিবারিক সদস্যদের উদার মনোভাবাপন্ন পরিচয় পাওয়া যায় তাদের অতিথি আপ্যায়নের মধ্যে সেখানে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে পাশাপাশি অবস্থান করে মায়ের প্রসাদ গ্রহণ করে। যদিও সাবেকি সময় পাণ্ডব বাড়ির ব্রাহ্মণদের সঙ্গে স্থানীয় কায়স্থ এবং ব্রাহ্মণদের এ বিষয়ে বিতর্ক এবং চর্চা হয়েছিল সেক্ষেত্রে পাণ্ডব বাড়ির সদস্যরা সবার আগে মানবধর্মকে প্রধান ধর্ম বলে উপস্থাপন করায় বাকিদের বক্তব্য ধোপে ঠেকেনি। বর্তমানে বংশপরম্পরায় পাণ্ডব বাড়ির প্রতিমা তৈরি করছেন চাঁপাতলা থেকে আগত গোবিন্দ অধিকারী পটুয়া সম্প্রদায়। সেই আদি সময় থেকে যে কুমারী পুজো হয়ে আসছে তা কিন্তু নিজ গোত্রের কোন কন্যাকে দিয়ে নয়, বরং তাদের পরিবার ব্যতিরেকে অন্য গোত্রের ব্রাহ্মণকন্যাকে দিয়েই কুমারী পুজো হয়ে থাকে। এইভাবে বর্তমানে পাণ্ডব বাড়ির দুর্গাপুজো ২৫৮ বছরে পদার্পণ করেছে।
যাই হোক ব্রাহ্মণ্য সংস্কৃতির প্রাচীন নিদর্শন দেখা যায় পাণ্ডব বাড়ির দুর্গাপুজো ইতিহাসের পাতা উল্টালে। কালের প্রবাহে বয়ে গেছে অনেক জল, সময়ের ক্যালেন্ডারে অনেক কিছু পুরানো হলেও পুরানো হয়নি পারিবারিক পুজার সেই আনন্দ। পাণ্ডব বাড়ির বনেদিয়ানাএখনো বেঁচে আছে তাদের দুর্গা কথার ইতিবৃত্তে। বর্তমানে বারোয়ারী পুজোর ভিড়ের মাঝেও সবসময়ই আলাদা জায়গা তৈরি করে নেয় পাণ্ডববাড়ির দুর্গাপুজো।
কৃতজ্ঞতা স্বীকার : প্রতীপ ভট্টাচার্য (৮০)
তথ্যঋণ: ১. দত্ত, কালিদাস - দক্ষিণ ২৪ পরগনার অতীত, দ্বিতীয়খণ্ড, সুন্দরবন আঞ্চলিক সংগ্রহশালা, বারুইপুর, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, প্রথম প্রকাশ, মার্চ, ১৯৮৯। ২. দাস, শৈলেন - জয়নগরের প্রাচীন দুর্গাপূজার ইতিবৃত্ত, প্রথম প্রকাশ ৩০শে আশ্বিন ১৪২২, মহাপঞ্চমী, জয়নগর-মজিলপুর, দক্ষিণ ২৪ পরগনা। ৩. নিম্নবঙ্গ, বর্ষ ১ম, ৫ম সংখ্যা, মাসিক সংকলন, ২৩শে আশ্বিন ১৩৯৩। ৪. নস্কর, দীপঙ্কর - দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার ইতিহাস চর্চা, প্রথমখণ্ড, অমর ভারতী, প্রথম প্রকাশ ২০২১।
মুদ্রিত সংখ্যার প্রচ্ছদ |
মুদ্রিত সংখ্যা সংগ্রহ বিষয়ক জরুরি কথা
নবপ্রভাত ব্লগজিনের ৬৮তম সংখ্যা (কার্তিক ১৪৩০ অক্টোবর ২০২৩) প্রকাশিত হল। কথামতো এই সংখ্যাটি বই (মুদ্রিত পত্রিকা) আকারে একটি প্রকাশনী থেকেও প্রকাশিত হল। ফন্ট একটু ছোট রেখে সাড়ে আট ফর্মার পত্রিকা হয়েছে। মুল্য ১৭৫ টাকা। তবে আমরা একটা কোড দিচ্ছি ( কোড: NABAPRAVAT30 )। এটা অর্ডার ফাইনাল করার সময় ব্যবহার করলে ১৪৯ টাকায় বইটি পাওয়া যাবে। অর্ডার করলে বাড়িতে বসেই পেয়ে যাবেন। (একটি সংখ্যার জন্য ডেলিভারি চার্জ নেবে ৫০ টাকা। একাধিক নিলে ডেলিভারি চার্জ অনেকটাই কমবে। এটা প্রকাশনা সংস্থার নিজস্ব নিয়ম।) কোড ব্যবহার করলে ১৯৯ টাকায় (ডেলিভারি চার্জসহ) বইটি পেয়ে যাবেন। আগ্রহীরা সংগ্রহ করতে পারেন।
যাঁরা অনলাইন অর্ডারে স্বচ্ছন্দ নন, অথবা, অনলাইনকে বিশ্বাস না করে আমাদের থেকে পত্রিকা সংগ্রহ করতে চান তাঁরা শুধু মুদ্রিত মূল্য ১৭৫ টাকা আমাদের পাঠাতে পারেন। আমরা দায়িত্ব নিয়ে আপনার ঠিকানায় বইটি পাঠিয়ে দেব। হাতে হাতে নেওয়া সম্ভব হলে ১৫০ টাকা পাঠালেই হবে। আমরা আনিয়ে দেব।
আমাদের গুগুল পে / ফোন পে
নম্বর ৯৪৩৩৩৯৩৫৫৬। প্রয়োজনবোধে এই নম্বরে স্বচ্ছন্দে call বা whatsapp করতে পারেন।
মুদ্রিত সংখ্যা অর্ডার করার লিঙ্ক:
https://notionpress.com/read/nabapravat-utsab-2023
==================
- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন