Featured Post
ছোটগল্প ।। 'শ্রাবণের ধারার মতন' ।। সুভাষ চন্দ্র দত্ত
- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
ছো ট গ ল্প
'শ্রাবণের ধারার মতন'
সুভাষ চন্দ্র দত্ত
চলতে ফিরতে, শুতে বসতে একটাই প্রতিধ্বনি....... আকাশদা কাল থেকে আর তিথিকে পড়াতে আসতে হবে না ...'
সেই গতকাল সন্ধের পর থেকে এই কথাগুলোই আমায় পাগল করে দিচ্ছে। আজ কলেজে গিয়েও ক্লাস নেওয়ার সময় বারেবারে অন্যমনস্ক হচ্ছিলাম । কাল রাতে বিছানায় শুয়ে কতো কথা মনের দুয়ারে ঘোরা ফেরা করছিল। ওকে নিয়ে কত দিন কত স্বপ্নের ছবি এঁকেছি ছিলাম। জানি না আজ কি যে হলো কিছুতেই ঘুম আসছে না। দূরের মসজিদের আজান এর আগে কখনোও শুনেছি বলে মনে পড়ে না, কিন্তু চোখে ঘুম না থাকায় আজ স্পষ্ট শুনলাম। তারপর হয়তো একটু তন্দ্রাভাব এসেছিলো। অন্যদিনের মতন সাড়ে সাতটায় মা চা এনে ডেকে দেয়।
চায়ে চুমুক দিলেও, স্বস্তিকার কথাগুলোই মাথার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছিল। এর আগে তো প্রায় রোজই গেছি। কোনদিন তো এইরকম বলেনি! অথচ গতকাল সন্ধ্যেবেলায় অন্যদিনের মতন পড়াতে গিয়েছিলাম। স্বস্তিকা অভ্যাস মতন চা নিয়ে হাজির। জিজ্ঞাসা করলাম, তিথি কোথায়? শুনে বললো, "ও বাড়িতেই আছে, আকাশদা কিছু যদি মনে না করো একটা কথা বলার আছে"
"কি ব্যাপার স্বস্তিকা, তুমি কিছু বলবে তারজন্য অনুমতির প্রশ্ন কেন?"
মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকায় আবারও তার সংশয় কাটাতে বললাম, "বলো। একটা কেন হাজারটা বলতে পারো"
মাথাটা একটু তুলে সে বলল "তিথিকে আর পড়াতে আসতে হবে না..."
ঠিক এই কথা শুনবো বলে তো প্রস্তুত ছিলাম না! স্বপ্নেও ভাবিনি। কৌতুহলে জিজ্ঞাসা করলাম, "কেনো ওকি আমার পড়ানো বুঝতে পারছে না?"
"না না একদম তা নয়, আমি তো জানি, তুমি কেমন পড়াও। আমিও তো কলেজে থাকতে তোমার কাছেই পড়েছি।"
এত ভাবনার মধ্যে কারণের অনুসন্ধানে, মনের মধ্যে অনেক কিছু ঘুরপাক খেলেও সে ভাবে কিছু মনে করতে পারছি না, তবে কি
এই ঘটনার কদিন আগে এক রবিবার স্বস্তিকার বাড়িতে গিয়েছিলাম, ছুটির দিন কোনো কারণে নয়, অন্যদিন পড়াতে গিয়ে স্বস্তিকার সঙ্গে সেভাবে কথা বলা হয়ে ওঠে না, অন্যদিন সে ব্যাস্ত থাকে, সকাল থেকে মেয়েকে রেডি করানো, রান্না তারপর কোনরকমে নাকে মুখে গুঁজে স্কুলে ছোটা, এই সিডিউলের পরে স্বস্তিকাকে সে ভাবে কোন দিন রিলাক্স মুডে পাই না। অনেক ভেবে চিন্তে স্বস্তিকাকে একটু একা পেতেই রবিবারকে বেছে নিলাম, তিথির সামনে এখন আর সব কথা বলা যায় না, কারণ সে আর সেই ছোট্টটি নেই, সপ্তাহে এই এক দিনই তিথিকে গান শেখাতে আসেন গানের মাস্টার মশাই, তাই তিথিও ব্যস্ত থাকবে। সে দিন দুজনে ব্যালকনিতে বসে চা খেতে খেতে অনেক গল্প হলো,আমি লক্ষ্য করলাম স্বস্তিকা আজ ভালো মুডেই আছে, যে কথা এতো দিনে বলবো বলবো করেও বলে উঠতে পারিনি, আজ বলতেই হবে, নার্ভাস লাগছিল তবুও মনকে শক্ত করে বলেই ফেললাম, "স্বস্তিকা তোমায় অনেক দিন ধরে একটা কথা বলবো বলবো করেও বলার সাহস হচ্ছে না"..
স্বস্তিকা শুনে বললো "বাহ বাহ আমি বাঘ না ভাল্লুক যে আমাকে বলতে সাহসের প্রশ্ন।"
এ কথায় আমার আড়ষ্ঠতার বাঁধ ভেঙে দিল..আর দেরি করা যায় না.."যদি তোমায় বিয়ে করি..." আমার কথা শেষ হতে না হতেই স্বস্তিকা বললো "থাক আমাকে কেউ দয়া করলে সহ্য করতে পারবো না, আর এখন বিয়ে করা সম্ভব নয়, প্লিজ তোমার এই কথা আমার পক্ষে রাখা সম্ভব নয়। আমাদের সমাজে ডিভোর্স হলেই সে ছেলে বা মেয়ে উভয়ের ক্ষেত্রেই, সমাজ অশ্লীল কিছু মনগড়া অলঙ্কার পরিয়ে দিয়ে আনন্দ পায়, তা ছাড়া মেয়ে বড়ো হয়েছে, বুঝতে শিখেছে, এখন ওর কাছে আমিই বাবা আমিই মা" এই উত্তরের জন্য আমি প্রস্তুত ছিলাম না.. কারণ আমিও জানি ওর মনের কথা..সে বলে চলল, "আকাশদা আমরা না হয় বন্ধু হয়েই থাকলাম"
নাহ্, বড় ভুল করে ফেললাম কি তবে! নিজেকে সামলে নিয়ে বললাম, "ঠিক, ঠিক বলেছ স্বস্তিকা, আসলে সমাজের চোখে বন্ধুর দাবিতে তোমার কাছে এলে প্রথম প্রথম হয়তো কেউ কিছু বলবে না, কিন্তু কিছুদিন গেলেই নানা জনে নানা মন্তব্য করবে, যেটা সহ্য করা কঠিন,এই সব ভেবেই তোমায়....".
"থাক আকাশ দা.. এই প্রসঙ্গ বরং থাক"
এখন বুঝতে পারছি পরের দিন পড়াতে গেলেই স্বস্তিকা ওইভাবে আমাকে বারণ করলো, জানি না হয়তো আমায় পছন্দ করছে না।
আমাদের আদি বাড়ি পানিহাটি গঙ্গার কাছেই, সেখানে বর্তমানে মা আর আমি, বাবা অনেক বছর হলো মারা গেছেন। আর দাদা চাকরিসূত্রে জামশেদপুরে, সেখানেই বৌদি আর এক ছেলে এক মেয়ে, প্রায় কুড়ি বছর ওখানেই।
মা একদিন জিজ্ঞাসা করলো "কিরে তুই স্বস্তিকার মেয়েকে পড়াতে যাচ্ছিস না, তুই কি পড়ানো ছেড়ে দিয়েছিস?" মা আমার সবই বোঝে, বন্ধুর মতন, সব গল্পই মায়ের সঙ্গে হয়, মাকে সব ঘটনা জানালাম। মায়ের খুব পছন্দ স্বস্তিকাকে চিরকালই পছন্দ, ডিভোর্সি হলেও ছেলের বউ করে ঘরে আনতে আপত্তি ছিলো না।স্বস্তিকার মুখে সেদিনের ঐ কথা শোনার পর যাওয়া কমিয়ে দিয়েছি আর মন চাইলেও ইছে করেই রোজ ফোন করিনা,তিথির জন্য মনটা কেমন করে,তাই দুয়েকদিন পর খোঁজ নিই।
এইভাবেই চলছিল, প্রায় ছমাস পর এক রাতে আমরা শুয়ে পড়েছি,রাত তখন সাড়ে এগারোটা, একটা ফোন এলো,দেখলাম ট্রু কলারে স্বস্তিকার ফটো, আগ্রহ নিয়ে ফোন রিসিভ করলাম,অপর প্রান্তে তিথির গলা, কাঁপা কাঁপা গলায় "আংকেল.."
আমি বললাম "কেমন আছো তিথি? কি ব্যাপার মা? এত রাতে... মা কোথায়?"
তিথি বললো "জানো মায়ের না অসহ্য পেটের যন্ত্রণা, ছটফট করছে,আমার খুব ভয় করছে আংকেল"
চিন্তা করো না তুমি, আমি এখনি আসছি। মাকে সব জানালাম মা বললো "দেরি করিস না" গ্যারেজ থেকে গাড়ি বের করে ওদের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। স্বস্তিকা আর তিথিকে গাড়িতে বসিয়ে, ঘরে তালা দিয়ে সোজা নার্সিংহোমে, ডাক্তারবাবু দেখে যা আশঙ্কা করলেন যে গলব্লাডার স্টোন, রাতেই কিছু টেস্ট করে প্রয়োজনে কালই অপারেশন "তৈরি থাকবেন" নির্দেশ মেনে সব ব্যবস্থায় লেগে পড়লাম। ফিমেল ওয়ার্ড, ডাক্তার বললেন "বাইরে বসেই বা কি করবেন, বরং আপনার মেয়েকে নিয়ে বাড়ি চলে যান, সকালে এলেই হবে"... তিথির মুখে তখন অসহায়তা.. স্বস্তিকার বাড়িতে জানিয়েছি কিন্তু তাদের আসতে সেই সকাল.. অতএব তিথিকে নিয়ে আমাদের বাড়ি যাওয়া ছাড়া আর উপায় নেই। মা দেখে বেজায় খুশি। বললো "ঠিক করেছিস ওকে এনে, বাচ্চা মেয়ে ওকি মা ছাড়া একা থাকতে পারে"। পরের কিছু দিন অপারেশন, টেস্ট, অবজারভেশন এই কেটে গেল।
ছুটির সময় মা খানিক জোর খাটিয়ে স্বস্তিকাকে নিয়ে এলেন আমাদের বাড়িতে।
অনেক দিন পর ভালোবাসার সান্নিধ্যে এবং মার সেবায় যেন আরও জলদি সুস্থ হয়ে উঠলো স্বস্তিকা। তিথির মুখে আমাদের বাড়িতে সে কি কি মজা করছে সেই গল্প শুনতে শুনতে তিথির হাসি মাখা মুখের দিকে তাকিয়ে অনেকবারই দেখেছি কোনও এক অজানা চিন্তায় যেন স্বস্তিকা হারিয়ে যায়। কী এত ভাবে? এই একরত্তি কে নিয়ে কিসের এর চিন্তা? দেখতে দেখতে এভাবেই এক মাস কাটল। সেদিন রাতে খাবার টেবিলেই কথাটা তুললো সে, অনেকদিন তো হল এবার বাড়ি ফেরা যাক তিথিকে নিয়ে। মা শুনে বললো "হ্যা এখানে হয়তো তোমার কষ্ট হচ্ছে, যতোটা যত্ন করা উচিত ছিলো সেটা হয়তো আমি করতে পারছি না"
কথা শেষ না হতেই স্বস্তিকা, "না না মাসিমা আপনারা ছিলেন তাই তো এতো তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়েছি, আপনি যে ভাবে আমায় খেয়াল রেখেছেন আমার মা থাকলেও পারত না"... দুজনের কথার মাঝে আমি নির্বাক শ্রোতা... "তোমরা কোথাও যাবে না" কথাটা মুখ ফুটে বলার অধিকার টুকুও আমি হারিয়েছি।
পরের দিন কলেজ থেকে ফিরে আমি জানতাম তিথি স্বস্তিকার ফিরে যাওয়ার কথা। কলিং বেল বাজাতেই দরজা খুলল... স্বস্তিকা!! "তুমি?? তুমি .." স্বস্তিকার লজ্জা মাখা মুখ যেন অন্য আভাস দিচ্ছে। কি এমন হল! মা রান্নাঘর থেকেই বললেন " ও আর যাবে না, সেই পাকাপাকি ব্যবস্থাই আমি করছি"
এই কি সম্ভব? কিভাবে ঘটল এই চমৎকার! খাওয়ায় টেবিলে বসে মা-ই বললেন সেই কথা..
আমি কলেজে চলে গেলে, স্বস্তিকাকে মা যা বলেন তার সার কথা এই যে..
"একটা কথা রাখবি মা"
"হ্যাঁ হ্যাঁ নিশ্চই রাখবো"
"তোর ওই ভাড়া বাড়ি ছেড়ে এখানে আমার কাছে চলে আয়, আমি কি তিথির ঠাকুমা হতে পারি না?" স্বস্তিকার চোখে জল। শিশুর মতন কান্নায় তার জবাব খুঁজে নিয়েছেন মা। আর স্বস্তিকা পেয়েছে এক নতুন সংসার।
মুদ্রিত সংখ্যার প্রচ্ছদ |
মুদ্রিত সংখ্যা সংগ্রহ বিষয়ক জরুরি কথা
নবপ্রভাত ব্লগজিনের ৬৮তম সংখ্যা (কার্তিক ১৪৩০ অক্টোবর ২০২৩) প্রকাশিত হল। কথামতো এই সংখ্যাটি বই (মুদ্রিত পত্রিকা) আকারে একটি প্রকাশনী থেকেও প্রকাশিত হল। ফন্ট একটু ছোট রেখে সাড়ে আট ফর্মার পত্রিকা হয়েছে। মুল্য ১৭৫ টাকা। তবে আমরা একটা কোড দিচ্ছি ( কোড: NABAPRAVAT30 )। এটা অর্ডার ফাইনাল করার সময় ব্যবহার করলে ১৪৯ টাকায় বইটি পাওয়া যাবে। অর্ডার করলে বাড়িতে বসেই পেয়ে যাবেন। (একটি সংখ্যার জন্য ডেলিভারি চার্জ নেবে ৫০ টাকা। একাধিক নিলে ডেলিভারি চার্জ অনেকটাই কমবে। এটা প্রকাশনা সংস্থার নিজস্ব নিয়ম।) কোড ব্যবহার করলে ১৯৯ টাকায় (ডেলিভারি চার্জসহ) বইটি পেয়ে যাবেন। আগ্রহীরা সংগ্রহ করতে পারেন।
যাঁরা অনলাইন অর্ডারে স্বচ্ছন্দ নন, অথবা, অনলাইনকে বিশ্বাস না করে আমাদের থেকে পত্রিকা সংগ্রহ করতে চান তাঁরা শুধু মুদ্রিত মূল্য ১৭৫ টাকা আমাদের পাঠাতে পারেন। আমরা দায়িত্ব নিয়ে আপনার ঠিকানায় বইটি পাঠিয়ে দেব। হাতে হাতে নেওয়া সম্ভব হলে ১৫০ টাকা পাঠালেই হবে। আমরা আনিয়ে দেব।
আমাদের গুগুল পে / ফোন পে
নম্বর ৯৪৩৩৩৯৩৫৫৬। প্রয়োজনবোধে এই নম্বরে স্বচ্ছন্দে call বা whatsapp করতে পারেন।
মুদ্রিত সংখ্যা অর্ডার করার লিঙ্ক:
https://notionpress.com/read/nabapravat-utsab-2023
==================
- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন