Featured Post
গ্রন্থ আলোচনা ।। গ্রন্থ: ‘মাস্টারের মাংস’ ।। গল্পকার : চন্দন মিত্র ।। আলোচক: নিরাশাহরণ নস্কর
- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
গ্র ন্থ আ লো চ না
‘মাস্টারের মাংস’ : সার্থক এক অণুগল্প সংকলন
নিরাশাহরণ নস্কর
অণুগল্প আমাদের সাহিত্যের ধারায় সর্বশেষ সংযোজন। অণুগল্পের সংজ্ঞা ও চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য নিয়ে অনেকেই ধোঁয়াশাচ্ছন্ন। স্বল্পায়তনটাই অনেকের কাছে অণুগল্পের একমাত্র বৈশিষ্ট্য। কিন্তু উপন্যাস বা বড়গল্পের মূল কাহিনিকে ছোট আকারে প্রকাশ করলে তা কখনোই অণুগল্প নয়। ক্ষুদ্র ছোটগল্পও অণুগল্প নয় এটাও রচয়িতা কে বুঝতে হবে। আমার মনে হয়, অণুগল্প আকার আয়তনে ‘অণু’ হবে, আবার তাকে হতে হবে চকিত আলোর চমকের মত জীবনের ‘অণু’ মূহুর্তের কাহিনি। নিজস্ব আবেগ প্রকাশ না করে নির্মোহ ভঙ্গিতে চূড়ান্ত পরিণতিতে পৌঁছে দিতে হবে গল্পকে। আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এর পরিসমাপ্তি, যার মোচড় বা ঝটকা পাঠককে চমকিত করবে। বেশ কিছু অণুগল্প পড়লে বিন্দু বিন্দু আলোককণায় বাহারি জগত, চলমান জীবন আর বিচিত্র মনুষ্য চরিত্রের উদ্ভাস প্রকটিত হয়ে উঠবে।
কথাগুলি মাথায় এলো গল্পকার চন্দন মিত্রের ‘মাস্টারের মাংস’ শীর্ষক অণুগল্প সংকলনটি সম্পর্কে কিছু লিখতে বসেই। আগে চন্দন মিত্রের কবিতার বই, প্রবন্ধের বই এমনকি অনুবাদ কবিতার বইও প্রকাশিত হয়েছে; কিন্তু অণুগল্পের বই এই প্রথম। ‘মাস্টারের মাংস’। চার ফর্মার এই বইতে মোট অণুগল্প আছে ৩৫টি। প্রথম বইতেই চন্দন অণুগল্পের দীক্ষিত পাঠক ও অণুগল্প ধারার আলোচকদের চমৎকারিত্বে মুগ্ধ করতে পেরেছেন বলেই আমার ধারণা।
নিছক গল্পরচনা গল্পকারের উন্বিষ্ট নয়। পাঠকের চিরাচরিত চিন্তাচেতনাকে আহত ও উচ্ছিন্ন করার জন্য কলমকে লক্ষ্যভেদী আয়ুধ হিসাবে তিনি ব্যবহার করেছেন। বইটির ফন্ট-ফ্ল্যাপে ব্লার্বের এই বক্তব্য যে অতিকথন নয়, তা পাঠক হিসাবে স্বীকার করতেই হয়।
এই গ্রন্থের অণুগল্পগুলোর সংক্ষিপ্ত পরিসরে আমাদের প্রতিপার্শ্বের মানুষগুলোর ভন্ডামি নষ্টামি যেমন উঠে এসেছে, তেমনি প্রকাশ পেয়েছে পরিচ্ছন্ন মানুষের হৃদয়ের আলোকিত দিকও। জীবনের টুকরো টুকরো মুহূর্তগুলো আমাদের খুব চেনা কিন্তু গল্পের চেহারায় তাকে দেখে আমাদের চমক লাগে -- বিস্মিত হই। জীবনকে এবং জগতকে খুঁটিয়ে দেখার চোখ আছে চন্দনের। ক্ষুদ্রতুচ্ছ কথার ভাঁজে চরিত্র চেনা আর চেনানোর দক্ষতা আছে তার কলমের। গল্পগুলোকে কয়েকটা শ্রেণিতে খুব সহজেই বিভক্ত করা যায়:
এক. একেবারে নিপাট ভালো মানুষের গল্প ‘মেন্টাল’, ‘কবি’, ‘উপকার’, ‘গ্লানি’ ইত্যাদি। মেন্টাল গল্পের স্বপনবাবু ‘এত বড় ইলিশ হয়তো নিরঞ্জন কাউকে বিক্রি করতে পারবে না জেনে তাই নিরুপায় হয়ে তাকেই ধরেছে’ ভেবে বড় ইলিশটা নিয়ে নেন। আবার গরীব আত্মীয় প্রতিবেশীদের কথা ভেবে নদীতে ছেড়ে দেন। ‘কবি’ স্ত্রীর অত্যাচারে কাটা মাথায় সেলাই নিয়ে কবি সম্মেলনে যান। ‘গ্লানি’ সৎ পিতা-পুত্রের গল্প।
দুই. ভণ্ডামির গল্প। সমাজে ভণ্ডমানুষ চিরকালই আছে। কিন্তু বর্তমানে তার সংখ্যা ক্রমবর্ধমান। ভণ্ডামির ছবি আমাদের খুব চেনা। গা-সওয়া হয়ে গেছে। ‘কৈতব’ গল্পের বড়বাবু, ‘বুমেরাং’ গল্পের প্রৌঢ় বৈষ্ণব, ‘স্বরূপ গুপ্ত’ গল্পের নাম চরিত্র -- সবাইয়ের ভন্ডামি আমাদের খুব চেনা।
তিন. সামাজিক অসত্য, নিষ্ঠুরতা, ভণ্ডামিরর বিরুদ্ধে প্রতিবাদের গল্প আছে বেশ কয়েকটি। যেমন—‘প্রথম হাততালি’ ‘মুখাগ্নি’ ‘জবাব’ ‘শান্তি’ ‘মূল্য’ ‘মাস্টারের মাংস’ ইত্যাদি। ‘প্রথম হাততালি’তে শহীদ ক্ষুদিরামের প্রতিকৃতিতে মাল্যদান করতে গিয়ে শয়তান নেতার কেঁপে ওঠা এবং স্বঘোচিত প্রেতবিজ্ঞানী ক্ষ্যাপা স্বপনের প্রথম হাততালি যে তীব্র প্রতিবাদের প্রকাশ তা সহজেই বোঝা যায়। ‘মূল্য’ ও ‘মাস্টারের মাংস’ গল্পে পণপ্রথার বিরুদ্ধে এখনকার শিক্ষিত সচেতন মেয়েদের প্রতিবাদ ধ্বনিত হয়েছে।
চার. ‘ভ্যাসেকটমি’ ‘প্রথম পরাজয়’ ‘অদ্ভুত আঁধার’ ইত্যাদি গল্পে মধ্যবিত্ত বাঙালির অসহায়তার কথা ফুটে উঠেছে।
পাঁচ. লেখকের পেশাগত শিক্ষক জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে বেশ কিছু গল্প উঠে এসেছে। যেমন, ‘জবাব’, ‘অদ্ভুত আঁধার’, ‘জীবনের একটি সহজ সত্য’, ‘বিশ হাজারি মাল’ ইত্যাদি
ছয়. ‘প্রথম হাততালি’, ‘মেন্টাল’, ‘ভালোবাসা’ ইত্যাদি কয়েকটি গল্পে ম্যাজিক রিয়ালিজম-এর প্রকাশ দেখা যায়। অফিসকর্তা স্বপনবাবুর হাত থেকে বাজার থেকে কেনা ইলিশ মাছের নিজেকে মুক্ত করে ক্রমশ জলের গভীরে হারিয়ে যাওয়া (মেন্টাল), ক্ষুদিরামের প্রতিকৃতিতে খুনি-ধর্ষক নেতার মাল্যদানের সময় তাকে ঝাঁকিয়ে, কাঁপিয়ে দেওয়া (প্রথম হাততালি), কিংবা ভালোবাসার টানে জবাগাছের ডালে বসা টুনটুনির পাথরের টুনটুনি হয়ে আলমারিতে স্থান পাওয়া (ভালোবাসা) – এ সবই ম্যাজিক রিয়ালিজমআশ্রিত।
সাত. সর্বশেষ যে বৈশিষ্ট্যের কথা না বললেই নয় তা হল, প্রকৃতিনির্ভর জীবনের প্রতি আত্মিক টানের গল্প। ‘দাগ’, ‘পাখি’, ‘তাই পিং’, ‘শিকড়ের সন্ধানে…’ এই গল্পগুলির চরিত্ররা শহরের একঘেয়ে ক্লান্তিকর জটিল ব্যূহময় জীবন থেকে মুক্তির জন্য স্বেচ্ছায় হারিয়ে গেছে অমল প্রকৃতির বুকে।
হাতে গোনা চার পাঁচটা লেখা ছাড়া সম্পূর্ণ সংকলনটাই সার্থক অণুগল্প সংকলন হয়ে উঠেছে এ কথা দৃঢ়তার সঙ্গে বলা যায়।
গ্রন্থটির প্রচ্ছদ, বানান ভুল না-থাকা ও মুদ্রণ পারিপাট্য প্রশংসনীয়।
গ্রন্থ : মাস্টারের মাংস
শ্রেণি : অণুগল্প সংকলন
গল্পকার : চন্দন মিত্র
প্রকাশকাল : ফেব্রুয়ারি
২০২৩
প্রকাশক : বার্নিক, পূর্ব
বর্ধমান
প্রচ্ছদ : মহঃ আসিফ
মূল্য : ১৫০ টাকা
মুদ্রিত সংখ্যার প্রচ্ছদ |
মুদ্রিত সংখ্যা সংগ্রহ বিষয়ক জরুরি কথা
নবপ্রভাত ব্লগজিনের ৬৮তম সংখ্যা (কার্তিক ১৪৩০ অক্টোবর ২০২৩) প্রকাশিত হল। কথামতো এই সংখ্যাটি বই (মুদ্রিত পত্রিকা) আকারে একটি প্রকাশনী থেকেও প্রকাশিত হল। ফন্ট একটু ছোট রেখে সাড়ে আট ফর্মার পত্রিকা হয়েছে। মুল্য ১৭৫ টাকা। তবে আমরা একটা কোড দিচ্ছি ( কোড: NABAPRAVAT30 )। এটা অর্ডার ফাইনাল করার সময় ব্যবহার করলে ১৪৯ টাকায় বইটি পাওয়া যাবে। অর্ডার করলে বাড়িতে বসেই পেয়ে যাবেন। (একটি সংখ্যার জন্য ডেলিভারি চার্জ নেবে ৫০ টাকা। একাধিক নিলে ডেলিভারি চার্জ অনেকটাই কমবে। এটা প্রকাশনা সংস্থার নিজস্ব নিয়ম।) কোড ব্যবহার করলে ১৯৯ টাকায় (ডেলিভারি চার্জসহ) বইটি পেয়ে যাবেন। আগ্রহীরা সংগ্রহ করতে পারেন।
যাঁরা অনলাইন অর্ডারে স্বচ্ছন্দ নন, অথবা, অনলাইনকে বিশ্বাস না করে আমাদের থেকে পত্রিকা সংগ্রহ করতে চান তাঁরা শুধু মুদ্রিত মূল্য ১৭৫ টাকা আমাদের পাঠাতে পারেন। আমরা দায়িত্ব নিয়ে আপনার ঠিকানায় বইটি পাঠিয়ে দেব। হাতে হাতে নেওয়া সম্ভব হলে ১৫০ টাকা পাঠালেই হবে। আমরা আনিয়ে দেব।
আমাদের গুগুল পে / ফোন পে
নম্বর ৯৪৩৩৩৯৩৫৫৬। প্রয়োজনবোধে এই নম্বরে স্বচ্ছন্দে call বা whatsapp করতে পারেন।
মুদ্রিত সংখ্যা অর্ডার করার লিঙ্ক:
https://notionpress.com/read/nabapravat-utsab-2023
==================
- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন