আমাদের চারপাশে রোজ কোনও না কোনও ভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়ে গেলেও তা আমাদের চোখ এড়িয়ে যাচ্ছে। কিংবা আমরা চোখ বুজে রাখছি।
আজ কোনও সরকারি অফিস- হাসপাতাল-পুরসভায় নিজের প্রয়োজনে গেলে সেখানে দামি প্যান্ট জামা পরা তথাকথিত ভদ্রলোক সংশ্লিষ্ট আধিকারিকের কাছে যে ব্যাবহারটা পান, এক জন খেতমজুর, গরিব দিনমজুর ময়লা লুঙ্গি, জামা পরে গেলে সেটা পান না।
অথচ আমরা কেউ প্রশ্ন তুলি না যে, সংবিধানে সব মানুষের সমানাধিকারের কথা বলে আছে, তা কেন মান্যতা পাচ্ছে না? এক জন মানুষ তার নিজের পরিবারে বাবা, মা, ভাই, বোনেদের কাছ থেকে জমি জায়গার অংশ পেতে যতটা সজাগ, তার থেকেও তাঁর বেশি সজাগ থাকা দরকার ছিল রাষ্ট্রের কাছে, স্থানীয় প্রশাসনের কাছেও তাঁর ন্যায্য অধিকার বুঝে নেওয়ার বিষয়ে। পরিবারের সম্পত্তির হিসেব না পেলে যেমন আদালতের শরণাপন্ন হই আমরা, তেমনই তোমার রাষ্ট্র, তোমার সরকার বা স্থানীয় প্রশাসন যদি নাগরিককে তাঁর অধিকার পাইয়ে দিতে সচেষ্ট না হয়, সেখানেও তিনি আদালতের শরণাপন্ন হতে পারেন।
জাতীয়, রাজ্য বা জেলা আইনি পরিষেবা কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আর্কষণ করতে পারেন ন্যায় অধিকারের জন্য। মানবাধিকার দিবসে আমাদের কর্তব্য এই তথ্যগুলো আরও বেশি করে সাধারণ মানুষের কাছে তুলে ধরা। স্রেফ দিনটিকে পালন করা নয়।
মানবাধিকার দিবস পালনের থেকেও বড় কথা মানবাধিকার রক্ষার জন্য আইনি পথেই পথ চলা। সেই অধিকার রক্ষার মানবিক ভাবনাটা জারি রাখাও মানব-অধিকার। তাই আলোচনা- প্রচারাভিযান-বক্তৃতা-পথসভার মাধ্যমে ঘটা করে মানবাধিকার দিবস পালনের চেয়েও জরুরি আশপাশের মানুষজনকে তাঁদের প্রাপ্য ও অধিকার সম্পর্কে সচেতন করা। স্বাধীনতার ৭৩ বছর পরেও আমাদের দেশে আর্থসামাজিক কাঠামোর বুনিয়াদ এখনো স্থিতিশীল ভাবে পুনর্গঠিত হলো না। প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে সমাজে অস্থিরতা বিভাজন সামাজিক বৈষম্য, হানাহানি, রাজনৈতিক মেরুকরণ সর্বোপরি সংখ্যালঘুদের প্রতি চরম নিপীড়ন ও শোষন,। মানবাধিকার এখনো সেই অর্থে বৃহত্তর মানুষের কাছে পৌঁছায়নি শুধুমাত্র গালভরা কথাতেই আটকে গেছে। সমাজের সর্বক্ষেত্রে শ্রেণিবৈষম্য বিভাজন এখনো উঁকি মারছে। আমরা যেদিন নিজেদের জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষেমানবতার বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে সবাইকে ভ্রাতৃত্ব সৌজন্যে সংহতি সহানুভূতি সহমর্মিতা আপন করে নিতে পারব সর্বোপরি প্রকৃত ভারতীয় রুপি নিজেদেরকে মেলে ধরতে পারবো সেদিনই আমরা মানবাধিকার কে পূর্ণভাবে মানব জীবনে প্রয়োগ করতে পারব। পরিশেষে আবারও বড় বড় গালভরা কোথায় আটকে না থাকে সাধারণ মানুষকে তাদের বেঁচে থাকার সুযোগ সুবিধা নিরাপত্তা পরিষেবা আমরা যদি সুষ্ঠুভাবে প্রদান করতে পারি সেখানেই মানবাধিকার দিবসের প্রকৃত তাৎপর্য ও প্রাসঙ্গিকতা। পরিশেষে এই করোনা সংকটে একদিকে মানুষ যেমন রুটি রুজির কর্মসংস্থান হীনতায় দিশেহারা বিধ্বস্ত বিপর্যস্ত ঠিক সেই মুহুর্তে বেঁচে থাকার জিয়ন কাঠি হয়ে উঠতে পারে মানবাধিকারের তাৎপর্য ও প্রাসঙ্গিকতার বাস্তবিক উপলব্ধিকরন।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন