google-site-verification=aFCzFTmuVjPqPlrdWXeJSj2r_EMig_cypLnlmiUQpw0 re গল্প।। স্বপ্নের রহস্য।। সৌরভ ব্যানার্জ্জী - নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

Breaking

নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

NABAPRAVAT : A Monthly Bengali Literary Blogzine.

বৃহস্পতিবার, ১৭ ডিসেম্বর, ২০২০

গল্প।। স্বপ্নের রহস্য।। সৌরভ ব্যানার্জ্জী



                       স্বপ্নের রহস্য

সৌরভ ব্যানার্জ্জী 


আমি পুরোপুরি কোলকাতার ছেলে।গ্ৰাম সম্পর্কে আমার তেমন কোনো অভিজ্ঞতা নেই। শহরের মার্জিত জীবনের মধ্যেই আমার বেড়ে ওঠা।এস.এস.সি.তে পাশ করে আমি এখন চাকরির আশায়। একদিন সকালে মা চায়ের সঙ্গে একটি চিঠি দিয়ে গেলেন,জিজ্ঞাসায় তিনি কিছু বললেন না।চিঠি খুলে দেখি আমার চাকরির অনুমতি পত্র এবং সবথেকে বড় বিষয় আমাকে কাজের সূত্রে সেই গ্ৰামেই যেতে হবে।এই দুর্মূল্যের বাজারে চাকরি পেলে ছাড়ে কে? অগত্যা পরদিনই রওনা দিলাম সেই গ্ৰামের উদ্দেশ্যে।
       গ্ৰামের নাম দামোদরপুর। নিটোল,নিখুঁত একটি গ্ৰাম। শহরের সঙ্গে যোগাযোগ মাত্র কয়েকটি বাস। গোরুর গাড়ির ব্যবহার এখনও এখানে দেখা যায়। অনেক খুঁজে আমার চাকরির কেন্দ্রবিন্দু অর্থাৎ স্কুলটি পেলাম।যাই হোক স্কুল তো পাওয়া গেল এখন সবথেকে বড় সমস্যা হল বাসস্থান। অনেক জিজ্ঞাসাবাদের পর একজন আমায় বললেন'ওই ইস্কুলের পাশে একখান ঘর আছে বটে -তবে•••'
'-তবে কি?"'
'-ওটা ভূতের বাসা ওখেনে না থাকায় ভালো।'
বিষয়টা বড়ই বোকা বোকা লাগাই আর তাকে ঘাঁটাঘাঁটি করিনি।
যান্ত্রিক শক্তি এতোই দুর্বল যে সাথে ফোন থাকা আর না থাকা দুটোই সমান। অনেক কষ্টে বাড়িতে খবর দিলাম। দুই দিন বিশ্রামের পর শুরু হল আমার শিক্ষকতার জীবন।বেশ ভালো ভাবেই কাটছিল দিনগুলো।
       প্রায় তিন মাস পর আমি একটি ভয়ঙ্কর ঘটনার সম্মুখিন হই। শনিবার;দুপুরেই বাড়ি ফিরে এলাম। খাওয়া দাওয়া শেষ করে একটা জানালার ধারে এসে দাঁড়িয়েছি। এখান থেকে নদী এবং একটি বটগাছ দেখা যায়। হঠাৎ ই একটা দৃশ্য দেখে আমি আঁতকে উঠলাম। আমার জিভ শুকিয়ে এলে, শরীর হিম হয়ে গেল, আমি ভয়ে কাঁপতে থাকলাম।নদীর পাড়ের বটগাছটিতে একটি মেয়ে গলায় দাড়ি দিয়ে ঝুলছে এবং হাসছেও; আমি দৌড়ে নীচে নেমে এসে দেখলাম,না ছিল মেয়ে,আর না ছিল দড়ি।ভয় একটু পেয়েছিলাম তবে নিজেকে সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য ভেবেছিলাম"হয়তো মনের ভুল।"
এরপর বেশ কিছু দিন কেটে গেছে,এই বিষয়টা প্রায় ভুলেই গিয়েছি।
প্রধান শিক্ষক মহাশয় জানালেন'সামনেই স্কুলের পরীক্ষা, নোটিশ নিশ্চয় পেয়েছেন?'
'-হ্যাঁ স্যার পেয়েছি।'
'-আপনার পড়ানোর বেশ প্রশংসা শুনতে পাচ্ছি, খুব ভালো।'
'-ধন্যবাদ স্যার।'
'-আমি চাই আপনি অষ্টম শ্রেণীর প্রশ্নপত্রের দায়িত্ব নিন!'
'-অবশ্যই স্যার।'
দায়িত্ব পাওয়ার পরই কাজে লেগে পরলাম।এরই মধ্যে বলে রাখি আমি একটা কাজের লোক নিয়োগ করেছি,যে আমার বাড়ির যাবতীয় দায়িত্ব পালন করে। একদিন সন্ধ্যায় কাজের মাসির ছুটি ছিল। সেইদিন কাজ করতে বসে হঠাৎ প্রচন্ড যন্ত্রনায় আমার কপাল ব্যথা করে ওঠে এবং অনুভব করি বোধ হয় একটু জ্বরও আছে। ভাবলাম'সন্ধ্যায় এই গ্ৰামে ডাক্তার পাওয়া অসম্ভব।'আর সহ্য করতে না পেরে আমি বিছানায় গিয়ে শুয়ে পরলাম।দুদিনেও আমার জ্বর কমলো না এদিকে কাজের মাসি সেই যে বিদায় হয়েছে আর ফেরেনা।
       মধ্যরাত্রে আমি অচৈতন্য অবস্থায় বিছানায় পরে হঠাৎ আমি অনুভব করি আমার মাথায় কে যেন হাত বুলিয়ে দিচ্ছে কিন্তু ওই হাতের স্পর্শ যত কোমল ঠিক ততটাই ঠান্ডা। আমি তাকানোর চেষ্টা করলাম কিন্তু পারলাম না,যেন আবছা কোনো নারী মৃর্তি দেখেছিলাম।এর পর দিনই আমি আরোগ্য লাভ করি।এই সন্দেহের সমাধান করার সময় পাইনি, আবার স্কুলের কাজে ব্যস্ত হয়ে পরলাম।
         এরপর প্রায় ছমাস কেটে গেছে।গ্ৰীষ্মের ছুটির পর একদিন পঞ্চম শ্রেণীর ক্লাসরুমে'আচ্ছা বলতো'ছুটি' কবিতাটি কার লেখা?'
'-স্যার আমি বলবো'বলেই রিয়া দাঁড়িয়ে পরে
'-বলতে হবে না এসে বোর্ডে লেখো।'
রিয়া এগিয়ে এসে চক চাইলো।আমি তার হাতে চক দিতে গিয়ে তার স্পর্শে ভয়ে, আতঙ্কে চেয়ার থেকে নীচে পরে যাই,প্রায় পাগলের মত হয়ে যাই, এটা কী করে সম্ভব ,এটা হতে পারে না, না!না! এটা হতে পারে না।মন তিলেকে সজাগ হয়ে ভাবলো মেয়েটির হাতের স্পর্শে সেই একই অনুভূতি যেটা আমি পেয়েছিলাম সেই নারীরা স্পর্শে।হতবাক হয়ে গিয়েছিলাম। সেদিন বাড়ি ফিরে আর রাতে ঘুমাতে পারিনি। বিভিন্ন চিন্তা-ভাবনা মাথায় আসছিল। তারপর মনে হলো 'রিয়ার বাড়ি যাওয়া প্রয়োজন, তাহলেই এই রহস্যের সমাধান হয়তো সম্ভব।'
        পরদিনই স্কুলে খোঁজ করে রিয়ার বাড়ি গেলাম। রিয়ার বাড়িতে শুধু রিয়া ও তার ঠাকুমা থাকে।তার ঠাকুমার সঙ্গে কথা বলে যা জানতে পারলাম তা হল রিয়া তার মায়ের অবৈধ্য সন্তান।তার মায়ের সঙ্গে পাশের গ্ৰামের অমিতের একটা সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। সামাজিক মান্যতা না পাওয়ায় তারা এই সম্পর্ককে গোপনভাবে পূর্ণতা দিত সেই নদীর ধারে বাড়িটিতে। পাড়ার লোকের গোচরে আসলে অমিত গ্ৰাম ছাড়া হয় আর মেয়েটি জননী হয় ঠিকই কিন্তু মানসিক বিকারগ্রস্ত হয়ে ওই বটগাছে আত্মঘাতী হয়। এতক্ষনে সব কিছু যেন চোখের সামনে পরিষ্কার হয়ে যায়। অনেকক্ষন ধরে একটা ক্ষীণ আওয়াজ আমার কানে আসছিল সেটা ক্রমশ জোড়ালো হলে বুঝলাম ওটা আমারই নাম । হঠাৎ মায়ের ধাক্কায় আমার ঘুম ভেঙে যায়'কি রে ওঠ,কখন থেকে ডাকছি তোকে।বলিহারি তোর ঘুমকে বাবা!' ঘুম থেকে উঠে ভাবি"স্বপ্ন".......
উঠে দেখি টেবিলে মা চায়ের সঙ্গে একটা চিঠি দিয়ে গেছেন।চিঠি খুলে দেখি স্কুল মাস্টারী চাকরির অনুমতি পত্র এবং চাকরি সূত্রে আমাকে গ্ৰামেই যেতে হবে।গ্ৰামের নাম দেখা মাত্রই আমার হাত থেকে চিঠিটা পরে গেল.....
দামোদরপুর.........।



ঠিকানা:- লেক গার্ডেন্স, কোলকাতা-৭০০০৩৩
              চলমান:-৯০০৭৫১৪৪১৩

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন