Featured Post

"নবপ্রভাত" ৩০তম বর্ষপূর্তি স্মারক সম্মাননার জন্য প্রকাশিত গ্রন্থ ও পত্রপত্রিকা আহ্বান

ছবি
  "নবপ্রভাত" সাহিত্যপত্রের ৩০তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে আমরা নির্বাচিত কয়েকজন কবি-সাহিত্যিক ও পত্রিকা সম্পাদককে স্মারক সম্মাননা জানাতে চাই। শ্রদ্ধেয় কবি-সাহিত্যিক-নাট্যকারদের (এমনকি প্রকাশকদের) প্রতি আবেদন, আপনাদের প্রকাশিত গ্রন্থ আমাদের পাঠান। সঙ্গে দিন লেখক পরিচিতি। একক গ্রন্থ, যৌথ গ্রন্থ, সম্পাদিত সংকলন সবই পাঠাতে পারেন। বইয়ের সঙ্গে দিন লেখকের/সম্পাদকের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি।  ২০১৯ থেকে ২০২৪-এর মধ্যে প্রকাশিত গ্রন্থ পাঠানো যাবে। মাননীয় সম্পাদকগণ তাঁদের প্রকাশিত পত্রপত্রিকা পাঠান। সঙ্গে জানান পত্রিকার লড়াই সংগ্রামের ইতিহাস। ২০২৩-২০২৪-এর মধ্যে প্রকাশিত পত্রপত্রিকা পাঠানো যাবে। শুধুমাত্র প্রাপ্ত গ্রন্থগুলির মধ্য থেকে আমরা কয়েকজন কবি / ছড়াকার / কথাকার / প্রাবন্ধিক/ নাট্যকার এবং সম্পাদককে সম্মাননা জ্ঞাপন করে ধন্য হব কলকাতার কোনো একটি হলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে (অক্টোবর/নভেম্বর ২০২৪)।  আমন্ত্রণ পাবেন সকলেই। প্রাপ্ত সমস্ত গ্রন্থ ও পত্রপত্রিকার পরিচিতি এবং বাছাই কিছু গ্রন্থ ও পত্রিকার আলোচনা ছাপা হবে নবপ্রভাতের স্মারক সংখ্যায়। আপনাদের সহযোগিতা একান্ত কাম্য। ঠিকানাঃ নিরাশাহরণ নস্কর, সম্পাদকঃ নব

গল্প।। মিসিং ডায়েরি ।। সবিতা বিশ্বাস





 

হ্---শ্---শ্----চুপ | আর একটা শব্দ করলেই খুন করে ফেলব | তারপর এই দেওয়ালের মধ্যে গেঁথে রেখে দেব | এর পর থানায় একটা মিসিং ডায়েরি | ব্যাস্ তোমার মা বাবা তো দূরের কথা আরশোলা, টিকটিকি ও টের পাবে না |

কি আশ্চর্য! সেই সময় দেয়াল ঘড়ির আড়াল থেকে টিকটিকিটা  টিক্ টিক্ করে ডেকে উঠল | টিকটিকির শব্দ শুনে উদ্দীপন হঠাত্ খেপে গিয়ে একটা চেয়ারে উঠে ঘড়ির পেছন থেকে টিকটিকিটাকে বাইরে আনার চেষ্টা করল | কিন্তু টিকটিকিটা তর্ তর্  করে দেওয়াল বেয়ে উঠে গেল সিলিংয়ে | এবারে উদ্দীপনের সব রাগ গিয়ে পড়ল ঘড়ির পরে | দামী ভিনটেজ ওয়াল ক্লক যা বেলজিয়াম থেকে এনেছিলেন ওর দাদু, সেই ঘড়িটাকে আছাড় মেরে ভেঙ্গে ফেলল | তারপর চেয়ার থেকে লাফিয়ে নামতে গিয়ে কাঁচের টুকরো ফুটে রক্তারক্তি কাণ্ড | আর ওই ভাবেই বেরিয়ে গেল বাইরে | যাবার আগে অবশ্য বাইরে থেকে দরজায় তালা দিতে ভুল করল না |

বেরিয়ে যাওয়ার শব্দ শুনতে পেল ইচ্ছা বিছানায় বসে বসেই | শব্দটা মিলিয়ে যেতে পা টিপে টিপে উঠল | ছড়িয়ে থাকা কাঁচের টুকরোগুলো বাঁচিয়ে কোণের দিকে ডাঁই করে রাখা বাতিল জিনিসের মধ্যে থেকে একটা পাশ বালিশ টেনে বার করলো খুব সাবধানে | বালিশটা ফেঁসে গেছে অনেকটা | তার মধ্যে হাত চালিয়ে ছোট্ট একটা ডায়েরি আর কলম বের করে আনল | তারপর দ্রুত হাতে লিখে রাখলো কিছুক্ষণ আগে ঘটে যাওয়া ঘটনাটা | লেখা শেষ হতেই ওই একই কায়দায় লুকিয়ে ফেলল ডায়েরি আর কলম | তার আগে একবার দেখে নিল ডায়েরির পাতা শেষ হয়ে আসছে | এরপর কিসে লিখবে? ভাবনাটা মুলতুবি রেখে বিছানায় পড়ে রইল ওইভাবে, যেভাবে উদ্দীপন ওকে ছুঁড়ে ফেলেছিল |

আজকাল সব কিছু কেমন যেন গুলিয়ে যাচ্ছে ইচ্ছার | মনে করতে পারে না ঠিক কতদিন দেখেনি মা-কে | মা,বাবা ভাই কাউকেই দেখেনি | মা, বাবা হয়তো ভাবছে ইচ্ছা এখন ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটিতে এমবিএ পড়ছে | ইচ্ছা তেমনই বলেছিল বাড়িতে | ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটির লস এঞ্জেলস ক্যাম্পাসে চান্স পেয়েছে | ওখানে পড়ার খরচ অনেক, কিন্তু বাড়ি থেকে কিছুই দিতে হবে না | ও ফুল ফান্ডিং স্কলারশিপ পেয়েছে |

 

এই কথাগুলো উদ্দীপনই ইচ্ছাকে বলেছিল | এমনকি এয়ার টিকিটও ইচ্ছার হাতে দিয়েছিল | ইচ্ছা ফেসবুক থেকে উদ্দীপনের স্ট্যাটাস, এডুকেশন এসব জেনে ওর ব্যবহারে মুগ্ধ হয়ে মন আগেই দিয়েছিল | এখন পড়তে যাবার সুযোগ করে দেবার জন্য এডুকেশন ফাইলের সঙ্গে ব্যাংকের পাসবুক, চেক, এটিএম কার্ড সবই তুলে দিয়েছিল উদ্দীপনের হাতে |

 

মেয়ে একা একা আমেরিকাতে গিয়ে থাকবে এটা কিছুতেই মানতে পারছিলেন না ছায়া দেবী | কিন্তু রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের স্কেল ফোর অফিসার তেজেন্দ্র প্রতাপ ইচ্ছার মাকে ধমক দিয়ে থামিয়ে দেন | এখন মেয়েরা চাঁদে পাড়ি জমাচ্ছে একা, আর এ তো ঘরের পাশে আমেরিকা | ইচ্ছার বাবা আরো বলেছিলেন, তাঁর নিজের স্বপ্ন ছিল আমেরিকা যাবেন কিন্তু তা পূরণ হয়নি | এখন মেয়ে যখন এত বড় একটা সুযোগ পেয়েছে সেটা অবহেলায় হারাবে কেন? আরো বলেছিলেন স্ত্রীকে, "দেখো ইচ্ছার জন্য একদিন আমরাও বিখ্যাত হয়ে যাব" | আর বেশি কিছু ভাবার সময় পেল না ইচ্ছা | তালা খুলে উদ্দীপন ঘরে ঢুকলো | হাতে একটা প্যাকেট | ইচ্ছা জানে ওর মধ্যে আছে খাবার আর বিয়ারের বোতল |

 

এরপরে এই ঘরে শুরু হবে অন্য নাটক | উদ্দীপন প্রথমে ইচ্ছাকে খুব আদর করবে, চুমোয় চুমোয় ভরিয়ে দেবে ওকে | তারপর জড়িয়ে ধরে গালে গাল ঘষে আলতো করে কামড় দেবে কানের লতিতে | এই সময় ইচ্ছার মন বিদ্রোহ করে কিন্তু শরীরটা গলতে শুরু করে মোমের মত | তারপর উদ্দীপন নিজে হাতে করে ওকে খাওয়াবে | জলের বদলে খাওয়াবে বিয়ার | খেতে খেতে ইচ্ছার চোখ জড়িয়ে আসে | ইচ্ছা তলিয়ে যায় ঘুমের অতলে | মনে হয় বিয়ারের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে দেয় উদ্দীপন |

 

কতক্ষণ ঘুমিয়ে ছিল কে জানে | ঘুম ভাঙতে দেখল সেই টিকটিকিটা পড়ে আছে বিছানায় | লেজ নেই, মুন্ডুটাও নেই, ধড়টা পড়ে আছে | নিজের অজান্তেই একটা ভয়ার্ত আর্তনাদ বেরিয়ে এল মুখ থেকে | সঙ্গে সঙ্গে গা গুলিয়ে উঠল | মুখ চেপে ধরে পা টিপে টিপে বিছানা থেকে নামল ইচ্ছা, ঘরের লাগোয়া বাথরুমের বেসিন এ ঢেলে দিল যা যা খেয়েছিল দুপুরে | অম্ল কটু গন্ধে ভরে গেল ঘরের বাতাস | কিন্তু ভেন্টিলেটরহীন ঘরের মধ্যেই পাক খেতে লাগল অসহনীয় গন্ধটা | টলতে টলতে বিছানায় ফিরে এলো ইচ্ছা | পায়ের বুড়ো আঙ্গুল দিয়ে কবন্ধ টিকটিকিটাকে ছুঁড়ে ফেলল | বেশি দূরে গেল না সেটা, টকাস্ করে দেওয়ালে গোত্তা খেয়ে পড়ল কোণের জঞ্জালের গাদায় |

 

পা টিপে টিপে আবারও বিছানা থেকে নামল ইচ্ছা, দরজার গায়ে কান পাতল |  নাঃ উদ্দীপনের কোনো সাড়া শব্দ নেই | এই সুযোগে ইচ্ছা যদি শেষ চেষ্টা করে এই নরক থেকে মুক্তি পাওয়ার, তাহলে কেমন হয়? এর আগে যতবার চেষ্টা করেছে ততবার উদ্দীপনের হাতে ধরা পড়ে গেছে | আর জুটেছে আরো আরো বেশি অত্যাচার | শংকর মাছের লেজের চাবুকটা পড়েছে সপাং সপাং | ইচ্ছার সারা গায়ে দগদগে ঘা | যদি আবার ধরা পড়ে?

 

মা, মাগো কোথায় তুমি? কতদিন-- ক-ত-দি-ন মা, বাবাকে দেখে নি | ভাইকে ও না | ফোনেও কথা বলেনি | সব স—ব-কেড়ে নিয়েছে উদ্দীপন | শেষবারের মতো বাবার সঙ্গে যেদিন কথা বলেছিল সেদিনও উদ্দীপনের শেখানো বুলি-ই আওড়েছিল | "আমি খুব ভালো আছি, খুব সুন্দর ক্যাম্পাস | তোমরা চিন্তা কোরোনা" |

 

হা ঈশ্বর! কি অন্যায় করেছে ইচ্ছা, যার জন্য এই শাস্তি পেতে হচ্ছে | হ্যাঁ, ছোট থেকে বড় জেদী ছিল ও | যা চাই তা দিতেই হবে | আচ্ছা মায়ের কথা না শোনার জন্যই কি এই দুর্দশা!

 

মেয়ের বিদেশ যাবার কথা শুনে ইচ্ছার মা ভয় পেয়েছিল খুব | কিন্তু তেজেন্দ্র প্রতাপের মেয়ের পরে ছিল অগাধ বিশ্বাস | তাই ছায়া দেবীর কথা একরকম উড়িয়ে দিয়ে বলেছিলেন, "কি বলছ ছায়া এরকম সুযোগ কেউ ছাড়ে? আর ও তো একা যাচ্ছেনা, ওর বন্ধু উদ্দীপন যাচ্ছে | ওদের বিরাট ব্যবসা সেখানে, ওখানে গিয়ে বাবার সঙ্গে ব্যবসার কাজে হাত লাগবে | রিয়েলি! নাইস বয়" |

 

তখন ইচ্ছা তাই-ই জানতো, বিমান তৈরির ব্যবসা | এছাড়াও ক্যালিফোর্নিয়াতে মার্সিডিস বেঞ্চের ডিলারশিপ | আবার আমেরিকার লাস ভেগাস ও সান দিয়েগোতে আছে "উদ্দীপন গ্লোবাল" | স—ব সবটা ফাঁকা | কিছু নেই, কিচ্ছু নেই উদ্দীপনের |  আবার, আবারো কেঁপে উঠলো ইচ্ছা | ওঃ কি নিষ্ঠুর এই ছেলেটা !

না হলে নিজের বাবা মাকে ওইভাবে ...........................

আর ভাবতে পারছেনা ইচ্ছা |

উদ্দীপনের হাত ধরে ইচ্ছা যখন গোয়ালিয়রের এই বাড়িতে আসে তখন আমেরিকা যাবার আনন্দে ইচ্ছা টগবগ করে ফুটছে | আর উদ্দীপনের ভালোবাসায় হাবুডুবু খাচ্ছে | সেই সময় দিন-রাত একাকার হয়ে গিয়েছিল | তেমনই এক রাতে ওরা দুজন যখন টইটুম্বুর হয়ে গেছিল শরীরী নেশা আর গ্লাসের নেশায়, ঠিক তখনই তলিয়ে যেতে যেতে ইচ্ছাকে উদ্দীপন বলেছিল ওর বাবা-মার কথা | ইচ্ছার ও নেশা হয়ে গেছিল কিন্তু উদ্দীপনের মুখে ওই নিষ্ঠুরতার কথা শুনে কেটে গিয়েছিল নেশা | কিন্তু উদ্দীপনকে  বুঝতে দেয়নি, বরং ওকে উস্কে দিয়েছিল সবটা শোনার জন্য |

সেদিন সকালে উদ্দীপনের বাবা ধীরাজশঙ্কর বেরিয়ে গিয়েছিলেন মর্নিংওয়াকে | মা রীনা দেবী ব্যস্ত ছিল ঘরের কাজে | উদ্দীপন ঘরে ঢুকে মাকে জড়িয়ে ধরে আদুরে গলায় টাকা চেয়েছিল মায়ের কাছে | রীনা দেবী ছেলের মতিগতি ঠিকঠাক বুঝতে পারতেন না, দিনরাত ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ করে  কি যে কম্পিউটারে দেখে! মাঝে মাঝেই গাদা গাদা সিডি কিনে নিয়ে আসে | কোনো বন্ধু নেই | গ্রাজুয়েশন করতে করতে পড়া ও ছেড়ে দিল | ছেলের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত ছিলেন দুজনেই | আজ রিনা দেবী ছেলেকে দেখেই বুঝলেন ছেলে টাকা চায় | যেদিন টাকার দরকার থাকে সেদিনই উদ্দীপন মাকে খুব আদর করে |  না পেলে মায়ের গায়ে হাত তুলতেও দ্বিধা করেনা |

 তাই রীনা দেবী ঠিক করেছিলেন এবার থেকে  কঠোর হবেন, সেজন্য ছেলে টাকা চাওয়া মাত্রই না করলেন | কয়েকবার না শুনল উদ্দীপন মাথা ঠান্ডা রেখে | তারপর আস্তে আস্তে মাকে জড়িয়ে ধরলো, "মা মাগো তুমি আমার ভালো মা, লক্ষ্মী মা" | ছেলের এরকম ব্যবহারে কেমন ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলেন রীনা দেবী | আর তখনই ঊনত্রিশ বছরের উদ্দীপনের শক্ত-সমর্থ হাত দুটো সাঁড়াশির মতো চেপে বসে রিনা দেবীর গলায় | একটু ছটফট, তারপর নিস্তেজ মাকে যত্ন করে শুইয়ে দেয় বিছানায় |

মায়ের কথা বলতে বলতে ইচ্ছার গলায় হাত বোলাচ্ছিল উদ্দীপন | ইচ্ছার দম বন্ধ হয়ে আসছিল | উদ্দীপন বলে চলছিল, মাকে শুইয়ে ও অপেক্ষা করছিল বাবা ধীরাজশঙ্করের জন্য | বাবা বাড়ি ফিরতেই বাবাকে ড্রইংরুমে বসিয়ে বাবার জন্য নিয়ে আসে ব্ল্যাক কফি | অনেকদিন বাদে ছেলে ভালো আচরণ করছে বলে খুশি হলেন, ভাবলেন ছেলের মতিগতি ফিরেছে বোধ হয় | কিন্তু ভালো করে ভাবার আগেই ঘুমিয়ে পড়লেন | সে ঘুম আর ভাঙলো না | উদ্দীপন কফির কাপের মধ্যে কড়া ডোজের ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে দিয়েছিল |

 ইচ্ছা বুঝে গেছে এই খুনিটার হাত থেকে ওর নিস্তার নেই | কিন্তু কিভাবে খুন করবে? খাবারে বিষ মিশিয়ে, নাকি দমবন্ধ করে | না, না কিছুতেই মরবে না ইচ্ছা | শুধু একবার বাবাকে খবর দেবে, তাহলে ওর বাবা এসে ওকে উদ্ধার করে নিয়ে যাবে | কিন্তু কি করে খবর দেবে?  চীৎকার করবে অনেক জোরে, কিন্তু গলা দিয়ে চিঁ চিঁ আওয়াজ ছাড়া আর কিছুই বের হয়না | খাবারের সঙ্গে কি যে মেশায় উদ্দীপন! মৃদু আওয়াজটা ঘরের মধ্যে ঘুরে ফিরে ওর কাছেই ফিরে এলো | কোথায় আর যাবে? সব ফাঁক ফোঁকর সেলোটেপ দিয়ে বন্ধ করে দিয়েছে উদ্দীপন |

তেজেন্দ্র প্রতাপ যতবার মেয়ের নাম্বারে ফোন করেন ফোনটা বেজে যায় কেউ ধরে না | কিছুক্ষণ পরে হোয়াটস আপ থেকে মেসেজ আসে "বাবা আমি ক্লাসে, চিন্তা কোরো না আমি ভালো আছি" |

 

মেসেজ আর মেসেজ | ইচ্ছা কেন ভিডিও কল করে না! তাহলে ওরা সবাই ইচ্ছাকে একটু দেখতে পারেন | ছায়া দেবী মেয়ের চিন্তায় নাওয়া-খাওয়া ছেড়ে দিয়েছেন | আত্মীয়-স্বজনরা তো প্রায়ই খোঁজ নেয়, আবার তেজেন্দ্র প্রতাপের অফিস কলিগরা ও মেয়ের কথা জানতে চায় | কলিগ অনির্বাণ সাহার ছেলে সমন্বয় টেক্সাসে থাকে | তার সঙ্গে অনির্বাণ বাবুরা সবসময় ভিডিও কলে কথা বলছেন, একদিন অফিস আওয়ারে তেজেন্দ্রপ্রতাপ ও বলেছেন | কিন্তু ইচ্ছা কেন এমন করছে? পড়াশোনার এতো কি চাপ! বাবা-মা ভাইকে ভুলে যেতে হবে?

আশ্চর্যজনকভাবে একদিন ইচ্ছার মেসেজ এলো, "বাবা তোমরা আমার এখানে বেড়াতে এসো | উদ্দীপন সব ব্যবস্থা করে দেবে, তোমরা পাসপোর্ট নিয়ে গিয়ে ওর সঙ্গে দেখা করো" | সঙ্গে একটা ঠিকানা |  সেইমতো তেজেন্দ্রপ্রতাপ সপরিবারে গোয়ালিয়র গেলেন | কিন্তু ওই ঠিকানায় উদ্দীপনকে পাওয়া গেলনা | ফোনেও না | বাধ্য হয়ে ফিরে এলেন লাভপুর | এসেই মেয়ের নাম মিসিং ডায়েরি করলেন |

পুলিশ ফোনের মেসেজ ট্যাপ করে দেখল আমেরিকা নয়, গোয়ালিয়র থেকেই মেসেজ আসে | তারপর ফোনের সূত্র ধরে, লোকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে গোয়ালিয়রে উদ্দীপনের বাড়ির সন্ধান পায় | কিন্তু উদ্দীপনকে কিছুতেই ধরা যাচ্ছিল না | পুলিস সাদা পোষাকে ওর বাড়ির দিকে সবসময় নজর রাখতে থাকে | অবশেষে উদ্দীপন ধরা পড়ে পুলিশের পাতা ফাঁদে |

ইচ্ছাকে পাওয়া গেছে | তবে জীবন্ত নয়, সমাধিস্থ | ইচ্ছার আমেরিকা যাবার গল্পটা পুরোটাই মিথ্যে | এই মিথ্যে নাটক তৈরী করেছিল উদ্দীপন | পুলিশি জেরার মুখে উদ্দীপনের সব প্রতিরোধ ভেঙ্গে পড়ে | একটা নয়, পাঁচ পাঁচটা ফেক প্রোফাইল ছিল উদ্দীপনের | ইংরাজী বলিয়ে, লিখিয়ে উদ্দীপনের পাতা জালে ধরা দিয়েছিল অনেকেই |

উদ্দীপন আসলে একজন 'সিরিয়াল কিলার' | টিভি শো 'লিভিং ডেড' এর ভক্ত উদ্দীপন একই কায়দায় ওর বাবা, মা আর ইচ্ছাকে মেরে সিমেন্ট গুলে ঢেলে দিয়েছিল | তারপর বডি জমে গেলে মাটির নীচের চেম্বারে পুঁতে দিয়েছিল | ছয় মাস ধরে ইচ্ছার ফোন ব্যবহার করে ওর পরিবারকে ধোঁকা দিয়েছিল | নিঁখুত পরিকল্পনা করে পরিচিতদের বুঝিয়েছিল ওর বাবা, মা আমেরিকা চলে গিয়েছেন | ওর পরবর্তী পরিকল্পনা ছিল ইচ্ছার পরিবারকে মেরে সমস্ত টাকা আত্মসাত্ করার | সেজন্য বেশ কয়েকবার লাভপুর ঘুরেও গিয়েছিল |  কিন্তু নিজেরই পাতা ফাঁদে নিজেই ধরা পড়ল |

ছোটবেলায় উদ্দীপনের বন্ধুরা ওকে 'কালা কালুটা বেঙ্গন লুটা' (মিশকালো বেগুন চোর) বলে ক্ষ্যাপাত | তখন থেকেই উদ্দীপন ওর চেহারা ও গায়ের রঙ নিয়ে হীনমন্যতায় ভুগতে থাকে | সবাইকে এড়িয়ে একা থাকাটা রপ্ত করে নেয় | একইসঙ্গে একটা স্বপ্ন পোষণ করতে থাকে, বড় হয়ে অনেক অনেক টাকার মালিক হয়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দেবে | কিন্তু তার জন্য বেছে নিয়েছিল অসত্পথ | একটু বড় হতেই গাদা গাদা ইংরাজী থ্রিলার দেখে রপ্ত করেছিল অপরাধ জগতের খুঁটিনাটি | সেই সঙ্গে পোক্ত হয়েছিল নেশায় | বাবা-মায়ের সাথে সংঘাত শুরু হয় এখান থেকেই | ছেলের বেহিসেবী  জীবনযাপনের খরচ যোগাতে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছিলেন ব্যবসায়ী ধীরাজশঙ্কর | তারই পরিণতিতে ছেলের হাতে খুন হতে হল ওদের |

 উদ্দীপনের গোয়ালিয়রের বাড়ি থেকে উদ্ধার হয়েছে সেই ছোট্ট ডায়েরি আর কলম | সেখানে এক জায়গায় লেখা আছে, "আমার চেকবুক, এ টি এম কার্ড সব কেড়ে নিয়েছে | ও আরো টাকা চায় | আমি বলেছি আমাকে একবার বাবার কাছে যেতে দাও | তুমি যত টাকা চাও তাই দেব" |

তারপর কিছুটা গ্যাপ দিয়ে---"উদ্দীপন কি আমাকে বাবার কাছে নিয়ে যাবে"?

এমন টুকরো টুকরো কিছু কথা যা থেকে পুলিশের সন্দেহ, হয়তো আরো কিছু দেহ মিলতে পারে ওই বাড়ির আনাচ কানাচ খুঁড়ে | কাজের লোক কেউ ছিলনা, কেন? তাকেও কি --- ?

এই তদন্ত চলতে চলতেই পুলিশ অফিসার তেজেন্দ্র প্রতাপকে দুটি খবর দিলেন,  

এক নম্বর-- উদ্দীপনের বাড়ির অন্য একটি ঘরের মেঝে খুঁড়ে পাওয়া গেছে একটি দেহ | দেহটি মুন্ডুহীন |   

দুই নম্বর—গোয়ালিয়র থানায় নিষ্কৃতি ঠক্কর নামে আরো একটি মিসিং ডায়েরি জমা পড়েছে |

                                                ------

শব্দ সংখ্যা—২০০০

 

 

সবিতা বিশ্বাস

প্রযত্নে – লন্কেশ্বর বিশ্বাস

গ্রাম + পোস্ট – মাজদিয়া (বিশ্বাসপাড়া)

(শুভক্ষণ লজের পাশে )

জেলা-নদীয়া পিন-৭৪১৫০৭

ফোন-৮৯০০৭৩৯৭৮৮

ভারত

ই মেইল- sraybiswas@gmail.com

 

 

 

 

 

মন্তব্যসমূহ

নবপ্রভাত সম্মাননা ২০২৪

নবপ্রভাত সম্মাননা ২০২৪

জনপ্রিয় লেখা

মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা 2024 সংখ্যার জন্য লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি

প্রবন্ধ ।। লুপ্ত ও লুপ্তপ্রায় গ্রামীণ জীবিকা ।। শ্রীজিৎ জানা

সাহিত্যের মাটিতে এক বীজ : "ত্রয়ী কাব্য" -- সুনন্দ মন্ডল

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৬৭তম সংখ্যা ।। আশ্বিন ১৪৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩

কবিতা ।। বসন্তের কোকিল তুমি ।। বিচিত্র কুমার

কোচবিহারের রাস উৎসব ও রাসমেলা: এক ঐতিহ্যবাহী অধ্যায় ।। পার্থ সারথি চক্রবর্তী

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৭৪তম সংখ্যা ।। বৈশাখ ১৪৩১ এপ্রিল ২০২৪

অনুভবে, অনুধ্যানে অনালোকিত কবি গিরীন্দ্রমোহিনী দাসী ।। সুপ্রিয় গঙ্গোপাধ্যায়

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৬৬তম সংখ্যা ।। ভাদ্র ১৪৩০ আগস্ট ২০২৩