গল্প।। ক্কোঁকড়-কোঁ রহস্য ।। গোবিন্দ মোদক ।। - নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

Breaking

নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

NABAPRAVAT : A Monthly Bengali Literary Blogzine.

Thursday, December 17, 2020

গল্প।। ক্কোঁকড়-কোঁ রহস্য ।। গোবিন্দ মোদক ।।


         ক্কোঁকড়-কোঁ রহস্য !!

 
                       গোবিন্দ মোদক 


        ছোটবেলায় আমরা যাকে 'জুড়ি'দা বলে ডাকতাম এবং যার মুখে-মুখে বানানো অজস্র আষাঢ়ে গল্প শুনে যারপরনাই আমোদ পেতাম, তার প্রকৃত নাম 'জুড়ি' কিনা বা প্রকৃত নাম মুছে কেন 'জুড়ি' হলো সেই ইতিহাস জানবার কথা অন্তত আমার মনে উদয় হয়নি। তবে আমাদের মধ্যে জুড়িদা'র উপস্থিতি যেমন ছিল জনপ্রিয় এক প্রতিভাবান নায়কের মতোই উজ্জ্বল  --- তেমনই এ কথা ঠিক যে, উদ্ভট কার্যকারণ সম্পর্ক এবং তার ব্যাখ্যা খুঁজে নিয়ে যে সমস্ত গল্প-কাহিনী জুড়িদা আমাদেরকে শোনাতো তার কোনও জুড়ি ছিল না। তেমনই একদিনের ঘটনা বলি। 

        সেদিন আমরা কয়েকজন আড্ডায় মশগুল --- আড্ডার বিষয় বস্তু মোরগ এবং তার 'ক্কোঁকড়-কোঁ' ডাক ! এমন সময় জুড়িদা'র আগমন। আমাদের আলোচনার বিষয়টা আন্দাজ করে জুড়িদা গম্ভীর স্বরে নায়কোচিত ভঙ্গিতে বললো --- তোমাদের আলোচনায় এটা পরিষ্কার যে, মোরগ সক্কাল-বেলায় 'ক্কোঁকড়-কোঁ' বলে ডাক ছেড়ে দিনের আগমনকে ঘোষিত করে। কিন্তু এর পেছনে কারণটা কি জানো তোমরা ? কেন মোরগ শুধু 'ক্কোঁকড়-কোঁ' বলেই ডাকে ? জানো না তো ? তাহলে বলি, শোনো ---

        দেবরাজ ইন্দ্রের একটা অ্যালার্ম ঘড়ি ছিল। তিনি তাতে অ্যালার্ম দিয়ে রাখতেন যাতে সকালে যথা সময়ে তাঁর ঘুম ভেঙে যায় এবং স্বর্গের রাজকার্য্য পরিচালনায় অযথা দেরি না হয়। তো, সেই ঘড়িটা ক্রিং... ক্রিং... করে বাজতো। একবার সেই ঘড়িটা বিকল হলে তিনি সেটাকে মেরামত করতে দিলেন বিশ্বকর্মার কাছে। ঘড়িটা মেরামত হলো বটে কিন্তু আওয়াজটা বদলে গিয়ে হলো-- ক্রোং... ক্রোং... । তবু সেটা চলছিল। একদিন ঘড়িটায় দম দিতে গিয়ে অসাবধানে সেটা পড়ে গিয়ে কিছুটা তুবড়ে গেল এবং অচল না হলেও আওয়াজটা হয়ে গেল -- 'ক্কোঁকড় ! ক্কোঁকড় !!'
        যাই হোক, তবুও সবকিছু ঠিকঠাক ছিল। অ্যালার্ম ঘড়ির কাজটা ঠিকঠাকই চলছিলো। একদিন সেটা অনেক উঁচু থেকে পড়ে গিয়ে চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে গেল। ঘড়ির সেই ভাঙা লোহার টুকরোগুলোতে পায়ে আঘাত লাগতে পারে ভেবে ইন্দ্র সেগুলিকে গম-দানায় পরিবর্তন করলেন। ইন্দ্রের বাড়ির পরিচারিকা সেগুলো ঝাঁট দিয়ে ফেলে দিতে গিয়েও না ফেলে সেগুলিকে তার পোষা পাখির খাদ্য হিসেবে বাড়ি নিয়ে এলো। তারপর বাড়ির পোষা মোরগগুলোকে খেতে দিল।
        মোরগগুলো কিন্তু এমনিতে মিষ্টি সুরেই ডাকতো। কিন্তু সেই গম-দানা রূপী ঘড়ির টুকরোগুলো খাওয়ার পরদিন থেকেই সেই অ্যালার্মের সময় হলেই তারা সেই ভোরবেলাতে "ক্কোঁকড়-কোঁ" বলে ডাকতে শুরু করলো। আর স্বর্গের মোরগ বলে কথা ! তার যা গতি হবে তা তো মর্ত্যের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য ! অতএব সেই থেকে মর্ত্যেও ওই একই ধারার প্রচলন হলো। তাই আজও ভোর হলেই মোরগেরা 'ক্কোঁকড়-কোঁ' করে ডেকে লোকের ঘুম ভাঙিয়ে দেয় এবং এভাবেই সেই অ্যালার্ম ঘড়ির কাজটা করে চলে। কি রে বুঝলি, মাথা-মোটার দল !
        আমরা হাসবো না কাঁদবো বুঝতে উঠতে পারলাম না। শুধু আমাদের পল্টু অস্ফূটে বললো -- জব্বর গল্প মাইরি !!
------------ 

_____________________
স্বরচিত মৌলিক অপ্রকাশিত অণুগল্প। 
প্রেরক: গোবিন্দ মোদক। 
সম্পাদক: কথা কোলাজ সাহিত্য পত্রিকা। 
রাধানগর, ডাক- ঘূর্ণি, কৃষ্ণনগর, নদিয়া। 
পশ্চিমবঙ্গ, ভারত, ডাকসূচক - 741103
WhatsApp/ফোন: 8653395807

No comments:

Post a Comment