google-site-verification=aFCzFTmuVjPqPlrdWXeJSj2r_EMig_cypLnlmiUQpw0 re ছেলেবেলার গল্প ।। তন্ময় পালধী - নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

Breaking

নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

NABAPRAVAT : A Monthly Bengali Literary Blogzine.

বৃহস্পতিবার, ১৭ ডিসেম্বর, ২০২০

ছেলেবেলার গল্প ।। তন্ময় পালধী



ছেলেবেলার গল্প

 তন্ময় পালধী


রাজদূত বলটা পাস করে দে।কিন্তু বল কই? রাজদূত প্রপাত ধরণীতলে।মানে ধপাস ধাঁই আর কি। বর্ষাকাল এলেই আমাদের মানে তোতন টিংকু বেচ, পাঁচু, রাজকুমার(ধাপা) হারু,চিনু, গোবে সকলের কি আনন্দ।হোমমেড বলে ফুটবলের সে কি মজা! মন যেন খুশিতে বলে উঠত- হৃদয় আমার নাচেরে আজিকে ময়ূরের মতো নাচেরে। খেলার মাঠে ইচ্ছা করে ঠেলে দিয়েই হি হি করে হাসি। কাদায় লেপ্টে উঠেই অন্যজনকে জড়িয়ে ধরা কি ফুর্তি। আসলে সকলে কাদায় মাখামাখি না হলে সুখ কিসের?খেলা যত না হত কাদামাখা হত তার থেকে বেশি। রাগারাগি নামক বিষম বস্তুটা আমাদের মধ্যে তখনও কায়েমী হয় নি।

এক একদিন বৃষ্টিতে ফুটবল ছেড়ে চিকে খেলা হত। এঁটেল মাটি বৃষ্টির সোহাগে গলে গিয়ে নরম হয়ে যেত।আর আমাদের হাতছানি দিয়ে ডাকত আয় আয়।গোটা মাঠ জুড়ে দাগ টেনে নিতাম।দাগের দুদিকে চৌকো চৌকো ঘর।দুটো দলে ভাগ হয়ে খেলা হত।একদল সবাই ঘরের মধ্যে।দুদিকে পাহারাদার।পরের ঘরগুলোতেও পাহারাদার থাকত।কিন্তু তাদের কাজ শুরু হত প্রথম ঘর থেকে বিপক্ষ দলের কেউ বার হলে।এভাবে প্রথম ঘর থেকে বিনা বাধায় কেউ শেষ পর্যন্ত পৌঁছলে সে পাকা। কিন্তু দলের কোনো একজনকে বিপক্ষ দলের কেউ ছুঁয়ে দিলে,গোটা দলের মুখ পুড়ত।তাই প্রত্যুৎপন্নমতিত্ব হতে হত।কিভাবে বিপক্ষ দলকে ফাঁকি দেওয়া যায় তার প্রচেষ্টা সকলেই করত। প্রয়োজন হত উদ্ভাবনী শক্তির। তখনও মুঠোফোন মগজ গিলে খায় নি।নতুন ভাবনা চিন্তার জগতে তাই ভাঁটা পড়েনি। দলবদ্ধভাবে খেলার মধ্যে অনুভূতির রাজ্যের অনুশীলনও হয়ে যেত।কেউ আঘাত পেলে সকলেই ব্যস্ত হয়ে পড়তাম। ছেলে মেয়ে মিলে মিশে সেই অনাবিল খেলার জগৎ ছিল প্রাণবন্ত ও সতেজ।

বৃষ্টিহীন দিনে ছোঁয়াছুঁয়ি ও এলাডিং বেলাডিং বেশ জমত। বড়দা মেজদা আমি দিদি ও পাড়ার সকলে যেন একই নেটওয়ার্ক। মজা করে পিছনে লাগা হত।সুর করে বলা হত অ আ ক খ মনি খেলতে যাবি চ।ব্যস মনি রেগে খাপ্পা। কাউকে খ্যাপা পঞ্চা,ধাপ ধাপ ধাপা, রুপালি কুমড়োফালি দুর্বল সিং এমনি কত নাম।
এলাডিং বেলাডিং সুর করে বলা হত 
   এলাডিং বেলাডিং সইলো/কিসের খবর পাইল
   রাজামশাই বলে গেছেন এই বাড়িটা চাইলো।
ব্যস খপ করে বিপক্ষ দলের একজনকে নিয়ে নেওয়া হত।এভাবে টানাটানির মধ্যে ঝামেলাও বেধে যেত।নিজেরা তা মেটাতাম।মাঠের পাশ দিয়ে যাওয়া বড়রাও অভিভাবকের ভূমিকা পালন করতেন। এবং এটা নিয়ে কোনও পরিবারেরই অভিযোগ অনুযোগ থাকত না।গোটা গ্রামটাই যেন একটা পরিবার।আর আজ! সত্যি কত বড়! হয়ে গেলাম আমরা।

খেলা শেষ হলে হাত পা ধুয়ে তবে বাড়িতে ঢুকতে পেতাম।বাবা মায়েরা তখন থেকেই কত সচেতন ছিলেন। সন্ধেবেলায় হ্যারিকেনের আলোয় পড়তে বসতাম। হ্যারিকেনের দুদিকে পরিষ্কার আলো।কিন্তু অন্য দুদিকে খাঁচার ছায়া পড়ত।তাই নিয়ে আমাদের কি টানাটানি। শেষে হ্যারিকেনটা বাঁকিয়ে রফা হত।কিন্তু পড়তে বসলেই ঢুলুনি।যে জেগে থাকত সে অপরের আঙুলটা হ্যারিকেনের কাঁচে লাগিয়ে দিত। ব্যস ঘুমছুট।কিন্তু তারপরেই বাবা অথবা নকাকুর মার।হ্যাঁ দুষ্টুমি করতাম মার খেতাম।তবুও দিনগুলো কত মিস্টি ছিল।
মুছে যাওয়া দিনগুলি আমায় যে পিছু ডাকে...।
_______________________________________
তন্ময় পালধী,শংকরপুর, ঠাকুরাণীচক, হুগলি।
চলভাষ 9734789877

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন