Featured Post
ভ্রমণ কথা : মন্দিরনগরী বিষ্ণুপুর ।। নির্মল কুমার সিংহ
- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
মন্দিরনগরী বিষ্ণুপুর
নির্মল কুমার সিংহ
"আমি চঞ্চল হে, আমি সুদূরের পিয়াসী"। বিশ্বকবির এই উক্তি সকল ভ্রমণ পিপাসুর মনে নূতন প্রাণের সঞ্চার করে। বাড়িয়ে দেয় ভ্রমণ পিপাসা। অজানাকে জানার, অচেনাকে চেনার উৎকৃষ্ট উপায় ভ্রমণ। মনের অদম্য বাসনা মেটাতে, কয়েকজন বন্ধুর সাথে পরামর্শ করে ঠিক করে ফেললাম বাস যোগে বাঁকুড়া জেলার মন্দির নগরী বিষ্ণুপুর যাওয়ার। দিন স্থির করে বাস সংরক্ষণ করা হলো সাথে সাথে। নির্দিষ্ট দিনে বাস ভর্তি মানুষ নিয়ে আমাদের যাত্রা শুরু হলো বিষ্ণুপুরের উদ্দেশ্যে। পঁচিশে ডিসেম্বরের সকাল ৮ টায় দেওয়ানগঞ্জ হাটে আমাদের সংরক্ষিত বাসটি গর্জন করে উঠল। সুদক্ষ চালকের হাতে বাসের স্টিয়ারিংটা হলো বন্দী। একরাশ ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে বাস আগিয়ে চললো। মাত্র পঁচিশ মিনিটেই পৌঁছে গেল কালীপুরে। বাসের গতি বেড়ে গেল। এক এক করে গোঘাট, কামারপুকুর, জয়রামবাটী অতিক্রম করে বাস পৌঁছে গেল জয়পুরে। মানুষদের কোলাহল বাড়লো। আর কিছুক্ষণ। তারপরই পৌঁছে যাব আমাদের ইপ্সিত স্থানে। হঠাৎ বাসটা দাঁড়িয়ে গেল লাল বাঁধের কোলে। জানলার ফাঁকে দেখলাম প্রকান্ড জলাশয়ে অসংখ্য স্নানার্থি স্নান করছেন। জনপূর্ণ জায়গা। তাই বাস আগিয়ে চললো আমাদের নির্ধারিত স্থান রসিকগঞ্জের দিকে। মাত্র কয়েকটা মিনিট। রসিকগঞ্জে পৌঁছে বাসটা হাঁপাতে লাগলো। বাসের ছাদ থেকে রান্নার সরঞ্জাম নামিয়ে রান্না করার লোককে বুঝিয়ে দিয়ে চললাম বহুস্মৃতি বিজড়িত মল্লভূমি বিষ্ণুপুরের দর্শনীয় স্থান দেখার জন্য। প্রথমেই দেখলাম আদ্যাশক্তি পরমাপ্রকৃতি দেবী ছিন্নমস্তার মন্দির। নতজানু হয়ে প্রণাম জানালাম মায়ের রাঙাচরণে। চললাম প্রভু মদনমোহনের গুপ্ত বৃন্দাবন ও রাসমঞ্চ দেখতে। ওখানেই প্রবীণ কয়েকজন মানুষের কাছে শুনলাম মল্লরাজাদের রাজ্যে প্রভু মদনমোহন বিরাজ করতেন। বহিঃশত্রুর আক্রমণ থেকে গুপ্ত বৃন্দাবনকে রক্ষা করতে প্রভু মদনমোহন স্বয়ং দলমাদল কামান ব্যবহার করেছিলেন। সেই কামান দুটি সেদিনের সাক্ষ্য বহন করছে। গেলাম রাসমঞ্চের কাছে। কী বিশাল রাসমঞ্চ। তার চারপাশে অসংখ্য মন্দির। একসঙ্গে এত মন্দির এই প্রথম দেখলাম। প্রত্যেকটি মন্দিরেই বিগ্রহ আছে। নিত্য পূজা অর্চনা হয়। অসংখ্য দোকান। প্রতিটি দোকানে ওখানের বিখ্যাত পোড়া মাটির ঘোড়া বিক্রী হচ্ছে। মন ভরে গেল মন্দির নগরীকে চাক্ষুষ করে। ফিরলাম পোকাবাঁধের দিকে। কী বিশাল জলাশয়। চারিপাশে বিরাট বিরাট অট্টালিকা। জনপূর্ণ জায়গা। মানুষের কল কাকলিতে গমগম করছে। সাথীদের মুখ দেখে বুঝলাম পেটে খাবার দিতে হবে। তাই তাড়াতাড়ি ফিরে চললাম আমাদের নির্ধারিত স্থানে। রান্না প্রস্তুত। সবাই একসাথে বসে আনন্দে খেলাম খিঁচুড়ি, চাটনি, পাঁপড়। খাওয়ার পর্ব সারতে বেলা গড়িয়ে গেল। এবার বাড়ি ফেরার তাগাদা। সবাই বাসে উঠলাম জিনিসপত্র গোছ করে। বিকেল চারটে। দেখলাম পশ্চিম আকাশ আবীর রঙে রাঙিয়ে প্রবালের টিপ পরে সেদিনের সূর্যদেব অস্ত যাচ্ছেন। দু'হাত তুলে প্রণাম জানালাম দেব দিবাকরকে। দুর্বার গতিতে বাস ছুটে চলেছে। এক এক করে জয়পুর, জয়রামবাটী, কামারপুকুর, গোঘাট, কালীপুর অতিক্রম করে সন্ধ্যা সাতটা তিরিশ মিনিটে পৌঁছে গেল দেওয়ানগঞ্জের হাটে। লক্ষ্য করলাম মানুষদের চোখে মুখে প্রশান্তির ছাপ আর অনাবিল হাসির আনন্দ। কতক্ষণই বা ছিলাম মন্দির নগরীতে। ঐ অল্পক্ষণেই মন্দির নগরী বিষ্ণুপুর আমার মনের মণিকোঠায় জায়গা করে নিয়েছে।
ভ্রমণ পিপাসুদের উদ্দেশ্যে বলি ধর্মতলা থেকে বিষ্ণুপুর গামী বাসে মাত্র পাঁচ ঘণ্টায় পৌঁছে যাওয়া যায়। আর থাকার জন্য রয়েছে অগণিত হোটেল।
- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন