সে একটা দিন
------------------------
সে একটা দিন ছিল, বুঝলে হে সুধাময়,
অসামান্য সাইক্লোনের দিন -
তখন অবাক চোখে উদ্দাম ঢেউয়ের দিকে তাকিয়ে থাকতে কোনো ক্লান্তি ছিল না ।
জনান্তিকে বলে রাখি, তখনো আমার চোখ
চুলখোলা রুপসীর ডায়েরির পাতায়
লুকোনো রহস্য নিয়ে ব্যাকুল হত না ।
বিশ্বাস করো সুধাময়,
তখন জীবন জুড়ে এবং পৃথিবী জুড়ে
অজস্র কবিতা ছিল ।
#
সে একটা দিন ছিল হে, বুঝলে সুধাময়,
অফুরন্ত স্বপ্নের দিন -
তখন চলার পথে চেনা মানুষের চোখে
চোখ পড়ে গেলে
খুব স্বাভাবিক ছিল অনাবিল হাসি বিনিময়
হাসি নয়, যেন এক আলোর উদ্ভাস
হিরণ্য পাহাড় থেকে ঠিকরে পড়া সকালের মত।
এসব কথা আজকাল কাউকে বলি না সুধাময়
কাকেই বা বলা যায় বলো -
ইদানীং কী ভীষণ বন্ধুহীণ অবিশ্বাসী
একা মানুষেরা জীবনযাপন করে চারপাশে
জীবনযাপন নাকি অভ্যাসের নিগুঢ় নিয়মে
স্বপ্নহীন ভালবাসাহীন বিপর্যস্ত দিনের মিছিলে
কোনমতে টিঁকে থাকে
ব্যক্তিগত খোপের আড়ালে,
চুপিসাড়ে দ্রুত পাল্টে নেয়
নিজেদের চতুর মলাট ।
#
সেসব দিনের কথা কী করে বোঝাব
কী করে বুঝবে তুমি সুধাময়,
অদ্ভুত বর্ণময় দিন -
স্বপ্ন আর সংগ্রামের সাহচর্যে কেটে যেত
দিনরাতগুলি,
হলুদ শর্ষের খেতে সোনালি রোদের মতো
নির্ভার হৃদয় থেকে ঝরে পড়ত বিশ্বাসের আলো
ধূসর প্রান্তর থেকে ঘোড়সওয়ারের মতো
মাঝে মাঝে জানলা দিয়ে ঢুকে যেত
বৃষ্টির বাতাস, বাতাসের হাত ধরে
উড়ে আসত আকাঙ্ক্ষিত চিঠি ,
যেন ফের বেঁচে ওঠা গেল
যেন নিমেষেই দুঃখী করতলে
আচমকা ঢুকে যেত রঙে রঙে বিন্যস্ত আকাশ ।
একঘেয়ে জীবনের ছেঁড়াখোড়া দিনলিপিগুলি
মাঝে মাঝে এভাবেই উড়ে যেত
দমকা হাওয়ায় ।
#
বিশ্বাস করো সুধাময়, তখন এ পৃথিবীতে
এত বেশি সংঘভাঙা খেলায় মাতেনি মানুষেরা
এত বেশি অন্তর্গত বিরোধিতা ছিলনা কোথাও
এত বেশি লাঞ্ছনার বিষ
ব্যাপ্ত হয় নি পৃথিবীতে ।
তখনো সূর্যালোকে মেলে দেওয়া যেত
নিজের সত্তাকে
নেয়া যেত রোদের উষ্ণতা ।
সে একটা দিন ছিল হে সুধাময়,
প্রচন্ড উত্তাল দিন -
তখন প্রগাঢ় ছিল জীবনের স্বাদ
সংগীতের মুর্ছনার মতো ।
#
সুধাময়, সে একটা দিন গেছে বটে !!
******************************************
পবিত্র রায়চৌধুরী
জ্যোতিনীড়
561, শরৎ বোস রোড
সুভাষনগর
দমদম ক্যান্টনমেন্ট
কলকাতা - 700065
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন