google-site-verification=aFCzFTmuVjPqPlrdWXeJSj2r_EMig_cypLnlmiUQpw0 re তন্ময় সিংহ রায়ের অণুগল্প - নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

Breaking

নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

NABAPRAVAT : A Monthly Bengali Literary Blogzine.

সোমবার, ২১ জানুয়ারী, ২০১৯

তন্ময় সিংহ রায়ের অণুগল্প


'লি' 'সা'

সৌরজগতের কেন্দ্রের খুব কাছে অবস্থিত হাইড্রোজেন (প্রধানত) ও হিলিয়ামপূর্ণ একটা তারা স্বভাবমতই সেদিন বেশি বর্ণনা করছিলো তার রশ্মির। বিভিন্ন যানবাহনের ভাষা, রাস্তায় দুপাশে ব্যস্ত দোকানপাট, বাজার, কোলাহলপূর্ণ লোকজন... কারুর কারুর হাতে ছাতা, কারুর মাথায় টুপি, কেউবা পুষ্টি-অপুষ্টির সংমিশ্রণে কোল্ড ড্রিংক্স ও ডাবের জলে নিবারণ করছে তাদের অতৃপ্ত তৃষ্ণা। পরিবেশের স্বাভাবিকত্ব লঙ্ঘন করে হঠাৎ-ই কে যেন তার জ্বলন্ত পাকস্থলী নিয়ে রক্তবর্ণ চোখে, বাজপাখির মতন ছোঁ মেরে একটা বছর আট-নয়ের মেয়ের হাত থেকে খাবার কেড়ে নিয়েই একটা নিষ্ক্রিয়প্রায় পা'কে টেনে হিঁচড়ে যথাসম্ভব দ্রুত গতিতে সামনের দিকে এগোতে লাগলো। হতচকিত মেয়েটা  চিৎকার করে কেঁদে উঠলো ভয়ে। "এই এই কি হচ্ছে...! " চিৎকার করে উঠলো তার মা-ও। নোংরা, ছেঁড়া জামাকাপড়, মাথায় ও চিবুকে চুলের সাম্রাজ্য... ততক্ষণে লোকটা একচিলতে নিশ্চিন্ত আশ্রয় খুঁজছে খাবারটা খাবে বলে। হেই হেই!.... মার মার! পাগলটাকে মার! বলে....ছুটে যেতেই  নিজেকে রক্ষার তাগিদে পাগলটা হাত উঁচু করতেই শীরা-ধমনী ভেদ করে শুষ্ক মলিন ত্বকে জেগে উঠলো দুটো বর্ণ 'লি''সা।' মেয়েটার হাত ছেড়ে হঠাৎ-ই পাগলের মতন দৌড়ে গিয়ে চিৎকার করে মেয়েটা'র মা হাত জোড় করে সবাইকে অনুরোধ করতে লাগলেন, "আপনারা দয়া করে মারবেন না, ছেড়ে দিন ওকে!" রক্ষা করা হলো মহিলার অনুরোধ। অগত্যা যে যার মতন পূর্ব-স্থানে পরিবর্তন করলো তার গতি। হৃদয়ের অসম্ভব চাপা যন্ত্রণা লুকাতে পারলেও অঝোর ধারায় বেদনাশ্রুকে সেদিন প্রকৃতির কোনো স্থানেই লুকাতে পারেনি তার মা। কৌতুহলী ছোট্ট মনটা জানার প্রবল আগ্রহকে দমন করতে না পেরেই দুটো প্রশ্ন ছুঁড়েছিলো মা'কে... "এটা কে মা? তুমি কাঁদছো কেনো ওই পাগলটাকে দেখে?" মান-সম্মান,লজ্জা, সামাজিকতা ও মাতৃত্বকে উপেক্ষা করেই মেয়েকে, মা শুনিয়েছিলো তার সেই মর্মস্পর্শী ভালোবাসার ইতিহাসের বিশ্লেষণ...... "ওর তখন ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং-এর ফাইনাল ইয়ার, পরিচয় হয়েছিলো ওদের ক্লাবের এক অনুষ্ঠানে, খুব ভালো লেগেছিলো  ওর.... বেনীমাধব বেনীমাধব তোমার বাড়ি যাবো....বেনীমাধব তুমি কি আর আমার কথা ভাবো?.... সেই সূত্রেই পরিচয় ও পরে দুজন দুজন'কে ভালোবেসে ফেলি অসম্ভব। বেশ বুঝতে পারতাম, আমার প্রভাব ওর মধ্যে এতটাই কাজ করতে শুরু করেছিলো যে আমি'তে ওর কাকভোর ও আমি'তেই ওর গহীন রাত। একটা মুহুর্ত ও আমাকে না দেখে থাকতে পারতোনা। ফাইনাল ইয়ার, প্রতিষ্ঠিত ইঞ্জিনিয়ার সবই যেন ঘন কুয়াশায় ক্রমশ মিলিয়ে নিশ্চিহ্ন হতে লাগলো ওর জীবন থেকে। অত্যাধিক আবেগপ্রবণ ভালোবাসা তাকে পরিণত করেছিলো শিশুতে। অনেক বোঝাতাম, আমি তো আছিই... পরীক্ষাতে ভালোভাবে উত্তীর্ণ হতে হবে তো! কেমন যেন আমাকে হারাবার একটা ভয় প্রতিনিয়ত ওকে গ্রাস করেই চলতো। এ ভাবেই চলতে চলতে কোনো একদিন পরিচয় ঘটে যায় তোর মামার এক উচ্চ প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী বন্ধুর সাথে। ক্রমে... ফোনে অল্প-স্বল্প কথা থেকে পরে দেখা করা। অসম্ভব ভদ্র ছেলেটার কথা-বার্তা, ব্যবহার ও মানসিকতায় যোগ হতে শুরু করলো এক নতুন ভালোলাগা। মনে হতে লাগলো ধীরে ধীরে কিভাবে যেন এক অবৈধ চৌম্বকীয় শক্তি নিমেষেই আকর্ষণ করে নিচ্ছে আমার সমগ্র সত্তা'কে কিন্তু বুঝেও আমি ছিলাম মানসিক বিকলাঙ্গ....কেনো? তার উত্তর আজ-ও আমি খুঁজে বেড়াই। ভাবতাম অর্থবান বলে? ভদ্র বলে?...ভদ্র তো ও কম নয় তবে! অন্যায় ও অবিচার করছি জেনেও অবশেষে তীব্র মানসিক টানাপোড়েনকে বিষে নীল করেও নির্লজ্জের মতন দাঁড়িয়ে বলেছিলাম, শোনো... তুমি প্লিজ কিছু মনে কোরো না! আমি তোমায় ভালোবাসি কিন্তু বিয়ে করতে পারবোনা। কথাটা বলে  একমুহুর্ত না দাঁড়িয়েই চলে আসতে যাবো এমন সময়ে একটা অ্যাসিড দিয়ে পোড়ানো নাম লেখা হাত টেনে ধরলো আমার হাতটা-কে, দেখলাম তাতে লেখা মো-না-লি-সা।.... আমাকে ছেড়ে যেও না, আমি পাগল হয়ে যাবো...আমি পাগল হয়ে যাবো......এই একই বুকফাটা হাহাকার বাক্যকে পাষাণ হৃদয়ে প্রতিফলিত করতে করতে আমি চিরবিদায় নিয়েছিলাম সেদিন, আজকের পাগলের জীবন থেকে।'                     --------------------------------------------------------          ---------------------------------------------------------
Address :- Tanmoy Sinha Roy. C/O- Tushar Sinha Roy, Natunpally East(Padmamadhu), P.S+P.O-Sonarpur, Kolkata-700150, Dist-South 24 Pgs. 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন