ঐতিহ্যবাহী বালাকী নাচ
শুভ জিত দত্ত
বাংলাদেশের গ্রাম বাংলায় বিশেষ করে চৈত্র সংক্রান্তিতে বালাকী নাচের এই আয়োজন চোখে পড়তো । বালাকী নাচে শিল্পীরা বিভিন্ন পৌরাণিক চরিত্র নিজেদের মধ্যে ফুটিয়ে তুলতেন গান ও নাচের মধ্য দিয়ে। লোকসংস্কৃতি অন্যতম একটি অনুষঙ্গ ছিল এই বালাকী নাচ।
সাধারণত চৈত্র সংক্রান্তিতে যে সকল উৎসবগুলো চোখের পড়ে তার মধ্যে চড়ক পূজা, লোকজ নীল পূজা, নীল উৎসব, শিবের গাজন ও গম্ভীরা পূজা, খেজুর ভাঙ্গা উৎসব ও বালাকী নাচ অন্যতম।
বালাকী নাচ একটি দল থাকে তাদের মধ্যে একজন দলনেতা থাকে এবং একজন বাদক এবং একজন গায়ক এবং কয়েক জন শিল্পীর সমন্বয়ে বালাকী নাচ এর এই দল গঠিত হয়ে থাকে। সাধারণত রামায়ণ অথবা মহাভারতের কোন একটি অংশ তারা নাচের মধ্যে অভিনয় ভঙ্গিমায় সম্পূর্ণ পর্বটি তুলে ধরার চেষ্টা করে। তারা মূলত বংশ পরম্পরায় এই আয়োজন এর সাথে যুক্ত থাকতো। বাঙালির পালাপার্বনের এটি একটি অনুষঙ্গ হয়ে ওঠে ওই সময়কার দিকে। এটার উৎপত্তি বার শুরুর সময়টা যথাযথভাবে জানা না গেলেও এটা সাধারণত জমিদারি সময় থাকে এই প্রচলন হয়। এই আয়োজন দেখার জন্য কয়েক গ্রামের মানুষের ভিড় জমে যেত তৎকালীন সময়ে। বর্তমানে হারিয়ে যেতে বসেছে এই বালাকী নাচের ঐতিহ্য। নানান রঙের নানান পোশাক সেজে তারা যে অভিনয় করতো নেচে নেচে তাদের শুধু দর্শকদের মনে আনন্দে খোরাক জাগাতো তাছাড়াও বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল এই আয়োজন টি। বালাকী নাচে শিল্পীদের নানা রকম অঙ্গভঙ্গিতে সেই চরিত্র গুলো নিজেদের মধ্যে ধারণ করতো। রং বেরঙিন পোশাক সাথে বাহারি সাজ অতিরিক্ত মেকাপের ঝলক দর্শকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হতো। যেহেতু বালাকী নাচ হারিয়ে যাচ্ছে সেহেতু আমাদের সকলের উচিত হবে এটি রক্ষার ব্যাপারে আগ্রহী ভূমিকা পালন করা। বালাকী নাচ সেই সময়কার মানুষের বিনোদনের একটু অনুষঙ্গ ছিল যা দেখার জন্য মানুষের অপেক্ষা বা আগ্রহ বেশ কাজ করতে দেখা যেত। চিরায়ত বাঙালির এই আয়োজন আজ হারিয়ে যেতে বসেছে যথাযথ পৃষ্ঠপোষকতা না পেলে এটা হয়তো সামনের দিনগুলোতে আর দেখা যাবে না তাই আমাদের এখনই এটা রক্ষায় যথার্থ পরিকল্পনা গ্রহণ এবং এর সাথে সংশ্লিষ্ট সকলকে নিয়ে এটিকে ধরে রাখার উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
======================================
শুভ জিত দত্ত, গ্রাম বণিক পাড়া মহেশপুর, উপজেলা: মহেশপুর পোষ্ট মহেশপুর -৭৩৪০ জেলা ঝিনাইদ্ বাংলাদেশ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন