জয়নগর মজিলপুরের বেশের মেলা ।। কেতকী বসু - নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

Breaking

নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

NABAPRAVAT : A Monthly Bengali Literary Blogzine.

Wednesday, January 17, 2024

জয়নগর মজিলপুরের বেশের মেলা ।। কেতকী বসু





দক্ষিণ চব্বিশপরগনা জেলার অন্তর্গত আলিপুর মহকুমার অধীন জয়নগর মজিলপুর একটি প্রসিদ্ধ স্থান।প্রাচীন কালে এর অস্তিত্ব ছিল না তখন এর ওপর দিয়ে গঙ্গা নদী প্রবাহিত হতো। এখানে নানা হিন্দু পূজা ও ছোটো ছোট মেলা হয়ে থাকে তার মধ্যে সবচেয়ে বড়ো মেলা হোল বেশের মেলা বা ধন্বন্তরী মন্দিরের মেলা।

    অষ্টাদশ শতাব্দীর প্রথম ভাগে আদি গঙ্গার ধারা বর্তমান মজিলপুর গ্রামের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। সেই সময়ে ভৈরবানন্দ নামে এক তান্ত্রিক নদীর চরে বসে সাধনা করেন, এবং স্বপ্নাদেশ পান সামনের পুকুরে, 'আমি আছি, আমাকে উদ্ধার কর,' সেই মতো তিনি পুকুর সন্ধান করে একটি আট ইঞ্চি বাই ছয় ইঞ্চি কালো পাথরের  কালি মুর্তি পান। এবং খড়ের চালা বানিয়ে তিনি ওই মূর্তি পূজা করেন ।


   

 পরে তিনি ডায়মন্ড হারবার থানার অন্তর্গত ন্যাতরা গ্রামের রাজেন্দ্র চক্রবর্তী কে মজিলপুরে নিয়ে আসেন এবং তাঁকে দায়িত্ব দিয়ে অন্যত্র চলে যান ।তার পর রাজেন্দ্র চক্রবর্তী সাধনা করেন এবং তার সাধনায় প্রীত হয়ে মা  স্বপনে একটি বাতের ওষুধ দেন যা পানের মধ্যে দিয়ে  খেলে চিরতরে বাত সেরে যায়।এবং ধন্বন্তরীর   মতো ওই ওষুধ কাজ করে বলে সেই থেকে 'মা'কে মা ধন্বন্তরী বলে পূজা করা হয়।ক্রমে প্রায় দেড় শতাব্দী আগে ধন্বন্তরী মন্দির ও ভক্তদের বসার জন্য চাঁদনী নির্মাণ হয় ।এবং পাথরের মূর্তির অনুকরণে একটি কাঠের মূর্তি নির্মাণ করা হয়।নিত্য পূজা ছাড়াও প্রতি অমাবস্যা ও পূর্ণিমাতে বিশেষ পূজা হয় ও দূর দূর থেকে বহু মানুষ আসেন পূজা দিতে এবং বাতের ওষুধ নিতে।

    প্রতি বৈশাখ মাসের শুক্লা প্রতিপদ থেকে পূর্ণিমা পর্যন্ত ওই মূর্তিতে ১৬ টি বিভিন্ন মাতৃ দেবীর মূর্তির রূপদান করা হয়। এই উপলক্ষ্যে বিরাট মেলা অনুষ্ঠিত হয় যা বেশের  মেলা নামে  সকলের কাছে জনপ্রিয়। বহু দূর দূর থেকে মানুষ আসেন এই মেলা দেখতে। বিভিন্ন  বেশে সজ্জিত করা হয় ১৬টি দিনে মাকে। কৌমারি, কমলেকামিনী, ইন্দ্রানী, জগদ্ধাত্রী অন্নপূর্ণা, দক্ষিণাকালী, ষোড়শী, আরো অনেক রূপে মা পূজিত হন। শেষ ষোড়শী রূপটি তিনদিন থাকে।


    এইভাবেই আমাদের সকলের আরাধ্য এবং জাগ্রত দেবী রূপে পূজিত হন মা ধন্বন্তরী। গত দুবছর করোনা অতিমারির কারণে বেশের মেলা বন্ধ ছিল। তারপর আবার এই মেলা আরম্ভ হয়। প্রতি বছর বৈশাখ মাসের প্রতিপদ তিথিতে এই মেলা শুরু হয় এবং শেষ হয় অমাবস্যায়। মহা সমারোহে ও আড়ম্বরপূর্ণ ভাবে সম্পন্ন হয় মেলা এবং কদিন সবাই মেতে থাকেন এই মেলার সাথে। মেলা উপলক্ষে বহু দোকান পাঠ,সার্কাস,ইলেকট্রিক নাগরদোলা এবং খাবারের দোকান বসে। জমজমাট এই মেলায় গা গলানোর মতো অবস্থা থাকে না। এইভাবে মায়ের উৎসব পালিত হয় প্রতি বছর।










No comments:

Post a Comment