google-site-verification=aFCzFTmuVjPqPlrdWXeJSj2r_EMig_cypLnlmiUQpw0 re ভাই খাঁ-র জাতের মেলা -- কাঁকড়া মেলা ।। অশোক দাশ - নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

Breaking

নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

NABAPRAVAT : A Monthly Bengali Literary Blogzine.

বুধবার, ১৭ জানুয়ারী, ২০২৪

ভাই খাঁ-র জাতের মেলা -- কাঁকড়া মেলা ।। অশোক দাশ


ঐতিহ্যের মিলন মেলা : ভাই খাঁ-র জাতের মেলা

 (পশ্চিমবঙ্গের হাওড়া জেলার উদয়নারায়নপুর থানার অন্তর্গত সিংটি গ্রামে কাঁকড়া মেলা)

অশোক দাশ


'নানা ভাষা নানা মত নানা পরিধান
বিবিধের  মাঝে  দেখ মিলন মহান'। --- বৈচিত্রের মধ্যে একতা মহামিলনে প্রাণের বার্তা, আমরা খুঁজে পাই মেলার মাধ্যমে। নানা ভাষাভাষী মানুষ ধনী গরিবের মেলবন্ধন ঘটে মেলা প্রাঙ্গনে। 'ঘর হতে শুধু দু পা ফেলিয়া' --- চলুন ঘুরে আসি পশ্চিমবঙ্গের হাওড়া জেলার উদয়নারায়নপুর থানার অন্তর্গত সিংটি গ্রামে। কলকাতা থেকে হাওড়া, হাওড়া থেকে ডিহিভূরসুট গামী বাসে চেপে নেমে পড়ুন রাজাপুর মোড়ে। ওই স্থান থেকে  পশ্চিমমুখে এক কিলোমিটার পথ পায়ে হেঁটে পৌঁছে যাবেন ভাই খাঁ-র জাতের মেলায়। গ্রামের মেঠো পথের দুপাশে দিগন্ত বিস্তৃত সরিষা ক্ষেত, ধনে মটর কড়াই আলু কপি পেঁয়াজ শীত সবজির বুক চিরে, পাখিদের গান শুনতে শুনতে কখন যে পৌঁছে যাবেন মেলা প্রাঙ্গণে বুঝতেই পারবেন না।
    লোকায়ত সংস্কৃতির মেলবন্ধন, ঐতিহ্যের পরম্পরায় এই মেলা শুরু হয়েছিল ,জনশ্রুতি অনুযায়ী প্রায় ৫০০ বছর পূর্বে। মেলা কর্তৃপক্ষের বয়ান অনুসারে, আরব দেশ থেকে একটি পরিবারের সাত ভাই ও এক বোন এই বঙ্গদেশে চলে আসেন। তারা তাদের ভাগ্য অন্বেষণে বাঙলার বিভিন্ন জেলায় বসতি স্থাপন করেন। তাঁদের এক জন ভাই খাঁ এবং বোন ফতেমা বিবি চলে আসেন এই সিংটি গ্রামে। লোকশ্রুতি অনুযায়ী, ভাই খাঁ নানা গুনের অধিকারী ছিলেন। তার অলৌকিক ক্ষমতায় মানুষের জটিল রোগ ব্যাধি নিরাময় হত। সারা দেশে তাঁর নাম ডাক ছড়িয়ে পড়ে ছিল। অসংখ্য তার গুনমুগ্ধ শিষ্য তাকে ঈশ্বরের দেবদূত বলতে দ্বিধা করতেন না।
  মৃত্যুর পূর্বে তার ইচ্ছা ছিল এখানে একটি মেলার প্রবর্তন করা, যে মেলা হবে সব ধর্মের মানুষের মিলন তীর্থ। তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর শিষ্যগন গুরুর কথার মর্যাদার প্রতি সম্মান জানিয়ে মাঘ মাসের এক তারিখে অর্থাৎ তার মৃত্যুর দিন কে স্মরনীয় করে রাখতে এই মেলার প্রবর্তন করেন। এবং এই মেলা ভাই খাঁ জাতের মেলা হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। সারা পশ্চিমবঙ্গে সাগর মেলা, কেন্দুলির জয়দেব মেলা, মহেশের রথের মেলা গুলির পাশে স্হান করে নেয়। লক্ষ লক্ষ মানুষের আগমন তারই সাক্ষ্যবহন করে চলেছে পাঁচশত বছর ধরে।
   এখানে আছে দুটি মাজার একটিতে ভাই খাঁ-র সমাধি, অপরটি তে তার শিষ্য সইফ আলি খাঁ ও গোপাল খাঁয়ের সমাধি। পাশেই বোন ফতিমা বিবির মাজার।
    এই মেলায় কি নেই! আছে বাঁশের বেতের নিত্য ব্যবহার্য জিনিসপত্র যেমন ঝোড়া চুবড়ি ধামা কুলো,
মাছ ধরার জন্য ছিপ  হুইল  জাল সুতো পাং ঘুনি , এখানে বিক্রি হয় মাটির নানান জিনিসপত্র হাঁড়ি কড়া খেলনা বাটি, এখানে পাওয়া যায় হরেক রকম কৃষি কাজে ব্যবহৃত যন্রপাতি।
   ‌জিলিপি,পাপর, ঘুগনি নানা রকম মুখরোচোক খাবার ,খাবারের দোকান নাগরদোলা ,ম্যাজিক সো সব কিছু আছে।
    মেলার মূল আকর্ষণ সামুদ্রিক কাংড়া আর ডাবা ডাবা আলুর দম। দূর - দূরান্ত থেকে আসা মানুষ জন মাঠের উপর চট চাদর পলিথিন বিছিয়ে পরম তৃপ্তিতে আলুর দম আর মুড়ি মহানন্দে মজা করে খেয়ে চলেছে। হাওড়া হুগলি থেকে আসা আত্মীয় স্বজনদের সঙ্গে মনের কথার ভাগিদার হতে পেরে খুশিতে মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠছে।
     সবথেকে উল্লেখযোগ্য ঘটনা হল, তিন পুরুষ ধরে এখানে সামুদ্রিক কাঁকড়া বিক্রি করতে আসছেন সুদুর ক্যানিং, সুন্দরবন থেকে। কথা বলে জানা যায়, এ বৎসর যে কাঁকড়া বিক্রি করছে সে প্রথম দাদুর হাত ধরে এই মেলায় এসেছিল। তারপর বাবার সাথে এখন নিজেই।বড় ছোটো নানা সাইজের কাঁকড়া। বিঘের পর বিঘে এলাকা জুড়ে শুধুই কাঁকড়া মেলা। শোনা যায় ঐ এলাকার মানুষ জন যারা মেলায় আসেন তারা প্রত্যেকে সাধ্যমতো কাঁকড়া ক্রয় করে নিয়ে যান।
    সম্প্রীতির পীঠস্থান এই ভাই খাঁ-জাতের  মেলায় আসুন, দেখে যান ডাবা আলুর দম আর সামুদ্রিক কাঁকড়া-র গৌরবোজ্জ্বল উত্তরণ। গ্রাম বাংলার রূপ সুধা আকন্ঠ পান করে নিজের অজানা অপূর্ন আঙ্খাকা পূরন করুন।

অশোক দাশ
ভোজান, রসপুর, হাওড়া, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত
মোবাইল নাম্বার -৮৩৪৮৭২৫৩৩৩




   


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন