পরদিন আয়মান ঘরের যত ময়লা কাপড়-চোপড় বের করলো। দু বালতি ভরে গেলো। এতো কাপড়-চোপড় আয়মান কাঁচবে দেখে আর ভেবে আরজুর খুব কষ্ট লাগলো। তাই আরজু নিজেই কাপড়-চোপড় কাঁচতে মনস্থির করলো। আয়মান বাঁধা দিলেও আরজু শুনলো না। বললো, কাপড়-চোপড় কাচা কোনো ব্যাপার? এতকাল তো নিজের কাপড়-চোপড় নিজেই কেচেছি। লন্ড্রীর কাজ তো সব পুরুষরাই করে।
আরজু যে কাপড়-চোপড় কাচছিলো তা দেখে ফেলে আবিরের বৌ। দিন শেষে ইস্ত্রী মেশিন নিয়ে আরজু বসে গেলো ইস্ত্রী করতে। আয়মান বললো, সব শিখে রেখেছো দেখি! বৌয়ের এতো কাজ করে দিলে বৌ আদর দিতে দিতে তো ফতুর হয়ে যাবে!
আরজু বললো, ইস্ত্রী করা কোনো ব্যাপার! দোকানে দোকানে সব ইস্ত্রীর কাজ তো পুরুষরাই করে!
কাপড় ইস্ত্রী করা দেখে ফেলেছে জাহিদের বৌ। পরদিন লুঙ্গি ছেঁড়া সেলাই করতে বসেছে আরজু। আয়মান বললো, দাও, আমি সেলাই করে দিই। পুরুষ কী সেলাইয়ের কাজ পারে!
আরজু বললো, ঘরে মেয়েরা যতই সেলাইয়ের কাজ করুক, দেশ-বিদেশে সবখানেই টেইলার্সে পুরুষই সর্বোত্তম সেলাইকর্মী।
আরজুর লুঙ্গি সেলাই দৃশ্য দেখে ফেলেছে সাইদুরের বৌ। পরদিন চায়ের দোকানে যেতেই মহিন বললো, তুই বাসায় নাকি রান্না করিস? আমার বৌ দেখেছে। বাসায় আমার বৌ এই কাজটিই করতো, এখন তোকে উদাহরণ টেনে আমার বৌ আমাকে রান্না করতে বলছে। তুই একটা মাদী-পুরুষ। সবাইকে মাদী-পুরুষ বানাবি?
আরজুর উত্তর করার আগে আবির বললো, বিয়ের আগে কাপড়-চোপড় ধৌত করেছিস, ভালো। এখন ধৌত করিস কেনো? তোর কাপড় কাচা আমার বৌ দেখেছে। এখন সে আমাকে কাপড় কাচতে বাধ্য করছে।
জাহিদ বললো, ও তো কাপড় ইস্ত্রীও করে। গতকাল আমার বৌ আমাকে দিয়ে কাপড় ইস্ত্রী করিয়েছে।
সাইদুর খুব রেগে বললো, ও লুঙ্গিও সেলাই করে। আমার বৌ দেখেছে। আমার বৌ আমাকে দিয়ে কবে না জানি কাঁথাও সেলাই করিয়ে নেয়।
রিপন ক্ষিপ্ত হয়ে বললো, ও থালাবাটিও ধৌত করে। আমার বৌ আমাকে বকেছে আর বলেছে, আরজু ভাইয়ের মতো তো আর থালাবাটি ধৌও না।
সবাই মিলে আরজুকে ইচ্ছামত বকলো, গালি দিলো, অপমান করলো। আরজু সবাইকে শান্ত করে বললো, যে বৌ নিজের বাবা-মাকে, ভাই-বোনকে, আত্মীয়-স্বজনকে ছেড়ে আমার কাছে এসে সুখ খুঁজছে; আমার পরিবারকে নিজের করে নিচ্ছে আমি তার হাতের কাজে সাহায্য করবো না?
মাহাবুর বললো, বৌ কী জাদু করেছে? এমনি ভাবে তোকে খাটাচ্ছে, তোর পৌরষকে অপদলিত করছে তবুও রাগ করিস না! চোখে কাজল আর কপালে টিপ দেয়া উচিত তোর।
সাইদুর বললো, ওর বৌ যদি ওর চোখে কাজল, কপালে টিপ দিয়ে দেয় ও তাও গ্রহণ করবে। কাজল, টিপ গ্রহণ যদি করিস হাতে চুড়িও পরিস, পায়ে নূপুরও পরিস। তুই আর কত নিচে নামাবি সুউচ্চ শীরের স্বামী জাতিটাকে? তুই একটা মেন্দা মার্কা স্বামী।
কথাগুলো শুনে আরজুর মন খারাপ হয়ে গেলো। মনে মনে ভাবলো, বৌকে সাহায্য করা অন্যায়? ঘরের সব কাজ বৌ করবে? ঘরের কাজ করলে পুরুষের পৌরষ জলাঞ্জলি হয়?
ভাবতে ভাবতে বাজারটা সেরে বাড়ি এলো। ফিরতে দেরি হওয়াতে আয়মান বললো, রাত করে মাছ এনেছো। যাও মাছ কুঁটে পরিষ্কার করো।
আরজুর কথাটি কোথায় গিয়ে যেন বাঁধলো ও বিঁধলো। বললো, বাজার করার দায়িত্ব আমার, মাছ-তরকারি কুঁটার দায়িত্ব তোমার।
আয়মান রাগ দেখিয়ে বললো, এতো রাতে আমি মাছ কুঁটবো না।
ঘরে চলে গেলো আয়মান। আরজু বেশক্ষণ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে একবার মাছ একবার তরকারির দিকে তাকিয়ে থেকে মাছ কুঁটতে লেগে গেলো। পিছন দিয়ে আয়মান এসে সবজি কুটতে লাগলো আর বললো, তোমার পরে রাগ হয় না। রাগ চলে গেছে, যাও আমি কুঁটছি।
আয়মানের দিকে তাকিয়ে আরজু ভুলে গেলো সব দ্বেষ-ক্ষোভ। তবুও বললো, চাপ দাও কেনো আমায়?
আয়মান বললো, তোমার তিন ঘণ্টা আগে আসার কথা। এতক্ষণে আমাদের খাওয়া শেষ হতো। যাও, মাছ ধুয়ে আনো।
আরজু বললো, মাছ ধুয়ে আনবো মানে? কুঁটে দিছি এই বেশি।
আয়মান বললো, কানের কাছে গুণগুণিয়ে অনেক বলেছো পড়াশোনাকালীন রান্না-বান্না করে খেয়েছো। যাও, মাছ ধুয়ে আনো।
আরজু মাছ ধুতে যেতে বাধ্য হলো। মাছ ধুতে ধুতে গান ধরলো, সংসার আমার ভাল লাগে না, সংসার বিষে মরি...
শুনে আয়মান হাসতে থাকে। রান্না শুরু করলো ও। আর কেঁকিয়ে বললো, তুমি কইগো? পানি আনো।
আরজু খুব বিরক্তিভরে পানি এনে দিয়ে বললো, আমাকে আর কিছু আনতে বলবে না। আমাকে বসতে দেখলে তোমার ভালো লাগে না!
আয়মান চামচটা আরজুকে ধরিয়ে দিয়ে বললো, তরকারি নাড়তে থাকো, ঘেমে গেছি, একটু বাতাস খেয়ে আসি।
আয়মান সত্য সত্য রান্না ফেলে চলে গেলো। বাধ্য হয়ে তরকারি নাড়তে ব্যস্ত হলো আরজু। মাঝে দু বার উঁকি মেরে দেখে গেছে আয়মান। তৃতীয় বার আর উঁকি মেরে গেলো না। পিছন থেকে আরজুকে জড়িয়ে ধরে বললো, তোমার রান্না খুব সুস্বাদু। বেড়েও খাওয়াবে।
আরজু বিরক্তির স্বরে বললো, ছাড়ো তো। শরীরে ঘাম। ঘাম শরীরে এভাবে কেউ জড়ায়?
আয়মান কথা শুনলো না। বললো, মনে মনে আমাকে বকা দিচ্ছো, না?
আরজু বললো, আমি কী কখনো তোমাকে বকেছি? আমি কী তোমাকে বকতে পারি? তবে তুমি যে আমার উপর রুষ্ট এটা পরিষ্কার।
আয়মান বললো, গালে তুলে খাওয়ায়ে দেবে।
আরজু বললো, বাজার করবো, তরকারি কুঁটবো, রান্না করবো, গালে তুলে খাওয়ায়ে দেবো। পেয়েছো কী? সরে যাও। খুব রাগ হচ্ছে, ছাড়ো!
আয়মান বললো, খাওয়া শেষে থালাবাটিও ধুয়ে দেবে।
রান্না ফেলে আরজু দুপদাপ পা ফেলে চলে গেলো। আয়মান স্বর বাড়িয়ে বললো, টেবিলটা মুছে রাখো।
আরজু ফিরে এসে রাগান্বিত কণ্ঠে বললো, টেবিল মুছবো মানে?
আয়মান বললো, তুমিই তো বলেছো, ছোট-বড় সব হোটেল-রেস্টুরেন্টের মেসিয়ার পুরুষ। যাও, কথা না বলে টেবিল মুছো, যেতে আসতে মেঝেটাও নোংরা হয়ে গেছে। মেঝেটাও মুছে ফেলো।
আরজু বিস্ফোরিত নেত্রে চেয়ে চলে গেলো। খাওয়ার সময় আয়মান প্লেট নিয়ে বসে বললো, চামচ ধরো, ভাত দাও, তরকারি দাও, গ্লাসে পানি ঢালো।
আরজু বললো, এতো অত্যাচার কোনো একদিন সহ্যের বাইরে চলে যাবে।
আয়মান বললো, অত্যাচার মানে? বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছো। হলে থেকেছো। ডাইনিংয়ে খেয়েছো। বলেছো, আক্কেলরা তরকারি কোঁটে, রান্না করে, পরিবেশন করে। দেখে দেখে বড় হয়েছো। এপ্লাই করো।
আরজু শুনে চামচ ছুঁড়ে মেরে ঘরে চলে গেলো। ভাত, তরকারি নিয়ে আয়মান বেডরুমে এলো। একবার গালে তুলে দিতে গেলো, আরজু হাত সরিয়ে দিলো। দ্বিতীয় বার গালে তুলে দিতে গেলো, আরজু এবারও হাত সরিয়ে দিলো।
তখন আয়মান বললো, তোমাকে দু একটা ঘরের কাজ করতে বলি ভালোবাসার অধিকার থেকে, আর তুমি রাগ করো সম্পূর্ণ হিংসা থেকে।
বলে আয়মান উঠে যাচ্ছিলো। আরজু তার হাত ধরে থামালো আর খাওয়ার জন্য হা করলো। আয়মান হেসে একগাল ভাত তুলো দিয়ে বললো, দারুন না? তোমার রান্না।
আরজু খেয়ে বললো, হ্যাঁ দারুন। তবে আমার রান্না বলে না, তুমি গালে তুলে খাওয়ায়ে দিচ্ছো তাই।
আয়মান ভালো সেলাইয়ের কাজ পারে। আপন মাধুরী মিশিয়ে রুমালে আল্পনা এঁকে সেলাই করে সেই রুমাল আরজুকে দিয়েছে। রুমাল ব্যবহার করার অভ্যাস না থাকা সত্ত্বেও আরজু এখন পকেটে রুমাল রাখে। মানুষের সামনে রুমাল বের করে না, তবে যখনই একা থাকে রুমাল বের করে নির্বাক চোখে আয়মানের নিপুণ সেলাই কর্ম দেখে। ওদিন আয়মান কাঁথা সেলাই করছিলো। আরজু একটা শার্ট এনে বললো, একটা বোতাম ঢিল হয়ে গেছে। কখন ছিঁড়ে পড়ে যাবে। সেলাই করে দাও তো।
আয়মান সুচ-সুতা আরজুর হাতে দিয়ে বললো, নিজের কাজ নিজে করাতেই বেশি আনন্দ। তাছাড়া তুমি সেলাই পারো। নাও, সেলাই করো।
আরজু রেগে যেয়ে বললো, সেলাই করবো মানে? সেলাই কী আমার কাজ?
আয়মান বললো, তুমিই বলেছো ছোট-বড় সব টেইলার্সের সেলাইকর্মী পুরুষ। সুচ-সুতা ধরো, কথা কম।
আরজু সুচ-সুতা দিয়ে শার্টের বোতাম সেলাই করতে লাগলো। আয়মান আরজুর কাঁধে চিবুক ঠেকিয়ে বললো, সেলাই পারো। তা আমার উপর অত নির্ভর করো কেনো?
আরজু বললো, সবই পারি। শুধু পারি না তোমার সাথে। তুমি আমাকে যেভাবে খাটাচ্ছো রীতিমত স্বামী নির্যাতন। প্রকৃত পুরুষ পুরুষ নির্যাতন কখনো মেনে নেবে না।
আয়মান আরজুর গলা দু বাহু দিয়ে জড়িয়ে ধরে বললো, ভালোবাসি না?
আরজু বললো, ঘরে ঘরে স্বামী নির্যাতিত, কেউ কেউ ভালোবেসে ভুলিয়ে ভালিয়ে নির্যাতন করছে, কেউ কেউ শাসন বা তীর্যক বাণে নির্যাতন করছে। আগে বিশ্বাসই করতাম না।
বোতাম সেলাই হলে এবার আয়মান বললো, এবার কাঁথা সেলাই করো। কাঁথা কী আমি একা গায়ে দেবো? সেলাই করে আমার তোমার নাম লেখো। আমার জন্য তোমার উপহার।
একথা শুনে আরজু গরম চোখে আয়মানের দিকে চেয়ে থাকলো। আয়মান না ডরিয়ে বললো, চোখ গরম দিচ্ছো কেনো? বাসর রাতে তুমিই বলেছিলে আমরা আমাদের কাজ ভাগে যোগে, মিলেমিশে করবো।
আরজু কাঁথা ছুঁড়ে ফেলে দিলো। এতো রাগ জীবনে কখনো ওর ওঠেনি।
পরদিন সকালে কাপড়-চোপড় বালতি মাঝে রেখে বললো, কাচবে না?
আরজু মনে মনে ভাবলো, আয়মান তো রীতিমত নির্যাতন শুরু করেছে।
তীর্যক চেয়ে আরজু উচ্চারণ করে বললো, কাপড় কাচবো মানে? আমি চুড়িপরা পুরুষ?
আয়মান বললো, কথা কম, কাজ বেশি। তুমিই বলেছো, লন্ড্রীর সব কর্মী পুরুষ।
আরজু তদাপেক্ষা রেগে, কাপড়-চোপড় কাচা আমার কাজ?
আয়মান বললো, তুমিই বলেছো, কোনো কাজ ঘৃণা করা উচিত না। কার না কার কাজ না ভেবে কাজে মন দাও। সব কাজ সমান।
আরজু ফুঁসতে ফুঁসতে কাপড়-চোপড়ের বালতি নিয়ে ওয়াশরুমে গেলো। আর গান ধরলো, বৌয়ের জ্বালায় ইচ্ছে করে গাড়ির নিচে মারি ঝাপ, কেন যে বিয়ে করলাম বাপরে বাপ...
হাসতে হাসতে পিছনে এসে দাঁড়ালো আয়মান। আরজু দেখে বললো, চোখের সামনে থেকে যাও, তোমাকে সহ্য হচ্ছে না।
আয়মান কর্ণপাত না করে বললো, জামার কলার আর হাতা ভালো করে ঘষো।
আরজু বললো, শিখাতে হবে না। নিজের কাপড়-চোপড় নিজেই কেচেছি। ভেবেছিলাম, বিয়ে করেছি এসব থেকে বাঁচবো।
আয়মান বললো, তোমরা পুরুষরা বিয়ে করো অনেক কিছু থেকে বাঁচবে বলে। এ চিন্তাটা দূষিত। কাপড় শুকাবে নেড়েনেড়ে। ইস্ত্রী করবে। তুমিই বলেছো, দোকানে দোকানে যারাই ইস্ত্রী করে সব পুরুষ।
আরজু রেগে গেলেও নিজেকে শান্ত রাখলো। চায়ের দোকানে গেলেও বৌয়ের বদনাম ঢেকে গুণগান করে কটাক্ষ ভোজনের ভয়ে। একা একা ও ভাবলো, নিজের বলা বুলিতে নিজেই আটকে যাচ্ছি। ঘরের কাজ করলে বাইরে সম্মানহানী হচ্ছে। বাইরে অপমানিত হচ্ছি, ঘরেও সহ্য হচ্ছে না। আয়মান অর্থনৈতিক চাপ দেয় না, বাবা-মায়ের আভিজাত্য প্রকাশ করে না। কিন্তু তাও তাকে সহ্য হচ্ছে না। না জানি কোন মূহুর্তে কোন কাজ করতে বলে বসে। বিশ্রাম নিলে ডেকে তুলে কাজ ধরিয়ে দিচ্ছে। এক কাজ করতে বলে সে কাজ শেষ না হতেই অন্য কাজে যেতে বলছে। বেশ মুশকিলে পড়লাম যে!
ঘরের কথা বাইরে না বললেও বন্ধুরা কেমন করে যেন ধরে ফেলে। মহিন বললো, বানর খেলায় যে লোক সে তার বানরদের জীবদ্দশায় যত না নাচায় তোর বৌ তারচেয়ে তোকে বেশি নাচাবে। বৌকে দিয়েছিস প্রশ্রয়। ওরা প্রশ্রয়ের মানে বোঝে? কিল-লাথির উপর রেখেও তাই দমাতে পারি না।
আরজু বললো, কিভাবে বুঝলি আমার বৌ আমাকে নাচাচ্ছে? সংসারে তোরাই আগুন জ্বালাচ্ছিস। দোষ দিচ্ছিস বৌয়ের। বনের দাবানল নিভলেও তোদের সংসারের দাবানল নিভবে না। বাড়ি যাবার সময় মাত্র দশ টাকার বাদাম নিয়ে যাবো, আমার বৌ দশ লক্ষ টাকার স্বর্ণালঙ্কারের চেয়েও বেশি খুশি হবে।
চাপা মেরে আরজু বাড়ি এলো। আগের মতো সব বিষয়ে অতি আগ্রহ দেখায় না। আয়মান তা লক্ষ্য করে। আয়মান বললো, ইদানিং তোমাকে উদাসীন লাগছে। নিষ্প্রাণ আর স্পন্দনহীন দেখাচ্ছে। মন খারাপ করে থাকো কেনো? তোমার মন খারাপ থাকলে আমার কী ভালো লাগে!
আরজু নিষ্প্রভতার কারণ এড়িয়ে জবাব দিলো, তুমি যে এতো ভালোবাসো আমায় এতকাল মানুষ সহ্য করতে পারতো না, এখন আমি সহ্য করতে পারি না। আমাকে এতো ভালোবাসো কেনো?
আয়মান বললো, তুমি তো আর দশটা পুরুষের মতো আমাকে দাসী করে রাখোনি। সংসারের আবর্জনা ভেবে ঘরের কোণে ফেলো রাখোনি। বৌয়ের বুদ্ধিকে তো তুমি গাধার বুদ্ধি ভাবো না। বৌকে সাথে রাখো সংসারের উন্নয়নের অন্যতম সঙ্গী হিসেবে। অন্যদের মতো বৌ সন্তান উৎপাদনের ফ্যাক্টরি সে হীনজ্ঞান তোমার নেই। শুধু উষ্ণতা প্রাপ্তির জন্য বৌর কাছে আসো না, ভালোবাসো, সম্মান করো। চোখে চোখে রাখো, মনের চাহিদা বোঝো। তুমি ভালোবাসার যোগ্য, আমি সারাক্ষণ ভাবি তোমাকে কত উপায়ে ভালোবাসবো। কত উপায়ে তোমার মন রাঙাবো। তোমাকে হৃদয়ের সবটুকু ভারোবাসা দিয়েও আমি তৃপ্ত না। তোমাকে ভালোবেসে মন ভরে না। তোমাকে সংসারের টুকটাক কাজ করতে বলি তা নিতান্ত মনের খেয়ালে, অন্য রকম ভালোবাসা থেকে। আমি তো জানি পেশা জীবনে তুমি কত কষ্ট করো, আমি তো সেসব কাজে তোমার সঙ্গী হতে পারি না। বাড়ির দু চারটে ছোট ছোট কাজ তোমাকে আর করতে দেবো না। আমি বুঝতে পারছি এতে তুমি বন্ধু সমাজে, বন্ধুদের বৌদের মাঝে ছোট হচ্ছো, অসম্মানিত হচ্ছো। তোমার সম্মান রক্ষা আমার প্রথম কাজ। দয়া করে তুমি আমার উপর রাগ করো না। তুমি যদি আমার উপর রাগ করো, আমি তবে বাঁচি কী করে!
আরজু নির্বাক হয়ে গেলো কথাগুলো শুনে। নিশ্চল হয়ে দাঁড়িয়ে থাকলো। আবেগে গদগদ হয়ে আরজু বললো, তুমি সম্মুখে থাকলেই সুখ পাই, তুমি আছো ঘরময়, ঘর জুড়ে তোমার পদধ্বনি আমার ব্যাখ্যাতীত ভালো লাগা। তুমি এঘর ওঘর কাজ করো, কাজের ব্যস্ততায় আমায় না দেখার ভান করো, আমার দৃষ্টিতে সব ধরা পড়ে। তুমি আছো তাই আমাদের ঘর-বাইর পরিচ্ছন্ন, তুমি নিশ্চিন্ত রেখেছো, নির্ভরতায় থাকি তাই। একমাত্র তোমাতেই আমার যত লাভ, একমাত্র তোমাতেই আমার যত লোভ, একমাত্র তোমাতেই আমার যত মোহ, একমাত্র তোমাতেই আমার যত নেশা। প্রস্তুতি নিয়ে আমি তোমায় দেখি, খুব করে দেখি আমি খুব করে ভাবি। ভাবি সুন্দর তুমি, ভারি মিষ্টি তোমার মমতা। যত না ভাবিনি, তুমি তার চেয়ে বেশি ভালো, ভাবনার পরিসীমা দিয়েছো বাড়িয়ে। কেউ এতটা আপন হবে, কেউ এতটা আপন করবে, কাউকে এতটা আপন করে পাবো ভাবনাতেও ছিলো না। শুধু তোমার জন্য আমার সব কিছুতেই ভালো লাগা, সব কিছুতেই সফলতা। সব কিছুই রঙিন, সব কিছু রংময়, বাঙময়, চিন্ময়, হিরন্ময়। সুখ পাখি হয়ে এভাবে উড়ো, আমার বুক জমিনটা সম্পূর্ণই তোমার।
আয়মান আরজুর চোখ বরাবর চেয়ে বললো, পুরুষ তো কখনো এতটা দরদী পুরুষ হয় না, পুরুষ তো কখনো এতটা প্রেমিক পুরুষও হয় না। বুক-পিঠ প্রাচীর করে সব দায়িত্বের ঝঞ্ঝা একা থেকালেও ভালোবাসাটা অপ্রকাশই রাখো। হাত দুটো শক্ত আর কড়া পড়া হলেও যত্ন-আত্তিতে কত না নরম আর কোমল। শুনেছি পুরুষের মন শক্ত, অথচ তুমি কত অনায়াসেই তোমার বুকে আমার ঠাঁই দাও; জেনেছি নানা প্রলোভন দেখিয়ে পুরুষ নারীর সান্নিধ্যে আসে, প্রয়োজনটুকুর পর অপ্রয়োজনীয় করে দূরে রাখে। অথচ তুমি কত সুন্দর, স্পর্শে আসো,স্পর্শে ডাকো, স্পর্শে রাখো, স্বপ্ন দেখাও, স্বপ্নের সারথি করে ধরে রাখো, আদরে রাখো, নজরে রাখো, মনেতে গেঁথে রাখো, মনের কথা শোনো। প্রয়োজনটুকুর জন্য উষ্ণ করো না, প্রয়োজনীয় করে রাখো, কখনোই হেয় করো না, অপ্রয়োজনীয় ভাবো না, অবিচ্ছেদ্য অংশ ভাবো। মন-মননে তুমি অনেক উঁচু, সুস্থ চিন্তার মানুষ তুমি। তোমাকে পেয়ে আমি ঠকিনি। তোমাকে ভালোবেসেও আমি ঠকবো না। মৃত্যু অবধি তোমার সান্নিধ্যে থেকেও আমি ঠকবো না। যত বেশি ভালোবাসার পর আর ভালোবাসা যায় না, আমি তার থেকেও তোমাকে ভালোবাসি।
আয়মানের কথা শুনে আরজুর চিন্তা-ভাবনা পরিবর্তন হয়ে গেলো। হাসতে হাসতে আয়মান বললো, গাছের পাতা পড়ে উঠান দেখো ময়লা হয়ে গেছে, উঠানটা ঝাড়ু দাও।
আরজু সে কথাতে কর্ণপাত না করে দোকানে গেলো। দোকানের এক পাশে বসে চা খেতে লাগলো। মহিন বললো, কী মন খারাপ? এক কোণে বসলি যে!
সজীব বললো, বৌ ঘরে। মন ভালো থাকার প্রশ্নই আসে না। ও যতই মুখে বলুক ভালো ভালো। ভিতরে ভিতরে পুড়ে ও ছাই। তোর বিয়েই সবাই বাঁধা দিছি। বোঝ এবার বিয়ের জ্বালা। দিল্লিকা লাড্ডু, না খাইলেও পস্তাবেন, খাইলেও পস্তাবেন।
আরজু এবার জবাব দিলো, বৌ দিল্লিকা লাড্ডু নয়, না খাওয়ারও কিছু নেই, খাওয়ারও কিছু নেই। বৌ হৃদয়ের কাছ ঘেঁষে থাকা হৃদয়ের খোরাক। বৌ অন্তরে বাস করা ছোট্ট পাখি, বৌ অন্তর। বৌ মনের প্রশান্তির রসদ, বাঁচার অন্য নাম। বৌকে শাসন করলে বৌ শাসন করবে। বৌয়ের শাসন খুব মিষ্টি না। বৌকে ভালোবাসতে হয়, বৌ ভালোবাসা পাবার কাঙাল। বৌকে যতটুকু ভালোবাসবি, ততোধিক বৌ ভালোবাসা প্রতিদানে দেবে। বৌকে অবজ্ঞা করলে বৌ অবজ্ঞা করবে। বৌয়ের অবজ্ঞার ওজন অনেক। বৌকে গাধার মতো খাটানোর অর্থ নেই, বৌকে গাধার মতো খাটালে বৌ গাধার মতো খাটাবে। বৌ গাধার মতো খাটালে মাজা আর উঁচু হবে না।বৌকে সময় দিতে হয়, বৌ সময় চায়, সময় চায়ের দোকানে দিলে সময় হাত থেকে চলে যাবে। বৌকে সময় দিলে সংসার মধুর হবে, তখন চায়ের দোকানে আসতেও ইচ্ছে করবে না। বৌয়ের কাজে সাহায্য করা মানে বৌকেই সাহায্য করা না, নিজের সংসারকেও টানা। বৌয়ের সাথে মিলেমিশে থাকলে বৌয়ের আঁচল তলে থাকা বলা ঠিক না, বৌর সাথে যদি শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক সৃষ্টি না করতে পারিস, সংসারের মধ্যে যদি শান্তি আনয়ন না করতে পারিস পৃথিবীর এত এত সুখ কোন প্রশান্তি দেবে না।
আরজুর টানা কথা বলা দেখে মহিনসহ আরজুও চুপ হয়ে গেলো। আরজু চা খেয়ে বাড়ি চলে এলো। আয়মানকে বললো, আমার বন্ধুগুলো সংসারে খুব অশান্তিতে। বৌদের সহ্যই করতে পারে না। তোমার আমার মিলও ওরা সহ্য করতে পারে না।
আয়মান বললো, বন্ধুদের সাথে বৌর প্রশংসা করবে না। বৌর প্রশংসা শুধু বন্ধুরা নয়, পৃথিবীর কেউ সহ্য করতে পারে না। তোমার বন্ধুরা তাঁদের বৌকে চায়ের দোকানে যেভাবে উপস্থাপন করে তুমিও আমাকে ঠিক তেমনি করে তাঁদের সামনে উপস্থাপন করবে। দেখবে তোমার বন্ধুরা আগের মতো আবার তোমার সাথে সুন্দর ব্যবহার করছেন। এই সমাজ এমন, যে যত তার বৌকে শাসন-দমন করতে পারবে সেই তত সুপুরুষ। কাল যেয়ে বন্ধুদের বলবে বৌকে কনুই দিয়ে মেরেছি। আর বলবে, বৌ বেকুবই, বৌর বুদ্ধি হাঁটুতেই, বৌ বাড়তি বোঝা, বৌ যন্ত্রণার ফ্যাক্টরিই, বৌ ঝগড়াটেই, বৌ কানের কাছে ঘ্যানর ঘ্যানরই করে, বৌর অত্যাচারে কাঁচা চুলে পাকই ধরে, বৌয়ের কাজ আবার কাজ হলো, বৌয়ের কাজের কোনো মূল্যই নেই, সংসারের কাজ আবার কাজ হলো!
আয়মানকে থামালো আরজু। আর বললো, শীরধার্য। এখন বলো ঘর ঝাড়ু দেবো, না টেবিল মুছবো, না থালাবাটি ধৌত করবো, না...
আয়মান আরজুর মুখের কথা কেড়ে নিয়ে বললো, ঘরের কাজ করবে, পর যেন না জানে। যা করবে জানালা দরজা বন্ধ করে...
জানালা দরজা বন্ধের কথা বলেই আয়মান লজ্জায় জিহ্বা কাটলো। আরজু আয়মানের কাছে সরে এলো। আয়মান আদেশের সুরে বললো, কাছে আসবে না। ঘোরো।
আরজু ঘুরতেই আয়মান আরজুর গলা জড়িয়ে পিঠে চড়ে বসে বললো, বৌ তো বাদর। পিঠে চড়বে, মাথায় উঠবে। এখন আমাকে রান্না ঘরে নিয়ে চলো।
আরজু বললো, এভাবে তোমায় নিয়ে চলবো আমি হাজার বছর হাজার মাইল জীবনের পথ।
আয়মান নেমে আরজুর হাত ধরে বললো, সহযাত্রী ঘাড়ে চড়ে না, সমব্যথী ঘাড়ে চড়ে না। স্বামীর ঘাড়ে চড়ে হাজার বছর হাজার মাইল চলা যায় না। স্বামীর হাত ধরে পাশাপাশি হাজার বছর হাজার মাইল চলা সম্ভব।
আরজু বললো, তুমি অনেক জ্ঞানী, জানো অনেক। তোমাতে আমার মুগ্ধতার শেষ নেই।
আয়মান বললো, মানুষ তো তখনই মুগ্ধ হয় যখন মুগ্ধ নয়নে চায়। জোরাজুরি, পীড়াপীড়ি, বলপ্রদর্শন, ক্ষিপ্রতা, দমন-শাসন সম্পর্ককে নষ্ট করে দেয়। তোমার আমার সম্পর্ক একটা শিল্প, একটা সৌন্দর্য।
তখন রিপন এসে হাক দিলো, স্যার, আপনি কই? ডিমে তা দিচ্ছেন?
বন্ধু যখন নাম না ধরে ডেকে স্যার ডাকে আর তুই স্থলে আপনি বলে তখন বোঝায় যায় ইচ্ছাপূর্বক অবজ্ঞা ছাড়া আর কিছুই নয়। আরজু বাইরে এসে বললো, আরে দূর ডিমে তা দেবো কেনো? ভেবেছি, বৌ জ্বালালেই পিটাবো, বাড়তি কথা বললেই পিটাবো, পাশের বাড়ির কারো সাথে ঝগড়া করলেই পিটাবো, জ্ঞান দিতে গেলেই পিটাবো, সক্ষমতা নিয়ে কথা বললেই পিটাবো, অতি অভিরুচি দেখালেই পিটাবো, রান্না করতে দেরি করলেই পিটাবো, খেতে দিতে দেরি করলেই পিটাবো, ঘুরতে নিয়ে যাও বায়না ধরলেই পিটাবো।
রিপন খুব খুশি হলো আরজুর আজকের কথা শুনে। সে আরজুর সাথে করমর্দন করে বললো, এত দিনে তোর মুখে বীর পুরুষের মতো কথা শোনা গেলো।
আর ধীরস্বরে বললো, শোন, স্বামীকে প্রেমিক হলে চলে না, স্বামী কামুকের মতো কাম সেরেই স্ত্রীকে পাঁচ হাত দূরে সরিয়ে রাখবে।
এ কথা বলে রিপন আরজুকে বুকে চেপে ধরে সান্ত্বনা খুঁজলো। নিজ ঘরে অশান্তিতে বাস করা মানুষ অন্যের ঘরে একই রকম অশান্তি দেখলে তাকে সমব্যথী ভেবে বুকে টেনে কী সুন্দর সান্ত্বনার আশ্রয় খোঁজে! বৌ-শাসিত নতুন কেউ বৌ-শাসিত দলে ভিড়লে বৌ-শাসিতদের মনে কী যে দক্ষিণা পবন বয় বলা দুষ্কর।
রিপন দ্রুত দোকানে গেলো। আর আরজু ঘরে এলো। আরজুকে সাবাস বলে আয়মান বললো, অভিনয় সুদক্ষতার সাথে করেছো। পাকা অভিনেতা যেন তুমি।
আরজু বললো, তোমায় নিয়ে খারাপ কথা বলতেই দেখলে ও কী খুশি হলো! লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে ঘর করে, কিন্তু ঘরের মানুষটিকে অগুরুত্বপূর্ণ ভেবে ঘরকে নরক করে তুলেছে ওরা। ঘর হয়, ঘরণীও হয়, ওদের সুখ আর হয় না।
বৌ দ্বারা জ্বালাতনে অতিষ্ঠ আরজু, একথা রিপন বন্ধু সমাজে জানিয়ে দিলো। ঘোলা জল খেয়ে তাদের বন্ধু তাদের মাঝে ফিরে আসছে একথা কেউ কেউ বিশ্বাস করলেও কেউ কেউ করলো না। আরজু আসতেই সুমন বললো, তুই বৌয়ের পিছন ছাড়া পুরুষ না। বৌর বুদ্ধিতে চলা মানুষ তুই। নিশ্চয় তোর বৌ বলেছে, বন্ধুদের কাছে বৌর বদনাম করবে, বন্ধুরা তবে তোমাকে সাদরে গ্রহণ করবে। মাহাবুর, আরজুকে খবরদার আমাদের দলে নেয়া ঠিক হবে না।
মাহাবুর বললো, আমি জানি ও বৌর কথায় উঠে, বৌর কথায় বসে। বৌকে ভয় পায়, বৌর গরম খায়, বৌর দাসত্ব করে। ও বৌ ভক্ত, পুরুষ নামের কলঙ্ক।
আরজু কিছু বলতে চাচ্ছিলো। স্বজল, জাহিদ দুজন মিলে ওকে কোনো কথায় বলতে দিলো না। আরজু বন্ধু সমাজ থেকে বিতাড়িত হয়ে বাড়ি এলো। আরজুকে দেখতেই আয়মান বললো, কোথায় যাও, বলে যাও না কেনো? আমার শাড়ি, শায়া, ব্লাউজ শুকাতে দেয়া আছে ছাদে, নিয়ে এসো তো।
কথাটি শুনতেই আরজুর রাগ হয়ে গেলো। হাতে ছিলো ডিমের থলি। ছুঁড়ে মেরে আবার দোকানে গেলো। জাহিদ দেখে বললো, ও মনে হয় সত্যিই বাড়ি আর টিকতে পারছে না। ওকে দলে নিয়ে নিই।
স্বজল প্রতিবাদ করে বললো, ও পর্যবেক্ষণে থাকবে, দেখি সত্যিই অত্যাচারিত হচ্ছে কিনা! অত্যচারিত হলে তার মাত্রা মৃদু, না তীব্র তাও জানা দরকার। ও অত্যাচার মেনেই নেবে, না সহ্য করবে না তাও বুঝতে হবে।
আরজু সবাইকে কষ্ট করে থামিয়ে বললো, দেখ, তোরা সংসারে শুধু শাসিত হচ্ছিস। আমি শাসিতও হচ্ছি, ভালোবাসাও পাচ্ছি। অমৃতে ভেসে যাচ্ছি, তো গরলে ডুবে যাচ্ছি। না মধু, না বিষ; না মানতে পারছি, না দূরে ঠেলতে পারছি। অন্ধ পতঙ্গের মতো ঘুরপাক খাচ্ছি, না পাচ্ছি কূল, না পারছি শূল জ্বালা সয়তে, না চাচ্ছিস তোরা শুনতে, না পারছি বুকে চেপে রাখতে।
বান্না কটাক্ষ হেসে বললো, ও আচ্ছা, বৌ দ্বারা যত হচ্ছিস প্রভাবিত, তত হচ্ছিস প্রতারিত।
আবির বিজ্ঞজনের মতো করে বললো, গলার কাটা, না যায় ফেলা, না যায় জ্বালা সওয়া।
মহিন নড়ে চড়ে বসে তীর্যক চোখে চেয়ে কটাক্ষের গুঁড়ো মিশিয়ে বললো, রূপমাধুর্যে হচ্ছিস বিভোর, কথাচাতুর্যে কাটছে ঘোর। না পাচ্ছিস রাস্তা, না পাচ্ছিস পালাতে।
আরজু বললো, যত না দেয় রাগ উঠিয়ে, তারচেয়ে বেশি দেয় মন ভরিয়ে; মন তার রশদ পেলে রাগ যায় ভুলে। যত না দেয় জ্বালা, তারচেয়ে বেশি দেয় মায়া, মায়া পেলে জ্বালা যাই ভুলে। অম্ল-মধুর এই সম্পর্ক না পারি প্রত্যাখ্যান করতে, না পারি আশ্বাদন করতে।
বান্না বললো, বৌর হাতে নির্যাতিত হলেও থাকছিস হয়ে প্রিত, বৌ-জালে ধৃত তুই ইচ্ছাকৃত, বৌয়ের আঁচল আবৃত তুই, তুই একটা মৃত।
সাইদুর বললো, বুঝেছি, শাসন করতে যেয়ে সোহাগ দিয়ে ফেলছিস; সোহাগ দিতে যেয়ে ছোবল খেয়ে বসছিস। হাত তুলিস মারতে, সে হাত দিয়ে ফেলে আদর। আর আদর দিতে গেলেই হাত হচ্ছে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট। তোর পাওয়ার আকুলতা প্রবল, তাই হারানোর ভয়ও প্রবল। উপসংহার, তুই বৌ ভক্ত।
বন্ধুরা মিলে আরজুকে দোকান থেকে আবারো বিতাড়িত করে দিলো। বৌ-শাসিত দলে একটি মাত্র বৌ-শাসিত প্রাণীর ঠাঁই হলো না।
======০০০======
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন