'মা, এতো উনুন কী হবে?' পাঁচ বছরের একটি ছোট্ট ছেলের জিজ্ঞাসা আজ থেকে প্রায় ষাট বছর আগে পৌষের এক দুপুরে। মায়ের উওর ছিল 'তিন দিন পরে দেখতে পাবি"। দেখছিলাম মা, মাসী, মামী, পাড়ার আরো অনেকে তিন চার জনের দলে ভাগ হয়ে, সবুজ মাঠে কৎবেল আর আমড়া গাছের ফাঁকে ফাঁকে, মাটি খুঁড়ে মাটির উনুন গড়ছে। অবাক চোখে তাকিয়েছিলাম, আর মনের ভিতর তোলপাড় করছিল এতগুলো ছোট্ট ছোট্ট উনুন দিয়ে এরা কি করতে চাইছে?
যাই হোক্, সত্যিই তিনদিন পর অবসান হলো সেই কৌতূহলের। দেখলাম, সবাই যে যার ঘর থেকে হাঁড়ি-কড়া-খুন্তির সাথে কেউবা আতপ, কেউবা গোবিন্দ ভোগ চাল, ঘী, দুধ, নলেন গুড়, নারকেল, কর্পূর ইত্যাদি নিয়ে একে একে জড়ো হয়েছে সেই সবুজ মাঠের কৎবেল আর আমড়াতলায়। শুকনো কাঠের ধোঁয়া ভেদ করে বাতাসে ম ম করছে ঘরে তৈরী নলেন গুড়, ঘী আর নতুন চালের এক সম্মিলিত সুবাস।
তারপর খেজুর তালপাতার চাটাই পেতে একে অপরকে পায়েস পরিবেশন। সে এক অনাস্বাদিত পরমান্নের পরম স্বাদ আজ ও জিভের ডগায়। পায়েসের তারিফ করার সাথে সাথে মা মাসিদের হাসি ঠাট্টা আমার বোধের বাইরে। আমার নয়নে শুধু এক সুন্দর দৃশ্যের অবতারণা আর রসনায় তৃপ্তির উন্মাদনা। সমাপনে মা জানিয়েছিল, ' এ হ'ল পায়েস উৎসব'।
ভোজনরসিক বাঙালি হাজারো উৎসবে মশগুল। এখন ও এ উৎসব চালু আছে কিনা জানি না আমার মামার বাড়ি দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার বিষ্ণুপুরে। তবে আজ এটুকু বুঝতে পারি যে, এমনই সব ছোট ছোট উৎসবের হাত ধরেই হয়তো বা গ্রাম, গঞ্জ, সদর, শহর পেরিয়ে রাজ্য বা জাতীয় এমনকি আন্তর্জাতিক স্তরে উঠে এসেছে পিঠে উৎসব, আম উৎসব, ইলিশ উৎসব, এমনই কত কত . ...
:::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::
মধুসূদন লাটু
১১৬/১/ঈ, অধর দাস রোড,
বজবজ,
কলকাতা - ৭০০১৩৭
দূরভাষ : ৯৪৩২১৭৬২০৯
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন