google-site-verification=aFCzFTmuVjPqPlrdWXeJSj2r_EMig_cypLnlmiUQpw0 re নিবন্ধ।। পাহাড় মারা, কালীপুজোর অঙ্গ- আবদুস সালাম - নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

Breaking

নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

NABAPRAVAT : A Monthly Bengali Literary Blogzine.

বুধবার, ১৮ নভেম্বর, ২০২০

নিবন্ধ।। পাহাড় মারা, কালীপুজোর অঙ্গ- আবদুস সালাম



পাহাড় মারা, কালীপুজোর অঙ্গ

  আবদুস সালাম


সংস্কৃতি শব্দটি দিন দিন তার ব্যাপকতা হারাচ্ছে। সংস্কৃতি শব্দটির  সাথে যে ধর্ম বিশ্বাস অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত তা বলার অপেক্ষা রাখেনা। ধর্ম ও সংস্কৃতি দুটি বিপরীত অর্থবোধক শব্দ নয় বরং সমানুপাতিক শব্দ।একে অপরটি থেকে বিচ্ছিন্ন নয়। তবে সংস্কৃতির সংজ্ঞা বিশ্লেষণ  করলে আমাদের নানা মত পার্থক্য চোখে পড়ে । তবে যতই পরস্পর বিরোধী মতবাদ থাক না কেন ধর্মীয় বিশ্বাস যে সংস্কৃতির অঙ্গ তার আমাদের মেনে নিতে কারো আপত্তি থাকার কথা নয়। আর এই মতামত ১৯৮২ সালে ইউনেস্কো মেক্সিকো শহরের সম্মেলনে নীতি মালা রচিত হয়। এখানে  যে সংজ্ঞা টি সর্বজনের স্বীকৃতি লাভ করে তার হলো একটি জাতির সংস্কৃতির  ঐতিহ্য হিসেবে যে সকল বিষয় গণ্য করা হবে তা মোটামুটি এই রকম    ____শিল্প , সাহিত্য , স্থপতির নির্মাণ কার্য, বিজ্ঞানী গণের আবিস্কার, মানুষের ধর্মবোধ এবং যে সকল মূল্যবোধ সমগ্র জীবন কে অর্থবহ করে তোলে। মানুষের ভাব প্রকাশের ভাষা, সামাজিক  রীতিনীতি, বিশ্বাস , ঐতিহাসিক নিদর্শন, নৃতত্ত্ব, গ্রন্থাগার এগুলো  সবই সংস্কৃতির অঙ্গ এবং অন্তর্ভুক্ত।

  এখানে আরও একটি বিষয়ের উপর জোর দেওয়া হয় যে এতে  যুবক যুবতীদের চরিত্র , আদর্শ ও মানসিকতা গঠনে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে সাহায্য করবে।


    পৃথিবীর সব জাতিগোষ্ঠীর  সাংস্কৃতিক চৈতন্যের মূলে ধর্মীয় প্রভাব অনস্বীকার্য। সুতরাং পৃথিবীর সকল দেশের কর্তব্য হলো ধর্ম ও চৈতন্য বিকাশে সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা। আমাদের দেশেও জনসাধারণের কাছে ধর্মীয় বিশ্বাস সংস্কৃতির অঙ্গ হিসেবে  পরিচিত। ধর্মীয় বিশ্বাস বহির্ভূত কোন সংস্কৃতি আমাদের দেশীয় সংস্কৃতি নয়।


       নবদ্বীপ এর প্রতিথযশা তান্ত্রিক কৃষ্ঞানন্দ আগমবীশ মহাশয়ের দ্বারাই বাংলায় কালীপুজোর প্রচলন ও প্রসার ঘটে । তাকে ই কালীপুজোর প্রবর্তক বলে  মনে করা হয়। তিনি ছিলেন  শ্রী চৈতন্য মহাপ্রভুর সমসাময়িক।  তিনি ১৬৬৮ সালে জন্মগ্রহণ করেন। ১৭০০খৃষ্টাব্দে তান্ত্রিক  শক্তির উৎস হিসেবে কালীপুজোর প্রচলন ঘটান । আপামর জনগণ কিন্তু খুব তাকে সাদরে গ্রহণ করেন নি।  তাকে বহু বেগ পেতে হয়।

 পরে যখন কালী পূজা দ্বারা শক্তির আরাধনা করা সম্ভব  লোককে বোঝাতে সমর্থ হন, তখন আস্তে আস্তে লোকে মেনে নেয় ।বহু সাধনা করে তার লেখা (তন্ত্র সার ) গ্রন্থ খানি কালীপুজোর সকল রকমের পূজার নিয়ম, রীতি, লিপিবদ্ধ করেন। এই গ্রন্থে আছে বিভিন্ন তন্ত্র বা পদ্ধতি। অষ্টাদশ সালের প্রথম থেকে নদীয়ার রাজা কৃষ্ণচন্দ্র মহারাজ এই পূজো কে জনপ্রিয় করে তুলতে বিশেষ ভাবে এগিয়ে আসেন।

      

       ‌দুই বাংলার বিভিন্ন স্থানে কালীপুজো উপলক্ষে মূর্তির বিভিন্ন রূপ আমাদের চোখে পড়ে। প্রায় ১৬থেকে ১৭রকমের বিভিন্ন চেহারার মূর্তির রূপ আমরা পূজিত হতে দেখি। কালীপুজো চালু হওয়ার প্রথম দিকে ব্যাক্তিগত উদ্যোগে বাড়িতে বাড়িতে আয়োজন করা হতো। ইদানিংকালে সার্বোজনীন রূপ নিয়েছে।ঝাঁ চকচকে প্যান্ডেল বেঁধে দেবীর পূজা উদযাপিত হচ্ছে। নানা রকম আলোর রোশনাই আর বাজি ফাটানোর প্রতিযোগিতা চলছে যেন। ভক্তদের বিশ্বাস কালীপুজোর মধ্যদিয়ে সকল অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো সম্ভব। আশ্বিনের দূর্গা পূজার রেশ কাটতে না কাটতেই ঘোর অমাবশ্যায় বরাভয় মূর্তিতে আবির্ভূত হন মা কালী। দূর্গা পূজা অনুষ্ঠিত হয় বছরে একবার কিন্তু কালীপুজো বছরের প্রতিটি দিন অনুষ্ঠিত হয়।


      ভক্তদের বিশ্বাস কালীপুজোর মধ্যদিয়ে সকল অশুভ শক্তিকে পরাজিত করা সম্ভব। হিংস্রতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতেই নাকি দেবীর এই রুদ্র মূর্তি। আমরা যেন মায়ের এই রুদ্র মূর্তি দেখে অনুমান করে নিই মা আমাদের দুর্বল নয়। প্রয়োজন পড়লে মা রুদ্র হতে পিছপা হননা। খড়্গ হাতে হিংসা ও অপশাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে তিনি বদ্ধপরিকর। আমরা যেন সুন্দরের পূজা করি। অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে দাঁড়াতে পারি। ভগবানে বিশ্বাস ও শক্তির আরাধনা প্রতিষ্ঠা  করতেই  কালীপুজোর প্রচলন হয়েছিল প্রথমে বাংলায়,পরে সারা ভারত তথা পৃথিবীময়। দেবীর আরাধনা চলছে রীতি অনুযায়ী যেখানে যেমন ভাবে পূর্বপুরুষেরা করে এসেছিলেন।


        বিভিন্ন স্থানে কালীপুজোর রীতিনীতি আলাদা আলাদা। এতে তেমন কোন বিরোধ নেই । তারা  যেমন খুশি ইচ্ছে মতন দেবী মূর্তি তৈরি করে আরাধনা করে চলেছেন । এতে দেবী রুষ্ট হন না । পুরাতন ধর্ম বিশ্বাস কে আঁকড়ে ধরে বৈতরণী পার হতে চাইছে সব। ভেবে দেখেনা কোনটি সঠিক পদক্ষেপ কোনটি নয়। তবে বিভিন্ন স্থানে কালীপুজোর পূজা পদ্ধতি ও উৎসবের আচার আচরণ সম্পুর্ণ আলাদা। শ্মশানে মশানে, নির্জনে ,নির্জন প্রান্তরে, গভীর জঙ্গলে  মূর্তি স্থাপন করে চলে পূজার আয়োজন। আদিবাসী,শুদ্র সম্প্রদায়, ঘোষেরা উদ্ভট রকমের রীতিনীতি মেনে পূজা করে। শ্মশান কালী,ডাকাত কালী প্রভৃতি রূপে ও  তিনি পূজিত হন । বিচিত্র সব মানুষের বিচিত্র  আকাঙ্ক্ষার প্রকাশ আমরা লক্ষ্য করি।

   বিভিন্ন স্থানে কালীপুজোর রীতিনীতি আলাদা বলে বিচিত্র সব উৎসবের ঢং। এমনই এক বিচিত্র ঢংএর লীলা আমরা দেখি মুর্শিদাবাদ জেলার সাগর দীঘি থানার মোরগ্রাম অঞ্চলের অধীন মোরগ্রাম গ্রামে। এখানে বসবাস রত ঘোষেরা এই বিচিত্র উৎসব উদযাপন করে। কালী পূজার পরের দিন বড়ো জলাশয়ের  পাড়ে জমায়েত হয় । সামিল হয় সব বয়সের ছেলেমেয়েরা। বেশিরভাগ লোক বাড়িতে তৈরি বিশেষ ধরনের  চোলায় মদ খায়। মেয়েদেরকে এই মদ বানাতে  বাধ্য করা হয় নাকি । এখন অবশ্য সব মেয়েরা মেনে নিয়েছে। ইদানিং কেনা মদের প্রচলন লক্ষ্য করা যায়।

  দলে দলে দেখতে আসে আশেপাশের গ্রামের লোক। গ্রামের আবালবৃদ্ধবনিতা জড়ো হয়  সূর্য ডোবার ঘন্টা দুয়েক আগে  । সব ঘোষেরা জড়ো হয় রঙিন নেশায় বিভোর হয়ে।। সঙ্গে নিয়ে আসে গোয়ালের সবচেয়ে হৃষ্টপুষ্ট পাঁড়া মহিষটা কে। সারা শরীরে তার মাখানো হয় সরষের তেল, সিং দুটিকে সিঁদুর দিয়ে রাঙিয়ে দেওয়া হয়। বীভৎস  চেহারার  করে সাজানো হয় তাকে । বেঁধে দেওয়া হয় লাল ফিতা। দীঘির চার পাশে ফুটতে থাকে নানা ধরনের বাজী। আকাশ বাতাস ভারী হয়ে ওঠে পটকা ফাটানোর ধোঁয়ায়। হেমন্তের কুয়াশা ও  আতসবাজির ধোঁয়ায় সৃষ্টি হয়  মায়াবী পরিবেশ। দূরদূরান্ত থেকে আসা লোকজনের ভিড়ে উৎসবের  পরিবেশ হয়ে ওঠে গুরুগম্ভীর ।যারা উৎসবের কেন্দ্র বিন্দু তারা সবাই রঙিন নেশায় থাকে বিভোর । সবাই উৎসুক হয়ে তাকিয়ে থাকে কখন ঢুকবে তারা। যাদের দেখার জন্য ভীড় করেছে আপামর জনসাধারণ।

       ঘোষেদের তিনি মোড়ল তাঁর কাছে থাকে চাঁদা করে কেনা হৃষ্টপুষ্ট শূকর।  শুকরের গলায় বাঁধা থাকে লাল ফিতা। ফুলের মালা পড়িয়ে সাজানো হয় তাকে। সাজানো মানে বলি দেওয়া  হবে যে  শুকরটিকে  তাকে ছেড়ে দেওয়া হয় মাঝে । তেজালো  পাঁড়া মহিষ তাড়া করে মারতে চেষ্টা করে শুকরটাকে। মত্ত জনেরা লাঠি নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে  যাতে পালাতে না পারে। এভাবে চলতে থাকে মহিষ আর শুকরের অসম  লড়াই। একজন পরাণ বাঁচাতে মরিয়া হয়ে  আর্তনাদে ভারিক্কি করে তোলে আকাশ। একদিকে মত্ত মহিষের উল্লাস । লোকে মজা করে উপভোগ করে সেই দৃশ্য।  প্রাণ হারানোর ভয়ে সন্ত্রস্ত শুকরের ছটফটানি। অবশেষে মরণকে স্বীকার করে নিতে হয় শুকরটীকে।

 এরপর শুকরটিকে বলি দিয়ে পাড়ার সকলকে মাংস বিলি করে দেওয়া হয়।

এই প্রথা এখানে বেশ মজা করে উপভোগ করে।

-------------- 

 

১৫/১১/২০২০


আবদুস সালাম প্রয়াস শ্রীকান্ত বাটি মাদারল্যান্ড ডাক রঘুনাথ গঞ্জ মুর্শিদাবাদ ৭৪২২২৫

৯৭৩৪৩৩২৬৫৬






         




কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন