google-site-verification=aFCzFTmuVjPqPlrdWXeJSj2r_EMig_cypLnlmiUQpw0 re দাঁইহাটের রাস উৎসব ।। অসিত কুমার পাল ।। - নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

Breaking

নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

NABAPRAVAT : A Monthly Bengali Literary Blogzine.

বুধবার, ১৮ নভেম্বর, ২০২০

দাঁইহাটের রাস উৎসব ।। অসিত কুমার পাল ।।



দাঁইহাটের রাস উৎসব


  অসিত কুমার পাল

আমি চাকরিসূত্রে  প্রায় এক যুগ সময় বর্তমান পূর্ব বর্ধমান জেলার কাটোয়া মহকুমার অন্তর্গত খুব ছোট একটা শহরে কাটিয়েছিলাম ।  ব্যান্ডেল আজিমগঞ্জ রেল পথের ধারে  অবস্থিত এই শহরটির নাম দাঁইহাট , যেটা নাকি এই  রাজ্যের দ্বিতীয় প্রাচীনতম পুরসভা ।  ভাগীরথী নদী তীরে অবস্থিত দাঁইহাট শহরকে আলাদা পরিচিতি দিয়েছে তার রাস উৎসব ।   আমরা অনেকেই জানি  কোচবিহার , নবদ্বীপ এবং শান্তিপুরে রাস উৎসব খুবই বিখ্যাত , কিন্তু  জাঁকজমক ও স্থানীয় মানুষের উৎসাহের দিক থেকে  বিচার করলে তাদের থেকে কোনও অংশেই কম নয় ছোট এই শহরের রাসযাত্রা ।

 দাঁইহাটে বেশ কয়েকটি দুর্গা পূজা হলেও সেটার আকর্ষণ তত বেশি নয় , কারন দাঁইহাটের প্রধান আকর্ষণ হল রাস উৎসব ।  দুর্গাপূজার পরেপরেই শহরবাসী রাস উৎসবের প্রস্তুতি শুরু করে দেয় । প্রতি বছরে অগ্রহায়ণ মাসে রাসপূর্ণিমা উপলক্ষ্যে দাঁইহাটের  এই শহরের অলিগলিতে অন্তঃত পঞ্চাশটি পূজা অনুষ্ঠিত হয় ।  আশপাশের এলাকা থেকে   আগত লক্ষাধিক মানুষের অংশগ্রহনে  দু দিনের এই উৎসবটি প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে । চন্দননগরের শিল্পীদের দিয়ে পূজা প্যান্ডেলগুলির  আলোকসজ্জা করা হয় । রাধা ও কৃষ্ণের রাসলীলাকে উপলক্ষ্য করে এই  উৎসব পালিত হলেও  দাঁইহাটের রাস উৎসবে  কালী  গনেশজননী কার্তিক ইত্যদি নানা দেবদেবীর পূজাও হয়ে থাকে ।

 দিনের বেলায়  পুজো অর্চনা হলেও সন্ধ্যের পরে অন্তঃত ত্রিশটি ঠাকুরের শোভাযাত্রা শহরের বিভিন্ন রাস্তা  পরিক্রমা করে । বাদ্যযন্ত্রের বিকট আওয়াজ ও  রঙিন আলোর ঝলকানি সহকারে সেই শোভাযাত্রা প্রত্যক্ষ করার জন্য সংকীর্ন রাস্তার দুপাশে সারিবদ্ধ ভাবে লক্ষাধিক মানুষ হাজির থাকে ।   মেলা উপলক্ষ্যে বিভিন্ন খোলা জায়গায়  নানা রকমের খেলনা  ও খাদ্যদ্রব্যের দোকান সহ মেলা বসে । মেলার শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখতে প্রশাসনের তরফ থেকে নানা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় ।  মেলা উপলক্ষ্যে কাটোয়া ও নবদ্বীপের মধ্যে বেশ কয়েকটি বিশেষ ট্রেনও চালানো হয় ।

 স্থানীয় মানুষের মতে  দাঁইহাটের রাস উৎসব নাকি ৫০০ বছর পুরনো । এই শহরের রাস এত পরিচিতি লাভ করেছে কেন এই প্রশ্নের জবাবে তারা বলেন  ইতিহাসবিদ গন বলেন - ভাগীরথীর তীরে  এই এলাকা একসময়ে  জঙ্গলাকীর্ন ছিল । অনুমানিক ৭০০-৮০০ বছর আগে এখানে শক্তির সাধনা সাধনা শুরু হয়েছিল ।   তখন  অন্যান্য এলাকা থেকে  তন্ত্রসাধক গন এসে তাদের সাধনা শুরু করেছিলেন ।  শোনা যায়  শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু  সন্ন্যাস গ্রহণের উদ্দেশ্যে  নবদ্বীপ থেকে  কাটোয়া যাওয়ার পথে দাঁইহাটের এসেছিলেন । তার পরেই এখানে বৈষ্ণব ধর্মের প্রসার ঘটে  । দাঁইহাট হয়ে ওঠে শাক্ত ঔ বৈষ্ণব ধর্মের মিলনক্ষেত্র ।  এরই ফলশ্রুতিতে দাঁইহাটে রাশ উৎসবের প্রচলন হয় । পরবর্তী কালে এখানে রাসের  নানা বিবর্তন ঘটেছে , পাশাপাশি পুজোর সংখ্যাও বেড়েছে । 

 প্রথমদিকে দাঁইহাটের রাস ছিল পট চিত্রের পূজা । পরে শাক্তধর্মের প্রভাবে এখানে   রাস উপলক্ষ্যে  মা শবশিব, মা বড় কালী, উগ্রচণ্ডী এই সব জাগ্রত দেবীর আরাধনাও  শুরু হয় । বর্তমানে এদের পাশাপাশি কৃষ্ণ কালী, রাইরাজা, বকাসুর বধ, মাতঙ্গীমাতা প্রভৃতি পুজো দাঁইহাটে   বেশ পরিচিতি লাভ করেছে ।  ইদানীগ দাঁইহাটের   রাস উৎসবের বাজেট ও জাঁকজমক বহুগুণ বেড়ে গ্যছে। 
------------- 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন