Featured Post

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮৪তম সংখ্যা ।। ফাল্গুন ১৪৩১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

ছবি
  এই সংখ্যায় একটি গ্রন্থ আলোচনা ও একটি ধারাবাহিক রচনা ছাড়া সব লেখাই ভাষা দিবস, মাতৃভাষা, ভাষাচেতনা ও ভাষা সমস্যা বিষয়ক রচনা। লেখাগুলি এই সংখ্যাকে অনেকটাই সমৃদ্ধ করেছে। পড়ুন। শেয়ার করুন। মতামত জানান। লেখকগণ নিজের নিজের লেখার লিঙ্ক শেয়ার করুন যতখুশি, যে মাধ্যমে খুশি। কিন্তু স্ক্রিনশট শেয়ার নৈব নৈব চ!  অন্য বিষয়ের লেখাগুলি আগামী সংখ্যার জন্য রইল।  সকলকে ধন্যবাদ, অভিনন্দন। ভালো থাকুন।   --সম্পাদক, নবপ্রভাত। ==  সূ  চি  প  ত্র  == প্রবন্ধ-নিবন্ধ অমর ২১শে ফেব্রুয়ারি বাঙ্গালীর বাংলা ভাষা দুর্জয় দিবস।। বটু কৃষ্ণ হালদার ভাষা শহীদদের পঁচাত্তর বছর।। অনিন্দ্য পাল একুশে ফেব্রুয়ারি : বাঙালির শ্রেষ্ঠ অশ্রুবিন্দু।। জীবনকুমার সরকার কবিগানের সাহিত্যিক ও সমাজতাত্ত্বিক মূল্য।। বারিদ বরন গুপ্ত বিপন্ন মাতৃভাষা ও সংস্কৃতি।। শ্যামল হুদাতী মায়ের দুধ আর মাতৃভাষা।। প্রদীপ কুমার দে একুশে ফেব্রুয়ারি : কিছু কথা।। বনশ্রী গোপ বাংলায় কথা বাংলায় কাজ।। চন্দন দাশগুপ্ত বিপন্ন মাতৃভাষা ও তার মুক্তির পথ।। মিঠুন মুখার্জী. হে অমর একুশে, তোমায় ভুলিনি, ভুলব না।। মহম্মদ মফিজুল ইসলা...

টুসু পরব ।। কানুরঞ্জন চট্টোপাধ্যায়


                                        


                                  টুসু পরব

                                   কানুরঞ্জন চট্টোপাধ্যায়

 

এমন জাড় ভাই দেখি নাই আগে/ গেল বুড়া বুড়ির দাঁত লাইগে/ টুসু হামার জাড়ের গ্যাঁদাফুল/ মকর সিনান করে বাঁধব চুল।

পুরুলিয়া অঞ্চলে টুসু উৎসবের সময় প্রচন্ড শীতের পরিপ্রেক্ষিতে হাসি ঠাট্টায় রচনা করা এমন গান। এখানে জাড় মানে শীত। টুসু প্রধানতঃ জঙ্গলমহলের উৎসব- মহামিলনের পরব। পশ্চিমবঙ্গের পুরুলিয়া,  বাঁকুড়া, ঝাড়গ্রাম, পশ্চিম মেদিনীপুর, পশ্চিম বর্দ্ধমানের আসানসোল মহকুমার কিছু অংশ এবং ঝাড়খন্ডের সাঁওতাল পরগনা, ধানবাদ, রাঁচী এবং হাজারীবাগ- এই সমস্ত অঞ্চলগুলিতে সাধারনত টুসু পরব পালন করা হয়। এই উৎসবকে ঘিরে জড়িয়ে রয়েছে জঙ্গল মহলের লোকসংস্কৃতি, যার নামও টুসু।

টুসু উৎসব শুরু হয় অগ্রহায়ন মাসের শেষ দিনে আর শেষ হয় পৌষ সংক্রান্তি বা মকর সংক্রান্তির পুন্য লগ্নে। ধানের ক্ষেত থেকে এক গোছা নতুন আমন ধান মাথায় করে এনে খামারের পিঁড়িতে রেখে দেওয়া হয়। অগ্রহায়ন মাসের সংক্রান্তির সন্ধ্যেবেলায় গ্রামের কুমারী মেয়েরা একটি পাত্রে চালের গুঁড়ো লাগিয়ে তাতে তুষ রাখে। তারপর তুষের ওপর ধান, কাড়ুলি বাছুরের গোবরের মন্ড, দূর্বা ঘাস, আলো চাল, আকন্দ, বাসক ফুল,কাচ ফুল, গাঁদা ফুলের মালা প্রভৃতি রেখে পাত্রটির গায়ে হলুদ রঙের টিপ লাগিয়ে  পাত্রটিকে পিঁড়ি বা কুলুঙ্গীর ওপর রেখে স্থাপন করা হয়। এই পুরো আয়োজন প্রতিদিন সন্ধ্যার পর টুসু দেবী হিসাবে পূজিত হন। পৌষ মাসের প্রতি সন্ধ্যেবেলায় কুমারী মেয়েরা দলবদ্ধ হয়ে টুসু দেবীর নিকট তাদের ব্যক্তিগত ও সামাজিক অভিজ্ঞতা সুর করে নিবেদন করে আর দেবীর উদ্দেশ্যে চিঁড়ে, গুড়, বাতাসা, মুড়ি, ছোলা ইত্যাদি ভোগ হিসাবে নিবেদন করেঝাড়খন্ড আর পুরুলিয়া জেলায় অধিকাংশ স্থানে পুরাতন প্রথা অনুযায়ী কোন মূর্তির প্রচলন নেই। কিন্তু পুরুলিয়া আর বাঁকুড়ার কিছু অংশে মূর্তির প্রচলন আছে। বিভিন্ন ভঙ্গীতে অশ্ব বাহিনী বা ময়ূর বাহিনী মূর্তিগুলোর গায়ের রঙ হলুদ বর্ণের ও শাড়ি নীল রঙের হয়ে থাকে। মূর্তির হাতে কখনো শঙ্খ, কখনো পদ্ম, কখনো পাতা বা কখনো বরাভয় মুদ্রা দেখা যায়।

টুসু উৎসবে পালনের সময় পৌষ মাসের শেষ চারদিন চাঁউড়ি, বাঁউড়ি, মকর এবং আখান নামে পরিচিত। চাঁউড়ির দিন বাড়ির মেয়েরা গোবর দিয়ে উঠোন পরিষ্কার করে চালের গুঁড়ি তৈরি করে। বাঁউড়ির দিন সেই চালের গুঁড়ি দিয়ে ক্ষীর, নারকেল বা গুড়ের পুর দিয়ে নানান আকৃতির পিঠে তৈরি করা হয়। বাঁউড়ির দিন রাত থেকে টুসুর জাগরন শুরু হয়। মেয়েরা ঘর আলো, মালা আর ফুল দিয়ে সাজায়। বাঁউড়িতে টুসুর ভোগ হিসাবে মুড়ি,জিলিপি, মিষ্টি, ছোলাভাজা, মটরভাজা ইত্যাদি নিবেদন করা হয়। মকরের ভোরবেলায় মেয়েরা দলবদ্ধভাবে গান গাইতে গাইতে টুসু দেবীকে বাঁশ বা কাঠের তৈরি রঙ্গীন কাগজে সজ্জিত চৌডল বা চতুর্দ্দোলায় বসিয়ে নদী বা পুকুরে নিয়ে যান এবং বিসর্জন করেন। এরপর মেয়েরা স্নান করে নতুন বস্ত্র পড়েন। ছেলেরা খড়, কাঠ বা পাটকাঠি দিয়ে ম্যাড়াঘর বানিয়ে তাতে আগুন লাগায়।



টুসু শব্দটির উদ্ভব সর্ম্পকে মতভেদ আছে ধানের তুষ থেকে 'টুসু' শব্দটির উৎপত্তি বলে অনেকে মনে করেন। পশ্চিমবঙ্গের কয়েকটি স্থানে প্রচলিত পৌষালি উৎসব ' তুষতুষালির ব্রতকথা'র মধ্যে এ মতের সমর্থন পাওয়া যায়। কেও কেও মনে করেন তিষ্যা বা পুষ্যা নক্ষত্র থেকে অথবা ঊষা থেকে টুসু শব্দটি এসেছে।

টুসু উৎসবের অন্যতম আকর্ষন টুসু সঙ্গীতএই সঙ্গীতের মূল বিষয় লৌকিক ও দেহগত প্রেম। কুমারী মেয়ে ও বিবাহিত নারীরা তাদের সাংসারিক সুখ দুঃখকে এই সঙ্গীতের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলেটুসু কারো কাছে মা, কারো কাছে প্রেমিকা বা ঠাকুমা। অনেক টুসু গানই বেশ জনপ্রিয়। এমন একটি গান হল-

"টুসু আমার মা যা চাইবি চা/ টুসু আমার মা দেবী মা শুধু দেয় কিছু নেয় না/ টুসু আমার ঠাকুর মা, সর্বদা অন্যনা/ টুসু আমার মেয়ে সুন্দরী সবার চেয়ে/ টুসু আমার ভালোবাসা, মেটে না কভু আশা/ টুসু আমার টুসুধ্বনী, সর্বগুনে গুনমনী"

গানের মধ্যে কলহ,ঈর্ষা, দ্বেষ,ঘৃনা স্পষ্ট ভাষায় ব্যক্ত করা হয়।এছাড়া, সমকালীন রাজনীতির কথা গানে প্রভাব বিস্তার করে। এই সমস্ত গানে পনপ্রথার বিরুদ্ধে প্রচার, সাক্ষরতা অভিযান,বধূ নির্যাতনের বিরোধিতা প্রভৃতি সামাজিক দায়িত্ত্বের কথাও বলা হয়।

টুসু এখন আর শুধু কুরমি, মাহাতোদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। টুসু এখন সর্বজনের। টুসুর প্রতীক চৌডল এখন আর গ্রাম বাংলায় আটকে নেই, শহরের সাজানো গোছানো ড্রইংরুমেও শোভা পাচ্ছে। এমনকি, বড় বড় শপিং মলেও মিলছে চৌডল। টুসু গান ও নাচ ইউটিউব চ্যানেলগুলোতে রীতিমতো জনপ্রিয়।

:::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::

তথ্যঋণ: উইকিপিডিয়া, বাঙ্গলাপিডিয়া এবং প্রবন্ধ টুসু উৎসব, লেখিকা অঞ্জলিকা মুখোপাধ্যায়। চিত্রঋণ: আন্তর্জালে

 ***************************

কানুরঞ্জন চট্টোপাধ্যায়

রাজগঞ্জ মসজিদ, বর্দ্ধমান

যোগাযোগ- ৯১২৬৫৭৩০১০

 

 

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় লেখা

প্রবন্ধ ।। লুপ্ত ও লুপ্তপ্রায় গ্রামীণ জীবিকা ।। শ্রীজিৎ জানা

লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি : মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা ২০২৫

প্রচ্ছদ।। ৮৩তম সংখ্যা ।। মাঘ ১৪৩১ জানুয়ারি ২০২৫ ।। প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮১তম সংখ্যা ।। অগ্রহায়ণ ১৪৩১ নভেম্বর ২০২৪

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮২তম সংখ্যা ।। পৌষ ১৪৩১ ডিসেম্বর ২০২৪

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮৪তম সংখ্যা ।। ফাল্গুন ১৪৩১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৭৯তম সংখ্যা ।। আশ্বিন ১৪৩১ সেপ্টেম্বর ২০২৪

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮০তম সংখ্যা ।। কার্তিক ১৪৩১ অক্টোবর ২০২৪

সাহিত্যের মাটিতে এক বীজ : "ত্রয়ী কাব্য" -- সুনন্দ মন্ডল

উৎসবের সৌন্দর্য: সেকালে ও একালে।। সৌরভ পুরকাইত