দীপাবলির এখন তখন
সুব্রত দাস
দুর্গা পুজো শেষ হলো কী, সাথে সাথেই শুরু হয়ে যেত দীপাবলির প্রস্তুতি। আমাদের ছেলেবেলায় এলিডি তো দূর অস্ত, সাধারণ টুনি লাইট দিয়ে আলোকিত করবার প্রতিযোগিতাও ছিল না। যেমনটি এখন দেখা যায়।
বাড়ির মহিলারা এক আশ্চর্য উৎসাহে লেগে পড়তেন মাটির প্রদীপ বানাতে। বাড়ির কাছেই রয়েছে গঙ্গা নদী। তার পাড় থেকে পলি মাটি এনে বানানো হতো দীপাবলির প্রদীপ। কোনো কোনো বাড়িতে অবশ্য আকাশবাতির আয়োজনও থাকত। আর এখন ! মানুষের কাছে এত কিছু করবার সময় কোথায় ? চটজলদি বাজার থেকে কিনে আনা হয় প্রদীপ (সংখ্যায় অবশ্য খুবই কম), মোমবাতি, রকমারি টুনি লাইট ইত্যাদি।
দীপাবলির আরেকটি মজাদার ব্যাপার হলো চোদ্দশাক। আমরা বাড়ির চুনোপুঁটিরা ছিলাম একাই একশো ! বড়দের সাথে রীতিমতো পাল্লা দিয়ে চোদ্দশাক জোগাড় করতাম। বলা বাহুল্য, প্রতিবার অন্তত এই বিভাগটিতে ছোটদেরই জয় হতো। এখন তো বাজার থেকে কিনে আনা হয়। এদিক সেদিক ঘুরে যখন শাক নিয়ে বাড়ি ফিরতাম রীতিমতো হই হুল্লোড় পড়ে যেত আমাদের নিয়ে। এখনকার ছেলেপুলেরা চোদ্দ তো দূর অস্ত, ছয়খানা শাকের নাম বলতে গেলে বই বা মোবাইলের সাহায্য নিতে হবে। মোটামুটি হাতের কাছে মে কয়েকটি শাক পাওয়া যেত তার সংখ্যা কিন্তু কম নয়। পুই, পালং, নিম, কুমড়ো, মূলো, ছোলা, কলমি, নটে, বেতো। এর মধ্যে শুষনি, গুনঞ্চ, সরষে, হেলেঞ্চা শাক গুলো পেতে একটু বেগ পেতে হতো ! তবুও জয়ের শেষ হাসিটা আমরা ছোটরাই হাসতাম।
সবশেষে আসি বাজির কথায়। এই একটি ব্যাপারে ছোট বড় সবার সমান উৎসাহ, যা আগেও ছিল, এখনো আছে, ভবিষ্যতে হয়তো থাকতেও পারে। অবশ্য এখন রেডিমেড বাজির বাজিমাত চলে। মানে হবই বাজার থেকে কেনা।
সেই সময় ছিলো অন্যরকম। আমরা ছেলে ছোকরার দল এক এক দাদা, কাকা বা জেঠুর লেজুর হয়ে থাকতাম। কুল, বেল, আকন্দ গাছের কাঠ জোগাড় করে, সেগুলোকে পুড়িয়ে মজুত করে রাখতাম। সেই কাঠকয়লা হামানদিস্তায় গুঁড়ো করে কাপড়ের ছাঁকনি দিয়ে ছেঁকে মশলা বানানো হতো। তারপর বড়রা ওর মধ্যে গন্ধক সোডা আর কী কী মিশিয়ে বাজির মললা তৈরি হতো। তুবড়ি, ফুলঝুরি আর এক আশ্চর্য দুষ্টু বাজি - "ছুঁচোবাজি" !,
বড়রা আবশ্য এই ছুঁচোবাজি আমাদের হাতে দিত না। কারণ এই বাজিতে আগুন দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এক দ্রুত ও অদ্ভুদ কায়দায় ছাড়তে হতো। এর অন্যথা হলেই বিপদ। যার তার ঘরে ঢুকে যেত ! এখনকার মতো এত রকমারি বাজির সঙ্গে তখন আমাদের অত পরিচিত ছিলো না। ফুলঝুরি, তুবড়ি, ছুচোবাজি ছাড়া কিনতে পাওয়া যেত চকোলেট বোম, রকেট, কালিপটকা, দোদমা। এই বাজি তৈরির কারিগর ছিলো না যে!
---------------------------------------------------------------
সুব্রত দাস,
কেশবপল্লী, ৩২/১, গোবিন্দ সেন রোড, গরিফা,
পোঃ রামঘাট, সূচকঃ ৭৪৩১৬৬, উওর ২৪ পরগণা, চলভাষ ও হোয়াটসঅ্যাপঃ
৯৩৩০৬২৭৪৩৮,
-----------------------------------------------------------------
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন