Featured Post
উৎসব ও আমরা ।। শেফালী সর
- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
উৎসব ও আমরা
শেফালী সরআমরা মানুষেরা তো যান্ত্রিক জীব নয়। একঘেয়েমি জীবন থেকে মুক্তি পেতে আমাদের জীবনে উৎসবের প্রয়োজনীয়তা অবশ্যই উপলব্ধি করি। উৎসবের মূল উৎস হলো প্রাচীন গ্রাম বাংলা। আমাদের গ্রাম বাংলার উৎসব সাধারনত কোনো না কোনো ধর্মকে কেন্দ্র করেই হয়। উৎসবে হৃদয়ের স্বতঃস্ফূর্ততার প্রকাশ হয়। আমাদের বাংলার ঘরে ঘরে বারোমাসে তেরো পার্বণ তো লেগেই আছে। হোলি অর্থাৎ বসন্ত উৎসব, জন্মাষ্টমী, নবান্ন,গাজন, ঈদ মহরম,গুডফ্রাইডে, বড়দিন, বৃক্ষ রোপন, বিবাহ উৎসব প্রভৃতি উৎসব তো আমাদের সমাজ-জীবনের অঙ্গ। আমাদের বাঙালি জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ উৎসব হলো দুর্গোৎসব ও আলোর উৎসব দীপাবলী।
উৎসব হল আমাদের মানব জীবনের আনন্দ মুখর অভিব্যক্তি। মানুষের উৎসব কবে? মানুষ যেদিন নিজের মনুষ্যত্বকে মর্যাদা দান করে। উৎসব আমাদের অন্তরের উচ্ছ্বাস। উৎসব হল আমাদের আনন্দ সঙ্গীত, প্রাণের প্রবাহ। আমাদের অনুভবে ধরা পড়ে প্রতিদিন মানুষ ক্ষুদ্র,দীন,একাকী-কিন্তু উৎসবের দিন বৃহৎ এবং মহৎ।
প্রাচীন বাংলায় উৎসব ছিল আন্তরিকতায় ও আত্মিকতার মোড়কে মোড়া। উৎসবের মধ্যে ছিল ব্যাপক সার্বজনীনতা।একের উৎসব হ'ত দলের উৎসব।দেনা পাওনা , হিসাব নিকাশের সম্বন্ধ ছিল গৌণ। নতুন পোশাক পরিচ্ছদ পরিধানের ধারা কিন্তু সেই উৎসবের প্রথম দিন থেকেই ছিল মা আজ ও প্রচলিত আমাদের মাঝে।
বর্তমানের উৎসবে আছে হুজুক প্রিয়তা ও উচ্ছৃঙ্খলতা। চাঁদার দাবিতে প্রাণ ওষ্ঠাগত। রুচিহীন নৃত্য গীতের উন্মাদনা।যাদের জীবনে ভক্তি নিষ্ঠার কোনো শুচিতা নেই তারাই উৎসবের পান্ডা।বিদ্যার সঙ্গে যাদের বিন্দুমাত্র যোগাযোগ নেই তারাই বিদ্যা দেবীর প্রধান উদ্যোক্তা। উৎসব কে ঘিরে সমাজ বিরোধীদের দৌরাত্ম্য তুঙ্গে। যারা চোরা কারবার ও কালোবাজারির সাথে যুক্ত তারা দেশের স্বাধীনতাকে করছে নিত্য কলঙ্কিত,তারাই আবার স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের প্রধান পুরোহিত। উৎসব স্বল্পবিত্ত মানুষের মনে আতঙ্কের সৃষ্টি করে।
আমাদের দেশের উৎসব সাধারনত চারভাগে বিভক্ত। ধর্মীয়, ঋতু, সামাজিক ও জাতীয় উৎসব। গণেশ চতুর্থী থেকেই শুরু উৎসবের মিছিল।দশহরা, রথযাত্রা,রাখী বন্ধন,মনসা , বিশ্বকর্মা, দুর্গোৎসব ও দীপাবলী, তারপর শুরু হয় জাতীয় উৎসব-স্বাধীনতা দিবস, প্রজাতন্ত্র দিবস,২৫শে বৈশাখ রবীন্দ্র জয়ন্তী,২৩শে জানুয়ারি সুভাষ চন্দ্র বসুর জন্মদিন ইত্যাদি উৎসব গুলির মধ্যে আছে জাতীয়তাবোধ ও সংহতি চেতনা।
একসময় উৎসবের স্রোতে যখন ভাঁটা পড়ে তখনই মনটা খোঁজে উৎসবের উৎস কোথায়? খুঁজতে খুঁজতে মনটা চলে যায় আদিম যুগের সেই প্রথম মানবীর কাছে যাদের রক্ত আমাদের শিরায় শিরায় প্রবাহিত। তাদের মিলনে যে আনন্দ উৎসারিত হয়েছিল তার থেকেই উৎসবের সৃষ্টি হয়েছে।তারা বুঝেছিল মিলনের আর এক নাম উৎসব। সেই উৎস থেকেই উৎসবের ধারা আজ পর্যন্ত বয়ে চলেছে। বর্তমানে উৎসবের রূপান্তর ঘটেছে। তাদের অনাড়ম্বর উৎসবে আন্তরিকতা ছিল প্রচুর পরিমাণে মা আজকের উৎসবে অন্তর্হিত।
----------------------:------------------
শেফালি সর, জনাদাড়ি, গোপীনাথপুর, পূর্ব মেদিনীপুর, ৭২১৬৩৩
- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন