Featured Post
গদ্য: বেপথু উৎসব ।। সঞ্জীব সেন
- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
"পথিক তুমি পথ হারাইয়াছ?"
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের কপালকুন্ডলা উপন্যাসের সময়কাল সপ্তাদশ শতক সেখানে দেখি নবকুমারকে সবাই ছেড়ে গেলে বনের ভিতর থেকে কপালকুন্ডলা ডাক দেয় "পথিক, তুমি পথ হারাইয়াছ?," শুধু নবকুমার নয় সে পথ আমরাও হারিয়েছি তা আজও খুজে পাইনি । সপ্তদশ শতকে সাহিত্যে তান্ত্রিকদের সুনজরে কেউ দেখেনি উনিশ শতকে বঙ্কিমবাবুর লেখনিতে তার প্রমাণ পাওয়া গেছে "তন্ত্র মাত্রই ভৌরবী চর্চার নামে অজাচার ।" আমার মনে হয় তার আর একটা কারণ হিসাবে দেখা যায় ,তখন মানুষ চৈতন্য প্রেমে আচ্ছন্ন । উপনিষদে কিন্তু মৃত্যুর পর অমরতার কথা লেখা আছে । যেভাবে মানুষ পুরোনো জামা ছেড়ে নতুন জামা পরে সেভাবে একটা শরীর অন্য একটা শরীর পায় । এভাবেই আত্মা হয়ে ওঠে অবিনাশী । নতুন শরীর পেতে নেমে আসে মর্তে । আবার চাঁদকে দেবতারা পান করতে করতে লুপ্ত হয় এবং অমাবস্যায় পুরো লোপ পায় । আবার দুদিন পর আবার ফিরে পায় । কোন কিছুর বিনাশ নেই । কপালকুণ্ডলা উপন্যাসের নবকুমার যখন বলিপ্রদত্ত। সন্ধ্যার আলোর এক নিরাভরণ রমণীদেহ কপালকুণ্ডলা আর ভৈরবীতান্ত্রিক । বলছে ভৌরবী পুজোয় তোমার মাংসপিন্ড অর্পিত হবে । তুমি সৌভাগ্যবান। কাপালিক নবকুমারকে বলি দিতে প্রস্তুত । পাঠক এইরকম খুনীসাধককে মেনে নিতে পারিনি। কপালকুল্ডলা তাকে মুক্ত করে দুজনাই পালিয়ে গেলে আর তান্ত্রিকও মোষের মত ধাওয়া করে মহিষাসুর হয়ে উঠল । এর থেকে বোঝা যায় সাহিত্যে তন্ত্রকে তখন কেউ সুনজরে দেখেনি । তবুও মানুষ শক্তিপুজোয় বিশ্বাসী হয়ে উঠল কারন হালিশহরের রামপ্রসাদ সেন থেকে দক্ষিনেশ্বরের রামকৃষ্ণদেব থেকে তারাপীঠের বামদেব এর মত মহাসাধকদের ভক্তিরসের কারণে। তাদের হাত ধরে মা-তারা মানে আদিশক্তি নিজেকে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করে । রামকৃষ্ণদেব তোতাপুরিকে বলত "ওই ল্যাংটার কাছে ব্রহ্মজ্ঞান শিখে এলাম ।" ব্রহ্মই সত্য জগৎ মিথ্যা । যারা নাস্তিক তারা এটিকে ইগনোর করে এগিয়ে যেতে পারেন। এই যে ভূতচতুর্দশীর দিন গোটা দেশ কালীকাশক্তির আরাধনা করছি সেই ভূত চতুর্দশীর ভূত আসলে কী! অশরীরী। ভূতপূর্ব। না পঞ্চভূত ক্ষিতি =অপ=তেজ =মরুৎ =ব্যোম। না অপ্রাসঙ্গিক একটা শব্দ বলে ছেড়ে দিতে হবে তবু আমরা কিন্তু ইগনোর করতে পারছি না ।
একটু ডিটেলে যাওয়া যাক। এই যে কার্তিকী চতুর্দশীর সন্ধ্যায় চৌদ্দ প্রদীপ দিচ্ছি । তা কিন্তু পঞ্চভূত দিয়ে তৈরী ঠিক যেন আমাদের শরীরস্বর্বস। মাটি দিয়ে তৈরী প্রদিপের কায়া, জলে তার আকার নিল আগুনে হয়ে উঠল প্রানবন্ত হাওয়া তাকে দিল আলোময়তা ।আশ্বাস আর মহাশূন্যে জেগে রইল তার আলোর খোলায় ।আবার ভূত শব্দের অর্থে ভূতপূর্বকে অস্বীকারও করতে পারি না । লোকবিশ্বাস বলে এই আলো অশুভ শক্তিকে দূরে রাখে আবার কেউ বিশ্বাস করে এই আলো ধরে পূর্বপুরুষেরা নেমে আসে তাদের পথ সুগম করতেই এই রীতি । এই যে এল ই ডি আলোর মালায় ভরে থাকে রাত্রি এই ক্যালচার বেশী দিনের নয়। আমরা ছোট বেলায় শুনে এসেছি এই দিনটা এক বিশেষ দিন এই দিনেই একমাত্র মৃতরা জীবিতদের দেখার সুযোগ পায় । শুধু আমাদের দেশে নয় ইউরোপ ক্যান্ট্রিতেও বিশেষ দিনে হ্যালোইনডে পালন করা হয় । । তন্ত্র কি শুধুই অজাচার পজেটিভ কি কিছু নেই? । কি ছিল যে সেই ভক্তিরসের ভিতর যার আকর্ষনে এন্ট্রনিফিরিঙ্গী এমন কালীসাধক হয়ে উঠল । একটা গানের কথা বলা যাক "। ঐহিকে লোক ভিন্ন ভিন্ন অন্তিমে সব একাঙ্গী । " এই গানের পর ব্রাহ্মণ্যবাদীরা চুপ করে গেলেন । এই গান কতটা প্রাসঙ্গিক এই সময়েও । রাজনৈতিক আর সামাজিক দিক থেকে । দীপান্বিতা অমাবস্যার রাতে এই আলোকমেলায় তুলে ধরছি এই ক্যালচার আমাদের আহৃত । কথিত আছে দ্বারকায় নরকাসুরকে বধ করেছিল কৃষ্ণ আর তার স্ত্রী সত্যভামা । নরকাসুরের শেষ ইচ্ছাতেই গোটা নগরী আলোয় সাজিয়ে তুলেছিল আবার কথিত আছে আজকের দিনে রাম বনবাস থেকে ফেরে তাই গোটা অযোধ্যা সাজিয়ে তুলেছিল । কিন্তু আমাদের দীপান্বিতার রাতের মাহাত্ম্য অন্য । জেনেও আমরা পথ হারালাম , বিস্মৃত হইলাম । ছোটবেলায় এইদিন রাতে কালিমন্দিরে যেতাম মা বরোমার হাত ধরে। তখন টুনি ছিল না এলইডি ছিল না প্রদীপ আর মোমবাতির আলোয় জেগে উঠত । মন্দিরের পুজারি ভরে পরত । কি করে মনের কথা জেনে যেত আর ভরের মধ্যে বিধান দিত যা আমি মায়ের কাছে নিবেদন করেছি মনে মনে ।আবার বলছি যারা অবিশ্বাসী তারা ইগনোর করতে পারেন ।বলতে পারেন তবে পজিটিভ কি কিছুই নেই !। অবিশ্বাসীরা তখনও ছিল আর এখনও আছে । পরিশেষে বলি রবি ঠাকুর বলেছিলেন আমরা শুধু বহন করিলাম বাহন করিতে পারলাম কী । কাজী নজরুল ইসলাম গান লিখেছিলেন মুলটি মায়ের মন্দিরে বসে"" আর কতকাল থাকবি বেটি মাটির ঢেলার মুর্তি আড়াল/ স্বর্গ যে আজ জয় করেছে অত্যাচারী শক্তি চাঁড়াল । কতটা প্রাসঙ্গিক আজকের দিনেও কিম্বা" শ্মশান কালীর নাম শুনে রে ভয় কে পায়? মা যে আমার শবের মাঝে শিব জাগায় " সব জেনেও পথ আমরা হারালাম বিস্মৃতও হলাম । কে দেখাবে সেই পথের দিশা, এমন হাত তো আর দেখি না ,,
সঞ্জীব সেন
পানিহাটী গৌরাঙ্গ ঘাট রোড
পোস্ট পানিহাটী
কলকাতা114
7980188285
- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন