Featured Post

লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি : মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা ২০২৫

ছবি
   মুদ্রিত  নবপ্রভাত  বইমেলা ২০২৫ সংখ্যার জন্য  লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি মুদ্রিত  নবপ্রভাত  বইমেলা ২০২৫ সংখ্যার জন্য  প্রবন্ধ-নিবন্ধ, মুক্তগদ্য, রম্যরচনা, ছোটগল্প, অণুগল্প, কবিতা ও ছড়া পাঠান।  যে-কোন বিষয়েই লেখা যাবে।  শব্দ বা লাইন সংখ্যার কোন বাঁধন  নেই। তবে ছোট লেখা পাঠানো ভালো (যেমন, কবিতা ১২-১৪ লাইনের মধ্যে, অণুগল্প কমবেশি ৩০০/৩৫০শব্দে)। তাতে অনেককেই সুযোগ দেওয়া যায়। সম্পূর্ণ অপ্রকাশিত লেখা পাঠাতে হবে। মনোনয়নের সুবিধার্থে একাধিক লেখা পাঠানো ভালো। তবে একই মেলেই দেবেন। একজন ব্যক্তি একান্ত প্রয়োজন ছাড়া একাধিক মেল করবেন না।  লেখা  মেলবডিতে টাইপ বা পেস্ট করে পাঠাবেন। word ফাইলে পাঠানো যেতে পারে। লেখার সঙ্গে দেবেন  নিজের নাম, ঠিকানা এবং ফোন ও whatsapp নম্বর। (ছবি দেওয়ার দরকার নেই।) ১) মেলের সাবজেক্ট লাইনে লিখবেন 'মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা সংখ্যা ২০২৫-এর জন্য'।  ২) বানানের দিকে বিশেষ নজর দেবেন। ৩) যতিচিহ্নের আগে স্পেস না দিয়ে পরে দেবেন। ৪) বিশেষ কোন চিহ্ন (যেমন @ # *) ব্যবহার করবেন না। ৫) লেখার নীচে একটি ঘোষণা দিন:  'লেখাটি স্বরচিত ও অপ্রকাশিত'। মেল আইডি :  printednabapravat@gm

ছোটগল্প ।। তুমি আসবে বলে ।। রণজিত হালদার


 

তুমি আসবে বলে

 

রণজিত হালদার 



"রিতু ,আরে রিতু নীচে আয় মা "। 
বার দুয়েক তিনি  ডাকলেন। 
খানিক পরে ছাদ থেকে  উত্তর এল "যাই মা "।
রাত দশটা বাজে। কল্যাণের বাবা আরাম করে বসে টিভি দেখছেন আর তার মা ,বসে বসে সজনে ডাঁটা কাটছেন। খানিক আগে বউমার সঙ্গে বসে   তিনি ডিসকভারি চ্যানেল দেখছিলেন। সিরিয়াল দেখতে রিতু বারণ করেছে ।ওতে নাকে সংসারে একে অন্যের মধ্যে বিশ্বাস আর ভালবাসায় চিড় ধরে । তাই তিনি ওসব দেখেন না ।
আবার তিনি ডাক দিলেন, " রিতু নীচে  নাম , তোর বাবার ক্ষিদে পেয়েছে , খেতে দিবি তো ।" 
আরও  মিনিট কুড়ি পর রিতু নিজেকে একটু গুছিয়ে নিয়ে , ভাল করে চোখে মুখে জল দিয়ে একতলায় এল। কল্যাণের সঙ্গে কথা তার শেষ হতে চায় না , সে কেমন ভিতরে ভিতরে উত্তেজিত হয়ে যায়।
শাশুড়ি বললেন, " কি রে খোকা কি বলল, কবে আসবে ? " 
" জানিনা" 
" তুই জানবি না,  কি আমি জানব! " 
" ছুটি পাচ্ছে  না , বলছে দোলে ছুটি পেলে এক সপ্তাহের জন্য আসবে " ।
বাবা মার একমাত্র সন্তান কল্যাণ।
উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করার পর বিএসএফ এ জয়েন  করে ।এখন  ত্রিপুরাতে পোস্টিং। 
রিতুর সঙ্গে কল্যাণের মাত্র  ছমাস হল  বিয়ে হয়েছে ।
না কোন প্রেম  টেম নয় , একেবারে দেখাশোনা করে বিয়ে।
রোজ  কল্যাণের  ফোন আসে । ফোনটা নিয়ে রিতু  একছুট্টে ছাদে চলে যায় ।
 " কেমন আছ, বাবা মা কেমন আছে .......... কত কথা!  ফোনে ফোনে  কত   ভালবাসা । কল্যাণ তাকে প্রচুর আদর করে।

ফোন এলে শাশুড়ি তাকে চট করে ডাকে না ,  সে ঘন্টার পর ঘন্টা কথা বলেই যায়। একসময় তার মর্জিমত ফোন রেখে , অনেকক্ষন বালিশটাকে বুকে  চেপে ধরে সে শুয়ে থাকে ।
তারপর  একতলায় নামে ।
ভাগ্য করে রিতু শাশুড়ি পেয়েছে ।অবশ্য রিতু তাকে মা ছাড়া অন্য কিছু ভাবে না বা ভাবতেও চায় না ।

রাতের খাবার পর সে দোতলার ঘরে চলে যায় ।বিয়ের পনের দিন পর কল্যাণ ডিউটি চলে যায়।প্রথম প্রথম মা তার ঘরে এসে থাকত,  গল্প বলত,  হাসাতো।নতুন  বউ কে না কি  একা একা থাকতে দিতে নেই  ।
মাস তিনেক হল  সে একাই থাকে ।  এখন তো সে এ বাড়ির মেয়ে ।তাই জোর করেই সে মাকে বাবার ঘরে পাঠিয়ে দিয়েছে।
দোলের আর দিন সাতেক বাকি । কল্যাণ যদি ছুটিটা পায় ,খুব খুব মজা হবে ।
খাওয়ার পর সবকিছু সিঙ্কে রেখে সে ওপরে চলে এসেছে । রাত হয়েছে  এবার  ঘুমের রাজ্যে যেতেই হবে । তার আগে ড্রেসিং টেবিলের ড্রয়ার টা টেনে সে কন্ট্রাসেপটিভ পিল টা হাতে নেয় । আজ পাঁচ তারিখ । মোটামুটি বারো তারিখ তার পিরিয়ডের ডেট। তখন তো ও এসে যাবে।না না  সে এই নোংরা অবস্থায় কল্যাণের আদর খেতে পারবে না । ফোনের নেট টা ওন  করে গুগল সার্চ ইঞ্জিনে লিখে ফেলল " হাউ টু মেক  পিরিয়ড কাম ফাস্টার।" 
রেজাল্ট গুলোর দু একটা চোখ বোলাতেই ব্যাপারটা তার কাছে পুরো  পরিষ্কার হয়ে গেল। নিজেকে   ছোট্ট এটা  স্ল্যাং  দিয়ে বলল " ধ্যাত এত সোজা !"

দিন দুই পরে মা বললেন, " কি রে রিতু , তোর  বাবা কাল অফিস যাবে না ,বাবার সঙ্গে  তুই পার্লারে যাবি  ? " 
" না মা , ওসব পার্লারে আর যাব না , তুমি আছো তো ।" 
" আমি কি সাজাব ? " 
" সাজানোর কি আছে , আমার কি পাত্রপক্ষ দেখতে আসবে ? 
কেন তোমার কি সময় কাটছে না না  মা ?"

" তা নয়,  তোকে নিয়ে সময় গুলো কিভাবে কেটে যাচ্ছে , বুঝতেই পারি না ।" 
" আমার যে আর কাটছে না মা , দোলের এখনও পাঁচ দিন বাকি ,
মনে হচ্ছে পাঁচ বছর ।শয়তান টা কবে আসবে ! বাবাকে বলো বেশি বেশি  করে রঙ আনতে । না না  , তুমি সব রঙের নাম বলতে পারবে না , আমি বলে দেব । এবার ফাটিয়ে রঙ খেলব সবাই কি বল মা  ।" 

ঠিক আছে বলিস , তবে কিন্ত এবার থেকে তোর মত বুড়ি কে  নিয়ে  আমি আর খেলতে  পারবো । এবার  বাড়িতে নতুন কাউকে আন ।" 
" নতুন মানে!"
" আমার কি নাতি - নাতনি হবে না ? " 
" প্লিজ মা আমি এখন কনসিভ করতে পারব না। " 
" না করার তো কিছু নেই ।সুকল্যাণ যখন আমার পেটে আসে আমার তো তখন সবে পনের বছর বয়স ।
তোর দিদি শাশুড়ি কি যে জ্বালাতো তোকে কি বলবো ।  কেউ একটু ছেলেটাকে ধরার ছিল না। ওই বয়সে আমি পারলে  তুই পারবি না কেন ?  আমরা থাকতে থাকতে বাচ্চাটাকে বড় করে নিবি না !  তোর তো কোন  দিকে খেয়াল থাকে না এখনও তোকে  খাওয়ার জন্য তাড়া দিতে হয় ।" 
" দিতে হয় তো হয় , আমি কি বলেছি নাকি ! " 
"তবেরে" বলে তিনি রিতুর কানটা পাকিয়ে দিলেন। তারপর বললেন " ঠিক আছে আমি খোকাকে বলব" 
" একদম না , মা একদম না  তোমার ছেলে আসুক আগে,  আমি যা ভাবার ভাববো।" 
"ঠিক বলছিস " 
"ঠিক "।

বিয়েতে পাওয়া একগাদা বেডশিট থেকে গোটা সাতেক সে আলাদা করে রেখেছে।ঘরের পর্দা গুলো পাল্টে দিয়েছে। মায়ের  হেল্প নিয়ে সিলিং ফ্যান টা পরিষ্কার করেছে । আলনা জুড়ে তার পছন্দের শাড়ি গুলো মেলে দিয়েছে। বেডরুমটা কেমন যেন আকাশ আকাশ মনে হচ্ছে।
কাল কল্যাণের সঙ্গে ফাইনাল কথা হয়ে গেছে ।আজ ডিউটি সেরে রাত আটটার ফ্লাইট ধরবে । সে বলেছে "এমন রঙ মাখাব না সারাজীবন উঠবে না ।" 
" আমিও পারি , একবার বাড়ি এস , বাবাকে দিয়ে বাঁদুরে রঙ আনিয়েছি।পুরো ভুত করে ছাড়ব।
" আর আমিও ভুত হয়ে তোমাকে এমন জায়গায় রঙ দেব , তুমি কাউকে বলতেই পারবে না "।
" এই তুমি আমাকে মলেস্ট করছো! " 
" ফাক ইওর মলেস্টেশান । আই হ্যাভ লাইসেন্স। " 
ইওর লাইসেন্স হ্যাজ নট বিন রিনিউড, ইট হ্যাজ এক্সপায়ারড।"   

" ঠিক  আছে বাড়িতে যেতে দাও শুধু ,তারপর দেখছি।"
  
 
আজ রাত্রে কল্যাণের আশার কথা।আনন্দ আর ভাললাগার পোশাক রিতু গায়ে মুড়িয়ে নিয়েছে । আকাশ রঙিন বিছানায় তার হারিয়ে যেতে ইচ্ছা করছে ।

বিকেল জুড়ে আকাশ টা কেমন মেঘ মেঘ  করেছে । পশ্চিমের জানালা টা খুলে রিতু দেখে টকটকে লাল সূর্য টা কেমন একটু একটু করে ডুবে যাচ্ছে । পুরোটা ডুবে যাওয়ার  আগেই সে সরে আসে । এখন তার সূর্যোদয় দেখার সময়। এদিকে, পুব  আকাশে পূর্ণিমার চাঁদ, বড় থালার মত । দুচোখে কাজল, কপালে টিপ, পায়ে আলতা , বাগান বাড়ি নূপুর আর গোলাপ রঙা শাড়িতে সে আজ অপরূপা। তার বুকে আজ রজনীগন্ধার সুবাস।  চাঁদ ও আজ তাকে দেখে  লজ্জা পাচ্ছে। সুকল্যাণ এলে তাকে চিনতেই পারবে না । 


ঘড়িতে রাত একটা । দু চারজনের  চাপা কথাবার্তায় বাড়ির পরিবেশ টা কেমন  ভয়ের ।অনেক আগে সারা বাড়ির সব আলো নিভে গেছে ।রাক্ষুসে চাঁদ   জোৎস্নার কালো রঙে বাড়িটা লেপে   দিয়েছে। তাকে কে বলল  যে সুকল্যাণ ল্যান্ড মাইন বিস্ফোরণে বীরগতি প্রাপ্ত হয়েছে।আকাশ বাতাস বিদীর্ণ করে সে বলতে পারছে না " মা গো ......."।
হাজারো কান্না রিতুর গলাটা টিপে ধরেছে । টেবিলের ওপর একরাশ রঙ। "কল্যাণ তুমি রঙ মাখাবে না ! "
-----------------
রণজিত হালদার 
গ্রাম+পোস্ট-রঙ্গিলাবাদ, থানা - উস্থি, জেলা- দক্ষিণ 24 পরগণা।
পিন- 743609

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় লেখা

প্রবন্ধ ।। লুপ্ত ও লুপ্তপ্রায় গ্রামীণ জীবিকা ।। শ্রীজিৎ জানা

মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা 2024 সংখ্যার জন্য লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি

সাহিত্যের মাটিতে এক বীজ : "ত্রয়ী কাব্য" -- সুনন্দ মন্ডল

কবিতা ।। বসন্তের কোকিল তুমি ।। বিচিত্র কুমার

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৭৯তম সংখ্যা ।। আশ্বিন ১৪৩১ সেপ্টেম্বর ২০২৪

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮০তম সংখ্যা ।। কার্তিক ১৪৩১ অক্টোবর ২০২৪

লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি : মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা ২০২৫

"নবপ্রভাত" ৩০তম বর্ষপূর্তি স্মারক সম্মাননার জন্য প্রকাশিত গ্রন্থ ও পত্রপত্রিকা আহ্বান

উৎসবের সৌন্দর্য: সেকালে ও একালে।। সৌরভ পুরকাইত

মুদ্রিত নবপ্রভাত উৎসব ২০২৩ সংখ্যার ডাউনলোড লিঙ্ক