Featured Post

লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি : মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা ২০২৫

ছবি
   মুদ্রিত  নবপ্রভাত  বইমেলা ২০২৫ সংখ্যার জন্য  লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি মুদ্রিত  নবপ্রভাত  বইমেলা ২০২৫ সংখ্যার জন্য  প্রবন্ধ-নিবন্ধ, মুক্তগদ্য, রম্যরচনা, ছোটগল্প, অণুগল্প, কবিতা ও ছড়া পাঠান।  যে-কোন বিষয়েই লেখা যাবে।  শব্দ বা লাইন সংখ্যার কোন বাঁধন  নেই। তবে ছোট লেখা পাঠানো ভালো (যেমন, কবিতা ১২-১৪ লাইনের মধ্যে, অণুগল্প কমবেশি ৩০০/৩৫০শব্দে)। তাতে অনেককেই সুযোগ দেওয়া যায়। সম্পূর্ণ অপ্রকাশিত লেখা পাঠাতে হবে। মনোনয়নের সুবিধার্থে একাধিক লেখা পাঠানো ভালো। তবে একই মেলেই দেবেন। একজন ব্যক্তি একান্ত প্রয়োজন ছাড়া একাধিক মেল করবেন না।  লেখা  মেলবডিতে টাইপ বা পেস্ট করে পাঠাবেন। word ফাইলে পাঠানো যেতে পারে। লেখার সঙ্গে দেবেন  নিজের নাম, ঠিকানা এবং ফোন ও whatsapp নম্বর। (ছবি দেওয়ার দরকার নেই।) ১) মেলের সাবজেক্ট লাইনে লিখবেন 'মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা সংখ্যা ২০২৫-এর জন্য'।  ২) বানানের দিকে বিশেষ নজর দেবেন। ৩) যতিচিহ্নের আগে স্পেস না দিয়ে পরে দেবেন। ৪) বিশেষ কোন চিহ্ন (যেমন @ # *) ব্যবহার করবেন না। ৫) লেখার নীচে একটি ঘোষণা দিন:  'লেখাটি স্বরচিত ও অপ্রকাশিত'। মেল আইডি :  printednabapravat@gm

গল্প ।। ঠগ ।। স্তুতি সরকার


 

 ঠগ
স্তুতি সরকার



            মিষ্টভাষী ধীর স্থির সুনীল বাবু যেখানে যান খুব জমিয়ে দেন আসর। আশেপাশে অনেক তোসামোদকারী স্তাবক জুটে যায়, এতো ওনার জনপ্রিয়তা। মাত্র কিছুদিন হলো এসেছেন এ পাড়ায় ভাড়াটে হিসাবে, বাবুদের বাড়ীর একতলার এঁদো একটাএক বেডরুমের ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে। অবশ্য একখানা বেডরুমের ঘর বলতে একখানাই শুধু ঘর নয়। ফাউ হিসাবে আছে দু'দিকে দুটো বারান্দা, একটা ছোট বসবার ঘর, রান্নাঘরের সঙ্গে লাগোয়া একচিলতে ডাইনিং রুম, বাথরুম পাইখানা সমেত কম্প্যাক্ট একটা ফ্ল্যাট। তবে বড়ো স্যাঁতস্যাঁতে ফ্ল্যাটটা। কী যেনো একটা ব্যবসা করেন তিনি। এহেন সুলীল বাবুর  পিছনেও আইবুড়ো মেয়েদের বাবা মা রা ফেউ লেগে গেলেন।কারণ তিনি আইবুড়ো। প্রত্যেক আইবুড়ো মেয়ের বাবা মা চাইছেন নিজের মেয়েটিকেগচাতে। আর কি আশ্চর্য, পাড়াতে এতো আইবুড়ো মেয়েও আছে! যাদের নিজেদের মেয়ে নেই, তাদেরও তুতো বোন, বোনঝি, ভাইঝির উত্পাত লেগেই রইলো। সুনীল বাবুর ডিমান্ড তো বেড়েই চলেছে পাত্র হিসেবে। বয়স অবশ্য একটু বেশীই হয়তো। সময়ে বিয়ে হলে চার ছেলের বাপ হয়ে যেতেন। এখনকার দিনে অবশ্য একাধিক সন্তান হয় না। তবুও। এর তার- প্রত্যেকেরই বাড়ীতে তাঁর নেমন্তন্ন লেগেই রইলো এবার। 

           মাঝে মাঝে সুনীল বাবু ব্যবসার কাজে বাইরে চলে যান। কখনও কয়েকদিনের মধ্যেই ফিরে আসেন, কখনও আবার বেশ দেরি হয় ফিরতে। তখন পাড়াতে মেয়েদের বাবা মায়েরা প্রমাদ গোনেন। এই বুঝি সুনীলবাবু বিয়ে করে একেবারে বৌ নিয়ে ফিরলেন। এবার সব মেয়েদের বাবা মায়েরা স্থির করলেন, এবারে সুনীলবাবু ফিরলেই নিজের মেয়ের সঙ্গে বিয়ের প্রস্তাবটা পাকা করে ফেলবেন। যেমন ভাবা তেমনই কাজ। প্রত্যেকেই নিজেদের বাড়িতে একদিন করে খেতে বলে নিজের মেয়ের সঙ্গে বিবাহ প্রস্তাবটা পাকা করে ফেলতে চাইলেন। সুনীল বাবুও হ্যাঁ বা না এর মধ্যে ঝুলিয়ে রাখলেন। মেয়েদের বাবা মায়েরা রাত্রে সুস্থিরে নিদ্রা যেতে পারেন না। ঘুমের মধ্যে প্রত্যেকেই স্বপ্ন দ্যাখেন, তাদের পাকা ফলটা অন্যরা কেড়ে নিয়ে যাচ্ছে। 

              এবার বাবা মায়েরা সুনীলবাবুকে বলতে আরম্ভ করলেন কে কতো ডাউরি দিতে প্রস্তুত। এতেও সুনীল বাবু রা কাড়েননা।ওনার মনের তল তো খুঁজে পাওয়া মুশকিল!মেয়েদের মিশতে বলেও তেমন কোনোও ফল পাওয়া যায় না। ওনার চরিত্রটা খাঁটি সোনার মতো। এতে মেয়েদের বাবা মায়েরা বেশ নিশ্চিন্ত বোধ করেন। যে সকল বাবা মায়ের অবস্থা বেশ ভালো এবার ওনারা সর্বোচ্চ দাম হাঁকিয়ে বসলেন। কে একটা ফ্ল্যাট দেবেন তো কে একটা ওনার পছন্দের বাইক দেবেন বললেন। কেউবা অনেক নগদ দেবেন বললেন।  

            সানাই বাজলো এবার। কতোতে রফা হলো, কাকপক্ষীও জানতে পারলোনা। পাড়ার সবচেয়ে কুৎসিত ট্যারা নরুণমুখী মেয়েটিকেই সুনীল বাবুর পছন্দ। উনি বললেন, উনি না উদ্ধার করলে মেয়েটির বিয়ে হওয়াও মুশকিল হতো। তাই মুশকিল আসান হয়ে দায় উদ্ধার করলেন। পরিচিত সমাজে সাধু সাধু রব উঠলো। বিয়ের দিন ওই রোগা পটকা মেয়ের গা ভরতি সোনার গহনা দেখে পাড়ার নিন্দুকেরা বলাবলি করল নিজেদের মধ্যে, আমরাও তো ঢেলে মেপে দিতে চেয়েছিলাম। সুনীল বাবুর বক্তব্য

তিনি জানতেননা মেয়েকে ওনারা এতো কিছু দেবেন।

             দিন কাটে জলের মতো। তপতী এখন সন্তান সম্ভবা। বড়োলেক বাবার একমাত্র মেয়ে। মা-বাবার আদর আর যত্নে ভূমিষ্ঠ হলো প্রথম কণ্যা। কথায় বলে প্রথম মেয়ে হলে সংসারে লক্ষী আসে। বাড়ীর আয়-পয় বাড় বাড়ন্ত হয়। সুনীল যথারীতি নিজের কাজে ব্যাস্ত। বেশীরভাগ সময়ে সে আজকাল ব্যবসার কাজে বাইরেই কাটায়। 

বিজনেস আজকাল তার লসে চলছে। তাই মন খারাপ। বড়োলোক শ্বশুর অবশ্য পুষিয়ে দেবার চেষ্টা করছেন। কিন্তু লক্ষী চঞ্চলা। নাহলে এতো ভালোমানুষ সুনীল বেচারা চেষ্টায় ত্রুটি রাখছেন না । সংসারের ভালো মন্দের দিকেও যথেষ্ট চোখ আছে সুনীলের। ওরা হ্যাপী কাপল। যদিও সুনীলের আজকাল সময় পাওয়া মুশকিল , তবুও বেচারার চেষ্টায় ত্রুটি  নেই তপতীকে সুখে রাখতে। নয় নয় করে শ্বশুর বেশ কয়েক লক্ষ টাকা  দিয়েছে সুনীলকে। কিন্তু সুনীলের টাকার চাহিদা ক্রমশঃ বেড়েই চলেছে। তলে তলে তপতীর সমস্ত গহনা নিয়ে বিসনেসের কাজে লাগিয়েছে সেই কবেই। তপতী লজ্জার চোটে বাপের বাড়ীতে কিছু বলতে পারে না। একমাত্র মেয়ে সে। সুখী জীবনের অভিনয় করে যায়। কোনো বিয়েতে কিম্বা কাজের বাড়িতে যেতে চায়না শরীর খারাপের অজুহাতে অথবা সুনীল সঙ্গে না গেলে খারাপ দেখাবে, তাই। তপতীর ইতিমধ্যে মেয়ের পরে আবার একটা পুত্র সন্তান ও হয়েছে। সেই খুশিতে বাড়ীর সবাই খুব খুশি। 

            তপতীর বাবা এবার জামাই এর ব্যাপারে প্রমাদ গুনলেন। আর টাকা জামাইএর বিসনেসে ঢালতে পারবে না স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিলেন। সেই শেষ আসা বাড়ীতে সুনীলের। প্রথমে সকলেই ভেবেছিলেন, জামাই যেমন ব্যবসার কাজে বাইরে যায় তেমনই হয়তো এবারেও গেছে। কোনো খবর না দিয়ে হঠাৎ করেই যেমন চলে আসে তেমনই আসবে। এবার যেনো বড়ো বেশী দেরী করছে সুনীল! ঝানু শ্বশুর মশাই শুদ্ধু বুঝতে পারেননি যে সুনীল আর কখনোই আসবেনা। কারণ কোনো ঝগড়া ঝাঁটি বা কিছুই তো হয়নি ওনাদের সঙ্গে। ওনারা এবার ভাবলেন, কোনো মিস আপ হয়ে গেলো কি! পরেরদিন সুনীলের ছবি দিয়ে বাড়ীর ঠিকানা দিয়ে সহরের লিডিং নিউস পেপারগুলোতে সুনীলের নিরুদ্দেশের খবর বেরুলো। রেডিওতে ও নিরুদ্দেশের খবর বেরুলো। ফোন নং, ঠিকানা  সমেত। সুনীলের নিজের বাড়ী বা নিজের আত্মীয় স্বজন কিছুই ছিলোনা। কাজেই ওনারা অপেক্ষা করা ছাড়া আর কিইবা করতে পারেন। 

            অচীরেই বেশ কএকজন পর দিন সকালেই দেখা করতে আসলেন সুনীল বাবুর শ্বশুরের সঙ্গে। ওনারা পাউনাদার। বিভিন্ন নামে বিভিন্ন পরিচয়ে  লক্ষ লক্ষ টাকা নিয়ে সুনীল ফেরার হয়েছে বিভিন্ন স্টেট আর বিভিন্ন যায়গা থেকেও। শ্বশুর মশাই ভদ্রলোকতো এতোটা ভেবে দ্যাখেননি। এর পরে আরোও অঘটন ঘটার বাকী ছিলো। এবার বিভিন্ন মানুষ আসতে লাগলেন, যাঁদের মেয়েদের ঠিক এমনি ভাবেই বিভিন্ন নামে বিভিন্ন পরিচয়ে বিভিন্ন যায়গায় বিয়ে করে সংসার বসিয়েছিলো সে এবং প্রত্যেকটি পরিবারই অবস্থাপন্ন আর প্রত্যেকের ঘরেই তার দুটো বা তিনটে বাচ্চা আছে। সুন্দর ব্যবহার তার। ব্যবসা করে। ব্যবসায় লস চলছে। শ্বশুর বাড়ীর সাহায্যে বেশ কিছু টাকা, বৌ এর গয়না গাঁটি সব নিয়ে ভেগে পড়া। এবং একই ভাবে বেশ কিছুদিন অপেক্ষা করে ওকে আরোও একটা যায়গায় ঘাঁটি গাড়তে সুযোগ করে দেওয়া। এই সুবাদে আরোও একটা জিনিস বোঝাগেলো, সে এক সঙ্গে একাধিক সংসারে সম্পর্কে জড়িত থেকেছে বিভিন্ন যায়গায় বিভিন্ন নামে বিভিন্ন পরিচয়ে। 

             কে বলতে পারে এখনও সে নাম ভাঁড়িয়ে যতদিন পর্যন্ত তার বয়স থাকবে এই ভাবে আরোও কতো সংসারে 'ঠগ' হিসাবে ঢুকবে ভালোমানুষের মুখোশে! 

ধরা সে পড়েনি এখনও। আপনারা দিতে পারবেন কি তার খবর?


।।সমাপ্ত।।





মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় লেখা

প্রবন্ধ ।। লুপ্ত ও লুপ্তপ্রায় গ্রামীণ জীবিকা ।। শ্রীজিৎ জানা

মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা 2024 সংখ্যার জন্য লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি

সাহিত্যের মাটিতে এক বীজ : "ত্রয়ী কাব্য" -- সুনন্দ মন্ডল

কবিতা ।। বসন্তের কোকিল তুমি ।। বিচিত্র কুমার

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৭৯তম সংখ্যা ।। আশ্বিন ১৪৩১ সেপ্টেম্বর ২০২৪

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮০তম সংখ্যা ।। কার্তিক ১৪৩১ অক্টোবর ২০২৪

লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি : মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা ২০২৫

"নবপ্রভাত" ৩০তম বর্ষপূর্তি স্মারক সম্মাননার জন্য প্রকাশিত গ্রন্থ ও পত্রপত্রিকা আহ্বান

উৎসবের সৌন্দর্য: সেকালে ও একালে।। সৌরভ পুরকাইত

মুদ্রিত নবপ্রভাত উৎসব ২০২৩ সংখ্যার ডাউনলোড লিঙ্ক