Featured Post

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮২তম সংখ্যা ।। পৌষ ১৪৩১ ডিসেম্বর ২০২৪

ছবি
  সূচিপত্র অন্নদাশঙ্কর রায়ের সাহিত্য: সমাজের আয়না ।। বিচিত্র কুমার প্রবন্ধ ।। বই হাতিয়ার ।। শ্যামল হুদাতী কবিতায় সংস্কৃতায়ন (দ্বিতীয় ভাগ ) ।। রণেশ রায় পুস্তক-আলোচনা ।। অরবিন্দ পুরকাইত কবিতা ।। লেগে থাকা রোদ্দুরের ঘ্রাণের মতো ।। জয়শ্রী ব্যানার্জি কবিতা ।। ভুল ।। সুপ্রভাত মেট্যা কবিতা ।। উন্মেষ ।। বিশ্বজিৎ সেনগুপ্ত কবিতা ।। গার্হস্থ্য ।। বিবেকানন্দ নস্কর একগুচ্ছ বিজয়ের কবিতা ।। বিচিত্র কুমার গল্প ।। পোষ্য ভূত ।। সমীর কুমার দত্ত কবিতা ।। আশপাশ ।। প্রতীক মিত্র কবিতা ।। মেঘ ।। তীর্থঙ্কর সুমিত অণুগল্প ।। বংশীবদনের সুখদুঃখ ।। দীনেশ সরকার কবিতা ।। গভীর রাত ।। সুনন্দ মন্ডল তিনটি কবিতা ।। সুশান্ত সেন ভালোবাসার বাসা ।। মানস কুমার সেনগুপ্ত অণুগল্প ।। শিক্ষকের সম্মান ।। মিঠুন মুখার্জী কবিতা।। প্রশ্ন ।। জীবন সরখেল কবিতা ।।ক্ষরিত সে পথ ।। রহিত ঘোষাল কবিতা ।। রক্ত দিয়ে কেনা ।। মুহাম্মদ মুকুল মিয়া কবিতা ।। কংক্রিট ।। আলাপন রায় চৌধুরী ছড়া ।। শীত নেমেছে ।। রঞ্জন কুমার মণ্ডল কবিতা ।। কিছু শব্দ ।। সমীর কুমার বন্দ্যোপাধ্যায় কবিতা ।। শীতের নগ্নতা ।। রানা জামান কবিতা ।। পথ চলা ।। পাভেল আমান বেদ পু...

কবিতায় সংস্কৃতায়ন (দ্বিতীয় ভাগ ) ।। রণেশ রায়

 

কবিতায় সংস্কৃতায়ন 

(দ্বিতীয় ভাগ)

 রণেশ রায়



অনুবাদ কবিতা, সেকাল থেকে একাল:


প্রায় পাঁচশো বছর ধরে বিভিন্ন ভাষায় বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন কবির  লেখা কবিতাগুলোর অনুবাদ করা হয়েছে। সময়কালটা ধরে আমরা বিভিন্ন যুগের বিভিন্ন দেশের মানুষের জীবনযাপন ও সমাজ ভাবনা অনুসরণ করে যুগের ময়দানে বিচরণ করার চেষ্টা করেছি। মধ্যযুগের শেষভাগ থেকে রোমান্টিক ও ভিক্টরিয়া যুগ পেরিয়ে বর্তমান যুগে প্রবেশ করেছি এই অনুবাদ সাহিত্য পর্যালোচনা করতে গিয়ে। কবিতা যুগের পরিচয় বুঝতে আয়নার কাজ করে। কবিতার আয়নায় অতীত ও বর্তমানকে অনুধাবন করা, তার বিবর্তন প্রক্রিয়াটা বোঝার চেষ্টা করা।  আমরা বিদেশী বিভিন্ন ভাষায় লেখা কবিতাগুলোর ইংরেজি অনুবাদ ধরে বাংলায় ভাষান্তরের কাজে হাত দিয়েছি। অর্থাৎ আমার অনুবাদ কবিতা অনুবাদের অনুবাদ।


আমরা যে কবিতাগুলোর অনুবাদ করেছি বা ভাব অবলম্বনে যে কবিতাগুলো লিখেছি ইউরোপে সেগুলো শিল্পবিপ্লবের আগে ও পরের প্রায় পাঁচশো বছরকে বেষ্টন করে। শিল্প বিপ্লবের আগে শেক্সপিয়ার কালের কয়েকটি এমন কবিতা দিয়ে শুরু করেছি যেগুলি বিষয়বস্তু ও কাব্যিক গুণের দিক থেকে কালোত্তীর্ণ। সেই সময়কালে যদিও রাজা মহারাজদের যুদ্ধ ও বিক্রম নিয়ে সাহিত্য চর্চাই রাজতন্ত্রের পৃষ্ঠপোষকতা পেত কিন্তু আমরা এমন কবিতাগুলো বেছে নিয়েছি যেগুলো সময়ের সীমাবদ্ধতার ওপরে উঠে কালোত্তীর্ণ হয়ে উঠেছে। এগুলো ধ্রুপদী কবিতার মর্যাদা পেয়েছে। মনে রাখা দরকার ধ্রুপদী সাহিত্য কোন নির্দিষ্ট কালকে বেষ্টন করে থাকে না। এটা কালজয়ী। প্রাচীন কালের কোন কবিতা যেমন তার গুনের বিচারে ধ্রুপদী বলে বিবেচিত হয় তেমনি আজকের কোন কবিতা ধ্রুপদী মর্যাদা পেতে পারে। এই কবিতাগুলো আমাদের জীবনে কালনির্বিশেষে তাৎপর্যপূর্ণ। যেমন খালিল জিবরানের লেখা Fear কবিতা জন ডনের No Man is an Island বা শেক্সপিয়ারের লেখা Time বা রবার্ট হেরিকের To  Daffodils কবিতা বা পরবর্তীকালে মধুসূদন  রবীন্দ্রনাথ নজরুল  জীবানন্দ দাশের লেখা কিছু কবিতা। শিল্প বিপ্লব ও রেনেসাঁস পূর্ববর্তী ষোড়শ  শতাব্দিতে সেক্সপিয়ারের লেখা দিয়ে আমরা  আমাদের এই লেখার সূত্রপাত করেছি। নীচে কয়েকটা অতীতের কবিতা তুলে দিলাম সময়কাল ধরে যাতে কবিতার আয়নায় বিষয়টা   ধরা যায়। সেকালের জীবনবোধ ধরে এই কবিতাগুলো লেখা যা এ যুগেও তাৎপর্যপূর্ণ। তাই তারা কালোত্তীর্ণ, ধ্রুপদী। তারপর এসেছি আধুনিক কালে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ থেকে আজকের কাল পর্যন্ত লেখা কিছু কবিতা দিয়ে শেষ করেছি। আছে কিছু বর্তমানের আধুনিক যুগের কবিতা যাকে আধুনিকোত্তর যুগের কবিতা বলা হয়। যেমন নিকিতা গিল পেবলু নেরুদা ভারভারা রাও ও আরও অনেকে। 


কবিতার ইতিহাসে অষ্টাদশ শতকের মাঝামাঝি কাল থেকে শুরু হয় রোমান্টিক যুগ। শেলী ওয়ার্ডসওয়র্থ বায়রন কিটস প্রমুখ দিকপাল কবি এই সময়কালের কবি বলে পরিচিত। এই সময়কালের কবিতা প্রকৃতি প্রেম এবং আধাত্মিক ভাবনাকে বেষ্টন করে থাকত। ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে উইলিয়াম ওয়ার্ডওয়ার্থ Lyrical Balards (1798)  মুখবন্ধে লেখেন :  


"I have said before that poetry is the spontaneous overflow of powerful feelings: it takes its origin in emotion recollected in tranquility: the emotion is contemplated till, by a species of reaction, the tranquility gradually disappears, and an emotion, kindred to that which was before the subject of contemplation, is gradually produced, and does itself actually exist in the mind."


সারা দুনিয়ায় রানী ভিক্টোরিয়ার যুগে (1837-1901) ব্রিটিশ আধিপত্য পূর্ণ মাত্রায় প্রতিষ্ঠিত হয় । শিল্প সমাজে আধিপত্য স্থাপিত হয় পুঁজির মালিকানাধীনে  প্রযুক্তি ও যুক্তিবাদের। বিজ্ঞানের উন্নতির সাথে সাথে চিন্তার জগতে পরিবর্তন আসতে থাকে। ব্যক্তি জীবনে আবেগের স্থান কমতে থাকে। বস্তুবাদী চিন্তা গুরুত্ব পেতে থাকে। এই পরিবর্তনের প্রভাব পড়ে শিল্প সাহিত্যের ওপর। রবার্ট ব্রাউনিং রবার্ট উইলিয়াম বুচানন, লেডি চারলোট ইলিয়ট, টমাস হার্ডি, গিলবার্ট, ক্রিস্টিনা রসেটি প্রমুখ হলেন এ যুগের কবি।


আগেই বলে রাখি যে অনুবাদ  কবিতায় মূল কবিতাগুলো এখানে তুলে ধরিনি। পাঠকরা গুগুল থেকে বা মূল বই থেকে সেগুলো পেয়ে যাবেন।


শিল্প বিপ্লবপূর্ব  কালের

কয়েকটি কবিতা:

উইলিয়াম শেক্সপিয়ারের লেখা

Time কবিতা অবলম্বনে

 (1564-1616)

সময় 

সময় বয়ে চলে নিজ প্রবাহে

সে যে সদা বহমান,

এগিয়ে নিয়ে যায় তোমাকে,

যদি তুমি থাক

তার সঙ্গে চলমান।


কিন্তু যদি অলস থিতু তুমি,

স্তব্ধ হয়ে যায় সময়

বহে না সে আর তোমার তরীতে,

কাটে না সময় তোমার

ভাসে না তোমার তরী সম্মুখ পানে।


তুমি যদি শঙ্কিত ভীত এই জীবনে,

ভয়ে মর সময়ের প্রবাহে,

সে হয়ে ওঠে গতিবান,

তোমায় তাড়া করে,

তুমি ভাব এই বুঝি তোমায় হানে।


সময় বড় একঘেয়ে দীর্ঘস্থায়ী,

কাটে না তোমার সময়,

যদি তুমি বিষাদগ্রস্ত শোকাচ্ছন্ন,

সময় অন্ধকারে ঘুমোয়।


তুমি যদি ফুর্তিবাজ হৈ হৈ প্রিয়

বোঝ না  সময়ের দাম,

কখন যে সময় কেটে যায়

এসেই চলে যায় সময়, 

এই আসে এই পালায়,

সে সময় যে অনুক্ষণ,

মূল্যহীন অর্থহীন সে সময় তোমার।


সময়কে কোর না ভয়

যদি তুমি ভালোবাসো

কর যদি তার মন জয়,

তোমার কাছে সে বড় মূল্যবান

চিরন্তন তোমার হৃদয়ে তার বাস,

দাও তুমি তার মান,

শাশ্বত সদা জাগ্রত সে,

তাকে পেয়ে মেটে তোমার আশ,

তুমি চাও তাকে পেতে বার বার,

দিতে চাও না তাকে চলে যেতে-----

সে যে অমর প্রেম তোমার।


ওপরের কবিতায় বিভিন্ন ধরণের মানুষের কাছে সময় কিভাবে প্রতিভাত হয়,  কার কাছে তার কি মানে সেটা তুলে ধরেছেন শেক্সপিয়ার। সময়ের এই তাৎপর্য আজকেও মানুষের কাছে একইভাবে বর্তমান।


নিচের রবার্ট হেরিকের কবিতাটায় দেখান হয়েছে প্রকৃতি জগতে যেমন জন্ম মৃত্যু মানুষের ক্ষেত্রেও তাই। কেউ অমর নয়। জন্ম ক্ষয় লয় প্রকৃতির নিয়ম। নিদৃষ্ট সময়ের জন্য কেউ আসে, সময় হলে তাকে চলে যেতে হয়। নতুনের আসার পথ সুগম হয়। যতদিন পৃথিবীতে তার বাস তাকে দিয়ে যেতে হয় যা দেবার।

    

Robert Herrick, 

To  Daffodils*(1591-1674),ভাবানুবাদ 

  

সুন্দরী কুসুম* 


সুন্দরী কুসুম, ক্ষণজীবী তুমি 

ঝরে পড়  সময় না হতে, 

ক্ষণকাল দেখা দিয়ে কাঁদাও আমাদের।

এখনও  প্রভাত সূর্য উদয়ের পথে 

যৌবন তার এখনও  বাকি ঢের-----

অপেক্ষা করো, এখনই যেও না চলে, 

গোধূলি বেলায় সূর্য যাবে অস্তাচলে।

প্রার্থনা ঘন্টা বাজবে তখন 

সন্ধ্যাদীপ জ্বলবে যখন, 

প্রার্থনা সভায় মিলব মোরা  সবে 

সভা শেষে সবে যেতে হবে-----

এসেছি জীবনে স্বল্পকাল তরে 

বসন্ত আসে সময় ধরে 

জীবনের বসন্ত শেষে 

চলে যেতে হয় অবশেষে। 


আমরা বেড়ে উঠি অল্প সময়ে 

মিলি এসে সে অন্তিমে, 

তখন চলে যেতে হয় 

ক্ষয় আর লয়ের পথ ধরে----

সবে চলে যায়; 

দেখি গ্রীষ্মের বৃষ্টি

বা ভোরের শিশির মুক্ত ঝরায়,

কলি ফুটে ওঠে জীবন বাগানে,

কী অনাবিল সৃষ্টি এ ধরায়, 

কিন্তু সময় হলে পরে 

সবে এসে চলে যায়, 

দেখা যায় না এ জীবনে আর,

অপেক্ষায় থাকি,

নতুন কলি ফোটে কবে আবার।


(* ডেফোডিল ফুলকে আমরা কুসুম বলে উল্লেখ করলাম।)


নিচে   জন ডনের কবিতাটায় বলা হয় ব্যক্তি নিয়ে সমাজ হলেও সমাজে ব্যক্তি সত্তা যেন সমাজ সত্তাকে ছাপিয়ে না যায়। মানুষ বিচ্ছিন্ন দ্বীপ নয়। একা কেউ স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়। সে বাঁচে সামাজিক মানুষ হিসাবে। তাই তাকে সমাজের কথা ভাবতে হয়, বুঝতে হয় সমাজের অধীন সে। এখানেই আত্মস্বার্থ ত্যাগের প্রশ্নটা সমাজ জীবনে চিরন্তন সত্য। এই সার্বজনীনতার বাণী কবিতাটিতে মুর্ত হয়ে উঠেছে।


No Man is an Island, Jonne Donn 

( 1572–1631) 

লিখিত কবিতাটার ভাবানুবাদ



কেউ নয় বিচ্ছিন্ন দ্বীপ


 কোন মানুষ নয় স্বয়ংসম্পূর্ণ

সে নয় বিচ্ছিন্ন দ্বীপ সমুদ্রে

নয় সে নিজেতে নিজে পূর্ণ----

সে যে বহবান ঢেউয়ে ঢেউয়ে

বয়ে চলে অবিরাম

জীবন তরী বেয়ে,

সে যে সমাজেরই অংশ।

যদি আমার মাতৃভূমি বিপন্ন

সমুদ্র ভাসিয়ে নেয় তার ক্ষুদ্রাংশ,

সে কি থাকে আর পূর্ণতর !

সে যে খণ্ডিত আজ

সে হয়ে যায় ক্ষুদ্রতর।

যদি তোমার আজ অঙ্গচ্ছেদ

তুমিও হয়ে যাও খণ্ডিত,

যদি তোমাতে আমাতে বিভেদ,

যদি হারাও তোমার স্বজন

বিচ্ছেদ আমাদের------

 সে যে আমাদেরই একজন,

তুমি হয়ে পর বিচ্ছিন্ন,

তাইতো এ জীবনে 

তুমি আমি নই ভিন্ন।

যদি বিদায় ঘণ্টা বাজে কারও

জানতে চেও না এ কার ভাগ্য,

সে যে বিদায় তোমারও,

তুমিও আজ হতভাগ্য

হারাও কারও সংগ।

তাই বলি একা নও তুমি

তুমি নও স্বয়ংসম্পূর্ণ

তুমিও যে সমাজের অঙ্গ

নও নিজেতে নিজে পূর্ণ।

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় লেখা

প্রবন্ধ ।। লুপ্ত ও লুপ্তপ্রায় গ্রামীণ জীবিকা ।। শ্রীজিৎ জানা

লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি : মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা ২০২৫

কবিতা ।। বসন্তের কোকিল তুমি ।। বিচিত্র কুমার

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮১তম সংখ্যা ।। অগ্রহায়ণ ১৪৩১ নভেম্বর ২০২৪

সাহিত্যের মাটিতে এক বীজ : "ত্রয়ী কাব্য" -- সুনন্দ মন্ডল

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৭৯তম সংখ্যা ।। আশ্বিন ১৪৩১ সেপ্টেম্বর ২০২৪

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮০তম সংখ্যা ।। কার্তিক ১৪৩১ অক্টোবর ২০২৪

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮২তম সংখ্যা ।। পৌষ ১৪৩১ ডিসেম্বর ২০২৪

"নবপ্রভাত" ৩০তম বর্ষপূর্তি স্মারক সম্মাননার জন্য প্রকাশিত গ্রন্থ ও পত্রপত্রিকা আহ্বান

উৎসবের সৌন্দর্য: সেকালে ও একালে।। সৌরভ পুরকাইত