।। শিক্ষকের সম্মান।।
মিঠুন মুখার্জী
সেদিন বাড়ির বাজার করতে গিয়ে যীশুর একজন মাস্টার মশাইয়ের সঙ্গে দেখা হয়। 'স্যার কেমন আছেন?'--- জিজ্ঞাসা করে যীশু তার পায়ে হাত দিয়ে নমস্কার করে। পরিমল মুখার্জী স্যার তাকে বলেন --- " ভালো আছি বাবা ভালো আছি। তোর বাড়ির সবাই ভালো আছে তো? তোদের এখনো আমাদের প্রতি সম্মান দেখলে খুবই ভালো লাগে রে। আজকালকার ছেলেমেয়েরা তোদের মতন একেবারে নয়। গুরুজনদের তারা লঘু করে নিয়েছে। পায়ে হাত দেওয়া তো দূরে থাক নূন্যতম সম্মানটুকুও করে না। আমাদের সামনে বিড়ি-সিগারেট-মদ খেতে তারা কুণ্ঠিত হয় না। এমনকি মেয়ে বন্ধুর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ভাবে যাওয়া - আসা করে। আমাদের দেখলে এমন ভাব দেখায় যে আমাদের চেনে না। খুব খারাপ লাগে জানিস। তোদের আর এখনকার ছাত্রদের মধ্যে বিরাট পার্থক্য।" স্যারের কথা শুনে যীশু বলে --- "স্যার আজকের দুর্নীতির যুগে পিতা-মাতার কাছ থেকে সন্তানরা সুশিক্ষা পাচ্ছে না। কাকে পায়ের তলায় পিষে কে উপরে উঠবে এটাই লক্ষ্য। তাছাড়া ইন্টারনেটের যুগে পড়াশোনার গুরুত্ব লঘু হয়ে গেছে। ছেলে-মেয়েদের মধ্যে খারাপ প্রভাব পড়ছে। বাবা-মার প্রতিও তাদের ভক্তি নেই। এই সকল কারনে আজকের প্রজন্মের উচিত- অনুচিত বোধ হারিয়ে গেছে।" যীশুর কথা শুনে স্যার বলেন --- "তুই ঠিক বলেছিস যীশু। আমার নাতিটাও একেবারে বকে গেছে । কত স্বপ্ন ছিল ওর বাবা-মার। সঙ্গদোষে একেবারে গোল্লায় গেছে। এরা বাবা-মা দাদু -ঠাকুমার সম্মানের কথা একেবারেই ভাবে না। জানিস একসপ্তাহ আগে আমার এক কলিগ পরীক্ষার সময় একজন ছাত্রের টুকলি ধরে খাতা আটকে রাখায় সে কোমড় থেকে বন্দুক বার করে তাকে ভয় দেখিয়েছে। সে তাকে বলেছে, তার বাবা একজন বড় নেতা, খাতা না দিলে তার স্কুলে আসা বন্ধ করে দেবে। বুঝতে পারছিস বর্তমানে শিক্ষাব্যবস্থা ও শিক্ষার্থীদের কি অবস্থা!!" এই কথাগুলো বলতে বলতে পরিমল বাবুর দুচোখে জল দেখা যায়। এরপর যীশু বলে --- " স্যার চোখের জল ফেলবেন না। সময় সবসময় একরকম থাকে না। আমার বিশ্বাস এই সময় কেটে গিয়ে ছাত্ররা একদিন নিজেদের ভুল অবশ্যই বুঝতে শিখবে। পরিবর্তনই পৃথিবীর নিয়ম। ভালো - খারাপ নিয়েই আমাদের চলতে হবে।" যীশু মাছের বাজারে ঢুকবে তাই স্যারকে বলে--- "স্যার তবে আমি আসি। আপনি ভালো থাকবেন।" স্যার বলেন--- 'ঠিক আছে বাবা আয়। তুইও ভালো থাকিস।' মাছ বাজারে ঢুকতে ঢুকতে যীশু মনে মনে ভাবে-- " আজকের ছাত্ররা শিক্ষকদের সম্মান না দেওয়ার অনেক কারন আছে। এখনকার বেশিরভাগ শিক্ষক নীতিভ্রষ্ট। শিক্ষিকার সঙ্গে, ছাত্রীর সঙ্গে প্রেম করে বিয়ে করছেন। অসৎপথে মাস্টার হচ্ছেন। এটা আগে কম ছিল। তাদের যোগ্যতাই ছাত্রদের মাথা নত করে।"
=======================
মিঠুন মুখার্জী
C/O-- গোবিন্দ মুখার্জী
গ্ৰাম : নবজীবন পল্লী
পোস্ট+থানা -- গোবরডাঙা
জেলা -- উত্তর ২৪ পরগণা
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন