google-site-verification=aFCzFTmuVjPqPlrdWXeJSj2r_EMig_cypLnlmiUQpw0 re অণুগল্প ।। বংশীবদনের সুখদুঃখ ।। দীনেশ সরকার - নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

Breaking

নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

NABAPRAVAT : A Monthly Bengali Literary Blogzine.

বুধবার, ১৮ ডিসেম্বর, ২০২৪

অণুগল্প ।। বংশীবদনের সুখদুঃখ ।। দীনেশ সরকার

 

বংশীবদনের সুখদুঃখ

  দীনেশ সরকার 

 

             লোকাল ট্রেনের জানালার ফুরফুরে হাওয়ায় বংশীবদনের মনটাও আজ  ফুরফুর করে উড়ছে। প্রায় ছমাস পরে বংশীবদন মায়ের কাছে ফিরছে। মাকে বলে এসেছিল, একটা কাজ জোটাতে পারলে তবেই ঝুপড়িতে ফিরব।  শীর্ণ শরীরে তার মা পাঁচ বাড়িতে বাসন মেজে মায়ে-পোয়ের অন্ন সংস্থান করছে, এটা সে আর সইতে পারছিল না। তাই স্কুলের গন্ডী পার করেই একটা গ্রীলের কারখানায় ওয়েল্ডিং এর কাজ শিখল। কিন্তু কাজ শিখলেও  তাকে কাজ দেবে কে!

             বংশীবদন শুনেছিল হাওড়াতে অনেক ছোটখাট শিল্প-কারখানা আছে। তাই একদিন ভাগ্যকে সম্বল করে কাজের সন্ধানে বাড়ি ছাড়ল। দিনের পর দিন হাওড়ার অলিতে-গলিতে কারখানার দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়াল। সবাই সার্টিফিকেট চায়, অভিজ্ঞতা চায়, যার কোনটাই নেই বংশীবদনের। তারউপর ইউনিয়নবাজি, দাদাগিরি। নিরুপায় হয়ে শেষে একটা খুব ছোট স্টীল ফার্নিচার বানানোর কারখানার মালিকের হাতে-পায়ে ধরে অনুরোধ করল তাকে ওয়েল্ডিং এর কাজ দেবার জন্য। এদিকে মালিকেরও একটা ওয়েল্ডিংমিস্ত্রীর খুব দরকার ছিল। কারণ, তার দুজন ওয়েল্ডিং মিস্ত্রীর মধ্যে একজন অসুস্থ হয়ে দীর্ঘদিন শয্যাশায়ী। মালিক বংশীবদনকে এক সপ্তাহের জন্য নিয়োগ করলেন। শর্ত একটাই, কাজ ঠিকিঠাক করতে পারলে তবেই রাখবেন, নইলে দূর করে দেবেন।

               বংশীবদন তার কাজ দিয়ে এক সপ্তাহেই মালিকের মন জয় করে ফেলল। মালিক তাকে একটা নির্দিষ্ট বেতনে নিয়োগ করলেন। বেতন খুব বেশী না হলেও বংশীবদনের কাছে সেটা অনেক। মায়ে-পোয়ে কষ্টেশিষ্টে চালিয়ে নেবে। তিন মাসের টাকা জমিয়ে গলির ভিতরে একটা ঘর ভাড়া নিল, মায়ে-পোয়ের জন্য কিছু আসবাবপত্র কিনল। আজ যাচ্ছে মাকে নিয়ে আসতে। মনটা তাই খুশিতে ভাসছে।

                ঝুপড়ির কাছে পৌঁছুতে কিছু মানুষের শোরগোল লক্ষ্য করল। পাশের ঝুপডির হারানকাকু বলে উঠল, 'এই যে নবাবপুত্র এলেন মায়ের মুখাগ্নি করতে।'

                'মুখাগ্নি করতে! কি হয়েছে মায়ের।'

              'কোথায় ছিলি তুই? তোর মা তোর জন্য কেঁদে কেঁদে পাগলের মতো হয়েছিল। নাওয়া-খাওয়া ছেড়েছিল। তার উপর ডেঙ্গুর কোপ। সইতে পারল না।'

               ঘরে ঢুকে মৃত মায়ের বুকের উপর ঝাপিয়ে পড়ল বংশীবদন, 'আমায় ছেড়ে তুমি কোথায় চলে গেলে মা। আমি যে তোমাকে আমার কাছে নিয়ে যাব বলে এসেছি। কথা বল মা, কথা বল।'

 

                                                                                               ***********************************

দীনেশ সরকার

১৪০ ডি, হিজলি কো-অপারেটিভ সোসাইটি,

প্রেমবাজার, খড়্গপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর---- ৭২১৩০৬

মোবাইল ও হোয়াটসঅ্যাপ নংঃ ৯৮০০৪২১৫৩৫                   

                                              

                                                   

                

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন