।। খেলাঘর।।
গ্রামের নির্জন ও মনোরম পরিবেশে একটি মেয়ে কে প্রায় ই দেখা যায় একাই বসে থাকে চেয়ার টেবিল নিয়ে। টেবিলে দু-চার খানা ব ই,খাতা আর কলম থাকে। কিছু একটা যেন করছে মানে খাতায় কিছু লিখছে। কখনো কখনো দেখা যায় সামনের বাগানটার দিকে তাকিয়ে আনমনা হয়ে কিছু ভাবছে। বাগানটা তো স্বর্গের নন্দন কানন। সারা বছরই বাগানে ফুল ফুটে। এখন তো মরশুমী ফুলে সেজে উঠেছে শীতের বাগান টা। বাগান সংলগ্ন একটি দোতলা বাড়ী। বাড়ীর নাম রেখেছেন 'খেলাঘর'।পাশ দিয়ে রাস্তা চলে গেছে যেটা একটা সড়ক রাস্তার সাথে মিলে গেছে। কৌতূহলী মন ছুটে যায় অনুসন্ধান করতে।কে উনি?কোথা থেকে এখানে এলেন? বাড়ীর অন্যান্য সদস্যরাই বা কোথায় ইত্যাদি ইত্যাদি নানান প্রশ্ন উঁকি দেয়। একদিন অনাহুত অতিথি হয়ে গেলাম পরিচয় করতে। জানলাম-উনার নাম তুলিকা সরকার। উনি বাংলাদেশের মেয়ে। কিন্তু বাবার চাকরির সুবাদে শহর কলকাতার বাসিন্দা ছিলেন। বর্তমানে উনি এই মেদিনীপুরের আরশি নগরের বাসিন্দা। এখানকার উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষিকা।
সেই সুবাদে নিজের মনের মতো জায়গা কিনে ঘর বাড়ী তৈরী করা। উনার সঙ্গে কথা বলতে বলতে এমন বন্ধুত্ব গড়ে উঠলো যে সময় সুযোগ পেলেই আমি উনার বাড়িতে চলে যেতাম, আবার আমি না গেলে উনি বলতেন-কী হ'ল কয়েক দিন অনুপস্থিতির কারণ কি? আমি কিন্তু অপেক্ষা করেছিলাম। এক সময়ে উভয়ে উভয়ের নাম ধরে ডাকা ডাকি ও করতাম। বাড়িতে গিয়ে চা খাওয়া, গল্প করা উভয়ে উভয়কে সঙ্গ দান করা এই আর কি! জানলাম তুলিকার জীবনে একটা দুর্ঘটনা ঘটে গেছে। তুলিকা বুদ্ধিমতী, পড়াশুনায় অত্যন্ত মেধাবী ও সুন্দরী। কলকাতার নামী স্কুলে পড়াশুনা করতো। কলেজে পড়া কালীন অনেকের কু-দৃষ্টিতে পড়তে হ'ত শুধুমাত্র সুন্দরী আর ব্যক্তিত্ব পূর্ণ বাকচাতুর্য থাকার জন্য। কিন্তু শুধু তাই নয়,কথা বলতো না সবার সঙ্গে। কেউ বলতো-ডাটুশ,কেউ বলতো-ঢঙী, আবার কেউ বলতো-ধিঙ্গী ইত্যাদি।সে যাই হোক একসময় এক ইংরেজি অধ্যাপকের সুনজরে পড়ে তুলিকা। অধ্যাপক ওকে বিয়ের বিয়ের প্রস্তাব দেয়। অধ্যাপকের বয়স প্রায় কুড়ি বছর বেশি তুলিকার চেয়ে।কম বয়সী মেয়ে ভালবাসার নাম গন্ধ পেয়েই একেবারে আনন্দে ডগোমগো। বাড়িতে জানানো হলেও বাড়ির কেউ রাজী নয়। তাদের অমতে অধ্যাপক কে বিয়ে করে অধ্যাপকের কাছে চলে যায়। অধ্যাপকের কাছে থেকেই তুলিকা এম-এ পাশ করে। ওদের একটি সন্তান ও হয় এর মাঝখানে।
ইতিমধ্যে একটি ঘটনা ঘটে। একদিন একজন বয়স্কা মহিলা এসে পরিচয় দেয় সে নাকি ঐ অধ্যাপকের স্ত্রী। প্রথমটা তুলিকা খুব বিস্ময় বোধ করলেও পরে বুঝতে পারে কথাটা সত্যি। কারণ অধ্যাপক অস্বীকার করতে পারলোনা।নাকি তার একটি মেয়ে ও আছে। তুলিকা বললো-অধ্যাপক আমার সামনে ই মহিলার সঙ্গে এমন অশালীন আচরণ করলেন যা আমাকে ভীষণ ভাবে আহত করলো। অধ্যাপক কিছু টাকা মহিলার সামনে ছুঁড়ে দিয়ে বলল-এখান থেকে একবারে দূর হয়ে যা ইত্যাদি ইত্যাদি। অধ্যাপকের এমন অমানবিক আচরণে আহত হয়ে তুলিকা সেখান থেকে তার ছেলেকে নিয়ে চলে আসতে চাইলে ছেলেকে দিতে চায়নি। তারপর তুলিকা একাই চলে আসে। তারপর তুলিকা মেদিনীপুরের এই আরশি নগর গ্রামেই থেকে যায়। এখানে বাড়িতে ওর দেখভাল করার জন্য একজন ঝি আর তার স্বামী থাকে। তুলিকার সিঁথি তে সিঁদুর নেই কেন জানতে চাইলে ও বলে-এটাকে আমি বিয়েই মনে করিনা এবং সন্তান কে মনে করি আমার অবৈধ সন্তান। অধ্যাপকের প্রতি ঘৃণা আর অশ্রদ্ধা আমাকে আজ -ও দগ্ধ করে।
---------------সমাপ্ত--------------
শেফালি সর,জনাদাড়ি, গোপীনাথপুর, পূর্ব মেদিনীপুর।৭২১৬৩৩।