google-site-verification=aFCzFTmuVjPqPlrdWXeJSj2r_EMig_cypLnlmiUQpw0 re গল্প : রাণা চ্যাটার্জী - নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

Breaking

নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

NABAPRAVAT : A Monthly Bengali Literary Blogzine.

শুক্রবার, ১৭ জানুয়ারী, ২০২০

গল্প : রাণা চ্যাটার্জী

 মিলে যাওয়া অঙ্ক

                              
জীবনটা যোগ, বিয়োগ, গুন, ভাগের মতো মিলে যাওয়া কোনো অঙ্ক নয় বরং যেন ঘাত প্রতিঘাত, জটিলতা, সরলতায় মোড়া এক অনাবিষ্কৃত গয়নার বাক্স। যেদিকে প্রচেষ্টায় লক্ষ্য ছোঁয়ার চাবিকাঠি ঘোরাবে খুলে যেতে পারে দখিন দুয়ার -- দূর বাবা কি সব ভাবনা আসছে বলে ভিড়ে ঠাসা,হাঁসফাঁস করা গরমে ট্রেনের জানালা সিটে বসে বাইরে  মনোনিবেশ করতে লাগলো অঙ্কনা।

আজ শনিবার, শিয়ালদহ গামী দুপুরের এই ট্রেনটায় গরমের সাথে পাল্লা দিয়ে ভিড় যেমন বেড়েছে,বাড়ি ফেরার তাগিদ ও।চাকদহ কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের বুদ্ধিদৃপ্ত মেয়েটির ,আগামীকাল পরীক্ষার সিট কলকাতায়  পড়ায়  আজ জ্যেঠুর বাড়ি চলেছে । একের পর এক স্টেশন আসছে আর দফায় দফায় ভিড়ের স্রোত।একটা হকার বেশ কিছুক্ষণ "জল চাই, জল বিশুদ্ধ জল লাগবে নাকি"বলে ভিড় ঠেলে এগিয়ে আসার  চেষ্টা করেছে। উনি কাছে আসতেই," ওরে বাবা কি অবস্থা "চোখ দুটো বড় বড় করে অবাক বিস্ময়ে অঙ্কনা, দেখে প্রায় ষাট ছুঁই ছুঁই পৌর হকার জেঠুটি দরদর করে ঘামছেন, কেমন যেন একটা হাঁসফাঁস অবস্থায়, জামার হাতায় মুখ মুছে এগুনোর প্রচেষ্টায় উনি। 

ট্রেনটা একটা স্টেশনে আসতেই অনেকটা ভিড় একধাক্কায়  কমে গেল। ব্যাগ থেকে কুড়ি টাকা বের করে জলের বোতল কিনে ছিপি খুলে "ও জ্যেঠু এদিকে এসো "বলে জলের বোতলটা বাড়িয়ে হাঁক দিলো। উনি তো অবাক,এমন কান্ড দেখে,"না না মা,তুমি কিনেছো খাও আগে" হকার জ্যেঠুটি বলতেই,"আরে না গো আমার তো ব্যাগে জল আছে,এটা তোমার জন্যই কিনলাম"শুনে বয়স্ক হকার সহ সহযাত্রীরাও হতবাক। কি অবলীলায় এই অসাধ্য সাধন করে ফেলেছে এই অল্প বয়সেই মেয়েটি! সামনের সিটটা খালি হতেই ভদ্রলোক বসে, ঢকঢক করে জলটা খেয়ে যেন একটু শান্তি পেলেন। ট্রেনটা শিয়ালদহ ঢুকে যেতেই নিমেষে খালি হয়ে গেল গম গম করা কামরা,হকার জ্যেঠুটি আবেগ বিহ্বলতায় বললেন,অনেক সুখী হ'রে  মা,আমার দীর্ঘ ত্রিশ  বছরের হকারি জীবনে কেউ এভাবে কোনদিন আন্তরিক ভাবে  বলেনি "বলে কেঁদে ফেললেন। ওনার দু চোখে জল দেখে অঙ্কনার নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছিল না ,কেউ যেন ভেতর থেকে ওকে সাবাস অঙ্কনা সাবাস বলে বাহবা দিচ্ছিল আর অঙ্কনা ভাবছিল জীবনের অংকটা যেন কোথাও ঠিক মিলে গেছে।
                     * * * * * * * *