শিক্ষক দিবস
পাপিয়া : কাকিমা মিঠু কোথায় ?
কাকিমা : এখনো ড্রেস পড়ছে I তুই একটু বোস I আজ কলেজে যাবার কি দরকার ছিল ? ৫ সেপ্টেম্বর তো ক্লাস হয় না I যাচ্ছিস কেন ?
পাপিয়া : অনুষ্ঠান আছে I আমি নাচবো আর মিঠু গান করবে I
কাকিমা : মিঠু আমায় কিছু বলেনি তো I
মিঠু : বললে কি তুমি খুশি হতে ? বলতে, পড়াশুনা না করে খালি গান গেয়ে বেড়া I চল পাপিয়া I
মিঠু আর পাপিয়া কলেজের দিকে হাঁটতে শুরু করে Iওদের যাবার পথে একটা চায়ের দোকান পড়ে I রোজই কিছু বকাটে ছেলে আজেবাজে কথা বলে I ওরা না শোনার ভ্যান করে চলে যায় I আজ মিঠুর কোনো দিকে মন নেই I সে শুধু ভাবছে কখন গানের মাধ্যমে কিভাবে সুদীপ্ত স্যার কে ভালোবাসার কথা বোঝাবে I স্যার বুঝতে পারবেন কিনা ? যদি কলেজ থেকে তাড়িয়ে দেয় I যদি সব জানাজানি হয়ে যায় I
পাপিয়া : কিরে কোনো কথা বলছিস না কেন ?
মিঠু : ভয় লাগছে I
পাপিয়া : এখন ভয় পেয়ে আর কি হবে ? দেশে কি আর কোনো ছেলে ছিল না, শেষে সুদীপ্ত স্যার I
মিঠু : গোলাপটা নিয়ে এসেছি I
পাপিয়া : কি ? গোলাপ ? এত দূর I
মিঠু : আমি আর পারছি না রে I যা হয় হবে I আমি আজ গোলাপটা দিয়েই দেব I আচ্ছা তোর কি মনে হয় আমি যখন "তুমি রবে নীরবে হৃদয়ে মম" গানটা গাইবো ও কি বুঝতে পারবে ?
পাপিয়া : শোন্, আমার যা মনে হয়, তুই গানটা এত ভালো করিস যে সবাই মুগ্ধ হয়ে শোনে I তখন কিছু ভাবতে পারবে কি না আমার খুব ডাউট আছে I
মিঠু : কি সব যে বলিস I
পাপিয়া : দেখ, সুদীপ্ত স্যার এর বদলে অন্য কোনো স্যারের তো ভালো লাগতে পারে , তখন কি করবি?
মিঠু : চুপ করবি I
পাপিয়া : সুদীপ্ত স্যার যা রাগি I একদিন তো আমায় বলেছিলেন মিঠুর মাথাটা মোটা কিন্তু গলাটা ভারী সুন্দর I তোমার সঙ্গে তো সারাদিন থাকে পড়তে বলতে পারো না I খালি গান গাইলে হবে ? অবশ্য চাইলে গান নিয়েও পরবর্তী কালে পড়তে পারে I
মিঠু : পুরো আমার মায়ের মতো কথা I এমন জামাই পেলে মা খুশিই হবে I হা হা হা , কি বলিস ?
পাপিয়া : তুই রেজাল্টটা ভালো করলেও স্যার খুব খুশি হবেন রে I
মিঠু : হা রে , গানের সঙ্গে সঙ্গে পড়াটাও ভালো করতে হবে I না হলে স্ত্রী হিসাবে আমার পরিচয় দিতেও ওর খারাপ লাগবে I
পাপিয়া : খুব হয়েছে I এবার মন দিয়া পড় তাহলে I পাকাবুড়ি I
মিঠু : শোন্ , আজ একটু দেরি করেই বাড়ি ফিরবো I
পাপিয়া : কেন ?
মিঠু : যখন কলেজ ফাঁকা হয়ে যাবে, তখন তুই সুদীপ্ত স্যার কে একটু ডাকিস , তখনই গোলাপটা দেব I
পাপিয়া : আমি ডেকে দিয়া কিন্তু চলে যাবো I
মিঠু: এই না, আমার কিন্তু খুব ভয় লাগবে দেখ I তুই থাকিস প্লিজ I
পাপিয়া : আরে, আমার সামনে কথা বলতে স্যারের ভালো না লাগতে পারে I আমি বরং কোনো গাছের আড়াল থেকে দেখবো I
মিঠু : ঠিক আছে I চেঁচামেচি শুনলে কাছে আসিস কিন্তু I
পাপিয়া : আচ্ছা বাবা, ঠিক আছে I
নির্দিষ্ট সময় মিঠু গান গেয়েছে মন প্রাণ দিয়ে I খুব উৎসাহ পেয়েছে সকলের কাছ থেকে কিন্তু সুদীপ্ত স্যার কিছু বলেননি I মিঠু খুব অবাক হয়ে যায় I দুঃখে অভিমানে কলেজের এক কোনে দুহাত দিয়ে মুখ ঢেকে কাঁদতে থাকে I পাপিয়া অসহায় মিঠুকে দেখে সুদীপ্ত স্যারের কাছে চলে যায় কথা বলতে I টিচার'স রুম এ গিয়ে দেখে স্যার খুব ব্যাস্ত I কারণ কয়েক দিনের মধ্যে রেজাল্ট আউট হবে I
পাপিয়া : স্যার একটা কথা বলার ছিল I
সুদীপ্ত : কি রেজাল্ট জানতে এসেছ ? রেজাল্ট ভালোই হয়েছে ? নির্দিষ্ট দিনেই জানতে পারবে ? তোমার সঙ্গী কোথায় ? ভয়ে আসেনি ? হা হা হা , ওর রেজাল্টও ভালোই হয়েছে I
পাপিয়া: ওর কথাই বলতে এসেছি I আপনি একটু আসবেন I
সুদীপ্ত : কোথায় ? কি বলবে ? ও কি আমায় ভয় পায় I যে নিজে এসে কথা বলতে পারছে না I তোমায় পাঠিয়েছে ?
পাপিয়া : স্যার আপনি যদি আমাদের কলেজে থেকে তাড়িয়ে দেবেন না কথা দেন তাহলে একটা কথা বলবো ?
সুদীপ্ত : কি ? কলেজে থেকে তাড়িয়ে দেব ? কি বলতে চাইছো তাড়াতাড়ি বলো I
পাপিয়া : স্যার কলেজের মাঠের গাছ তোলাতে একটু চলুন ওখানে মিঠু খুব কাঁদছে I ও আপনাকে খুব ভালোবাসে কিন্তু আপনি যদি রাগ করেন তাই বলতে না পেরে কাঁদছে I
সুদীপ্ত : কি ? ভালোবাসে ? আচ্ছা চলো দেখি I
পাপিয়া : মিঠু স্যার আসছেন I
সুদীপ্ত : দ্যাখো মিঠু, তোমরা এখন পড়াশোনা করছো I এই পৃথিবীতে সবার সাথে থাকতে থাকতে কাউকে কাউকে ভালো লাগতেই পারে I তোমরা অনেক ছোট এখনো ভালো মন্দর তফাৎ জানো না I তাই আগে পড়াশুনা শেষ করো I নিজের পায়ে দাঁড়াও I তার পর ভালোবাসার মানুষকে নির্বাচন করো I তখন আমার থেকে অনেক যোগ্য মানুষ পাবে I এখন মন থেকে এইসব চিন্তা ছেড়ে পড়াশুনাতে মন দাও I ভবিষতের কথা ভাবো, কি ভাবে বাবা মায়ের পাশে দাঁড়াবে, কি ভাবে তাদের স্বপ্ন পূরণ করবে I তারা যে তোমাদের মুখ চেয়ে বসে আছে I আর যদি আমার কথা বলো তাহলে বলি, যে দিন থেকে শিক্ষকতা শুরু করেছি ছাত্রছাত্রীদের সন্তানের মতো দেখেছি I তাই সেখানে অন্য কোনো সম্পর্কের জায়গা নেই I তোমরা ভালো থাকো I আমি আসি I
মিঠু নিজেকে চোখের জলে শুদ্ধ করে নিলো I কথা বলার ভাষা আজ তার নেই I শিক্ষক দিবসে জীবনের চরম শিক্ষাই পেলো সে I মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলো আর লক্ষভ্রষ্ট হবে না I স্যারকেই জীবনের আদর্শ করে এগিয়ে যাবে I