অণুগল্প -- সংঘমিত্রা সরকার কবিরাজ - নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

Breaking

নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

NABAPRAVAT : A Monthly Bengali Literary Blogzine.

Friday, January 17, 2020

অণুগল্প -- সংঘমিত্রা সরকার কবিরাজ


অন্য স্নান


সকালবেলায় সমুদ্রের ধারে সূর্যোদয় দেখতে গিয়েছি, হোটেলের রুম থেকেও দেখা যেতো.... কিন্তু সাগরের ধারে বালুচরে  অলস ভাবে ভোরের হাওয়া গায়ে লাগিয়ে সূর্য্যের ওম গায়ে মেখে সূর্যোদয় দেখার মজায়ই আলাদা। সমুদ্রের ছোট্ট ছোট্ট ঢেউগুলো এসে লুটোপুটি খাচ্ছিলো পায়ের কাছে , বন্ধুর  সাথে হাসি গল্পে দিব্যি জমে গিয়েছিলাম।
হঠাৎ চমক ভাঙলো 'মা' ডাকে । দেখি জীর্ণ শীর্ণ ধুতি পরা ভদ্রলোক সামনে দাঁড়িয়ে।আমার চশমাটা একটু ধরবে মা..... একটু  স্নান করবো ।হাতে তার ভাঙা ডাঁটি এক ঘসা চশমা। আমি প্রথমে কিছুটা অবাক হয়ে, স্মিত হেসে হাত বাড়িয়ে  চশমাটি নিলাম।
চশমাটি আমাকে দিয়ে ভদ্রলোক জলে নামলেন । তার চেয়ে বলা ভালো উত্তাল ঢেউগুলো তীরে এসে তার পায়ের কাছে সজোরে ভেঙে পড়ছিলো । যেন বলছিলো "তুমি এসছো , আমি  খুব খুশি হয়েছি।" একটু জল কিন্তু ঢেউ তো আছে।অল্প জলে প্রায় বালিতেই সে কি আনন্দের লুটোপুটি; বয়সটা যেন মনে হলো এক ধাক্কায় সত্তর থেকে সাত হয়ে গেছে। দেখতে দেখতে আমিও মাঝে মাঝে হেসে ফেলছিলুম। কিছুক্ষণ পর বললুম, জেঠু ঠান্ডা লাগবে ,সকালবেলা ,তাছাড়া ধুতিতে পা আটকালে বড় ঢেউ এলে বিপদ।ফোকলা দাঁতে সে কি এলগাল কান এঁটো করা হাসি... আমার মনে হলো আজ বোধহয় এতক্ষনে সত্যিকারের সূর্যোদয় হলো।মিনিট পনেরো পর তিনি উঠে এলেন ।গামছা অবধি নেই।ভিজে গায়ে হোটেলে ফিরবেন।বয়স্ক মানুষ ।দুরাবস্থা দেখে আশ্চর্য হলুম।বললুম , "সাথে কেউ আসে নি ? আপনি কি একাই এসেছেন?"
না গো মা ,একা নয়।ছেলে মেয়ে বৌমা জামাই নাতি সবাই এসেছে।বলে আবার হাসি।
"তাহলে একা স্নানে কেন এসেছেন?"
বারে!আমরা একটা কটেজে উঠেছি তো রান্নাবান্না সব নিজেদের ব্যবস্থায়।আমি হোটেলে ফিরে গিয়ে রান্না করার ব্যবস্থা করবো, তাই সকালে স্নান করে গেলাম।তাছাড়া নাতনি দুটো কাল খুব স্নান করেছে , ওরা খুবই ছোটো তাই বৌমা বললে ওদেরকে নিয়ে আজ আর স্নানে আসবে না, ঠান্ডা লেগে যেতে পারে।আমি গিয়ে ওদের ধরবো তবেই তো বাকী সবাই আসবে  স্নান করতে।
বুঝলাম বাড়িতে, বেড়াতে গিয়ে, সর্বত্রই এক দৃশ্য। বৃদ্ধ বাবা মা রাঁধুনী কাম বেবী সিটার।।