মেটামরফোসিস্
আলিঙ্গন আগের মতো হাসি-খুশি নেই। ব্যাপারটা সৌজন্যের নজরে আসেনি এমনটা নয়। তাদের পরিচয় এখন রুমমেট হলেও আলিঙ্গন আর সৌজন্যের বন্ধুত্ব প্রায় বছর ১০এর। আলিঙ্গনের স্বরচিত লেখা পড়তে ও শুনতে সৌজন্য খুব পছন্দ করে।
১লা জানুয়ারী,
২০২০ সকাল। আড়মোড়া ভেঙে সৌজন্য আবদার জানায় 'একটা কবিতা শোনা বন্ধু'।
(আলিঙ্গন, ভীষণ সমান্তরাল ভঙ্গিমায় বলতে থাকে...)
"গৃহবধুর মুখে অ্যাসিড ছুঁড়ে মারল শ্বশুরবাড়ির আত্মীয়।
৪ বছরের শিশুর মুখে চকোলেট্ বোমা ফাটাল প্রতিবেশী যুবক।
টিউশন থেকে ফেরার পথে অপহরণ, শিউলির নগ্ন রক্তাক্ত অর্ধদগ্ধ দেহ মিলল রেল লাইনে।
নেশাগ্রস্ত দুই মেয়ে এবং তাদের প্রেমিকদের হাতে মা খুন, তিন দিন পর দেহ পাওয়া গেল পাড়ার পুকুরে।"
সৌজন্য || আরে দাঁড়া দাঁড়া। কি শুরু করেছিস বলত? নিউজ শোনাচ্ছিস কেন?
আলিঙ্গন সামান্য হাসে আর বলে 'তুই-আমি-আমরা বেঁচে আছি এইরকম একটা সময়ে। যেগুলো বলছিলাম এগুলোতো কয়েকমাস আগের নিউজ। জানিস সৌজন্য, আমি আর নিউজ পেপার পড়ার সাহস পাই না। এমন একটা সকালে কেমন কবিতা শোনাব তোকে?'
সৌজন্য || ঠিকই। আমিও ফেসবুক ডিয়্যাকটিভেট করে রেখেছি বেশ কিছুদিন। জয় শ্রীরাম ধ্বনি দিতে দিতে যখন বিধর্মী কোনো ছেলেকে মারতে মারতে রক্তাক্ত করে দিচ্ছিল, তখন আকাশ-বাতাস দূষিত করা ধর্মীয় অভিব্যক্তি আমার গলা টিপে ধরছিল ভীষণরকম। ঘুমের মধ্যে এখনও সেই ছেলেটার আর্তনাদ আমি শুনতে পাই।
২০২০তে দাঁড়িয়েও ধর্মের দোহাই দিয়ে মানুষ মানুষকে মারতে উদ্যত হলে কী লাভ এত শিক্ষা-দীক্ষার! ছিঃ ছিঃ
আলিঙ্গন || কাজ করতে করতে হাতে একটা কম্পাস গেঁথে গিয়েছিল একদিন... কি ব্যাথাটাই হয়েছিল রে! আর অর্বাচীনের দল সেই মেয়েটাকে ধর্ষনের পর যোনিতে ১২ এম এম রড্ ঢুকিয়ে দিয়েছিল। ইনটেসটাইন'র বেশ কিছুটা বেরিয়ে এসেছিল রডের সাথে।
(আলিঙ্গনের স্বর কেঁপে ওঠে...ঘর জুড়ে স্তব্ধতা কিছুক্ষণ)
সৌজন্য || তোর মেটামরফোসিস্ লেখাটা মনে পড়ছে খুব। শোনাবি কয়েক লাইন?
আলিঙ্গন কোনো উত্তর দেয় না...
বাইরেটা কুয়াশায় ঢেকে আছে, সূর্য বেপাত্তা। বেলা বাড়ছে ঘড়ির টিক্ টিক্ শব্দে, কয়েক হাজার টিক-টক্ ভিডিও পোস্ট হচ্ছে গত রাত থেকে। কিছু মানুষ নিজেকে গুটিয়ে নিচ্ছে প্রাত্যহিক সংশ্লেষ থেকে আর কিছু মানুষ পোয়া দরে কিনছে চাকরি, আইন-কানুন, সুখ কিংবা অসুখ।
চক্রীয় চুপ মুখরতায় ইতি টেনে আলিঙ্গনের উচ্চারণে জেগে উঠতে থাকে মেটামরফোসিস্-
"...তারপর হামাগুড়ি বন্ধ হল, বন্ধ হল খুঁটে খাওয়া
ইস্পাত সজ্জিত শিড়দাঁড়ার অধিকারি হল তাঁরা
বিনা নোটিশে- অবসাদ সব হাতুড়ির জবাবে পিষে দেওয়া।
যা কিছু হয় না ভেবেছিল পাবলিক
মেক-ওভার হল রণসজ্জায়।
হৃৎপিন্ড দুর্বল হতেই পেসমেকার বসানো হল,
আত্মরক্ষার তিলকে নিজের রক্ত দিল পাহারা...
যাবতীয় না বাচকদের শেকল বেঁধে সোপট্যাঙ্কে ফেলা হল।
এবং কুঁচকে যাওয়া চামড়ায় ইস্তিরি মেরে রচনা ইস্তাহার।
তারপর ভয় লাগেনি আর...
ছুটতে ছুটতে পায়ে ক্ষয় ধরলেও
লড়াই জারি থাকে। আত্মবিশ্বাসের গাঢ়ত্বে
একদিন পিঠ চিরে বেরিয়ে আসে ফিনিক্সের ডানা।"
স্তব্ধতা রিলোড!
বাইরের কুয়াশা কেটে ঘুলঘুলি বেয়ে কখন যেন চিকন রোদের আলিঙ্গন নেমে আসে সৌজন্যের ছলছলে কর্নিয়ায়...
..................................
বিজয়ন্ত সরকার