Featured Post

লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি : মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা ২০২৫

ছবি
   মুদ্রিত  নবপ্রভাত  বইমেলা ২০২৫ সংখ্যার জন্য  লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি মুদ্রিত  নবপ্রভাত  বইমেলা ২০২৫ সংখ্যার জন্য  প্রবন্ধ-নিবন্ধ, মুক্তগদ্য, রম্যরচনা, ছোটগল্প, অণুগল্প, কবিতা ও ছড়া পাঠান।  যে-কোন বিষয়েই লেখা যাবে।  শব্দ বা লাইন সংখ্যার কোন বাঁধন  নেই। তবে ছোট লেখা পাঠানো ভালো (যেমন, কবিতা ১২-১৪ লাইনের মধ্যে, অণুগল্প কমবেশি ৩০০/৩৫০শব্দে)। তাতে অনেককেই সুযোগ দেওয়া যায়। সম্পূর্ণ অপ্রকাশিত লেখা পাঠাতে হবে। মনোনয়নের সুবিধার্থে একাধিক লেখা পাঠানো ভালো। তবে একই মেলেই দেবেন। একজন ব্যক্তি একান্ত প্রয়োজন ছাড়া একাধিক মেল করবেন না।  লেখা  মেলবডিতে টাইপ বা পেস্ট করে পাঠাবেন। word ফাইলে পাঠানো যেতে পারে। লেখার সঙ্গে দেবেন  নিজের নাম, ঠিকানা এবং ফোন ও whatsapp নম্বর। (ছবি দেওয়ার দরকার নেই।) ১) মেলের সাবজেক্ট লাইনে লিখবেন 'মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা সংখ্যা ২০২৫-এর জন্য'।  ২) বানানের দিকে বিশেষ নজর দেবেন। ৩) যতিচিহ্নের আগে স্পেস না দিয়ে পরে দেবেন। ৪) বিশেষ কোন চিহ্ন (যেমন @ # *) ব্যবহার করবেন না। ৫) লেখার নীচে একটি ঘোষণা দিন:  'লেখাটি স্বরচিত ও অপ্রকাশিত'। মেল আইডি :  printednabapravat@gm

অণুগল্প : তপন কুমার মাজি


          সান্টা, এখন...


     পায়ে লেগে হোঁচট খেয়ে পড়তে পড়তে বেঁচে গেল কোর্ট-বুট পরা ভদ্রলোকটি। ভ্রু কুঁচকে ড্যাবড্যাব চোখে বিরক্ত হয়ে বললেন তিনি--
  --রাবিশ ! এটা কি মাতলামির জায়গা ? রাতভর খাচ্ছিস আর ভোর হলেই বেহুশ হয়ে শুয়ে পড়ছিস প্লাটফর্মে। যত্তোসব জঞ্জাল !
   ভদ্রলোকের কথাটা শুনে অন্যান্য যাত্রীরা প্রতিবাদ তো করলোই না, উল্টে কারো কারো কণ্ঠে জনৈকের সুরে সুর মেলালো। প্ল্যাটফর্মের মাঝ বরাবর উপুড় হয়ে শুয়ে থাকা মানুষটিকে লাথি মারতে মারতে আবারও বলল লোকটি---
  --ছোটলোক কোথাকার ! বাপের জমিদারি পেয়েছিস ! ওঠ্, ওঠ্ বলছি ! উঠবি, না পুলিশে দেবো ?
   সময়টা ছিল সকাল পৌনে পাঁচটা নাগাদ। ডানকুনি স্টেশনে ঢোকার সময় হয়ে এসেছে হাওড়া-ধানবাদ সুপার ফাস্ট ট্রেনটির। লোকে থিকথিক করছে প্ল্যাটফর্ম চত্বর। ট্রেন ঢোকার সময় যতই এগিয়ে আসছে যাত্রীদের ভীড়ও বাড়ছে সমান তালে। বেঘোরে পড়ে থাকা মানুষটির তরফ থেকে কোনো প্রত্যুত্তর না আসায় কয়েকজন যাত্রী চ্যাঙদোলা করে তাকে সরিয়ে দিল একপ্রান্তে। যথাসময়েই ঢুকলো সুপার-ফাস্ট। ছেড়েও দিল। কিছুক্ষণের মধ্যেই প্ল্যাটফর্ম ফাঁকা। রইলো শুধু প্ল্যাটফর্মবাসী কিছু শীতার্ত মানুষ এবং জি-আর-পি অফিসের দেয়াল ঘেঁষে অচৈতন্য অবস্থায় পড়ে থাকা সেন্টু--সেন্টু হালদার। 
       কোলকাতার মঙলা হাট থেকে কিছু শীতের বস্ত্র কিনে রাতের ট্রেনে ফিরছিল সেন্টু। সঠিক সময়ে ট্রেনও ছেড়েছিল হাওড়া থেকে। কিন্তু লাইনক্লিয়ার না পাওয়ার কারণে বিভূতি এক্সপ্রেস ডানকুনিতে এসে দাঁড়িয়ে পড়েছিল। প্রায় এক ঘন্টা দাঁড়িয়ে থাকার পর এনাউন্সম্যান্ট হোল--ট্রেনের ইঞ্জিন বিকল হয়ে যাওয়ার কারণে ট্রেন ছাড়তে আরও দেরি হবে। কখন ছাড়বে তারও কোনো ঠিক নেই। বোতলে যেটুকু জল ছিল তাও শেষ হয়ে গিয়েছিল। সেন্টু ট্রেনের দরজার হাতল ধরে এদিক-ওদিক তাকিয়েও সেইসময় দেখতে পায় নি কোনো জলের কল। কনকনে ঠাণ্ডায় সমস্ত স্টল তো বন্ধ হয়েই ছিল, হকাররাও ঘরমুখো হয়ে গিয়েছিল বলে কাঁধে ব্যাগ নিয়ে ট্রেন থেকে নেমে পড়তে বাধ্য হয়েছিল সেন্টু। পেটের ইঁদুরটার তাণ্ডবে সেইসময় পাগল হয়ে উঠেছিল সে। সুতরাং কিছু জলখাবারের খোঁজ। খুঁজতে খুঁজতে দিশাহারা। একে শীত, তার উপর রাত্রিবেলা। কি করবে ভেবে পাচ্ছিল না সে। ওদিকে বর্ধমানে ঠিক সময়ে পৌঁছাতে না পারলে তার উদ্দেশ্যটাই হয়তো বিফল হয়ে যেতে পারে। কম্বল-জামা-প্যান্ট-সোয়েটার-টুপিতে ভর্তি ব্যাগ। কমপক্ষে দশ হাজার টাকার বস্ত্র। পরের দিন ২৫ শে ডিসেম্বর বর্ধমানের লায়ন্স ক্লাব সংলগ্ন মাঠে সকাল সাতটা থেকে বস্ত্র বিতরণ অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার কথা। ঠিক সময়ে পৌঁছাতে না পারলে পণ্ড হয়ে যেতে পারে তার সেই মহৎ অনুষ্ঠান। যে অনুষ্ঠানে পথশিশুদের দেওয়া হবে সেই বস্ত্র। পেটে ক্ষিদে আর গলায় তেষ্টা নিয়ে যখন কি করবে ভেবে পাচ্ছিল না সেন্টু, সেই সময় তার চোখে পড়লো এক অদ্ভুত দৃশ্য। কিছুদূর অন্তত অন্তর প্লাটফর্মের উপর শায়িত হয়ে আছে কতই না মানুষ। প্ল্যাটফর্মের ছাদনের তলায় স্থান হয় না বলে খোলা আকাশের নীচেই কাটাতে হয় তাদের রাতের পর রাত। সেন্টু দেখলো, খালি গায়েই মা-কে জড়িয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে কেউ কেউ। কেউ বা মশার কামড়ে এপাশ-ওপাশ। এই রকম দৃশ্য দেখে সেন্টুর মানসিকতায় এল অসম্ভবরকমের এক পরিবর্তন ! ভুলে গেল সে আগামীকালের অনুষ্ঠানের কথা। পিঠে রাখা বস্ত্রের ব্যাগ থেকে গোটা কয়েক কম্বল ও শোয়েটার বের করে একটার পর একটা দিতে শুরু করে দিল প্লাটফর্মবাসী সেইসব ঘুমন্ত মানুষদের। সারাদিনের পরিশ্রম, তার উপর পেটের কামড় ! সহ্য করতে না পেরে সেন্টু একসময় অজ্ঞান হয়ে পড়েছিল প্ল্যাটফর্মের উপর। ফেরার ট্রেন বিভূতি এক্সপ্রেস কখন যে ছেড়ে দিয়েছে বুঝতেই পারে নি সে। সারারাত ওই অবস্থায় পড়েছিল সেখানে। এমন কোনো সহৃদয় রেলযাত্রী ছিল না, যাকে নাড়া দিতে পেরেছিল সেন্টুর এই শোচনীয় অবস্থায়।
      এদিকে প্ল্যাটফর্মবাসী শীতার্ত মানুষগুলোর ভোরের আলো ফোটার আগেই ঘুম ভাঙলে দেখে, নিজেদের গায়ে জড়ানো নূতন কম্বল--বাচ্চাদের পাশে শোয়েটার। তারা অবাক হয়ে এদিক ওদিক চেয়ে দেখতেই নজরে এল, প্যান্ট-শার্ট পরা এক যুবক কাতরাচ্ছে। তাদেরই দু'জন সামনে গিয়ে ব্যাপারটা বুঝলো। সঙ্গে সঙ্গে বোতলে রাখা নিজেদের পানের জল দিয়ে সেন্টুর মুখে ছিটিয়ে সযত্নে জ্ঞান ফেরানোর চেষ্টা করলো তারা। একসময় জ্ঞান ফিরলে ভাঙা গলায় সব কথাই বললো সেন্টু তাদের কাছে। তারা এই ঘটনার অনুপুঙ্খ বর্ণনা শুনলো। সেন্টুও জানতে পারলো নিজের জ্ঞান ফিরে পাওয়ার কারণ। ততক্ষণে ৩-আপ হাওড়া-বর্ধমান লোক্যাল ট্রেন ঢোকার সময় হয়ে এসেছে। ব্যাগে কিছু শোয়েটার ও টুপি রেখে দিয়ে বাকিগুলো ওদের  দিয়ে সেন্টু বললো--
---যারা পায় নি, তাদের প্রত্যেককে না হলেও আপাততঃ যতজনকে দেওয়া যায় দিয়ে দিও এগুলো।
   তাদের মধ্য থেকে একজন বললো--
-- কিন্তু, আইজকে তো তুমাকে আবার কাপড়বিলির ঠাঁনে কাপড় বিলি করতি হবি...
  সেন্টু বিনয়ের সুরে বললো--
--তাতে হয়েছেটা কি, তোমাদেরও তো প্রয়োজন আছে। ওই অনুষ্ঠানে আমি ছাড়া আরও অনেকেই বস্ত্র দান করবে। প্রতি বছর আমরা শীতে কোনো একটা দিন ঠিক করে তাদের পাশে দাঁড়াই। তাদেরকে তো প্রতি বছরই দেওয়া হয়, কিন্তু তোমাদের কথা কে ভাবে ? গতরাত্রের ঘটনাটা যদি না ঘটতো আমার কাছে অজানায় থেকে যেত রাতের প্ল্যাটফর্ম ! আমার চোখ খুলে দিয়েছো তোমরা।
    প্ল্যাটফর্মবাসী বললো--
---বাবু, হামরা ছুটুলোক। কখুনো ভিক্ষে মেগে কখুনো বা ঞঁটো খাবার খুঁটে দিন কাটাই...
   প্ল্যাটফর্মবাসীর মুখ চেপে সেন্টু স্নেহের সুরে কাঁপা গলায় বললো--
---চুপ করো ! আর একটি বারের জন্যও একথা মুখে আনবে না। তোমরা না থাকলে হয়তো বা মৃত্যুও হতে পারতো আমার। তাতে সভ্য সমাজের কোনো বোধদয় হতো কিনা জানি না, তবে মৃত্যুর পরপারে নিজেকে এই বলে সান্ত্বনা দিতাম যে, পৃথিবী শুধু রাঙে মোড়াই নয়--আনাচে-কানাচে খুঁজে দেখলে অযত্নে-অবহেলায় পড়ে আছে এখনো অনেক  হিরে-মানিক ...
        সেন্টুর কথা শেষ হতে না হতেই ঢুকে পড়লো ৩-আপ হাওড়া-বর্ধমান প্যাসেঞ্জার। চোখের জল মুছতে মুছতে সেন্টুকে ধরে ট্রেনে চাপিয়ে দিল নিরন্নরা। ট্রেন ছাড়লো। ট্রেনের জানালা থেকে হাত বাড়িয়ে চোখের জলে বিদায় নিল সেন্টু। গতি ক্রমশ বাড়তে বাড়তে ট্রেন ছুটলো বর্ধমানের উদ্দেশ্যে। তাদের পানে একদৃষ্টে চেয়ে থাকতে থাকতে সেন্টুর চোখের কোণে গড়িয়ে এল জল। শান্ত অথচ করুণ সেই "বোবা-কালা" মুখগুলো ক্রমশ ছোট হতে হতে পেরিয়ে গেল দৃষ্টির সীমারেখা...!
----------------------------------------------------------
তপন কুমার মাজি, 
কোর্টমোড়, আসানসোল- ০৪, প: বর্ধমান,
মুঠোফোন: ৯৮০০০৩৩৬৭৭
---------------------------------------------------------

জনপ্রিয় লেখা

প্রবন্ধ ।। লুপ্ত ও লুপ্তপ্রায় গ্রামীণ জীবিকা ।। শ্রীজিৎ জানা

মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা 2024 সংখ্যার জন্য লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি

সাহিত্যের মাটিতে এক বীজ : "ত্রয়ী কাব্য" -- সুনন্দ মন্ডল

কবিতা ।। বসন্তের কোকিল তুমি ।। বিচিত্র কুমার

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৭৯তম সংখ্যা ।। আশ্বিন ১৪৩১ সেপ্টেম্বর ২০২৪

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮০তম সংখ্যা ।। কার্তিক ১৪৩১ অক্টোবর ২০২৪

লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি : মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা ২০২৫

"নবপ্রভাত" ৩০তম বর্ষপূর্তি স্মারক সম্মাননার জন্য প্রকাশিত গ্রন্থ ও পত্রপত্রিকা আহ্বান

উৎসবের সৌন্দর্য: সেকালে ও একালে।। সৌরভ পুরকাইত

মুদ্রিত নবপ্রভাত উৎসব ২০২৩ সংখ্যার ডাউনলোড লিঙ্ক