google-site-verification=aFCzFTmuVjPqPlrdWXeJSj2r_EMig_cypLnlmiUQpw0 re অণুগল্প - স্বাগতম দে - নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

Breaking

নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

NABAPRAVAT : A Monthly Bengali Literary Blogzine.

শুক্রবার, ১৭ জানুয়ারী, ২০২০

অণুগল্প - স্বাগতম দে


চারুলতার মা

● জানালার ফাঁক দিয়ে এক দৃষ্টিতে বাইরে তাকিয়ে ছিলেন অঞ্জলি । আর হাত কয়েক খুঁড়লেই উঠে আসবে সত্যটা। মাটির গভীরে যাকে এদ্দিন লুকিয়ে রেখেছে অঞ্জলি ।
সামনেই কিছু সুপারি গাছের সারি। তারপর রয়েছে বহু পুরনো একটা শিউলি গাছ আর ডালিম গাছ। ডালিম গাছটা শাশুড়ি মায়ের বসানো। আর শিউলি গাছটা দীপ যখন ছোট ছিল তখন কোথা থেকে যেন এনে বসিয়েছিল। তা হয়ে গেল ঊনিশ বছর। অঞ্জলি, তখন ভাবতেও পারেননি গাছটা টিকবে। লতপতে একটা চারাগাছ। ক'টা পাতা শুধু সম্বল। ঠিক যেমন চারুলতা। হার জিরজিরে শরীরে শুধু একটা বাদামি চামড়া সম্বল। কিন্তু টিকেছিল। আসলে গাছ হোক আর মানুষই হোক টিকতে গেলে একটা সাহসী কলজে লাগে যেটা সবার থাকে না। মাথা তোলার সাহস।
চারুলতা ।  কত আর হবে এই বছর চারেকের যখন ওর মা কল্পনা ওকে নিয়ে অঞ্জলির বাড়ি এল। দেশ মানে ভিটে ছেড়ে এই কোলকাতার বনেদি বাড়িতে ঠিকে কাজ। মেয়েটাকে কোলে নিয়ে চলে এসেছিল। স্বামী পতঙ্গের মত ঝাঁপ দিয়েছিল অন্য নারীর আগুনে। আর কিই বা করত কল্পনা । সে যে মা। চারুলতার মা।
দিন পনের আগে চারুলতা যেদিন অঞ্জলির কাছে শাড়ি চাইতে এল পাড়ার বিয়েবাড়ি যাবে বলে সেদিন অঞ্জলি টের পেলেন ডালপালা মেলে চারুলতা এখন গাছ। ফুল ফোটেনি তবে কুঁড়ি ধরেছে বেশ। চামড়ার বাদামি রঙ ফিকে হয়েছে। লকলকে একটা তাজা ভাব। মেয়েটা যখন আসে দীপ তখন পড়াশোনার জন্য হোস্টেলে। সেদিন থেকে সমস্ত স্নেহ উজাড় করে দিয়েছিলেন মেয়েটার ওপর। মেয়েরা তো গাছেরই জাত। ঠিকঠাক স্নেহ যত্ন পেলে ঠিক ফল দেয়।
বড় নিশ্চিন্ত বোধ হয়েছিল তার। তবে সেদিন যে আরো একজন অলক্ষ্যে চারুলতার শরীরের মাপ নিয়েছিল তা অঞ্জলি বুঝতে পারেননি।
"বৌদিদি, পুলিশ বাবু একবার এ ঘরে আসতে চাইছেন। তাকে কি.."
কল্পনার গলা পেয়ে অঞ্জলি সঙ্গে সঙ্গে পিছনে তাকালেন।
"আর একটু পরে। আগে তোর দাদাবাবুর লাশটা উঠে আসুক।"
কল্পনা ঘাড় নেড়ে নিঃশব্দে বেরিয়ে যায়।
অঞ্জলি আবার জানালা দিয়ে তাকালেন। সম্বিতের লাশ আর একটু পরেই উঠে আসবে। গোনা হবে তার শরীরের আঘাত চিহ্ন। গুনে গুনে আঠারোটা। চারুলতার অসাড় শরীরেও ঠিক আঠারোটা আঘাত ছিল। হিসেবে কোনো গন্ডগোল হয়নি। তারপর কল্পনার সাহায্যে ওর নোংরা শরীরটাকে পুঁতে দিয়েছিলেন মাটির গভীরে। চারুলতা এই জানালা থেকে ফ্যালফ্যাল চোখে তাকিয়েছিল।
ঠোঁটের কোণে হালকা হাসি এসেই মিলিয়ে গেল তার। নিজেকে গুছিয়ে নিলেন। দীপকে লেখা চিঠিখানা ভাঁজ করে ডাকলেন ,'কল্পনা!'
কল্পনা ঘরে এল। কঠিন মুখ। আবেগহীন। যেন পাথরের  মূর্তি। শুধু চোখদুটোয় একটা ধিকধিক আগুন জানান দেয় যে সে একজন মা।
চারুলতার মা!
–-------------------------------------

- স্বাগতম দে
আনরবাটী, আঁটপুর, হুগলী
ফোন - 7477446782