google-site-verification=aFCzFTmuVjPqPlrdWXeJSj2r_EMig_cypLnlmiUQpw0 re মৌমিতা ঘোষালের মুক্তগদ্য - নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

Breaking

নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

NABAPRAVAT : A Monthly Bengali Literary Blogzine.

শুক্রবার, ২১ ফেব্রুয়ারী, ২০২০

মৌমিতা ঘোষালের মুক্তগদ্য



একুশে



সূর্যটা সেদিন আলাদা ছিল না। শুধু এক ভাষার অস্তিত্ব ছিনিয়ে যাবার বিরুদ্ধে সেদিনের রাস্তায় নেমেছিল হাজার হাজার মানুষ, তারা না দেশ-রাষ্ট্র-সত্তা চেয়েছিল, না চেয়েছিল তাদের নিজস্ব ব্যক্তিগত কোনো দাবি। তারা প্রত্যেকেই চেয়েছিল সন্মান, নিজের ভাষার সন্মান। ১৯৫২, ২১শে ফেব্রুয়ারি। ঢাকার রাজপথে নেমে আসে হাজার হাজার বাঙালি, দাবি একটাই 'বাংলা' ভাষা। গুলি চলে। নির্মম ভাবে রক্তাক্ত হয় রাজপথ। তবুও আন্দোলন চলে, মাতৃভাষা বুকে ধরে বাঙালি অমর করে তোলে একুশে-কে। সন্মান-প্রাণ-নাড়ীর টান নিজের ভাষাকে আমৃত্যু বলার স্বাধীনতার রাগে একুশের সূর্য অমর আমার বুকে। হ্যাঁ, আমি সেই বাঙালি। আমার জীবনের প্রথম সূর্য আমাকে বাংলা ভাষা চিনিয়েছে। ছোটবেলায় মায়ের কোলে নিয়ে মাথায় বিলি কেটে দিতে দিতে 'এক যে ছিল রাজপুত্তুর...' রূপকথায় বেঁধে দিত সমস্ত স্বপ্নটা। আমি মায়ের বুলিতে বুনে তুললাম আস্ত একটা জগত। আমার বাংলা শৈশব জুড়ে খেলার মাঠে, পড়ার বইয়ে, দুষ্টুমি ঘিরে,ভালোবাসায়, দুঃখে, রাগে, কান্না-হাসিতে দু'হাত ভরিয়ে দিয়েছে। প্রত্যেক হোঁচটে 'মা গো' বলে কাতরেছি। 'ধ্যাত্তেরি' বলে বিরক্ত হয়েছি। প্রেমিককে 'ভালোবাসি' জানিয়ে তার রাঙা গালে বাংলাকে রঙিন হতে দেখেছি। নিজের অধিকার-সম্মানে, তর্কে-বিতর্কে, আবেগে-আন্দোলনে বাংলা আমার ভাবনায় এনেছে প্রাণ। প্রৌঢ়া আমি যখন শেষ শয্যার আমার বাংলায় আমি চেয়েছি 'জল', চেয়েছি ফিরে আসতে আবার, এই বাংলায়। আবার এই ভাষায় গুনগুনিয়ে, আমার অগোছালো স্বপ্ন সাজাতে আমার মায়ের ভাষায়। চেয়েছি পরজন্মের সূর্য যেন আবার আসে এই ভাষায় ঘিরে। হ্যাঁ, আমি সেই বাঙালি যার নাড়ীর টানে শুধু বাংলা। যার মাতৃভাষার উপর একটা আঁচড় লাগলে হাজার হাজার রফিক, জব্বর, বরকত নেমে আসবে রাস্তায়, তারা না দেখবে ধর্ম, না মানবে শাসক দলের ভ্রুকুটি, বুকের রক্ত ঝরিয়ে শাসকের দম্ভ চুর্ন করে ছিনিয়ে নেবেই মাতৃভাষার সম্মান। একুশে অমর, একুশে শাশ্বত।

=============

মৌমিতা ঘোষাল
বাঁকুড়া