Featured Post

"নবপ্রভাত" ৩০তম বর্ষপূর্তি স্মারক সম্মাননার জন্য প্রকাশিত গ্রন্থ ও পত্রপত্রিকা আহ্বান

ছবি
  "নবপ্রভাত" সাহিত্যপত্রের ৩০তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে আমরা নির্বাচিত কয়েকজন কবি-সাহিত্যিক ও পত্রিকা সম্পাদককে স্মারক সম্মাননা জানাতে চাই। শ্রদ্ধেয় কবি-সাহিত্যিক-নাট্যকারদের (এমনকি প্রকাশকদের) প্রতি আবেদন, আপনাদের প্রকাশিত গ্রন্থ আমাদের পাঠান। সঙ্গে দিন লেখক পরিচিতি। একক গ্রন্থ, যৌথ গ্রন্থ, সম্পাদিত সংকলন সবই পাঠাতে পারেন। বইয়ের সঙ্গে দিন লেখকের/সম্পাদকের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি।  ২০১৯ থেকে ২০২৪-এর মধ্যে প্রকাশিত গ্রন্থ পাঠানো যাবে। মাননীয় সম্পাদকগণ তাঁদের প্রকাশিত পত্রপত্রিকা পাঠান। সঙ্গে জানান পত্রিকার লড়াই সংগ্রামের ইতিহাস। ২০২৩-২০২৪-এর মধ্যে প্রকাশিত পত্রপত্রিকা পাঠানো যাবে। শুধুমাত্র প্রাপ্ত গ্রন্থগুলির মধ্য থেকে আমরা কয়েকজন কবি / ছড়াকার / কথাকার / প্রাবন্ধিক/ নাট্যকার এবং সম্পাদককে সম্মাননা জ্ঞাপন করে ধন্য হব কলকাতার কোনো একটি হলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে (অক্টোবর/নভেম্বর ২০২৪)।  আমন্ত্রণ পাবেন সকলেই। প্রাপ্ত সমস্ত গ্রন্থ ও পত্রপত্রিকার পরিচিতি এবং বাছাই কিছু গ্রন্থ ও পত্রিকার আলোচনা ছাপা হবে নবপ্রভাতের স্মারক সংখ্যায়। আপনাদের সহযোগিতা একান্ত কাম্য। ঠিকানাঃ নিরাশাহরণ নস্কর, সম্পাদকঃ নব

প্রবন্ধ বটু কৃষ্ণ হালদার




বাঙালির বাংলা ভাষা চেতনাবোধ দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে




   



 "আজ বাঙালি ভুলে গেছে স্বাধীন ভাবে চলতে, / বাঙালি আজ ভুলে গেছে বাংলা ভাষা বলতে। বাঙালি আজ হয়ে গেছে অন্য ভাষার দাস, / বাংলা ভাষায় বললে কথা, পড়বে তোমার লাশ" সত্যই আজ বাঙালি ভুলে গেছে  বাংলা ভাষার কদর ভুলে গেছে বাঙালি জাতির মুনসিয়ানা। 'নানা ভাষা, নানা মত নানা পরিধান'  শব্দবন্ধটির মধ্যে দিয়ে ধারণা করতে পারি, স্বাধীনতার পরে এই আধুনিক ভারতে বিভিন্ন ভাষা, সভ্যতা, সংস্কৃতির মানুষ জন বসবাস করেন। ভাষা বা সভ্যতা সংস্কৃতি হল জাতি বা বংশের যোগ সুত্র। ভিন্ন ভাষা সংস্কৃতি সভ্যতার মধ্যে দিয়ে তারা একাত্মতায় বিলীন হয়। তার মধ্যে একটি জনপ্রিয় রুচিসম্মত মার্জিত ভাষা হল বাঙালি জাতির বাংলা ভাষা। এই বাংলা ভাষা সমাজে জাতীয় স্তরে স্বীকৃত অর্জন করতে বহু বার ইতিহাসে রক্তক্ষয়ী অধ্যায়ের সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে বাঙালি জাতির তো ভুলে যাবার কথা  আজ নয়ই।



                কিন্তু বর্তমানে সমাজ চিত্রে বাঙালির বাংলা ভাষার পরম্পরা গত মান যে তলানিতে ঠেকে গেছে তা সন্দেহের অবকাশ রাখে না আমেরিকায়, অস্ট্রেলিয়ার সংবিধান সভায় বাংলা ভাষাকে স্বীকৃত দিয়েছে।



                "নানা ভাষা নানা মত নানা পরিধান / বিবিধের মাঝে দেখো মিলন মহান" এই  শব্দগুলির মধ্যে কফিনের শেষ পেরেক পোতা হয়েছিল।বাঙ্গালীর বাংলা ভাষা চেতনা বর্তমান জনসমক্ষে হারিয়ে যেতে বসেছে।তবে যে প্রশ্ন টা সবার প্রথমে আমাদের সামনে আসে তা হলো বাঙালি কারা? বাঙালি জাতি হল বঙ্গ অর্থাৎ বাংলাদেশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা, আসাম আন্দামান নিকোবর দীপপুঞ্জ তে বসবাসকারী মানব সম্প্রদায় , যাদের ইতিহাস অন্তত চার হাজার বছর পুরোনোএদের মাতৃভাষা বাংলাতাছাড়া ভারতের নানা রাজ্যতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে. যেমন বিহার, ওড়িশা, উত্তর প্রদেশ, মহারাষ্ট্র সহ বিভিন্ন রাজ্যে।ভারতের উত্তর পূর্ব সীমান্ত রাজ্য গুলি যেমন :অরুণাচল প্রদেশ, মণিপুর, মেঘলায় মিজোরাম এছাড়া ভারতের বাইরে জাপান, মালয়েশিয়া, মায়ানমার, যুক্তরাষ্ট্র, মার্কিন মূলুক ব্যাপী সারা বিশ্বে অনেক প্রবাসী বাঙালি আছে, যারা মুলত বাংলা ভাষার সহিত জড়িত সভ্যতা সংস্কৃতি কে বাহন করে চলেছে তাদের বাঙালি বলা হয়।



            তবে বাঙালি জাতি বলতে বোঝায় যারা শুধু বাংলা ভাষায় কথা বলেন ধর্ম তাদের ভিন্ন হলেও ভাষাগত দিক ছিল একটাই বাংলার স্বাধীন রাজা শশাঙ্ক সপ্তম শতকের গোড়ার দিকে রাজত্ব করেছিলেন তার অরাজকতার জন্য বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী পাল বংশ প্রায় চারশ বছর রাজত্ব করেন।আবার বাংলায় বাঙালি হিন্দু ব্রাহ্মণ ধর্মীয় সেন বংশ অল্প কিছু সময় বাংলায় রাজত্ব করেন তারপর ধীরে ধীরে বাংলায় মুসলিম সম্প্রদায়ের আবির্ভাব হয় বাংলা ভাষা সংস্কৃতি নষ্ট হতে থাকে বহিরাগত মুসলিমদের আগমনে। এক সময় বাঙালি সমাজ অনেক অন্ধকারাচ্ছন্ন , কুসংস্কারে ঢেকেছিল। বাঙালি চেতনায় তখন আধুনিকতার জোয়ার আসেনি যেমন সতীদাহ প্রথা, পর্দাপ্রথা ,গঙ্গা সাগরে কন্যা সন্তান বিসর্জন বিধবা বিবাহ, বাল্য বিবাহ ,ইত্যাদি। অবিভক্ত ভারতে বাংলা ভাষা চেতনা , আধুনিক সভ্যতা, সংস্কৃতির বিকাশ বা বাংলায় নবজাগরণ হয় ব্রিটিশ রাজত্ব কালীন।উনবিংশ শতকে বাংলার সমাজ সংস্কারক আন্দোলনের জোয়ারে বহু মনীষীদের আবির্ভাব হয়।রাজা রামমোহন রায় ,রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ,দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ,রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব, স্বামী বিবেকানন্দ, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ,সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় ,ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ,নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বোস , এমন বহু মনীষীদের দ্বারা শিক্ষা-দীক্ষায় ,সৃজনশীল শিক্ষা দর্শনের সাহিত্য আসে আমূল পরিবর্তন।



                সে কথা বাঙালি আজ ভুলে যেতে বসেছে, ভুলতে ভুলতে ভুলে গেছে সেই রক্তাক্ত ইতিহাসের কথা। যে প্রাণের ভাষার জন্যে প্রাণ দেন সালাম, রফিক, বরকতরা।সালটা ছিল ১৯৫২ ,বাংলাদেশ ছিল পাকিস্তানের অধীনে, উর্দু ভাষাকে রাষ্ট্রীয় ভাষা ঘোষণা করেন।আপামর জনসাধারণ মনে প্রাণে সেই ঘোষণা মন থেকে মেনে নিতে পারেনি, ভুলতে পারেনি যে উর্দু নয়, বাংলা তাদের প্রাণের প্রিয় ভাষা।শুরু হয়বাংলা ভাষার তরে  আন্দোলন। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি দিনটি এক অমর রঞ্জিত রক্তে রাঙা ইতিহাস হয়ে আছে। পাকিস্তানি প্রতিষ্ঠার প্রাক্কালে আলীগড় মুসলিম বিশ্ব বিদ্যালয়ের ভাইস চান্সলর জিয়াউদ্দিন আহমদ এক বিবৃতিতে পাকিস্তানের রাষ্ট্র ভাষা উর্দু হওয়া উচিত মনে করেন।কিন্তু শাহীদুল্লা সহ ভাষাবিদগণ জনগণ মেনে নেননি সেই প্রস্তাব , কারণ তাদের শিরায় শিরায় তখন বাংলা ভাষা একমাত্র অবলম্বন বলে মনে করেন কারণ জন্মের পর এই ভাষায় তারা প্রথম মা বলে ডেকেছে. তাই তারা তীব্র প্রতিবাদ জানান। কিন্তু রাষ্ট্র ভাষা প্রশ্ন তে মুসলিম লীগ এর পক্ষ থেকে কোনো প্রস্তাব গৃহীত না হলে রাষ্ট্রের প্রশাসনে বাঙালি উচ্চ পদস্থ আমলাদের আধিক্যর কারণে ভিতরে ভিতরে উর্দু কে একমাত্র রাষ্ট্র ভাষা করার চক্রান্ত চালাতে থাকে।এ চক্রান্ত ধরা পড়ে যায় নতুন রাষ্ট্রে পোস্টকার্ড, এনভেলাপ, প্রভৃতিতে ইংলিশ শব্দ এর সঙ্গে উর্দু ভাষার ব্যবহার দেখে. তমদ্দুন মজলি,১৯৪৭ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর পাকিস্তানের রাষ্ট্র ভাষা বাংলা না উর্দু শীর্ষক পুস্তক লিখে ভাষা আন্দোলনের সূচনা করেন। এর পর তমদ্দুন মজলিশ বসে থাকেনি, ছাত্র শিক্ষক কর্মী সংযোগ বৈঠক করেন।এই সব কাজের মূল উদ্যোক্তা ছিলেন এই মজলিশের প্রতিষ্ঠাতা আবুল কাশেম।ওই বছরবিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিজ্ঞানের শিক্ষক অধ্যাপক নুরুল হক ভুঁইয়াকে আহবায়ক করে রাষ্ট্র ভাষা সংগ্রামের পরিষদ গঠন করেন।চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে বাংলা ভাষা আন্দোলন এর আগুন।১৯৪৮সালের ৪ঠা জানুয়ারি পূর্ব বঙ্গীয় প্রাদেশিক মুসলিম ছাত্র লীগের একটি অংশ পূর্ব পাকিস্তানের মুসলিম ছাত্র লীগ নামে একটি সংগঠন আত্ম প্রকাশ করেন।প্রতিষ্ঠার পর থেকে সংগঠন ভাষা আন্দোলনের প্রশ্নে মতদ্দুন মজলিশের অবস্থানকে সমর্থন করেন। লীগ এর নামকরন করা হয় সংগ্রাম পরিষদ। এই লীগ এর পক্ষ থেকে ১১ই মার্চ থেকে ১৯মার্চ পর্যন্ত ঢাকা শহরের সর্বত্র বাংলা ভাষার দাবিতে বিক্ষোভ চলতে থাকে১৯ শে মার্চ কায়েদে আজম জিন্নাহর ঢাকা সফর করার কথা ঘোষণা করা হয়।এই সফরের আগে তৎকালীন চিফ মিনিস্টার খাজা নাজিম উদ্দিন পরিস্থিতি সামাল দিতে সকল দাবি দাওয়া মেনে নিয়ে সংগ্রাম পরিষদ এর সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করেন। এর পর জিন্নাহ ঢাকা শহরের রেসকোর্স ময়দানে এক জনসভায় কার্জন হলের বিশেষ সমার্তন অনুষ্ঠানে ভাষণ দেন উর্দুতেএবং সেই সঙ্গে উর্দু কে রাষ্ট্র ভাষার মর্যাদা দান করেন। কিন্তু সেই ভাষণে ব্যপক প্রতিবাদ হয়।বিশাল জনসভায় প্রতিবাদ টের না পেলে এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত কিছু তরুণ যখন ভাষা সম্পর্কে তার বক্তব্যর প্রতিবাদ জানায় তখন তিনি থমকে যান এবং বক্তব্য শেষ না করে ফিরে আসেন।পরদিন তিনি বাংলা ভাষা সমর্থকদের সঙ্গে বৈঠক করেন কিন্তু উভয়েই নিজ নিজ বক্তব্য তে অবিচল থাকায় বৈঠক ভেঙে যায়।এই ভাবে চলতে থাকে আন্দোলন, অবশেষে সাল টা ছিল ১৯৫২, খাজা নাজিম উদ্দিন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হিসাবে ঢাকায় এসে ২৭ শে জানুয়ারি পল্টন ময়দানে এক জন সভায় ভাষণ দেন উর্দু ভাষায় এবং সেই সঙ্গে ঘোষণা করেন উর্দু হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্র ভাষা, যে নাজিম উদ্দিন ১৯৪৮ সালে বাংলা রাষ্ট্র ভাষা দাবি মেনে নিয়ে চুক্তি স্বাক্ষর করেছিলেন, তাঁর হেন ঘোষণায় বিশ্বাসঘাতক তার প্রতিবাদ ১৯৫২ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারি প্রতিবাদ দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এই দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বহু সংখ্যক ছাত্র প্রগতিশীল কিছু রাজনৈতিক কর্মী মিলে মিছিল শুরু করেন। মিছিল ঢাকা মেডিকেল কলেজের কাছাকাছি আসতেই পুলিশ ১৪৪ ধারা অবমাননার অজুহাতে আন্দোলনকারীদের উপর গুলি বর্ষণ করেন, নিহত হন বাংলা ভাষা বুকের মাঝে রাখতে চাওয়া বীর সন্তানেরl রফিক, সালাম, বরকত সহ বহু বীর সন্তানেরা। শহীদ দের রক্তে রঞ্জিত হয়ে গেলো রাজপথ, আবার লেখা হলো প্রতিবাদী দের রক্তে রঞ্জিত অভিশপ্ত ইতিহাস. শোকবহ ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় সমগ্র পূর্ব পাকিস্তানে তীব্র ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে, তখন থেকে প্রতিবছর ২১শে ফেব্রুয়ারি দিনটিকে শোক দিবস হিসাবে পালন করা হয়অবশেষে ১৯৫৪ সালে প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট জয়লাভ করলে ইমে অনুষ্ঠিত গণ পরিষদের অধিবেশনে বাংলা ভাষাকে পাকিস্তানের অন্যতম ভাষা হিসাবে স্বীকৃতি দেয়া হয়।  আবারো প্রমাণ হয়ে গেল যে আন্দোলন যদি সঠিক পথে হয় জয় লাভ হবেই হবে, প্রতিপক্ষ একদিন ঠিক পরাজয় মানবে



                ১৯৫২সালে ২১শে ফেব্রুয়ারী ঢাকার ইতিহাসে ঘটে যাওয়া ভাষা আন্দোলনের মর্যাদা রক্ষার দ্বিতীয় আন্দোলন হোল ১৯৬১ সালে ১৯ শে মে আসামের বরাক উপত্যকা ঘটে যাওয়া ভাষা আন্দোলন. ১৯ শে মে শিলচর ভাষা দিবস হিসাবে পালিত হয় কারণ এই উপত্যকায় বসবাস কারি সংখ্যা গরিষ্ট বাঙালি তাদের বাংলা ভাষা কে স্বীকৃতি দিতে পথে নেমেছিল।  আর তাতে চলেছিল গুলি বর্ষণ, যাতে কমলা ভট্টাচার্য সহ শহীদ হয়েছিলেন এগারো জন ভাষা সৈনিক।স্বাধীনতার পর উত্তর ভারত বর্ষের প্রথম ভাষা আন্দোলনের ভাষা শহীদ, এর পর দক্ষিণ ভারতে ব্যপক হিন্দি আধিপত্য বিরোধী ভাষা আন্দোলনের প্রকাশ পায়। এই দেশের ভাষা আন্দোলনের প্রথম হলেন শহীদ ষোড়শী কমলা ভট্টাচার্য কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হল বাংলা ভাষার প্রাণ পুরুষ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্ম শতবর্ষ উদযাপনের মাত্র কয়েক দিন পরেই এই আন্দোলন তথা শহীদ বরণ দিবস। আগে থেকেই চলমান আসামের বাঙ্গাল খেলা, দাঙ্গার সাথে শুধুমাত্র অসমিয়া ভাষা কে আসাম রাজ্যের একমাত্র সরকারী ভাষা ঘোষণা করায়।এই আন্দোলনের সূচনা হয় বরাক উপত্যকায় সত্যlগ্রহ আন্দোলন শিলচর শহরের রেল স্টেশন চত্বরে ঢুকে পড়ে গোটা স্টেশন দখল করে নেয়, অফিস কর্মচারীদের চেয়ারে বসে পড়ে. কর্মকর্তারা বসবার জায়গা না পেয়ে ফিরে যান, প্রশাসন কে অচল করে দেয়, ওই বছর ২৬শে মে ঈদ উৎসবের দিন সকল ধর্ম প্রাণ বাঙালি মুসলমান রা বুকে কালো ব্যাজ পরে হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে নীরব প্রতিবাদে সামিল হন। সাম্প্রদায়িক ঊর্ধ্বে এক গৌরব উজ্জ্বল অধ্যায় এটি। ইতিহাসে অবশেষে বাংলা ভাষা সরকারী স্বীকৃতি লাভ করে।



                মহান শিলচর এর ভাষা আন্দোলন  এক বিশেষ বার্তা বহন করে, নিজ ভাষা ধর্ম ছাড়া অন্য ধর্ম ভাষার প্রতি সমান সম্মান দেওয়া দরকার এটা ফেডারেল রাষ্ট্র নীতি হওয়া দরকার। তাই 21টি স্বীকৃতি ভাষা ছাড়া ভারতবর্ষে অন্যান্য ভাষার সার্বজনীন অধিকার নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব।



            বর্তমানে বাংলা ভাষার পরম্পরাগত মান আজ তলানিতে এসে ঠেকে গেছে তার সন্দেহের অবকাশ রাখে না তবে নিয়ে তর্ক বিতর্ক বিতর্ক যতই থাকুক এটা প্রমাণ হয় যে বাঙালি জাতি সমাজ বড্ড উদাসীন।তবে একশ্রেণীর বুদ্ধিজীবী মহল কিন্তুঅন্য কথা বলছে, বাঙালিরা আজ হিন্দি ভাষার দাসত্ব করতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছে।। আজ বাঙালি নিজেদের বিকিয়ে দিয়েছে পশ্চিম বাংলায় বাংলা মিডিয়াম স্কুল গুলোকে তুলে দিয়ে হিন্দি মিডিয়াম স্কুল প্রচলন হোক এই আর্জি বর্তমান নগরায়নের কোনায় কোনায় গুঞ্জরিত বর্তমান সমাজ ব্যবস্থা বাংলা ভাষা কোন ক্ষেত্রে প্রচলন না থাকায় ভাষাকে বাড়তি চাপ হিসেবে নিচ্ছেন অনেকে। তারা বলেন যে, বাংলা ভাষা কোন কাজে লাগে না তাকে টিকিয়ে রাখার চেষ্টা না করাই ভালো। যে খাদ্য মেনুতে থাকলে বদ হজম হবে তাতো রাখার দরকার নে সমস্ত সরকারি অফিস আদালত কোর্ট কাচারি বাংলা ভাষার আদল নকশা কে পাল্টে দেওয়ার রেয়াজ শুরু হয়েছে।যদি এই সমস্ত জায়গায় হিন্দি ভাষার একটা প্রচলন চলে আসছে সবার অলক্ষে ," যেমন চোরা পথ বেয়ে জলের ধারা বেয়ে আসে", অন্যান্য ভাষা গুলি বাংলায় তেমনই বিরাজ করতে থাকে। আবার এটা সত্য বাংলা ভাষার সঠিক প্রয়োগ বা তাকে রাষ্ট্রীয় মাত্রায় বাস্তব রূপ দেওয়ার কোনো পরিকল্পনা নেই। বাংলা ভাষার গণ্ডি তো শুধুমাত্র বাংলার মধ্যে সীমাবদ্ধ, তাকে সঠিক জায়গায় গড়ে তোলা হয়নি।



            পরিবর্তনশীল সভ্যতার সঙ্গে পাল্লা দিতে এতে মানুষ সময়ে ইংরেজি হিন্দি ভাষার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়েছে কারণ রুজি-রুটির ক্ষেত্র বলতে বাংলা ভাষা তেমন কোনো কাজে লাগে না তার ওপরে খোদ বাংলার বুকে জন্ম নিয়েছে ইংরেজি হিন্দি মিডিয়াম স্কুল গুলি। এ বাংলার বুকে হিন্দি মিডিয়াম ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল গুলির বাড়বাড়ন্ত আজ কাদের জন্য, তা বোধহয় ঢাকঢোল পিটিয়ে বলবার অবকাশ রাখে না



            বর্তমানে বাংলায় বাঙালির ভাষা চেতনা কি স্বমহিমায় উজ্জ্বল তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে বুদ্ধিজীবী মহলে এই বাংলায় যে সমস্ত প্রাচীন সভ্যতা, সংস্কৃতির, সঙ্গে এখনকার জনগণ পরিচিত ছিলেন আজ তা বিলুপ্তির পথে।গ্রামবাংলায় লোকসংস্কৃতি, যাত্রা গান , পালা গান ,নাম সংকীর্তন, পৌষ সংক্রান্তি, পয়লা বৈশাখ এর মত নানান অনুষ্ঠানকে ঘিরে দেখা দিত উন্মাদনা। বর্তমানে বাঙালি সমাজে এইসব অনুষ্ঠানকে ঘিরে আর মেতে ওঠে না। মাছ , ভাত , ডাল , পোস্ত ছেড়ে বাঙালি আজ হয়েছে রেস্তোরাঁ মুখী।ধুতি পাঞ্জাবি ছেড়ে বাঙালি হয়েছে সুট ,বুট কোট আর টাই অভ্যস্ত আজ থেকে প্রায় ১০-১৫ বছর আগে মানুষ মানুষের প্রতি সম্মাননা সমীহ করার একটা রীতি রেওয়াজ ছিল , ছিল আন্তরিকতা , একে অপরের বিপদে ঝাপিয়ে পড়তো , সব আজ লোককাহিনী মাত্র এখন বলা যায় বাঙালি ভুলে গেছে নিজের কথা বলতে।পরিবর্তনশীল আধুনিক সভ্যতায় তালিম দিতে দিতে বাঙালি আজ ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। নকল করতে করতে বাঙালি আজ নিজের ভাষা সংস্কৃতি যেমন রপ্ত করতে পারেনি তেমনি পারেনি অন্য ভাষা কে নিজের মতো করে বশ করতে দু নৌকার মাঝে আটকে গেছে বাঙালির ভাষা চেতনা বোধ। সমাজ ব্যবস্থা থেকে হারিয়ে যাচ্ছে বিবেকবোধ নৈতিকতা বাঙালি চেতনা বোধ আজও তলানিতে এসে ঠেকেছে তার প্রমাণ পেয়েছি বহুবার।



                ===================



বটু কৃষ্ণ হালদার, 327 /3 M. G road, Rosy apperment, post. R. C THAKURANI HARIDEV PUR KABARDANGA KOLKATA 700104 PH. 9830420904, 8617255958

নবপ্রভাত সম্মাননা ২০২৪

নবপ্রভাত সম্মাননা ২০২৪

জনপ্রিয় লেখা

মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা 2024 সংখ্যার জন্য লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি

প্রবন্ধ ।। লুপ্ত ও লুপ্তপ্রায় গ্রামীণ জীবিকা ।। শ্রীজিৎ জানা

সাহিত্যের মাটিতে এক বীজ : "ত্রয়ী কাব্য" -- সুনন্দ মন্ডল

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৬৭তম সংখ্যা ।। আশ্বিন ১৪৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩

কবিতা ।। বসন্তের কোকিল তুমি ।। বিচিত্র কুমার

কোচবিহারের রাস উৎসব ও রাসমেলা: এক ঐতিহ্যবাহী অধ্যায় ।। পার্থ সারথি চক্রবর্তী

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৭৪তম সংখ্যা ।। বৈশাখ ১৪৩১ এপ্রিল ২০২৪

অনুভবে, অনুধ্যানে অনালোকিত কবি গিরীন্দ্রমোহিনী দাসী ।। সুপ্রিয় গঙ্গোপাধ্যায়

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৬৬তম সংখ্যা ।। ভাদ্র ১৪৩০ আগস্ট ২০২৩