ভাষার
জট
********
২১শে
ফেব্রুয়ারি আন্তজার্তিক মাতৃভাষা দিবস পালিত হয়। বাংলা
ভাষা জন্ম দিয়েছে একটি রাষ্ট্রের,
স্বাধীন জাতির। বিশ্বের
সমস্ত মাতৃভাষাকে সন্মান
করতে শিখেয়েছে। মায়ের
ভূমিকা পালন করে বার
বার প্রমাণ করছে মাতৃভাষার মাতৃদুগ্ধ। শত
শহীদের রক্তে রাঙা বাংলাদেশ। বরকত,
সালামরা যা শুরু করেছিল ১৯৫২ সালে। ভাষা
আন্দোলন করতে গিয়ে ঢাকার রাজপথে
শহীদ হয়েছিল। শত শত মুক্তিযোদ্ধার
প্রাণের বিনিময়ে দেশ, ভাষা
মুক্তি পেয়েছিল।
জটিল বাক্যের জট
আছে । বাঙালির
সমাজ ও ভাষার নানা জট। বাংলা
ভাষার জন্ম পূর্ব মাগধী
থেকে। চর্যাপদের
"কাআ তরুবর -----" থেকে
বর্তমান বাংলা ভাষাকে সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক, যানযটে ঘুরপাক খেতে
হচ্ছে। বাংলা
ভাষার মাধুর্য, মর্যাদা, রোমান্টিকতা স্টলে স্টলে বিক্রি
হয়ে যাচ্ছে। ডাল -ভাতের মতো
ফুরিয়ে যাচ্ছে তার অনন্ত পরমায়ু।
বিদ্যাসাগর, রবীন্দ্রনাথ, বঙ্কিমচন্দ্র শরৎচন্দ্র, জীবনানন্দ, নজরুল বহু মনীষা আমাদের
বাংলা ভাষার গৌরবকে যে
মাত্রায় পৌঁছে দিয়েছেন, তাকে
নামাতে নামাতে পাদানি এসে দাঁড়
করানো হয়েছে। বিদ্যুৎ
হুকিং এর মতো বাংলা
ভাষার হুকিং করতে করতে ভাষায়
দেহে গালিগালাজ, অপশব্দ, অপশাসন চলছে। সুগভীর
চক্রান্ত করে বাংলা ভাষাকে
একটু একটু করে কোমার দিকে
ঢেলে দিচ্ছে। সাজানো
বাগান শুকিয়ে গেল।
এই বাগানে গজিয়ে উঠেছে
অসংখ্য ইংরেজি গাছ।
গাছের নকল করতে গিয়ে
বাঙালির সমাজ নিজের মাতৃভাষাকে ভুলতে বসেছে। বাংলা
ভাষা দূষণ, বাংলা ভাষার
বাস্তুতন্ত্র একদিন হযতো মিউজিয়াম রাখা
হবে। পশ্চিমবঙ্গের
মূল শিকড় থেকে বাংলা
ভাষার চাষ উঠিয়ে ইংরেজি
ভাষায় গালিগালাজ শুরু হয়েছে।
ইংরেজি বাংলা ভাষার সহযোগী
হোক, ভারতের প্রদেশের
ভাষাগুলো প্রতিবেশী হোক। আমাদের
দরজা খোলা। কড়া
নাড়লে আমরা সারা দিই। হিন্দি,
ইংরেজি সুচতুর ভাবে আমাদের বাংলা ভাষার গলা টিপে
টিপে শেষ করে দিচ্ছে।
বিকৃত মন, বিকৃত সৃষ্টিকারগণ
বরফে একটু সেলাম জল মিশিয়ে
বাংলা ভাষার ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে শূন্য হাতে রেখে দিচ্ছে। আজও
অফিস, আদালত, বিদ্যালয়, মহাবিদ্যালয়,
গড়পড়তা বাংলা ভাষা কোরোনা ভাইরাসের
সংক্রমণে আক্রান্ত। বাংলা
ভাষার ডাক্তারদের সে দিকে নজর নেই। বাংলা
ভাষার নদীতে সাঁতার কাটতে
জানে এমন বাঙালি ক'জন
আছে।
আজকে আবার যা
চলছে ফেসবুক, WhatsApp, নানা
মাধ্যমে।
“Ami valo " জাতীয়
জগাখিচুরি বাংলা ভাষা। বিদ্যাসাগর মহাশয় বেঁচে থাকলে
বোধ হয় " বর্ণ পরিচয়" উঠিয়ে
নিতেন। যারা
আবার বাংলা বানান বিধি
দেখেন- প্রকাশক, সম্পাদক, রাজনৈতিক
নেতা, সাংবাদিক, টেলিভিশন সিরিয়াল, টেলিফোন, যোগাযোগ, যে যেমন খুশি
বাংলা ভাষাকে খেয়াল খুশিমতো ব্যবহার
করছেন। ভাষায়
ধ্বনিগত রূপগত বৈশিষ্ট্য, বানান
বিধি, সৃজনশীল
গতি, রস, ছন্দ অলঙ্কার, সব
ছন্নছাড়া রোগে আক্রান্ত। বাংলা
ভাষার শিরোমণিগণ বাংলা ভাষাকে বেচে দিচ্ছেন টাকার
বিনিময়ে। আপনার
ব্যবহারে আপনার পরিচয়, কাউকে
আঘাত করা আমার উদেশ্য
নয়। হে
পণ্ডিত! আগে সাঁতার শেখ,
বিশুদ্ধ কোমলপ্রাণ নীতিবাদী বাংলা ভাষার।
‘আপনি কেমন আছিস’ - বাংলা
ভাষাকে অপমান করো না। সব
ভাষার একটি অভিধান, বাংলা
ভাষার, হাজারটা, ই, ঈ ব্যবহার
-- কেউ বলে ‘কাহিনি’ বানানটা ঠিক,
আবার কেউ বলে, ‘কাহিনী’
বানানটা ঠিক। আমি
বলি, দুটোই ঠিক। এই ভাষায় কৌলিন্য
বাঁচিয়ে রেখেছে গ্রাম বাংলার মৌখিক ভাষা
- বীরভূম ১-কোথায় গেল ছিলিস ২-আমপুর
বাজার করতে। মুর্শিদাবাদ
- হাটায় হাটায় চইল্যা যা
না, দুপুর যে গড়াইয়া
গেল। বর্ধমান
- ডেঙায় হাগছে। গযুর
তু কখন এলি। আমি ঢাকার পোলা,
বাঙাল বাঙাল করিস না নইসা, তোকে
কিলাইয়া সুধা করুম। যার
লাইগা ভোজ খাইত্যাছি, তারে
দেখতে ছি না ক্যান।
বাংলা ভাষার বিশুদ্ধতা
রক্ষা করুন। কুকথার বাংলা ভাষার গাড়ি
আস্তে আস্তে চালান। বাংলা ভাষাকে অপমান
হাত থেকে বাঁচাতে
পণ্ডিত গণ - বিশুদ্ধ বাংলা
রক্ত দিন। একটি
ভাষা, একটি প্রাণ। বাংলা ভাষার
গাছ লাগান, বাঙালির প্রাণ
বাঁচান।
*********★**********
গৌর
গোপাল সরকার, নতুন হাসপাতাল
পাড়া, রামপুরহাট, বীর ভূম
ডাকঘর
থানা রামপুরহাট সূচক সংখ্যা ৭৩১২২৪/
ফোন নং ৭৬০২৫০১১৪৮