মনের অন্তঃস্থলে লুকিয়ে থাকা ভাবকে ছুঁয়ে প্রকাশ করে যে ভাষা, তার সাথে যে আবেগ জড়িয়ে থাকবে, তা বলা বাহুল্য, মানুষের সেই আবেগকে প্রত্যেকের মাতৃভাষার সাথে জড়িয়ে থাকা ইতিহাস তথা মহান সংস্কৃতিকে সম্মান ও শ্রদ্ধা জানানোর উদ্দেশ্যে প্রতিবছর একুশে ফেব্রুয়ারি বিশ্বজুড়ে পালিত হয় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস।
পাকিস্তানের প্রধান তথা বৃহত্তর অংশের জনগোষ্ঠী মূলত উর্দুভাষা ভাষী হলেও পূর্ব পাকিস্তানের মাতৃভাষা ছিল বাংলা। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক ভাবে পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী এই অঞ্চলের মানুষদের ওপর জোর করে উর্দুভাষা চাপিয়ে দিতে চায়।তাই স্বাভাবিক ভাবেই জোর করে উর্দু চাপিয়ে দেওয়ার প্রতিবাদে আন্দোলনে ফেটে পড়ে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান। ১৯৪৭-এ দেশ বিভাগের পর থেকেই বাংলা ভাষার ওপর জোর জুলুম তীব্রতর হতে থাকে। এর প্রতিবাদে তীব্র হয় ভাষা আন্দোলনও। ১৯৫২তে তা চরম আকার নেয়। ওই বছরের একুশে ফেব্রুয়ারি বাংলাকে পূর্ব পাকিস্থানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে আন্দোলনরত তরুন ছাত্র-ছাত্রীদের ওপর পুলিশের নির্মম গুলিবর্ষনে কয়েকটি তাজা প্রান অকালে ঝরে যায়। এদের মধ্যে অন্যতম হলো রফিক, জব্বার, সালাম, শফিউল, বরকত সহ অনেকেই, বাংলাদেশের ইতিহাসে এই দিনটি শহীদ দিবস হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে।আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের প্রতিষ্ঠার জন্য সর্ব প্রথম উদ্যোগ গ্রহন করেন কানাডার বসবাসকারী দুই বাঙালি রফিকুল ইসলাম এবং আব্দুস সালাম।তাদের সার্বিক উদ্যোগে প্রথমে প্রতিষ্ঠিত হয় 'মাদার ল্যাঙ্গুয়েজ লাভারস অব দ্য ওয়ার্ল্ড' নামে একটি সংগঠন। এরপর আরও নানা সুধীজনের সহযোগিতায় বিভিন্ন ওঠা পড়ার শেষে ১৯৯৯ সালের ১৭ই নভেম্বর অনুষ্ঠিত ইউনেস্কোর প্যারিস অধিবেশনে ২১শে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষনার প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়। সেই অধিবেশনে মোট ১৮৮টি দেশের সমর্থন সহযোগে প্রস্তাবটি পাশ হলে তার পরের বছর থেকে ফেব্রুয়ারি মাসের ২১ তারিখে জাতিপুঞ্জের সদস্যদেশ গুলিতে যথাযথ মর্যদায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালিত হয়ে আসছে। এরপরে ২০১০ সালের একুশে অক্টোবর সাধারন পরিষদের ৬৫তম অধিবেশনে জাতিপুঞ্জ স্বয়ং একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা হিসেবে পালনের উদ্যোগ নেয়।
নিজের মাতৃভাষা পৃথিবীর সকল মানুষের কাছে পরম আদরের এবং হয়তো সবচেয়ে কাছের একটি বিষয়। সেই ভাষার প্রতি সম্মান জানানোর উদ্দেশ্যে উৎসর্গিত একটি দিনকে মানুষ পরম উৎসাহের সাথে পালন করে থাকে। এই দিনটিতে পৃথিবী জুড়ে মানুষ মেতে ওঠে নিজের ভাষার সঙ্গে জড়িয়ে থাকা সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ইতিহাসের গৌরবময় চর্চায়। সমগ্র বিশ্বজুড়ে ভাষার এমন ব্যাপক উদযাপন আর কোন দিন দেখা যায় নি। এ যেন এক ভাষা মহোৎসব।
======================
Nupur DasGangarampur, Dakshin Dinajpur
Phone - 8617062155
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন