রমলা মুখার্জী
রবীন্দ্রনাথ ছিলেন বিশ্বমানবতার পূজারী। সকল মানুষকে শিক্ষায়-সংস্কৃতিতে সমৃদ্ধ করতে পারলেই দেশ ও সমাজের ক্রমোন্নতি ঘটবে এটাই তিনি বিশ্বাস করতেন। আর এই উদার দৃষ্টিভঙ্গীর আলোকেই রবীন্দ্রনাথ নারীকে বিশাল কর্মযজ্ঞে সামিল করে বিশ্বের দরবারে পুরুষের পাশে স্বমহিমায় দাঁড় করাতে চেয়েছেন। তাই তাঁর নারীকে আহবানঃ-
"এসো ছেড়ে, এসো সখী কুসুম শয়ন
বাজুক কঠিন মাটি চরণের তলে।"
রবীন্দ্রনাথের য়ুরোপ প্রাবাসী পত্রে লিখেছিলেন,
"সমাজের অর্ধেক মানুষকে পশু করে ফেলা যদি ঈশ্বরের অভিপ্রেত বলে প্রচার কর, তাহলে তাঁর দানের অপমান করা হয়। মেয়েদের সমাজ থেকে নির্বাসিত করে দিয়ে আমরা কতটা সুখ ও উন্নতি থেকে বঞ্চিত হই তা বিলেতের সমাজে এলে বেশ বোঝা যায়।"
রবীন্দ্রনাথ বিশ্বাস করেন মধুময় এ পৃথিবীর রূপ-রস-গন্ধকে উপভোগ করতে হলেও নারী সমাজকে সম্পূর্ণ বিকশিত হয়ে ওঠার সুযোগ করে দেওয়া দরকার। অসম চিন্তায় সমাজ ঠিকমত বিকশিত হয়ে উঠতে পারে না। তাঁর চিন্তা-চেতনায় নারী প্রেরণাদায়িনী মানসমূর্তি। নারীর মহিমাকে উপযুক্ত মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করতে পারলে তা নারী উন্নয়ন থেকে সামাজিক উন্নয়নে সহায়ক হবে।
রবীন্দ্রনাথের ভাবনায় পটপরিবর্তন ঘটেছে নারীকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন পর্বে। কবির চেতনায় প্রথম পর্বে নারী এসেছে অধরা, ছায়াসঙ্গিনী, প্রেরণাদাত্রী রূপে, কিন্তু তারপরে তাঁর কল্পিত নারী তার বিড়ম্বিত জীবনের বোঝা টেনে নিতে নিতে প্রশ্ন করতে এমন কি অভিশাপ দিতেও দ্বিধা করে নিঃ- কচ ও দেবযানীতে উপেক্ষিতা দেবযানীর তেজোদীপ্ত কণ্ঠে তাই শুনতে পাইঃ-
''তোমা পরে এই মোর অভিশাপ-
যে বিদ্যার তরে মোরে কর অবহেলা
সে বিদ্যা তোমার হবে না বশ
শিখাইবে, পারিবে না করিতে প্রয়োগ।''
বিশ শতকের দ্বিতীয় দশকের শেষ সীমায় পুরুষের সমান সম্মানে আগ্রহী নারীর নির্ভীক আত্মপ্রকাশ:-
"পঞ্চশরের বেদনামাধুরী দিয়ে
বাসররাত্রি রচিব না মোরা প্রিয়ে।
ভাগ্যের পায়ে দুর্বল প্রাণে
ভিক্ষা না যেন যাচি।
কিছু নাই ভয়, জানি নিশ্চয়
তুমি আছ, আমি আছি।"
'মুসলমানীর গল্পে' কমলাকে মুসলমান যুবকের প্রেম নিবেদনের উত্তরে বলতে শুনি-
''যে ধর্ম চিরদিন আমাকে জীবনের সব ভালবাসা থেকে বঞ্চিত করেছে, সে ধর্মের মধ্যে তো' দেবতার প্রসন্নতা কোনদিন দেখতে পেলুম না………যে দেবতা আমাকে আশ্রয় দিয়েছেন সেই ভালবাসার সম্মানের মধ্যে তাঁকেই পুজো করি, তিনিই আমার দেবতা, তিনি হিন্দুও নন মুসলমান নন।''
আজকের নারীমুক্তি আন্দোলনেও রবীন্দ্রভাবনা প্রেরণাস্বরূপ এবং সেজন্যই রবীন্দ্রনাথ একবিংশ শতাব্দীতেও প্রাসঙ্গিক ও অপরিহার্য। কবির কথাতেই বলতে হয়-
''নতুন সভ্যতা গড়ার কাজে মেয়েরা এসে দাঁড়িয়েছে- প্রস্তুত হচ্ছে তারা পৃথিবীর সর্বত্রই। তাদের মুখের উপর থেকেই যে কেবল ঘোমটা খসল তা নয়, যে ঘোমটার আবরণে তারা অধিকাংশ জগতের আড়ালে পড়ে গিয়েছিল সেই মনের ঘোমটাও তাদের খসছে''।
==================
ডঃ রমলা মুখার্জী ব্যানার্জী
বৈঁচী, বিবেকানন্দপল্লী,
জেলা হুগলী, পিন 712134
ফোন 7003550595
হোয়াটসঅ্যাপ 9474462590
Sent from RediffmailNG on Android
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন